Wednesday, April 24, 2019

বই দিবস উপলক্ষে

ছোট থেকেই তেমন বেশি বন্ধুবান্ধব কখনোই ছিল না। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাই গল্পের বইই হতো আমার একমাত্র সাথী। কোন ছোটবেলা থেকে মা বাবার হাত ধরে জাগরণী পাঠাগার থেকে বই নেওয়া শুরু। মবি ডিক, রবিনসন ক্রুসো, এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ, কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টো... কত এমন ইংরেজি ক্লাসিক্স পড়েছি। তারপর হাই স্কুলে প্রথম স্কুল লাইব্রেরি থেকে নিজের নামে বই ইস্যু করা। প্রতি ক্লাসে মেন লাইব্রেরি পিরিয়ড তো থাকতোই, তার সাথে ক্লাস লাইব্রেরি থেকেও বই নিয়ে গোগ্রাসে গিলতাম। গরমের ছুটি পুজোর ছুটিগুলোয় দুপুরবেলা চুপচাপ মা বাবার আনা বইগুলো পড়তাম। সেগুলো তো আবার তখন "বড়দের বই", তাই লুকিয়ে পড়া ছাড়া নিরুপায়। দিদিমার বাড়ি গিয়ে শরৎ রচনাবলী শেষ করা। বাড়িতে গল্পগুচ্ছ। শরদিন্দু। সত্যজিৎ। পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা। আনন্দবাজার পত্রিকা। দেশ। সব। গোলপার্কের পুরোনো বইয়ের দোকানগুলো (আমার বন্ধু আবার তার গালভরা নাম দিয়েছিল। লেন্ডিং লাইব্রেরি) থেকে গুচ্ছের গুচ্ছের ন্যান্সি ড্রিউ, হার্ডি বয়েজ, ফেমাস ফাইভ, সিক্রেট সেভেন, ফাইভ ফাইন্ড আউটার্স, ম্যালরি টাওয়ার্স, সুইট ভ্যালি... বলে শেষ করতে পারবো না।
বই পড়ার অভ্যেসটা মাঝে লেখাপড়ার চাপে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবুও নিয়ম করে পূজাবার্ষিকীগুলো পড়তাম।
চেন্নাইতে আসার পর একদিন কী মনে হলো কে জানে। ভাবলাম অনেক হলো এই সারাক্ষণ ওয়েব সিরিজ আর সিনেমা দেখা। আবার বইয়ে ফিরতে হবে। এখানে বসে বাংলা বই পড়ার সুযোগ প্রায় নেই বলে চলে। একটা লাইব্রেরির মেম্বার হলাম। অনলাইন বই বাছতাম। ওরা এসে দিয়ে যেতো। হোস্টেলের লাইব্রেরি থেকেও অনেক বই পড়েছি। ফেসবুকের সূত্রে অনেক ভালো ভালো বইয়ের সন্ধান পেয়েছি।
এখন দিনকাল পাল্টেছে। অনলাইনে কেনাকাটার দৌলতে চেন্নাইতে বসেও বাংলা বই পাই। প্রচুর ক্লাসিক বইয়ের পিডিএফও পাওয়া যায় সহজে। এতদিন কিন্ডল রিডারে পড়তাম। এখন সেটি খারাপ হওয়ায়, কিন্ডল app দিয়েই কাজ চালাই। দিব্যি লাগে।
শুধু মাঝে মাঝে মনে হয়। এখনো কত কত বই পড়া বাকি। এ জীবনে কি পারবো শেষ করতে সব?
ভালো ভালো বই পড়ুন। পড়ান।
বিশ্ব পুস্তক দিবসের শুভেচ্ছা জানাই সকলকে।

No comments:

Post a Comment