Thursday, January 24, 2019

033 - 1

#জিরো_থ্রি_থ্রি
এক বন্ধুর সূত্রে খবর পেয়ে একটা app ডাউনলোড করে আজকাল রেডিও শুনি খুব। কলকাতার মোটে একটাই স্টেশন ধরে। আকাশবাণীর কোনো একটা। গীতাঞ্জলি। কলকাতায় থাকতে শুনিনি। তখন মূলত প্রাইভেট এফ এম শুনতাম। আর আকাশবাণী হলে রেনবো আর গোল্ড। বিশেষ করে রাত ১০টা থেকে অবশ্যই রেনবোতে "আজ রাতে" অনুষ্ঠান। দিব্যি শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম..মা বেচারিকে রোজ মাঝ রাতে উঠে রেডিও অফ করে দিতে হতো। আর প্রতিদিন সকালে আমার কপালে জুটত বকুনি। আজকাল এখানে এসে খুব মিস করি।
এখন হোস্টেলে আনলিমিটেড ওয়াইফাই। তা ছাড়া জিও ফোন। একা থাকি। প্রায় সারা রাত app এ রেডিও চলে। বা ইউটিউবে হয় হিন্দি বা বাংলা গল্প। কিছু একটা শুনতেই হয়। নইলে ঘুম আসেনা। মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভাঙলে বন্ধ করে দিই। নইলে সকালে দেখি চলতে চলতে কখন অটো প্লে অফ হয়ে থেমে গিয়েছে। এখন এখানে বকবার কেউ নেই। অথচ দেখো, টেকনোলজি হাজির, সমস্যার সমাধান করতে।
তা যাই হোক, যে ধান ভাঙতে শিবের গাজন গাইলাম..হয়েছে কী, এখনও ওই মোবাইলে খুটুর খুটুর করতে করতে রেডিওতে বাংলা অনুষ্ঠান শুনছিলাম। দিব্যি লাগছিলো। আমাদের এদিকটা একটু নিরিবিলি, নির্জন। খোলা জানলা দিয়ে হঠাৎ শুনতে পেলাম ঢং ঢং করে দশটা বাজার শব্দ। এক ছুট্টে যেন পৌঁছে গেলাম সেই ছোটবেলার দাদাই বাড়ি, যেখানে ছোট ঘরটাতে ছিল একটা এই বড় দেয়াল ঘড়ি। প্রতি ঘন্টায় এমন ঢং ঢং করতো। কত ছুটির দিনে মা আর আমি বড় ঘরে শুয়ে আছি। ঘুম আসছেনা। গভীর রাত অবধি দুজনে শুয়ে শুয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘড়ির শব্দ গুনেছি।
এখন খালি মনে হচ্ছিল যেন সেই সেইদিনের দাদাই বাড়িতেই বসে আছি আমি। দশটা বাজলো। এক্ষুণি মা শুতে যেতে ডাকবে। আমায় খেলনাপাতি তুলে রাখতে হবে।
দালানের শেষ প্রান্তে একটা আলনা ছিল। তার নীচের তাকে আমার খেলনার পুটলি রাখবো। টিমটিমে হলুদ বাল্ব জ্বলছে। আরশোলা টিকটিকির ভয়ে আমি সিঁটিয়ে। মা কে ডাকছি।
এখন আর ওগুলোয় ভয় লাগে না। বড় হওয়ার সাথে সাথে ভয়গুলো কেমন পাল্টে যায়।
একটা শব্দের জেরে চেন্নাই কলকাতা সব এক হয়ে গেল কেমন... কে জানে আজকের "আজ রাতে" অনুষ্ঠানের বিষয় কী।।

No comments:

Post a Comment