একটি
ভূতের গল্প
সুচেতনা
গুপ্ত
আসুন
আজ আপনাদের একটি পোষা ভূতের
গল্প বলি। কী বললেন?
পোষা
ভূত শুনে চমকে গেলেন?
ও
মা, লোকের
পোষা কুকুর বিড়াল খরগোশ মাছ
এমনকি হাতি থাকতে পারলে,
পোষা
ভূত থাকতে পারে না বুঝি?
অনেক
বড়লোক পয়সাওয়ালা লোকজন তো
আবার শখ করে কত সময় মানুষও
পুষে ফেলে। সেই বেলা?
যাক
গে, তো
যা বলছিলাম। ঘটনাটি শোনা আমার
ছোট মামার কাছে। সেবার গরমের
ছুটিতে মামাবাড়ি গিয়েছি।
মামা তখন ভাগলপুর থেকে ছুটি
নিয়ে জলপাইগুড়িতে নিজের বাড়ি
এসেছে। মায়ের সাথে আমি আর বড়
মাসীর সাথে আমার দুই যমজ বোন
ফুল আর রেণুও ওখানে। বড়মামার
দুই ছেলেমেয়ে। তুবড়ি দাদা আর
চরকি দিদিও রয়েছে। ভাইবোনেরা
মিলে সারাদিন হইহুল্লোড় করে
বাড়ি মাথায় করছি। তখন সন্ধ্যেবেলা
খুব কারেন্ট যেত। আর তার মধ্যে
ঝড়বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।
হয়তো সারারাত এলোই না। আমার
মামাবাড়ির ওদিকে তখনও ইনভার্টারের
রমরমা হয়নি। কাজেই কারেন্ট
যাওয়া মানে তখন পাঁচ ভাই বোন
মিলে বড়দের পাকড়াও করা। গল্প
শোনানোর জন্য। ছোট মামার বদলির
চাকরি। অনেক অভিজ্ঞতা। তাই
প্রায়দিনই গল্পকার হতো ছোটমামা।
মা মাসি বড় মামা,
মামীও
যোগ দিতো ওই গল্প শোনার আসরে।
বিরাট বড় হলঘরে দুটো লন্ঠন
রাখা। তার টিমটিমে আলো ঘিরে
আমরা সবাই বসে। বাইরে বৃষ্টি
হলেই ভূতের গল্প। গা ছমছমে
পরিবেশে পুরো জমে যেত।
এরকম
একদিন যখন তুবড়ি দাদা আর ফুল
রেণু মামাকে ধরেছে আবার ভূতের
গল্প শোনাতে,
ছোটমামা
বলল, "দাঁড়া,
তোদের
আজ অন্যরকমের ভূতের গল্প বলি।”
আমরা
তো অবাক। বলে কী?
অন্যরকম
ভূতের গল্প। সে আবার কেমন
ব্যাপার?
আমাদের
অবাক চোখ মুখ দেখে ছোটমামা
বলল, "এই
ভূত হলো পোষা ভূত। এই ধর চরকি
তোর মাসীর বাড়ি যেমন পোষা টমি
আছে, তেমনই
পোষা।” টমি হল বড় মামীর দিদির
বাড়ির খয়েরি রঙের পোষা
স্প্যানিয়েল। আমরা খুব ভালোবাসি।
মাঝেমাঝে ওদের বাড়ি গিয়ে আদর
করে আসি। আমি বললাম,
"সে
কীরকম? বলো
বলো। বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।”
এইবারে
ছোটমামা একটু গলা খাঁকড়ি দিয়ে
শুরু করলো আসল গল্প।
'আমার
এক কলিগ,
মাধবরাও
পাণ্ডে একদিন আমায় ওঁর বাড়ি
নেমন্তন্ন করেছেন। আমি একা
মানুষ। নিজে হাত পুড়িয়ে রান্না
করে খাই। আর উনি রোজ কোর্মা
কালিয়া পোলাওয়ের গল্প করেন।
কী দয়া হলো কে জানে,
আমায়
বললেন,
"সেনগুপ্তা
সাহাব, কাল
শাম আপনি আমার সাথে আমার ঘর
চলুন। আমার ঘরপে থোড়া বহত খানা
খেয়ে যাবেন।” আমি বাপু খানেওয়ালা
লোক। এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম।
শুধু একবার ভদ্রতার খাতিরে
জিজ্ঞেস করলাম,
"আপনার
কোন অসুবিধে হবে না তো মাধবজী?
ভাবীও
নেই এখানে এখন। রান্নাবান্নার
চক্করে নাই বা গেলেন...”
উনি
হেসে আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে
বললেন, "কুছ
চিন্তা নেই সেনগুপ্তা সাহাব,
আমার
ঝুমরি আছে তো। ও আমায় সাহায্য
করবে।” আমি কিছু বললাম না,
ঠিক
আছে। কাজের লোক টোক আছে বুঝি।
সেই সাহায্য করবে যখন,
আর
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।'
"আচ্ছা
মামা, এই
ঝুমরিই কি ভূত?”
ফুল
প্রশ্ন করলো।
ছোটমামা
বলল, “দেখো
ভাগ্নি,
তুমি
খুব স্মার্ট আর বুদ্ধিমতী সে
আমি জানি। কিন্তু শোনো,
ভূতের
গল্প শুনতে বসে প্রথম নিয়ম।
মাঝপথে থামাবে না। এতে গল্পের
ফ্লোতে ব্যাঘাত ঘটে। বিঘ্ন
ঘটলে আর মজা পাবে না। বুঝলে?”
ফুল
একটু চুপসে গেলো। আমি আর চরকি
দিদি ওর দিকে খানিক কটমট করে
তাকালাম। তারপর মামা আবার
শুরু করলো।
'তো
যা বলছিলাম। পরদিন সন্ধ্যেবেলা,
এই
ধর তখন ক'টা
হবে... এই
সাড়ে ছটা নাগাদ আমি আর মাধবজী
ওঁর মোটরসাইকেলে রওনা দিলাম
ওঁর বাসার উদ্দেশ্যে। পথে
সুখদেবের দোকানে একবার বাইক
থামিয়ে আমরা ওই একটু পেপসি
টেপসি আর চিপস কিনে সাতটার
একটু পরে পৌঁছলাম বাড়ি। বাড়ি
এক্কেবারে সেই মান্ধাতার
আমলের। এই বড় বড় থাম। লম্বা
দালান। টানা গাড়ি বারান্দা।
মাধবজী বাইকটাকে উঠোনের একটা
কোণে রেখে আমায় নিয়ে বারান্দায়
উঠলেন। এরপর পকেট থেকে একটা
চাবি বের করে দরজা খুলে বললেন,
"আসুন
সাহাব। গরীবের বাসায় আসুন।”
বাঁ দিকের দেওয়ালেই সুইচবোর্ড।
উনি আলো জ্বাললেন। দেখলাম কী
উঁচু সিলিঙ। লম্বা লম্বা
ডাণ্ডাওয়ালা পাখা। লাইটগুলোও
পুরনো ধাঁচের। নক্সা করা
ল্যাম্পশেড। দেওয়ালের রঙ
ফিকে। একটা নরম গদির সোফা,
পরিপাটি
করে সাজানো। আমায় বসতে বললেন
ওখানে। আমি বললাম,
"বাহ,
আপনি
তো বেশ গুছিয়ে থাকেন মশাই।
ভাবী নেই। তাও এমন টিপটপ,
ফিটফাট।”
মাধবজী হেসে হাত কচলে বললেন,
"সবই
ঝুমরির কৃপা। আপনি বসুন। আরাম
করে বসুন। আমি পেপসিটা গ্লাসে
ঢেলে আনছি।” এই বলে উনি ভিতরে
চলে গেলেন। সম্ভবত রান্নাঘর।
বা ডাইনিং রুম। আমি একটু এদিক
ওদিক চোখ বোলালাম। সত্যি,
বাইরে
থেকে মান্ধাতার আমলের বাড়ি
লাগলেও,
অন্দরসজ্জা
খুবই শৌখিন ও রুচিসম্পন্ন।
ঝুমরিই যদি সব করে থাকে,
খুবই
বাহবা দিতে হয় বই কি।
এইসব
ভাবছি,
ইতিমধ্যে
মাধবজী একটা ট্রেতে দুই গ্লাস
পেপসি আর প্লেটে চানাচুর আর
চিপস আনলেন। টেবিলে রেখে আবার
গেলেন ভিতরে। এবার নিয়ে ফিরলেন
আরেকটা প্লেট। এতে দেখলাম
ভাজাভুজি। নানারকমের। আমার
দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
"নিন
নিন। খেতে শুরু করুন। একদম
গরমা গরম।” ওই যে বললাম,
আমি
খাবার ব্যাপারে কোন রাখঢাক
করি না। বলা মাত্রই একটা চপ
তুলে মুখে দিলাম। আহা। খুব
গরম। কিন্তু অতুলনীয় স্বাদ।
নরম তুলতুলে পনীরের চপ। আমি
আরো খান সাত আটেক খেয়ে দেয়ে
ওঁকে বললাম,
"দারুণ
টেস্ট। আপনি বানালেন বুঝি?”
মাধবজী
এবার জোরে জোরে হাসতে হাসতে
বললেন, "আরে
না না সেনগুপ্তা সাহাব। আমি
কী করে বানাবো?
আপ
হি কে সাথ তো আমি এলাম। এসেই
এমন গরম চপ হাম কী করে রেঁধে
দেবে আপনাকে?
এ
সব ঝুমরির করা।”
এই
নিয়ে দ্বিতীয়বার ঝুমরির
প্রশংসা শুনলাম এই বাড়িতে।
ভাবলাম,
বেশ
ভালোই কাজের লোক পেয়েছেন উনি।
ওদিকে আমার কমলার মা তো মাসের
মধ্যে আদ্ধেক দিনই কামাই করে।
কপাল। সবই কপাল। আমাদের গল্প
চলতে লাগল। অফিস। ক্লাব।
সিনেমা। ক্রিকেট। নানান বিষয়ে।
মাঝে একবার উনি আমায় জিজ্ঞেস
করলেন কটা নাগাদ রাতের খাবার
খাই। আমি বললাম,
"ওই
নটার দিকে। একা থাকি। তাড়াতাড়ি
খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ি। রাত জেগেই
বা কী করবো?”
উনি
বললেন,
"দাঁড়ান
তাহলে। ভিতরে খবর দিয়ে আসি।”
খানিক
পরে এসে বললেন,
“ঝুমরিকে
বলে এলাম। রান্নাবান্না
মোটামুটি আমার সকালেই করে
রাখা আছে। ও গরম করে দেবে। আর
কটা রুটি করবে। আপনি রুটি খান
তো? নাকি
ভাত? মেনুতে
চিকেন কারি,
আলু
মসলা আর ব্যাঙ্গন ভর্তা রয়েছে।”
আমি প্রসন্ন হয়ে বললাম,
"হ্যাঁ
এই মেনুতে রুটিই সেরা সঙ্গত
হবে। আপনি বসুন তো। বড্ড ঘরবার
করছেন। এই জন্যই বলছিলাম। এত
আয়োজন না করতে।”
"আরে
না না। ঝুমরিই সব করছে।” উনি
আবারও বলে আশ্বস্ত করলেন আমায়।
গল্প
করতে করতে সন্ধ্যেটা বেশ কাটল
আমাদের। নটার একটু আগে উনি
রান্নাঘরে গিয়ে ঝুমরিকে
নির্দেশ দিয়ে এলেন রুটি আর
ভর্তা বানানোর। আমিও মাঝে
মাঝে রান্নাঘর থেকে ছ্যাঁকছোক
শব্দ পেতে লাগলাম। নটা নাগাদ
যখন মাধবজীর সাথে খাবার ঘরে
গেলাম,
দেখলাম
টেবিলে খুব সুন্দর করে সমস্ত
খাবার সাজানো। ক্যাসারোলে
রুটি, বাটিতে
ডাল, তরকারি।
বড় বাটিতে মাংস। কাঁচের প্লেটে
স্যালাড। এলাহী আয়োজন। গল্প
করতে করতেই খেলাম। সে খাবারের
স্বাদ বিশ্বাস করবি না,
স্বর্গীয়।
কী সুসিদ্ধ মাংস। সমস্ত মসলা
যেন এক্কেরে সঠিক পরিমাণে
দেওয়া। খাওয়াদাওয়া শেষ করে
পান মসলা চিবোতে চিবোতে আমি
একবার ভদ্রতার খাতিরে মাধবজীকে
বললাম,
"মাধবজী,
একবার
আপনার ঝুমরিকে ডেকে দিন না।
ও এত ভালো রেঁধেছে। ওকে বলি।
একটু বকশিস দিতেও ইচ্ছে করছে।”
আমার
কথা শুনে মাধবজী যেন আকাশ থেকে
পড়লেন, এমন
মুখ করে বললেন,
"আরে
সেনগুপ্তা সাহাব,
বলেন
কী? ঝুমরিকে
বকশিস?”
আমি
একটু অপ্রস্তুত বোধ করলাম।
এই রে, ভুল
কিছু বললাম নাকি?
আমি
তো ধরেই নিয়েছি ঝুমরি ওঁর
কাজের মেয়ের নাম। আসলে আত্মীয়
টাত্মীয় নয় তো?
তাহলে
তো খুবই লজ্জার ব্যাপার হবে।
একটু নিচু গলায় প্রশ্ন করলাম,
"না
মানে, কেন?
আসলে
আমি ওর কাজে খুবই খুশি হয়েছি।
আমাদের ওখানে তো এটাই রীতি...”
মাধবজী
হেসে বললেন,
"আরে,
সে
বকশিসের রীতি তো আমাদেরও আছে।
তবে ঝুমরির ব্যাপারটা অন্য।”
আমি
ক্রমশ উদগ্রীব হচ্ছি ব্যাপারটা
বোঝার জন্য। এরপর উনি যা বললেন,
তা
শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত
ছিলাম না। মানে যে কেউই চমকে
যেতো। উনি বললেন,
"ঝুমরি
আমার পোষা ভূত।”
"অ্যাঁ?
বলেন
কী পোষা ভূত?”
আমার
গলাটা একটু কেঁপে গেলো।
"হেঁহেঁ,
বিশ্বাস
হচ্ছেনা তো?
আসুন
তবে।” এই বলে উনি আমায় রান্নাঘরে
নিয়ে গেলেন। দেখলাম,
কেউ
কোথাও নেই।
"কই?
কেউ
নেই তো?”
আমি
বললাম।
"আছে
আছে। না থাকলে এই এত রান্নাবান্না
কে করল বলুন?
আমি
তো আপনার সাথেই ছিলাম। রান্নার
শব্দ পাচ্ছিলেন তো।” উনি
বললেন।
আমি
বললাম, "সে
হয়তো রাঁধুনি এসেছিল। চলে
গেছে এখন।'
"উহু",
উনি
মাথা নাড়লেন। "দাঁড়ান,
আপনার
যাতে বিশ্বাস হয়,
ডেমো
দেখাই।” এই বলে তিনি গলা উঁচু
করে ভিতরদিকে তাকিয়ে অদৃশ্য
কারুর উদ্দেশ্যে বললেন,
"ঝুমরি,
বেটি
এক গ্লাস জল আনো তো মা। বাবুকে
দাও।”
এবং
তোরা বিশ্বাস করবি কি জানিনা,
মুহূর্তের
মধ্যে দেখলাম তাক থেকে একটা
স্টিলের গ্লাস উঠে এলো। ঠিক
যেন কেউ ওটা ধরে নিয়েছে। আমি
শুধু তার হাত দেখতে পাচ্ছিনা।
তারপর দেখলাম টেবিল থেকে জলের
কলসীটা কাত হলো। এবারও কোন
অদৃশ্য হাতেই। কলকল করে জল
ভরতে থাকলো গ্লাসে। ঢালতে
গিয়ে খানিকটা জল মেঝেতে পড়ল।
আমি হাঁ হয়ে দেখছি গোটা ব্যাপারটা।
জল ভর্তি গ্লাসটা আমার সামনে
এসে গেলো।
"দেখুন
দেখুন। দেখুন সেনগুপ্তা সাহাব,
মেঝেতে
দেখুন।” কোনমতে গ্লাসটা ধরে
মেঝেতে দেখলাম। দেখি এক জোড়া
ছোট পায়ের ছাপ। ভিতরে চলে
যাচ্ছে। একদম আমরা যেমন মা
লক্ষ্মীর পায়ের আলপনা দিই,
ওইরকম।
তবে একটু আলাদা। এই পায়ের ছাপ
ঠিক উল্টো। যেন গোড়ালি সামনে,
পায়ের
আঙুল পিছনে।
আমি
ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। এসব
কী হচ্ছে?
আমার
অবস্থা দেখে মাধবজীর বুঝি
দয়া হল। আমার কাঁধে হাত রেখে
বললেন,
"ঘাবড়াবেন
না সাহাব। ঝুমরি বহুত আচ্ছি
বাচ্চি হ্যায়। ও কোন ক্ষতি
করবে না কারুর।”
বলে
কী? ভূত?
আদৌ
হয় বলে এতদিন বিশ্বাস করতাম
না। একেই চোখের সামনে দেখতে
পেলাম। তারপর বলে কি কোন ক্ষতি
করবে না?
মানেটা
কী?
"আমি
কিচ্ছু বুঝছি না,”
ভয়ে
ভয়ে বললাম।
“আরে
তাহলে আপনাকে ঝুমরির গল্প
বলি।” এই বলে উনি আমায় নিয়ে
সোফায় এসে বসলেন। তারপর বললেন,
“পাঁচ
মহিনা পেহলে একদিন দোপেহেরে
আপনার ভাবীজি খাওয়ার পর বাসন
মাজতে বসেছে,
কাজের
বউটি আসেনি বলে। তখনই প্রথম
ঝুমরির উপস্থিতি টের পেলেন।
চৌবাচ্চার জলের মধ্যে হঠাৎ
হঠাৎ যেন কেউ ঢিল ছুঁড়ছে। আমার
বউ তো প্রথমে অবাক। আশেপাশের
বাড়ি থেকে কোন বিচ্ছু ছেলেপুলে
নাকি? এদিক
ওদিক ভালো করে দেখতে থাকল।
কোথাও কেউ নেই। তাহলে হয়তো
হাওয়ায় হলো?
কে
জানে। আর কিছু ভাবেনি।
এরপর
আবার দিন তিনেক পর একই ঘটনা
ঘটল আবার। এইবারে আমার বউ একটু
ঘাবড়ে গেলো। কে কে বলে চেঁচাল।
তখন একটা বাচ্চার খিলখিল হাসির
শব্দ শুনতে পেলো। ও তো অবাক।
এদিক ওদিক দেখছে। কেউ কোথাও
নেই। ভয় লাগছে। হাসির শব্দ
বরাবর তাকালো। দেখল একটু দূরে
শুকনো উঠোনের একদিকে পায়ের
ছাপ। এবং ঠিক এরকম উল্টো। আমার
বউ ভির্মি খেয়ে গেলো। ওঁর
জ্ঞান ফিরল খানিক পর,
জলের
ঝাপটায়। অথচ চোখ খুলে দেখে
সেই কোথাও কেউ নেই। তখনই একটা
রিনরিনে গলায় শুনলো,
"ও
মউসি, ডরো
মত। আমি ঝুমরি।”
আমার
বউয়ের আবার জ্ঞান হারানোর
অবস্থা। বলে কী?
তারপর
আবার মেয়েটির কথা শুরু হলো,
"মউসি,
আমি
ঝুমরি। আগে এই বাড়িতে থাকতাম।
তারপর একদিন মোটর দুর্ঘটনায়
একদিন বাবা মা আর আমি মরে যাই।
বাবা মায়ের পরের জন্ম হয়ে
গিয়েছে। আমি এখনও লাইনে আছি।
কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই
আমার পুরনো ঘরে এসে থাকি। একলা
একলা থাকি। ভাল্লাগেনা। তাই
ভাবলাম একটু তোমার সাথে আলাপ
করি। তুমিও দিনভর অকেলা থাকো।
মউসি, আমি
কথা দিচ্ছি। তোমায় বা মউসাকে
একটুও ভয় দেখাবো না। আমি বরং
তোমাদের কাজেকর্মেও সাহায্য
করব। শুধু আমার সাথে দুটো গল্প
করো মউসি। একা একা নইলে খুব
খারাপ লাগে।” আমার বউ তখনও
হতবাক। আমায় শিগগিরই ফোন করে
বাড়ি ডাকল। আমি ফিরে এসে সব
শুনে থ। এর মধ্যে আবার ঝুমরি
আমায়ও ওর উপস্থিতির ডেমো তো
দিলোই, সাথে
আবার লজ্জা টজ্জা পেয়েও গল্প
করলো। সেই থেকে ঝুমরি আমাদের
বাড়িতেই থাকে সেনগুপ্তা সাহাব।
বেটির মতোই। ওকে আমরাই পালছি।”
সেদিন
মাধবজী ওঁর বাইকে চাপিয়ে আমায়
বাড়ি অবধি পৌঁছে দেন। ফেরার
সময় বলেন,
"কিন্তু
সাহাব,
ঝুমরির
আসলিয়াত অফিসে শুধু আপনি
জানেন। আর কাউকে বলবেন না
প্লীজ। লোকে আমায় পাগল ভাববে।
নউকরি নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে।
বুঝতেই তো পারছেন। আপনি বঙ্গালী।
অনেক লিব্রাল আছেন। তাই আপনাকে
সাহস করে বললাম।”
আমি
অবশ্য অফিসে কাউকে এই কথা
বলিনি। কে জানে,
লোকে
হয়তো আমাকেই পাগল ভাববে।
ভাবতেই পারে। তাঁদের কারুর
তো আর এমন অভিজ্ঞতা হওয়ার
সুযোগ নেই। মাধবজী ওঁদের
কাউকেই ডাকবেন না বাড়িতে কখনও
ভাবীজি না থাকলে।'
এই
পর্যন্ত বলে ছোটমামা থামল।
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
"কী?
কেমন
লাগল?” আমরা
পাঁচ ভাইবোন চুপ। মুখে একটাও
কথা নেই। পাশ থেকে শুধু মাসি
বলল, “ইশ,
আমাদের
যদি এরকম একটা হেল্পিং হ্যান্ড
থাকতো রে...
ওই
বীণার মা মঞ্জু এরা ডুব দিলেও
পাত্তা দিতাম না।”
ছোটমামা
সব শুনেটুনে একটাই কথা বলল,
"বোঝো
কাণ্ড!”
*****************************************
No comments:
Post a Comment