আজ তিষ্য দাশগুপ্তর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। তিষ্য মেডিকালে রাজ্যে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। আর তার ফলে ওদের বাড়িতে আজ একটা হইহই রমরমা আবহাওয়া। দাশগুপ্ত পরিবারের বাড়িশুদ্ধু সক্কলে ডাক্তার। ঠাকুরদা, ঠাকুমা, জ্যাঠা, জেঠি, বাবা, মা, দুই পিসি, জেঠতুতো দুই দাদা দিদি প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত। আর তিষ্যও পড়াশোনায় বরাবরই ভালো। কোনদিন প্রথম তিনের বাইরে থাকেনি স্কুলে। মাধ্যমিকে তো স্কুল থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পর্যন্ত পেয়েছিল ও। তাই এই রেজাল্ট ওদের কারুর কাছেই তেমন অপ্রত্যাশিত নয়।
ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, মা বাবার মোবাইল, ওর নিজের মোবাইল সারাক্ষণ বেজেই যাচ্ছে। শুভেচ্ছা বার্তার ছড়াছড়ি। মিডিয়ার লোক এই এলো বলে।
এমন সময়ে তিষ্য ওর মা আর বাবাকে ডেকে নিজের ঘরে গিয়ে বসল। বলল, "মা, বাবা। তোমাদের কিছু জানাতে চাই।"
দুজনে একটু অবাক। কী ব্যাপার এমন যে ছেলে ওঁদের এমনভাবে ঘরে ডেকে আনল।
"হ্যাঁ, বল কী বলবি?" মা তিষ্যর দিকে তাকিয়ে বললেন।
"যদিও আমি মেডিকালে এত ভালো র্যাঙ্ক করেছি, কিন্তু আমি ডাক্তারি পড়তে চাই না মা।" একটু কাঁপা কাঁপা গলায় তিষ্য কথাগুলো বলল।
"ডাক্তারি পড়বি না মানে? তাহলে কী পড়বি? এই এত ভালো র্যাঙ্ক করে কেউ ডাক্তারি ছেড়ে দেয়? পাগল হলি নাকি? " তিষ্যর বাবা গড়গড় করে বলে যান।
"হ্যাঁ বাবু। কী পাগলামি কথা এগুলো? ডাক্তারি পড়ার তোর কত শখ ছিল তো। এত পড়াশোনা করে এমন দুর্দান্ত রেজাল্ট করে এসব কী বলছিস?" তিষ্যর মাও উত্তেজিত হয়েই ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন।
"মা, বাবা। আমি জানি তোমাদের সকলের অবস্থা। আমার এই ডিসিশানটা সত্যিই অন্যরকম। আমিও তোমাদের জায়গায় থাকলে এমনভাবেই রিঅ্যাক্ট করতাম। কিন্তু দেখো, তোমাদের সকলকে দেখে আমার মনে হয়েছে যে এই পেশা আমার জন্য নয়। আমি তাই ঠিক করেছি জেনারাল লাইনে লেখাপড়া করব। ফিজিক্সে। আমার ফিজিক্স পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। মাস্টার্স তো করবোই। তারপর পি এইচ ডি ও। নামের আগে ডক্টর বসে যাবে ঠিকই। জার্নিটা সহজ হবেনা ঠিক। কিন্তু তোমরা প্লিজ আমার সাথে থেকো?"
দাশগুপ্ত দম্পতি অবাক। ওঁদের ছেলে কবে এত বড় হয়ে গেল? এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পেয়ে গেল... এত আত্মবিশ্বাসই বা কোত্থেকে এলো?
"দেখ বাবু, শেষমেশ তোকে নিজের কেরিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনদিনও আমরা তোর ওপর কিছু চাপাইনি। আজও চাপাবো না। তবে তুই যা ভালো বুঝিস, তাই কর। শুধু এইটা জেনে রাখ, আমরা রইলাম তোর পাশে। সব সময়। " মায়ের কথায় তিষ্য যেন অনেকটা ভরসা পেল।
আর এইভাবেই পরেরদিনের সংবাদপত্রের শিরোনাম তৈরি হয়ে গেল। "রাজ্য জয়েন্টের কৃতী ছাত্র ডাক্তারি না পড়ে যেতে চায় পদার্থবিদ্যার গবেষণায়। শিক্ষায় কি এলো নতুন দিশা?"
No comments:
Post a Comment