অ্যাপ ক্যাবের গাড়িটা ছুটছে ইস্ট কোস্ট রোড বরাবর। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। সূর্যাস্ত দেখতে গিয়েছিল ওরা দুজন, শনিবারের বিকেলে। শহর থেকে অনতিদূরে, মহাবলিপুরমে। ওরা অর্থাৎ তোরণা সেনগুপ্ত আর পুলস্ত্য চক্রবর্তী। একটি মাল্টিন্যাশ্নাল কোম্পানিতে একসাথে চাকরি করে। কলিগের চেয়েও ঢের বেশী গভীর ওদের বন্ধুত্ব। সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার পরে মাঝে মধ্যেই ওরা দুজনে এরকম বেরিয়ে পড়ে, শহরে, শহরের বাইরে ঘুরে বেড়াতে।
আজকেও বেশ ঘুরলো ফিরলো। তোরণার ফোটগ্রাফির শখ। জমিয়ে সূর্যাস্তের ছবি তুলেছে। তারপর দুজনের অতি প্রিয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে প্রন, ক্র্যাব সহ জমাটি খাওয়া দাওয়া সেরেছে। সাথে আবার কিঞ্চিৎ পানপর্বও চলেছে। মন মেজাজ তাই দুজনেরই বেশ ফুরফুরে। এরই মধ্যে আবার বৃষ্টি। তার সাথে প্রাইম ক্যাবে খুব প্রিয় কিছু গান পরপর বেজে চলেছে প্লে-লিস্ট ধরে। এল্টন জন, জর্জ মাইকেল, এরোস্মিথ, লোবো।
"আজ দারুণ সময় কাটলো, বল?" জানলার বাইরে তাকিয়ে তোরণা বলল।
পুলস্ত্য মৃদু হাসলো। তারপর বললো, "ওয়েদারটা জাস্ট পাগল পাগল করে দিচ্ছে রে। ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টিতে নেমে একটু ভিজি। আহ!"
বৃষ্টি তোরণার বড় প্রিয়। পুলস্ত্যই বরং একটু রাখঢাক করে চলে। ওর মুখে এমন ইচ্ছে শুনে তাই তোরণা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। চোখ মুখ আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠলো। পুলস্ত্যর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, "চল। ভিজি। প্লীজ?"
পুলস্ত্য জানে। তোরণা একটু বেশিই প্রাণোচ্ছ্বল। একবার যখন মাথায় প্ল্যানটা এসেছে, তখন ওকে আটকানো মুশকিল। তবুও একটা শেষ চেষ্টা করতে ও বললো, "পাগল? ভিজে টিজে তারপর জ্বর হলে কে কাকে দেখবে? নেক্সট উইকে ইম্পরটেন্ট ক্লায়েন্ট মিট আছে, সে খেয়াল নেই বুঝি?"
"ধ্যাত্তেরি, বড্ড বেরসিক তুই। ওই জন্যই জীবনে কিছু হলো না তোর। একবার যখন ঠিক করেছি, তো আজকে ভিজবোই। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি যদি থেমে যায়, ড্রাইভারকে বলছি একটু সাইড করে পার্ক করতে। নেমে পড়।"
তোরণার আদেশে ড্রাইভার গাড়িটাকে একটু এগিয়ে রাস্তার ধারে পার্ক করলো। ওরা দুজনে নামলো বৃষ্টির মধ্যে। ড্রাইভার এসবে অভ্যস্ত। ওদের দিকে পাত্তা না দিয়ে তাই নিজের মনে ফোন নিয়ে খুটখুট করতে লাগলো।
বৃষ্টির তেজ যেন বেড়েছে। তার সাথে শনশন করে প্রবল হাওয়া দিচ্ছে। ওরা ভিজছে। একে অপরের হাত ধরে। তোরণা ষোড়শীর মতো উচ্ছ্বল। পুলস্ত্য একটু সংযত।
হঠাৎ প্রবল গর্জনে মেঘ ডেকে উঠলো। ত্রস্ত তোরণা এক ছুট্টে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো পুলস্ত্যর বুকে। কেঁপে উঠলো পুলস্ত্যর বুক। দু'হাত দিয়ে সযত্নে তোরণার মুখ তুলে ধরল ও। তোরণার কপালের ওপর এসে পড়া এলোমেলো চুলগুলো পুলস্ত্য সযত্নে সরালো। তারপর আরো যত্নে নিজের তৃষ্ণার্ত ঠোঁটকে ডুবিয়ে দিলো তোরণার নরম কমলালেবুর মতো ঠোঁটে। শুষে নিতে সমস্ত প্রাণরস।
এটা যদি বায়োস্কোপ হতো, এখন নিশ্চয়ই পাশের কোন চায়ের দোকানের পুরনো এফ এম রেডিওতে বাজতো "উই রে, উই রে, ভান্দ ইয়েনর কলন্দভিড়ে..." *।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে যেটা হলো, তোরণার জিনসের পকেটে বেজে উঠলো ওর মোবাইল ফোনটা। আচমকা নিজেকে পুলস্ত্যর বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে ফোনটা বের করলো ও। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে অরিঞ্জয়ের নাম।
অরিঞ্জয় বর্তমানে ক্যানাডায় চাকুরীরত। গত অঘ্রাণে বেশ ধুমধাম করেই ওর আর তোরণার বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
**************************************************
* Uyirae Uyirae Vanthu Ennodu Kalanthuvidu
Uyirae Uyirae Ennai Unnoadu Kalanthuvidu
Ninaivae Ninaivae Enthan Nenjoadu Kalanthuvidu
Nilavae Nilavae Intha Vinnoadu Kalanthuvidu
Kaathal Irunthaal Enthan Kannoadu Kalanthuvidu
Kaalam Thaduthaal Ennai Mannoadu Kalanthuvidu
(এই গানটি আপনারা চেনেন। বম্বে সিনেমার "তু হি রে"। সেটারই তামিল ভার্সন।)
No comments:
Post a Comment