Tuesday, July 30, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ৩০
তুয়া রিপোর্ট লেখা শেষ করলো প্রায় ভোর তিনটে নাগাদ। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীময়ী ম্যামকে মেল করেও দিলো। এরপর ও অপেক্ষা করে ম্যামের মেসেজের। জানে, ম্যাম এখন জেগে থাকেন। মেল দেখবেন এখনই। তুয়া অপেক্ষা করে বসে আছে মেসেজের। এবং সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীময়ীর মেসেজও এসে পড়ে। "আমি পড়ে নিচ্ছি। কাল কিন্তু অবশ্যই আমার অফিসে এসো। খুব জরুরি দরকার। সকাল এগারোটার দিকে চলে এসো।" তুয়া শুধু 'ওকে' লিখে ছেড়ে দেয়। মেসেজের বয়ান যখন এই, তাহলে তো মনে হচ্ছে না মিটিংটা কাটানো যাবে, বা উচিত। ঠিক আছে। না হয় গিনিকে নিয়েই বেরোবে। শ্রীময়ীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে তারপর দুই বন্ধু কোথাও একটা লাঞ্চ সেরে নেবে। ও সেইমতো জানিয়ে মেসেজ করে দেয় গিনিকে। তারপর নটার এলার্ম দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ ভীষণ হেকটিক গেছে। একটু ঘুমানো দরকার।
এলার্মের শব্দে তুয়ার ঘুম ভাঙে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে গিনির মেসেজ। প্ল্যান চেঞ্জ। তুয়া যেন ওর কাজ মিটিয়ে একেবারে সোজা গিনির মামাবাড়ি চলে আসে। ওখানেই লাঞ্চ হবে। কাকিমা পইপই করে বলে দিয়েছেন। হুম। তাহলে তো হাতে এখনো খানিকটা সময় আছে। এই ভেবে তুয়া আরো এক ঘন্টা শুয়ে থাকে। তন্দ্রা মতো এসেছিল। আবার এলার্মের শব্দে এবার একেবারে উঠে স্নান সেরে দুধ কর্ণফ্লেক্স দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্য তৈরি হয়ে নেয়। শ্রীময়ী সাড়ে এগারোটা বলেছেন মানে সেটা সাড়ে এগারোটাই। এক চুলও এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। সামারে ইন্টার্নশিপ করে এটা ভালোই বুঝে গিয়েছে। তুয়ার ভালো লাগে এই সময়ের দাম। ম্যামের অনেক কিছুই ও খুব পছন্দ করে। ম্যামকে ও ভীষণ শ্রদ্ধা করে।
যথাসময়ে পৌঁছে শ্রীময়ীর অফিসের বাইরে ওয়েটিং এরিয়াতে অপেক্ষা করে তুয়া। ঠিক এগারোটা কুড়ি নাগাদ শ্রীময়ী অফিস ঢোকে। তুয়াকে দেখে হেসে আর একটু অপেক্ষা করতে বলে নিজের চেম্বারে চলে যায়। সাড়ে এগারোটা, কাঁটায় কাঁটায়, তুয়ার ডাক পড়ে। তুয়া একটু নার্ভাস। রিপোর্টটা যদিও ও জান প্রাণ দিয়ে লিখেছে, তবুও, কোথায় জানি ভিতরে ভিতরে একটা ভয় থেকেই গিয়েছে। আসলে শ্রীময়ী ম্যাম ওর ওপর এতটাই ভরসা করেন, আশা করেন...তুয়া একটু বুক ধুকপুক নিয়েই ভিতরে গেল। শ্রীময়ীর চেম্বারের এসিটা বরাবর খুব ঠান্ডা। ঠান্ডা আর নার্ভাসনেসে তুয়া যেন ঠকঠক করে কাঁপতে থাকলো। শ্রীময়ী হেসে ওকে বসতে বললেন। তুয়া চেয়ার টেনে বসলো। শ্রীময়ী সামনে রাখা ডেস্কটপের বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। ওখানে তুয়ার রিপোর্টটা খোলা। কে জানে, কী বলেন।
"বুঝলে তুয়া, লেখাটা ভালোই হয়েছে। যা বুঝলাম, ইউ হ্যাভ ডান আ কমপ্রিহেনসিভ রিসার্চ। ভালো ভালো পয়েন্টস তুলে ধরেছ। তবে আরো একটু ডিটেলিং দরকার।" শ্রীময়ীর কথা শুনে তুয়া যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ও বললো, "ঠিক আছে ম্যাম। আমায় একটু বলে দিন কোথায় কোথায় কী ঠিক করতে হবে। আমি দেখে করে নেবো।" শ্রীময়ী হেসে উত্তর দিলো, "সে ঠিক আছে। তবে এক্ষুণি চাই না। এক্ষুণি তোমার সময় হবে না। ইউ হ্যাভ মোর ইম্পরট্যান্ট থিংস টু লুক ফর রাইট নাও।" তুয়া অবাক। ব্যাপারটা কী, বোঝেনা ও। শ্রীময়ীর চোখে মুখে এমন রহস্য কেন? আবার হাসছেনও। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শ্রীময়ী এবার জোরে হেসে বলেন, "অবাক হচ্ছ, তাই তো? আমি বুঝিয়ে বলি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে একটা ওয়ার্কশপ অর্গানাইজ করেছে পাবলিশিংয়ের ওপর। এটা তিন সপ্তাহের। প্রথম সপ্তাহ কলকাতায় হবে। তারপর ওরা লন্ডনে ওদের সেন্টারে নিয়ে যাবে। সেখানে বাকি দুই সপ্তাহ চলবে ইন্টেন্স ওয়ার্কশপ। আমাদের এখান থেকে আমি তোমার নাম রেকমেন্ড করি, বেসড অন ইয়োর পারফরমেন্স লাস্ট সামার। ওরাও তোমায় সিলেক্ট করেছে। এটা ডিসেম্বরের থার্ড উইকে হবে। সো, গেট সেট টু স্পেন্ড ইয়োর ক্রিসমাস ইন লন্ডন!"
খবরটা অভাবনীয়। এমন সুযোগ পেয়ে তুয়া বেদম খুশি। ব্যাপারটা ওর কাছে অভাবনীয় হলেও, তবুও, কোথাও গিয়ে যেন মনে হচ্ছে, ও এটা ডিজার্ভ করে। ইন্টার্নশিপে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। রেজাল্ট ভালো করেছে কলেজে। এটা যেন সত্যিই ওর প্রাপ্য। এই সম্মানীয় ওয়ার্কশপ ওর অধ্যবসায়ের পুরস্কার। এই প্রাপ্তিতে তুয়া আপ্লুত। অনেকটা দায়িত্বও বটে। নিজের যোগ্যতার ও এই প্রাপ্তির মর্যাদারক্ষার গুরুদায়িত্ব ওর ঘাড়ে। সামনে সোনালী দিন। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বছরের শেষটা তাহলে ভালোই কাটবে, মনে মনে হাসে তুয়া। এই বছরটা সত্যিই অদ্ভুত। নানান অনুভূতির রোলার কোস্টার।
তুয়ার হিজবিজি ২৯
গিনি। এই সময়? এখন তো ওদের ওখানে মাঝ রাত্তির। তুয়া খুব অবাক হয়। ফোনটা রিসিভ করে বলে, "হ্যাঁ গিনি। বল। এই এত রাত্রে, কী হলো?" উল্টোদিক থেকে গিনির সুরেলা কণ্ঠস্বর শোনে তুয়া। "রাত দশটা আবার এত রাত্তির কবে থেকে হলো আমার তুয়াপাখি?" তুয়া অবাক হয়ে যায়। বুঝতে পারে না গিনির কথা। গিনিই আবার কলকল করে বলতে থাকে, "বুঝলি না তো? কবে যে একটু বোধ বুদ্ধি হবে তোর? ওরে, আমি এখন কলকাতায় রে।" তুয়া এবার সজাগ। উত্তর দেয়, "অ্যাঁ সে কী? কবে এলি? হঠাৎ?" গিনি বলে, "তিষ্ঠ। তিষ্ঠ। বলছি। আমি এই এক্ষুনি ল্যান্ড করেছি। এখনও এয়ারপোর্টের বাইরেও বেরোইনি। ইমিগ্রেশনের লাইনে আছি। ওখানে এখন সামার ব্রেক। বাড়ি এসেছি তাই। তুই এর মধ্যে অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিস। তাই আর তোকে বলা হয়নি কিছু। প্লাস আমি ভাবলাম, তোকে সারপ্রাইজ দিই। তা বল, কেমন হলো সারপ্রাইজটা?" গিনির কণ্ঠস্বরে উচ্ছ্বাস উপচে পড়ছে। তুয়াও ভীষণ খুশি। বেস্ট ফ্রেন্ড শহরে। পরীক্ষাও শেষ। কয়েকটাদিন জমিয়ে মজা হবে। গিনির সাথে কথা বলে তুয়া জানলো যে গিনি এখন দেড় মাসের ছুটি নিয়ে এসেছে দেশে। সপ্তাহখানেক মামার বাড়িতে থাকবে কলকাতায়। তারপর আসানসোলে যাবে। দুজনে ঠিক করে নিলো, এই এক সপ্তাহে রোজ ওরা দুজনে দেখা তো করবেই, কাকিমা, মানে গিনির মায়ের থেকে স্পেশাল পারমিশান করে অন্তত দুদিন গিনি তুয়ার কাছে থাকবে। তারপর তুয়াও ওদের সাথে একসাথেই আসানসোলে ফিরবে। আগামীকাল সকাল সকাল তুয়া গিনির মামাবাড়ি পৌঁছে যাবে, ঠিকানা গিনি পাঠিয়ে দেবে। এমনটা কথা হলো।
তুয়া খুশিমনেই বাড়ি ফিরলো। ভাগ্যিস মেখলার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যানটা বাতিলকরে দিয়েছিল। এখন ফিরে তাড়াতাড়ি শ্রীময়ী ম্যামের দেওয়া কাজটা শেষ করতে হবে। ম্যামকে মেল করে দেবে। ব্যস। কাল থেকে এক সপ্তাহ শুধুই গিনির সাথে ঘুরে বেড়াবে, আড্ডা দেবে। কতদিনের জমা কথা রয়েছে। তারপর সপ্তাহখানেক বাড়িতে থেকে ফিরে এসেই ইন্টার্নশিপ। চেষ্টা করে দেখবে যদি কয়েকটাদিন ছুটি বাড়ানো যায়। গিনি আসায় পরিস্থিতিই আলাদা এখন। জেঠিমা জেগেই ছিলেন। দরজা খুলে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন টুকটাক পরীক্ষার কথা, বন্ধুদের কথা। তুয়া এই সুযোগে বলে দিলো গিনির কথা। জেঠিমা মনে মনে খুশি হলেন। আসলে তুয়াকে অনেকদিন ওরকম দুমড়ে মুচড়ে থাকতে দেখে সবাই এখন ওর হাসিমুখের অপেক্ষায় থাকে।
তুয়া ওপরে উঠে ঘরে এলো। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ খুলে বসলো। অনেকটা অ্যাসাইন্মেন্ট বাকি। মনে হচ্ছে আজ রাত জাগতে হবে। শ্রীময়ী ম্যামের মেসেজ এলো ফোনে। "কাল সকাল দশটায় আমার অফিসে এসো। উইথ দ্য অ্যাসাইন্মেন্ট।" এই রে, এদিকে যে কাল সকালে গিনির সাথে প্ল্যান? এখন শ্রীময়ীকে কিছু বলে লাভ নেই, তুয়া ভাবল। আগে কাজটা শেষ করুক, তারপর মেল করে মেসেজ করে দেবে। ঘড়ি দেখলো তুয়া, সোয়া এগারোটা। বাড়িতে ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলে অবশেষে যখন কাজ নিয়ে বসলো, প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। নাহ, এইবারে কাজটা শেষ করতেই হবে, ভাবল তুয়া। আগে কাজ। তারপর ছুটির কথা। গিনি তো রইলোই। চুটিয়ে আনন্দ হবে এরপরে কটাদিন।
তুয়া খুশিমনেই বাড়ি ফিরলো। ভাগ্যিস মেখলার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যানটা বাতিলকরে দিয়েছিল। এখন ফিরে তাড়াতাড়ি শ্রীময়ী ম্যামের দেওয়া কাজটা শেষ করতে হবে। ম্যামকে মেল করে দেবে। ব্যস। কাল থেকে এক সপ্তাহ শুধুই গিনির সাথে ঘুরে বেড়াবে, আড্ডা দেবে। কতদিনের জমা কথা রয়েছে। তারপর সপ্তাহখানেক বাড়িতে থেকে ফিরে এসেই ইন্টার্নশিপ। চেষ্টা করে দেখবে যদি কয়েকটাদিন ছুটি বাড়ানো যায়। গিনি আসায় পরিস্থিতিই আলাদা এখন। জেঠিমা জেগেই ছিলেন। দরজা খুলে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন টুকটাক পরীক্ষার কথা, বন্ধুদের কথা। তুয়া এই সুযোগে বলে দিলো গিনির কথা। জেঠিমা মনে মনে খুশি হলেন। আসলে তুয়াকে অনেকদিন ওরকম দুমড়ে মুচড়ে থাকতে দেখে সবাই এখন ওর হাসিমুখের অপেক্ষায় থাকে।
তুয়া ওপরে উঠে ঘরে এলো। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ খুলে বসলো। অনেকটা অ্যাসাইন্মেন্ট বাকি। মনে হচ্ছে আজ রাত জাগতে হবে। শ্রীময়ী ম্যামের মেসেজ এলো ফোনে। "কাল সকাল দশটায় আমার অফিসে এসো। উইথ দ্য অ্যাসাইন্মেন্ট।" এই রে, এদিকে যে কাল সকালে গিনির সাথে প্ল্যান? এখন শ্রীময়ীকে কিছু বলে লাভ নেই, তুয়া ভাবল। আগে কাজটা শেষ করুক, তারপর মেল করে মেসেজ করে দেবে। ঘড়ি দেখলো তুয়া, সোয়া এগারোটা। বাড়িতে ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলে অবশেষে যখন কাজ নিয়ে বসলো, প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। নাহ, এইবারে কাজটা শেষ করতেই হবে, ভাবল তুয়া। আগে কাজ। তারপর ছুটির কথা। গিনি তো রইলোই। চুটিয়ে আনন্দ হবে এরপরে কটাদিন।
Monday, July 29, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২৮
আজ সেমিস্টার শেষ হলো। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে তুয়ার। কয়েকটাদিন ভীষণ চাপের মধ্যে ছিল এই পরীক্ষা নিয়ে। একেই মকবুলের কেসটা চলছিল। তার জন্য ওকে মাঝে মধ্যে কয়েকবার কোর্টে যেতে হয়েছে। এখন অবশেষে ওই চ্যাপ্টার ক্লোজড। মকবুলের শাস্তি হয়েছে। কলেজের স্যার ম্যামেরা যারা প্রথমে ওকে চাপ দিচ্ছিলেন ওঁর ফেসবুক পোস্ট উলে নেওয়ার জন্য, তাঁরাও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবল ক্ষমতার কাছে মাথা নত তো করেইছেন, এছাড়াও, ওঁরা প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। সমস্ত ঝঞ্ঝাট মিটতে মিটতে সেমিস্টার পরীক্ষা এক্কেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছিল। তাই তুয়ার একটু চিন্তা ছিলই। তবে আজ অনেকটা নিশ্চিন্ত।যতটা খারাপ হবে ভেবেছিল, তেমন তো হয়েইনি। বরং মোটামুটি ভালোই হয়েছে। র্যাঙ্ক ওয়ান না হলেও প্রথম পাঁচে থাকবেই। এই পরিস্থিতিতে এটা ওর কাছে বিরাট। কাউন্সেলিং সেশন চলছে। ডাক্তার মুন্সী ওর উন্নতিতে বেশ সন্তুষ্ট। এখন দু সপ্তাহে একদিন গেলেই হয়। আর ওষুধের ডোজও কমিয়ে দিয়েছেন।
পরীক্ষা শেষে ক্লাসমেটরা সব হইহই করে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেললো। তুয়ার টিকিটও কাটা হয়েছে। ছটার শো তে সিনেমা দেখে তারপর ডিনার সেরে যে যার ডেরায়। তুয়ার একটু চিন্তা হলো। দশটার মধ্যে ও ফিরতে পারবে? জেঠু জেঠিমাকে বলে দিলেই হবে। ওরা রাগ করবেন না ঠিকই। কিন্তু ওদের অসুবিধের মধ্যে ফেলা। তুয়া খানিক ইতস্তত করে। মেখলা বলে, "আরে, কোনো চিন্তা নেই। তুই আমার সাথে চল। আমার বাড়িতে থেকে যাবি। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে না হয় ফিরিস। এমনিও কাল থেকে ছুটি। কোনো তাড়া নেই তো?" তুয়া খানিক ভাবে। হ্যাঁ, এমনটা হতেই পারে। বরং এতেই সুবিধে। ও টুক করে জেঠিমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। জেঠিমা একটু কিন্তু কিন্তু করেন। বলেন যে তুয়ার ফিরতে দেরি হলেও কোনো ব্যাপার না। এক আধদিন এমন হতেই পারে। উনি অপেক্ষা করবেন। তুয়া একটু দোটানায় পড়ে যায়। কী করবে? মেখলা ভালো বন্ধু। সব ভালো। কিন্তু ওর যে বাড়ি ফিরে কাজ আছে। শ্রীময়ী ম্যাম কাজ দিয়েছেন। সেটা শেষ করতে হবে। কাল সকালের মধ্যে পাঠানোর কথা। হয়তো ও বললে ম্যাম ডেডলাইন বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু তাও। তুয়ার ইচ্ছে করে না ম্যামকে দেওয়া কথা ফেলতে। ও মেখলাকে না করে দেয়। মনে মনে ঠিক করে, বন্ধুদের বলবে সিনেমা শেষে ফুড কোর্টেই ডিনার করতে। তাহলে একটু তাড়াতাড়িই হবে। আর ওর ফিরতেও বেশি দেরি হবে না।
সিনেমাটা দারুন উপভোগ করলো ওরা সব্বাই। আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প হলেও, বেশ ঝকঝকে, নিউ এজ। তারপর ফুড কোর্টে পিজ্জা বার্গার আর মোয়িতো খেয়ে যে যার মতো বেরোলো। তুয়ার বাড়ি যেতে গেলে দুবার অটো বদলাতে হবে। নইলে বাস। তবে বাসের ফ্রিকিউন্সি কম। ও রাস্তা পার হয়ে। এখন পৌনে দশটা। যাক। নিশ্চিন্ত হয়। বেশি দেরি হয়নি। বাস স্টপে ওর সাথে মেখলা, শঙ্খ আর রুবাইয়াত রয়েছে। শঙ্খ আর রুবাইয়াত একই দিকে যাবে। নাকতলা। মেখলা মুকুন্দপুর। ছেলে দুটো ওদের দুই মেয়েকে বাসে অটোতে তুলে তবে নিজেরা ফিরবে। তুয়ার ভালো লাগে এইটা। এইজন্যই তো বন্ধুত্ব। এই এদের ভরসায়ই তো ও এখনো এত কিছুর পরেও কলকাতায় এক রয়ে গিয়েছে। মনে মনে ঠাকুরের কাছে ও মাঝে মাঝেই এদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় তুয়া।
আজ কপাল ভালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাস এসে গেল। খুব বেশি ভিড় নেই। বন্ধুদের হাত নেড়ে ও উঠে পড়ে। আধ ঘন্টার রাস্তা। জানলার ধারে সিট পেয়ে যায় তুয়া। জেঠিমাকে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয়। তারপর ইয়ারফোনে গুঁজে ফেলে কানে। রাতের কলকাতা। ঠান্ডা হাওয়া। আর কানে রেট্রো মিউজিক। অদ্ভুত ভালো কম্বিনেশন। তুয়া চোখ বুজে গানের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে। হঠাৎ গান থেমে যায়। ফোন বাজছে। তুয়া চোখ খোলে। স্ক্রিনে ভাসছে একটা নাম। তুয়া অবাক হয়।
পরীক্ষা শেষে ক্লাসমেটরা সব হইহই করে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেললো। তুয়ার টিকিটও কাটা হয়েছে। ছটার শো তে সিনেমা দেখে তারপর ডিনার সেরে যে যার ডেরায়। তুয়ার একটু চিন্তা হলো। দশটার মধ্যে ও ফিরতে পারবে? জেঠু জেঠিমাকে বলে দিলেই হবে। ওরা রাগ করবেন না ঠিকই। কিন্তু ওদের অসুবিধের মধ্যে ফেলা। তুয়া খানিক ইতস্তত করে। মেখলা বলে, "আরে, কোনো চিন্তা নেই। তুই আমার সাথে চল। আমার বাড়িতে থেকে যাবি। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে না হয় ফিরিস। এমনিও কাল থেকে ছুটি। কোনো তাড়া নেই তো?" তুয়া খানিক ভাবে। হ্যাঁ, এমনটা হতেই পারে। বরং এতেই সুবিধে। ও টুক করে জেঠিমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। জেঠিমা একটু কিন্তু কিন্তু করেন। বলেন যে তুয়ার ফিরতে দেরি হলেও কোনো ব্যাপার না। এক আধদিন এমন হতেই পারে। উনি অপেক্ষা করবেন। তুয়া একটু দোটানায় পড়ে যায়। কী করবে? মেখলা ভালো বন্ধু। সব ভালো। কিন্তু ওর যে বাড়ি ফিরে কাজ আছে। শ্রীময়ী ম্যাম কাজ দিয়েছেন। সেটা শেষ করতে হবে। কাল সকালের মধ্যে পাঠানোর কথা। হয়তো ও বললে ম্যাম ডেডলাইন বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু তাও। তুয়ার ইচ্ছে করে না ম্যামকে দেওয়া কথা ফেলতে। ও মেখলাকে না করে দেয়। মনে মনে ঠিক করে, বন্ধুদের বলবে সিনেমা শেষে ফুড কোর্টেই ডিনার করতে। তাহলে একটু তাড়াতাড়িই হবে। আর ওর ফিরতেও বেশি দেরি হবে না।
সিনেমাটা দারুন উপভোগ করলো ওরা সব্বাই। আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প হলেও, বেশ ঝকঝকে, নিউ এজ। তারপর ফুড কোর্টে পিজ্জা বার্গার আর মোয়িতো খেয়ে যে যার মতো বেরোলো। তুয়ার বাড়ি যেতে গেলে দুবার অটো বদলাতে হবে। নইলে বাস। তবে বাসের ফ্রিকিউন্সি কম। ও রাস্তা পার হয়ে। এখন পৌনে দশটা। যাক। নিশ্চিন্ত হয়। বেশি দেরি হয়নি। বাস স্টপে ওর সাথে মেখলা, শঙ্খ আর রুবাইয়াত রয়েছে। শঙ্খ আর রুবাইয়াত একই দিকে যাবে। নাকতলা। মেখলা মুকুন্দপুর। ছেলে দুটো ওদের দুই মেয়েকে বাসে অটোতে তুলে তবে নিজেরা ফিরবে। তুয়ার ভালো লাগে এইটা। এইজন্যই তো বন্ধুত্ব। এই এদের ভরসায়ই তো ও এখনো এত কিছুর পরেও কলকাতায় এক রয়ে গিয়েছে। মনে মনে ঠাকুরের কাছে ও মাঝে মাঝেই এদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় তুয়া।
আজ কপাল ভালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাস এসে গেল। খুব বেশি ভিড় নেই। বন্ধুদের হাত নেড়ে ও উঠে পড়ে। আধ ঘন্টার রাস্তা। জানলার ধারে সিট পেয়ে যায় তুয়া। জেঠিমাকে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয়। তারপর ইয়ারফোনে গুঁজে ফেলে কানে। রাতের কলকাতা। ঠান্ডা হাওয়া। আর কানে রেট্রো মিউজিক। অদ্ভুত ভালো কম্বিনেশন। তুয়া চোখ বুজে গানের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে। হঠাৎ গান থেমে যায়। ফোন বাজছে। তুয়া চোখ খোলে। স্ক্রিনে ভাসছে একটা নাম। তুয়া অবাক হয়।
Thursday, July 25, 2019
"মেঘের পরে মেঘ জমেছে।"
লাল কুর্তি আর নীল টি-শার্টের ভারী বন্ধুত্ব। ফার্স্ট ইয়ারে, ফ্রেশার্স থেকেই। তারা ক্লাসে পাশাপাশি বসে। একসাথে লাইব্রেরি যায়। দিনের শেষে বাস স্ট্যান্ডের লাগোয়া মামার দোকান থেকে রোজ চা টোস্টও খায়। ঝিল পাড়ে ঝিম মারা দুপুরে বসে পিট সিগার আর লালন নিয়ে গভীর আলোচনায়ও মত্ত থাকে। ৪৫ আর মেট্রোর অটো দুজনকে আলাদা করতে গিয়েও পারে না। ওয়াটসআপের সবুজ আইকনের জোরে ওদের ট্র্যাফিকও দিব্যি স্মুদলি চলতে থাকে। বন্ধুত্বে আবার যানজট কী?
কিন্তু, হঠাৎই একদিন সিগন্যালে গাড়ি থমকে যায়। লাল কুর্তি একদিন আবিষ্কার করে, নীল টিশার্টের সাথে যেন হলুদ কামিজ বড্ড বেশিই মানাচ্ছে। ফিজিক্সে পড়া কালার থিয়োরির এমন প্র্যাকটিক্যাল উদাহরণ এত সহজে পাবে, লাল কুর্তি ভাবতেই পারেনি। ঘুণাক্ষরেও না। নীল আর হলুদে মিলে মিশে ঈর্ষার সবুজ ঢেকে দিচ্ছে সব কিছু। দুঃখে, যন্ত্রনায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে লাল কুর্তির। এই বন্ধুত্ব? এই দোসর?
ঝিল পাড়টা আজ বড্ড নির্জন। নিরিবিলি। গাছের পাতা নড়ছে না। আকাশ থমথমে। মেঘ করে আছে। গুমোট চারিদিক। ভালো লাগছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না লাল কুর্তির। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাথর ছোড়া ঢেউ রাশির দিকে। আনমনে।
এমন সময়, কাঁধে অনুভব করে একটা হাত। বড় চেনা এই স্পর্শ। এক রাশ ভরসা মাখা একটা দৃঢ় হাত। চোখ না তুলেই লাল কুর্তি বলে দিতে পারে, এ হাতের মালিক কে। মুখ তুলে তাকায় না সে। তাকাবেই বা কী ভাবে? এক বুক অভিমান আর দলা পাকানো দুঃখগুলো তো ইতিমধ্যেই বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নীল টিশার্ট চুপ করে এসে পাশে বসে। দুজনেই চুপ। পাশে রাখা গিটারটা নিয়ে খানিক টুংটাং করে নীল টিশার্ট। কখন জানি তারই মধ্যে এসে যায় সুর, আসে লয়, আসে ছন্দ।
আর ঠিক তখনই, আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। মুষলধারে। ঝাপসা চারিপাশ। পারিপার্শ্বিকের 'ক্যাকফোনি' পায় সুর, দুটি আনাড়ি ঠোঁটের ফাঁকে।
পার্কিং লট থেকে গাড়ির রেডিওটা আপন মনে জানায় আলিপুরের বিপদসীমার সতর্কবার্তা।
বর্ষা এলো শহরে।
লাল কুর্তি আর নীল টি-শার্টের ভারী বন্ধুত্ব। ফার্স্ট ইয়ারে, ফ্রেশার্স থেকেই। তারা ক্লাসে পাশাপাশি বসে। একসাথে লাইব্রেরি যায়। দিনের শেষে বাস স্ট্যান্ডের লাগোয়া মামার দোকান থেকে রোজ চা টোস্টও খায়। ঝিল পাড়ে ঝিম মারা দুপুরে বসে পিট সিগার আর লালন নিয়ে গভীর আলোচনায়ও মত্ত থাকে। ৪৫ আর মেট্রোর অটো দুজনকে আলাদা করতে গিয়েও পারে না। ওয়াটসআপের সবুজ আইকনের জোরে ওদের ট্র্যাফিকও দিব্যি স্মুদলি চলতে থাকে। বন্ধুত্বে আবার যানজট কী?
কিন্তু, হঠাৎই একদিন সিগন্যালে গাড়ি থমকে যায়। লাল কুর্তি একদিন আবিষ্কার করে, নীল টিশার্টের সাথে যেন হলুদ কামিজ বড্ড বেশিই মানাচ্ছে। ফিজিক্সে পড়া কালার থিয়োরির এমন প্র্যাকটিক্যাল উদাহরণ এত সহজে পাবে, লাল কুর্তি ভাবতেই পারেনি। ঘুণাক্ষরেও না। নীল আর হলুদে মিলে মিশে ঈর্ষার সবুজ ঢেকে দিচ্ছে সব কিছু। দুঃখে, যন্ত্রনায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে লাল কুর্তির। এই বন্ধুত্ব? এই দোসর?
ঝিল পাড়টা আজ বড্ড নির্জন। নিরিবিলি। গাছের পাতা নড়ছে না। আকাশ থমথমে। মেঘ করে আছে। গুমোট চারিদিক। ভালো লাগছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না লাল কুর্তির। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাথর ছোড়া ঢেউ রাশির দিকে। আনমনে।
এমন সময়, কাঁধে অনুভব করে একটা হাত। বড় চেনা এই স্পর্শ। এক রাশ ভরসা মাখা একটা দৃঢ় হাত। চোখ না তুলেই লাল কুর্তি বলে দিতে পারে, এ হাতের মালিক কে। মুখ তুলে তাকায় না সে। তাকাবেই বা কী ভাবে? এক বুক অভিমান আর দলা পাকানো দুঃখগুলো তো ইতিমধ্যেই বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নীল টিশার্ট চুপ করে এসে পাশে বসে। দুজনেই চুপ। পাশে রাখা গিটারটা নিয়ে খানিক টুংটাং করে নীল টিশার্ট। কখন জানি তারই মধ্যে এসে যায় সুর, আসে লয়, আসে ছন্দ।
আর ঠিক তখনই, আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। মুষলধারে। ঝাপসা চারিপাশ। পারিপার্শ্বিকের 'ক্যাকফোনি' পায় সুর, দুটি আনাড়ি ঠোঁটের ফাঁকে।
পার্কিং লট থেকে গাড়ির রেডিওটা আপন মনে জানায় আলিপুরের বিপদসীমার সতর্কবার্তা।
বর্ষা এলো শহরে।
Monday, July 22, 2019
শৈলজা মুখোপাধ্যায়। বয়স পঁয়ষট্টি। নিবাস উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়ি। সেই প্রাচীন বাড়ির সাথেই মানানসই প্রাচীন ওঁর ধ্যান ধারণা, ওঁর চিন্তা ভাবনা। এখনো বাড়িতে কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়া বিয়ের সম্পর্ক হয় না। ব্রাহ্মণী ছাড়া রান্নাঘরে কেউ ঢুকতে পারে না। "ম্লেচ্ছ"দের স্থান নেই। এমনকী, নিজের কনিষ্ঠ পুত্রী, আনন্দিতা যখন বাড়ির নিয়ম ও অনুশাসনকে অবজ্ঞা করে বিলেতে পড়তে গিয়ে এক ইউরোপীয় সাহেবকে বিয়ে করার কথা বলে, তৎক্ষণাৎ মুখোপাধ্যায় বাবু, গিন্নীর প্ররোচনায় কন্যাকে ত্যাজ্য করেন।
এই শৈলজা দেবী আজ বড়ই বিড়ম্বিত। ওঁর ছোট নাতি, শ্রীমান দেবমাল্য স্কুল থেকে ফেরার পথে এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। অস্ত্রোপচার করতে হবে। এবং তার জন্য প্রয়োজন রক্তের। আশু। সমস্যা এই যে নাতিবাবুর রক্তের গ্রুপ অত্যন্ত বিরল। ডোনার পাওয়া যাচ্ছেনা। খোঁজ চলছে। এদিকে রক্তের জোগাড় না হলে অস্ত্রোপচারও শুরু করা যাচ্ছে না।
গোটা পরিবার হয় নার্সিং হোমে রয়েছে, নয় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। রক্তের সন্ধানে। শৈলজা দেবী ঠাকুরঘরে বসে। সারাদিন জল পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি। ক্রমাগত ইষ্টনাম জপ করে চলেছেন। আজ উনি সমস্ত কিছু জনার্দনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় একমাত্র উনিই সব ঠিক করতে পারেন। নার্সিং হোম থেকে খবর আসছে মাঝে মাঝে। কোনো উন্নতি নেই অবস্থার। বরং যত সময় যাচ্ছে, ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ডাক্তারদেরও।
"ঠাকুর, আমার নাতিটাকে দেখো। ও সুস্থ হয়ে উঠলে, তোমায় সোনার মুকুট গড়িয়ে দেবো। কথা দিলাম।" ঈশ্বরের বেদির সামনে বসে কাঁদতে থাকেন শৈলজা। এমন সময় আদ্যিকালের ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে। কাজের লোক দুলাল ধরে। খানিক কথার পর ছুটতে ছুটতে এসে বলে, "গিন্নীমা, আপনার প্রার্থনা কাজে দিয়েছে। ছোটখোকার জন্য রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে। অপরেশন শুরু হবে এবার।"
শৈলজা দেবীর দু চোখ উপচে জল পড়তে থাকে। যাক, ঈশ্বর আছেন। শুনেছেন ওর প্রার্থনা। দুহাত জোরে ঠাকুরের সামনে প্রণাম সারেন।
নার্সিং হোমে তখন ডাক্তারদের তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফাতেমা বেগমের শরীর থেকে বিরল গ্রুপের রক্ত নিয়ে এবার অস্ত্রোপচার শুরু করতে হবে দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়ের। বাঁচাতেই হবে ওকে। ওর ঠাকুমার প্রার্থনার জোর আছে কি না, তার কঠিন পরীক্ষা আজ।
বিধাতা অলক্ষ্যে হাসেন। বড়ই বিচিত্র এ মানব সংসার।
Monday, July 15, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২৭
সোশ্যাল মিডিয়ার যে কী অপরিসীম ক্ষমতা, তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। তুয়ার ওপর ফেসবুক পোস্ট তুলে নেওয়ার জন্য চাপের অডিও রেকর্ডিং এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। শুধু কলকাতায় নয়, বরং সারা দেশ, এমন কি বিদেশেও বহু ভারতীয় ছাত্র ছাত্রী সেটি শেয়ার করেছে। টিভি চ্যানেলগুলো পেয়ে গেছে নতুন মোড়। ইয়িমধ্যেই সেখানে প্যানেল ডিসকাশন বসে গিয়েছে। তুয়া আর কিচ্ছু করেনি। চুপচাপ বসে দেখে যাচ্ছে। ওর এই লড়াইয়ে এই চেনা অচেনা লোকজন ওকে সাপোর্ট করছে, ওর হয়ে ঝড় তুলছে, এটা তুয়াকে একটা বিরাট সাহস যোগাচ্ছে। ওর কলেজের এবং অন্যান্য কলেজ, রিসার্চ ইনস্টিটিউটগুলো থেকেই ক্রমে অনেকেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দিক থেকে হ্যারাসমেন্টের কথা জানাচ্ছে। তুয়ার বাবা মাও এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত। মেয়ের লড়াইয়ের গুরুত্ব তাঁরা বুঝেছেন। এর মধ্যে এসে মেয়ের কাছে থেকেও গিয়েছেন কদিন। তুয়ার সাথে ডক্টর মুন্সীর কাছেও গিয়েছেন। ওঁদের সাথে আলাদা ভাবে কথা হয়েছে ডাক্তারের।
কলেজে তুয়া নিয়মিত যাচ্ছে। ক্লাসও ঠিকমতোই হচ্ছে। ইউনিভার্সিটির হস্তক্ষেপে গভর্নিং বডি ও প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পরের দিনই ইন্টারনাল কমিটি বসে এবং তাঁরা প্রত্যেকেই সাসপেন্ডেড হন। ডিপার্টমেন্টের বাকি স্যার ম্যামেরা সত্যি সত্যিই তুয়ার পক্ষে, নাকি সাসপেনশনের ভয়ে কে জানে, তুয়াকে সব রকম সাহায্য করছেন।
লড়াইটা জোরদার চলছে। লড়াইয়ের মানসিকতা তুয়ার মন খারাপ ভয় অবসাদ সব যেন কোথায় উড়িয়ে দিয়েছে এক লহমায়। ডক্টর মুন্সী খুবই খুশি ওর প্রোগ্রেসে। কোর্টে কেস চলছে। গত হিয়ারিংয়ে তুয়াকে মিথ্যেবাদী প্রমাণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মকবুলের উকিলের। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি ফাইনাল জাজমেন্ট দেবেন। কারাদন্ড নিশ্চিত। আশা করা যায়, মকবুল সহ অন্যান্য অনেকেই এর থেকে যথেষ্ট শিক্ষা পাবে। ভবিষ্যতে দ্বিতীয়বার এমন আচরণ করার আগে দশবার ভাববে, ভয় পাবে।
তুয়া এখন অনেকটাই ভালো আছে। ও হাসে, সবার সাথে গল্প করে। আগের মতোই। কলেজের এই ঝড়ের পর থেকে ক্লাসমেটদের সাথে বন্ধুত্বটা এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে, অভাবনীয়। তুয়া কলেজ যেতে ভালোবাসে এখন। ক্লাস করে মন দিয়ে। পরীক্ষা এসে গেল আবার। তার জন্যও জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে। সাথে রয়েছে শ্রীময়ী ম্যামের দেওয়া কাজ। আবোল তাবোল নিয়ে লেখা। হ্যাঁ। তুয়াকে এই ইন্টার্নশিপটা পেতেই হবে। শ্রীময়ী ম্যামের থেকে অনেক কাজ শেখা বাকি ওর। নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে, শিগগিরই।
তুয়ার হিজিবিজি ২৬
তুয়ার পোস্টটা নিয়ে ফেসবুক সহ তামাম সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালোমতোই সাড়া পড়ে গিয়েছে। আর সেখানেই ভুরু কুঁচকে গিয়েছে কলেজের প্রিন্সিপালের। ওঁর ধারণা, যখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তুয়াকে কেসটা চালাতে বাধা দেয়নি কোনো, তা সত্ত্বেও কলেজের নাম পোস্টে দেওয়ায়, কলেজের বদনাম। পরেরদিন ফার্স্ট পিরিয়ডে ক্লাস চলাকালীন প্রিন্সিপালের অফিসকর্মী, শ্যামলবাবু এসে তুয়াকে প্রিন্সিপালের ঘরে নিয়ে যান। ঘরে ঢুকে তুয়া দেখে রাশভারী প্রিন্সিপাল অমিয়শঙ্কর মুখোপাধ্যায় তো রয়েইছেন, এ ছাড়াও কলেজের গভর্নিং বডির আরো চারজন স্যার এবং হৈমন্তী ম্যাম আছেন। তুয়াকে বসতে বলে অমিয়বাবুই প্রথম মুখ খুললেন।
"তুমি ফেসবুকে যে পোস্টটা করেছো, সেটা ডিলিট করে দাও।"
তুয়া চমকে যায়। বলে, "কেন স্যার? কোনো লিগ্যাল অসুবিধে?"
এবার রামতনু স্যার বললেন, "দেখো, লিগ্যাল কিছু কিনা আমরা জানি না। তুমি বললে ভালোই হলো। আমরা এই পয়েন্টটা চেক করবো। কিন্তু বর্তমানে বারবার কলেজের নাম আসায় আমাদের কলেজের এবং এখানকার বাকি স্টুডেন্ট ও টিচারদের সুখ্যাতি নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা চাই তুমি ওই পোস্ট তুলে নাও।"
কথাগুলো শুনে তুয়ার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এসব কী বলছেন ওঁরা? ও খানিক চুপ করে থাকে। মাথা নিচু। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলে, "আমার মনে হয় না আমার পোস্টের জন্য কলেজ বা কলেজের সাথে বর্তমানে যুক্ত কারুর মানহানি হচ্ছে বলে। আমি আমার পোস্টে কোনো অন্যায় দেখিনা। তাই ওই পোস্ট আমি তুলবো না।" উপস্থিত কেউই বোধহয় এই উত্তরের আশা করেননি। তুয়ার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ। নির্বাক। হৈমন্তী ম্যাম গলা খাকরি দিয়ে বললেন, "দেখো, তোমায় যেটা বলা হচ্ছে, সেটা শোনো। যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। ছেলেমানুষ তুমি। যা বলা হয়েছে, পালন করো। দেখি, ফোনটা দাও। ডিলিট করো পোস্ট।"
তুয়া এইবারে রেগে যায়। একটু জোরের সাথেই বলে, "আমি ডিলিট করবো না। আমায় জোর করতে পারেন না। তা ছাড়া আপনার রিক্রুট, মকবুল সিদ্দিকী যখন আমার সাথে এরকম জঘন্য ব্যবহার করলো, আমার শ্লীলতাহানি করলো, কই, তখন কলেজের বদনাম হয়নি? ইমিডিয়েটলি তো মকবুলকে আপনারা স্যাক করেননি। পুলিশ কেস শুরু হওয়ার পরে আপনারা ওকে স্যাক করেন, তাও পুলিশ কাস্টোডিতে ওকে তোলার পরে। আমি সামান্য এই ঘটনাচক্র জনসমক্ষে আনলেই সব প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে যায় কী ভাবে? আমায় বোঝান।"
তুয়ার এই তেজের জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। অমিয়বাবু উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, "তোমায় ঠিক এক ঘন্টা সময় দিলাম। দ্য পোস্ট মাস্ট বি টেকেন ডাউন। এলস, ইউ উইল সি ফর ইয়র্সেলফ, কলেজ কমিটির অবাধ্য হলে কী হয়। টেক দিস সিরিয়াসলি।"
"আপনি আমায় চ্যালেঞ্জ করছেন? তাও এই বিষয়ে? দুঃখিত স্যার। আপনি এটা ঠিক করলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতার কথা আপনি বোধহয় জানেন না। আমিও দেখে নিচ্ছি কী হয় এরপর।" এই বলে তুয়া হনহন করে বেরিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে কথা কাটাকাটি বাকবিতণ্ডার সম্ভাবনা ভেবে বাইরে লোক জমে গিয়েছিল। তুয়া ওর ক্লাসের বন্ধুদের সাথে নিয়ে কলেজ কম্পাউন্ডের একটা কোণে জড়ো হয়। রুনা এগিয়ে এসে তুয়াকে জিজ্ঞেস করে, "দেখি। ফোনটা দে। রেকর্ডিংটা ঠিকমতো এসেছে তো?" তুয়া ফোনটা এগিয়ে দেয়। রুনা স্পিকার অন করে।
পনেরো মিনিট পর যখন রেকর্ডিং থামে, সবার মুখে হাসি। প্রত্যেকে তুয়ার ফোন থেকে ব্লুটুথে ফাইল কপি করে নেয়। এইবার শুরু হবে সোশ্যাল মিডিয়াতে পুরোটা তুলে ধরার। রুনা ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকের মেয়ে। ওরই বুদ্ধিতে পুরো ব্যাপারটা প্ল্যান করা। ও সবাইকে আশ্বস্ত করে বললো, "দেখবি এবার মজাটা। জাস্ট দেখ। উইদিন আ ডে। দেখবি কী হয়।"
তুয়া শ্রীময়ীকেও পাঠিয়ে দিয়েছে ক্লিপিং। ওদিকে শ্রীময়ীও শুরু করে দিয়েছে কাজ। লড়াই জমে উঠেছে।
"তুমি ফেসবুকে যে পোস্টটা করেছো, সেটা ডিলিট করে দাও।"
তুয়া চমকে যায়। বলে, "কেন স্যার? কোনো লিগ্যাল অসুবিধে?"
এবার রামতনু স্যার বললেন, "দেখো, লিগ্যাল কিছু কিনা আমরা জানি না। তুমি বললে ভালোই হলো। আমরা এই পয়েন্টটা চেক করবো। কিন্তু বর্তমানে বারবার কলেজের নাম আসায় আমাদের কলেজের এবং এখানকার বাকি স্টুডেন্ট ও টিচারদের সুখ্যাতি নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা চাই তুমি ওই পোস্ট তুলে নাও।"
কথাগুলো শুনে তুয়ার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এসব কী বলছেন ওঁরা? ও খানিক চুপ করে থাকে। মাথা নিচু। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলে, "আমার মনে হয় না আমার পোস্টের জন্য কলেজ বা কলেজের সাথে বর্তমানে যুক্ত কারুর মানহানি হচ্ছে বলে। আমি আমার পোস্টে কোনো অন্যায় দেখিনা। তাই ওই পোস্ট আমি তুলবো না।" উপস্থিত কেউই বোধহয় এই উত্তরের আশা করেননি। তুয়ার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ। নির্বাক। হৈমন্তী ম্যাম গলা খাকরি দিয়ে বললেন, "দেখো, তোমায় যেটা বলা হচ্ছে, সেটা শোনো। যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। ছেলেমানুষ তুমি। যা বলা হয়েছে, পালন করো। দেখি, ফোনটা দাও। ডিলিট করো পোস্ট।"
তুয়া এইবারে রেগে যায়। একটু জোরের সাথেই বলে, "আমি ডিলিট করবো না। আমায় জোর করতে পারেন না। তা ছাড়া আপনার রিক্রুট, মকবুল সিদ্দিকী যখন আমার সাথে এরকম জঘন্য ব্যবহার করলো, আমার শ্লীলতাহানি করলো, কই, তখন কলেজের বদনাম হয়নি? ইমিডিয়েটলি তো মকবুলকে আপনারা স্যাক করেননি। পুলিশ কেস শুরু হওয়ার পরে আপনারা ওকে স্যাক করেন, তাও পুলিশ কাস্টোডিতে ওকে তোলার পরে। আমি সামান্য এই ঘটনাচক্র জনসমক্ষে আনলেই সব প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে যায় কী ভাবে? আমায় বোঝান।"
তুয়ার এই তেজের জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। অমিয়বাবু উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, "তোমায় ঠিক এক ঘন্টা সময় দিলাম। দ্য পোস্ট মাস্ট বি টেকেন ডাউন। এলস, ইউ উইল সি ফর ইয়র্সেলফ, কলেজ কমিটির অবাধ্য হলে কী হয়। টেক দিস সিরিয়াসলি।"
"আপনি আমায় চ্যালেঞ্জ করছেন? তাও এই বিষয়ে? দুঃখিত স্যার। আপনি এটা ঠিক করলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতার কথা আপনি বোধহয় জানেন না। আমিও দেখে নিচ্ছি কী হয় এরপর।" এই বলে তুয়া হনহন করে বেরিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে কথা কাটাকাটি বাকবিতণ্ডার সম্ভাবনা ভেবে বাইরে লোক জমে গিয়েছিল। তুয়া ওর ক্লাসের বন্ধুদের সাথে নিয়ে কলেজ কম্পাউন্ডের একটা কোণে জড়ো হয়। রুনা এগিয়ে এসে তুয়াকে জিজ্ঞেস করে, "দেখি। ফোনটা দে। রেকর্ডিংটা ঠিকমতো এসেছে তো?" তুয়া ফোনটা এগিয়ে দেয়। রুনা স্পিকার অন করে।
পনেরো মিনিট পর যখন রেকর্ডিং থামে, সবার মুখে হাসি। প্রত্যেকে তুয়ার ফোন থেকে ব্লুটুথে ফাইল কপি করে নেয়। এইবার শুরু হবে সোশ্যাল মিডিয়াতে পুরোটা তুলে ধরার। রুনা ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকের মেয়ে। ওরই বুদ্ধিতে পুরো ব্যাপারটা প্ল্যান করা। ও সবাইকে আশ্বস্ত করে বললো, "দেখবি এবার মজাটা। জাস্ট দেখ। উইদিন আ ডে। দেখবি কী হয়।"
তুয়া শ্রীময়ীকেও পাঠিয়ে দিয়েছে ক্লিপিং। ওদিকে শ্রীময়ীও শুরু করে দিয়েছে কাজ। লড়াই জমে উঠেছে।
Saturday, July 13, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২৫
আজ প্রথম হিয়ারিং ছিল কেসের। এবং স্বাভাবিকভাবেই তুয়ার অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো না। প্রথমত, দুর্ঘটনার প্রায় দু মাস পরে মকবুলের মুখোমুখি হতে হলো তুয়াকে। ওকে দেখে তুয়ার সারা শরীর অস্থির অস্থির করছিল। কী সাংঘাতিক অস্বস্তি। রাগ। ঘেন্না। বিরক্তি। মকবুলের উকিল সমানে ব্যাপারটাকে মিথ্যে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওদের যুক্তি, তুয়া নাকি আসন্ন পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য নিজে থেকে মকবুলকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এবং গোটা ঘটনাটাই মকবুলকে মিছিমিছি হ্যারাস করার জন্য সাজানো। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো বড় ষড়যন্ত্র আছে। তুয়ার হয়ে সওয়াল জবাব করছেন, শ্রীময়ীর পরিচিত, এডভোকেট পল্লবী মিত্র। তিনি একের পর এক যুক্তি তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে অপরপক্ষের সমস্ত এলিগেশন ভুল বলে দেখিয়ে দিচ্ছেন। দিনের শেষে আঘাত পাল্টা-আঘাত জেরায় জেরায় জীর্ণ তুয়া। আবার দশদিন পরে হিয়ারিং। পল্লবী বললেন, "চিন্তা করো না তুয়া। মকবুল শাস্তি পাবেই। শুধু কদিন নোংরামি কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। নিজেকে শক্ত রেখো।" তুয়া মাথা নাড়ে। শ্রীময়ী ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নেন। বাড়ি ড্রপ করবেন।
তুয়ার মা বাবা আজকের হিয়ারিংয়ে আসতে পারেননি। কিন্তু শ্রীময়ীর থেকে ইতিমধ্যেই সমস্ত ঘটনা জেনে নিয়েছেন। ওঁরা ভীষণ চিন্তিত। তুয়ার নিরাপত্তার জন্য। ওঁরা চাননি কেসটা এগোক। একলা থাকে তুয়া। পাছে ওর কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। আর জল ঘোলা করে কী হবে। এই তাঁদের বক্তব্য। তুয়া মানতে নারাজ। এরকমভাবে চলতে দিলে, শাস্তি না পেয়ে পেয়ে ক্রিমিনালগুলো আরো সাহস পেয়ে যাবে। বাড় বাড়বে ওদের। এ হতে দেওয়া যায় না। তুয়া লড়াকু মেয়ে। ও ঠিক করেছে, নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়বে না ও। কেসটা চালাবেই। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ফান্ড থেকে জমানো টাকা দিয়েই আপাতত চালাচ্ছে। দেখা যাক, এরপর কী হয়।
ও বাড়ি ফিরে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে একটা পোস্ট করলো। গোটা ঘটনাটা জানিয়ে। এবং সাথে আজকের শুনানির কথা। পোস্টটা পাব্লিক রাখলো। তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে রাত্রে শোয়ার আগে একবার আবার ফেসবুক খুললো। দেখলো ইতিমধ্যেই হাজার হাজার লাইক কমেন্ট ও শেয়ার হয়ে গেছে। বহু চেনা অচেনা লোকজন ওকে সাহস জুগিয়েছে। ইনবক্সেও কেউ কেউ নিজেদের ঘটনার কথা লিখেছে। বেশিরভাগের দাবি, মকবুলের শাস্তি হোক। কড়া শাস্তি। যা অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়। আবার কিছু কিছু লোক এরই মধ্যে ধর্ম নিয়ে তাজিয়া শুরু করে দিয়েছে। তুয়া যত্ন করে সেসব ডিলিট করলো। ওর লড়াইয়ে ধর্ম বা রাজনীতি, কোনটাই আসতে ও দেবে না। অপরাধীর কোনো ধর্ম হয় না। রাজনৈতিক রং হয় না।
Friday, July 12, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২৪
ডক্টর মুন্সীর চেম্বারে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে তুয়া যখন বাইরে এলো, শ্রীময়ী লক্ষ্য করলেন, এ যেন অন্য তুয়া। হাবেভাবে এই এক ঘন্টায়ই এসেছে অনেকটা সাহস, অনেকটা পরিবর্তন। ঝিমিয়ে থাকা, নিস্তেজ তুয়া যেন ঘুম ভেঙে উঠে এখন সকালের মতোই স্নিগ্ধ। শ্রীময়ী খুশি হন। এগিয়ে এসে তুয়ার কাছে গিয়ে বলেন, "কেমন এক্সপিরিয়েন্স?" তুয়া হেসে মাথা নেড়ে বলে, "ভালো। খুব ভালো। কয়েকটা ওষুধ দিলেন। বলেছেন আমি ঘুমোতে পারবো। ওইটা যদি সত্যিই হয়, আশা করছি হবে, জানেন ম্যাম, আমি নিশ্চিন্ত হই। কতদিন ঘুমোতে পারিনি।" শ্রীময়ী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বলেন, "উনি খুবই ভালো ডাক্তার। আমি নিজে বেনিফিটেড ওঁর চিকিৎসায়। তুমিও উপকার পাবেই। দেখো।" তুয়া একটু অবাক হয়েই তাকে শ্রীময়ীর দিকে। এই ঝকঝকে স্মার্ট, পাওয়ার উওম্যান শ্রীময়ী সরকারও সাইকিয়াট্রিক হেল্প নিয়েছেন, অকল্পনীয় তুয়ার কাছে। শ্রীময়ী তুয়ার চোখে মুখের প্রশ্ন দেখেই বুঝে যান। বলেন, "বলবো। সব বলবো। তা বলে চেম্বারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো না। চলো, লেকের ধারে যাই। যাবে তো? নাকি, চলো গঙ্গার ধারে যাই। হাওয়া খেয়ে আসি।" তুয়া সম্মতি জানায়।
অক্টোবরের শেষ। হেমন্ত কাল। শহর কলকাতায় এখনই ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। গঙ্গার ধারেও ভালোই হাওয়া। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। তুয়া আর শ্রীময়ী প্রায় ঘন্টা দেড়েক বসে আছে এখানে। এদিকটা একটু নিরিবিলি। সূর্য ডুবে গেল খানিক আগে। নৌকোগুলো সব ধীরে ধীরে ফিরে আসছে তীরে। দ্বিতীয় হুগলী সেতুতে আলো জ্বলে উঠেছে। হাওড়া ব্রিজেও গাড়ির ঢল নেমেছে। ব্যস্ত শহর। শুধু তার মধ্যে ঘাটের এই জায়গাটা বড্ড শান্ত। নিস্তরঙ্গ। শ্রীময়ী আজ মন খুলে গল্প করেছেন তুয়ার সাথে। নিজের ছোটবেলার কথা, স্কুলজীবনে মোটা হওয়ার কারণে বডি শেমিং এর কথা, কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেমের কথা, তারই মধ্যে এমবিশনে অনড় থেকে নিজের পছন্দের সাবজেক্ট পড়া, কেরিয়ার গড়া। তারপর বাবা মায়ের ও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের ভালোবাসার প্রতি অবিচল থেকে বয়সে ছোট প্রেমিকের সাথে বিয়ে, তারপর চুটিয়ে সংসার করার গল্প। ইতিমধ্যে সন্তানলাভে অসুবিধে ও তার থেকে আসা অবসাদের কারণেই ডক্টর মুন্সীর শরণাপন্ন হওয়া। অবশেষে আই ভি এফ করে তিতলির মা হয়ে তবে যেন একটু থিতু হয়েছেন। কেরিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন, দুইয়েই খানিকটা স্টেবল।
শ্রীময়ী সমস্ত কথা তুয়াকে বলে বললেন, "দেখলে তো, সবার জীবনেই কোনো না কোনো ঝড় ঝাপটা আসে। আবার সঠিক প্রিকশন ও চিকিৎসা করলে, সেই অসুখও চলে যায়। জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। আমি তোমায় আমার স্ট্রাগলের কথা বললাম। এরকম অনেক স্ট্রাগল অনেকেই করেন। এর চেয়ে বেশিও করেন। দুঃখ কম বেশি সকলের হয়। হয়তো অনেকে চেপে রেখে দেয়। তারপর তাদের সমস্ত শান্তি আনন্দ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় সেই দুঃখ। ইউ আর লাকি তুয়া, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। দেখবে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও আদেশ মেনে চললে, ইউ উইল বি ফাইন ভেরি সুন মাই গার্ল। বাড়িতে এখানে আবোল তাবোল আছে?"
তুয়া হ্যাঁ বলে।
শ্রীময়ী বলেন, "আজ ৩০শে অক্টোবর। সুকুমার রায়ের জন্মদিন। আজকের দিনে এই এডভাইস নাও। মন খারাপ হলেই এই বইটা খুলে পড়বে। দেখবে, ইনস্ট্যান্ট মুড ভালো হয়ে যাবে। বুঝলে?"
তুয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
শ্রীময়ী বলতে থাকেন, "আর হ্যাঁ, এই বইটার ওপর একটা লেখা চাই। দেড় হাজার শব্দ। বাই মিড নেক্সট মান্থ। সাথে একটা এপ্লিকেশন দেবে। আমার অফিসে উইন্টার ব্রেকে ইন্টার্নশিপ করতে হবে তো, নাকি? ও হ্যাঁ, সিলেক্টেড হলে কিন্তু দুর্দান্ত একটা সুযোগ আছে। অফিসের পেড ট্রিপ। লন্ডনে। দুদিনের কাজ আর তিনদিন ঘুরে বেড়ানো। সাউন্ডস গুড?"
তুয়ার চোখে মুখে হাসি ফোটে। উত্তর দেয়, "টু গুড!"
শ্রীময়ী অন্য দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মোছেন নিজের। মেয়েটাকে আজ অনেকদিন পর একটু যেন রিলিভড দেখছেন। যাক। ভালো থাকলেই ভালো।
অক্টোবরের শেষ। হেমন্ত কাল। শহর কলকাতায় এখনই ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। গঙ্গার ধারেও ভালোই হাওয়া। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। তুয়া আর শ্রীময়ী প্রায় ঘন্টা দেড়েক বসে আছে এখানে। এদিকটা একটু নিরিবিলি। সূর্য ডুবে গেল খানিক আগে। নৌকোগুলো সব ধীরে ধীরে ফিরে আসছে তীরে। দ্বিতীয় হুগলী সেতুতে আলো জ্বলে উঠেছে। হাওড়া ব্রিজেও গাড়ির ঢল নেমেছে। ব্যস্ত শহর। শুধু তার মধ্যে ঘাটের এই জায়গাটা বড্ড শান্ত। নিস্তরঙ্গ। শ্রীময়ী আজ মন খুলে গল্প করেছেন তুয়ার সাথে। নিজের ছোটবেলার কথা, স্কুলজীবনে মোটা হওয়ার কারণে বডি শেমিং এর কথা, কলেজ জীবনের ব্যর্থ প্রেমের কথা, তারই মধ্যে এমবিশনে অনড় থেকে নিজের পছন্দের সাবজেক্ট পড়া, কেরিয়ার গড়া। তারপর বাবা মায়ের ও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের ভালোবাসার প্রতি অবিচল থেকে বয়সে ছোট প্রেমিকের সাথে বিয়ে, তারপর চুটিয়ে সংসার করার গল্প। ইতিমধ্যে সন্তানলাভে অসুবিধে ও তার থেকে আসা অবসাদের কারণেই ডক্টর মুন্সীর শরণাপন্ন হওয়া। অবশেষে আই ভি এফ করে তিতলির মা হয়ে তবে যেন একটু থিতু হয়েছেন। কেরিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন, দুইয়েই খানিকটা স্টেবল।
শ্রীময়ী সমস্ত কথা তুয়াকে বলে বললেন, "দেখলে তো, সবার জীবনেই কোনো না কোনো ঝড় ঝাপটা আসে। আবার সঠিক প্রিকশন ও চিকিৎসা করলে, সেই অসুখও চলে যায়। জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। আমি তোমায় আমার স্ট্রাগলের কথা বললাম। এরকম অনেক স্ট্রাগল অনেকেই করেন। এর চেয়ে বেশিও করেন। দুঃখ কম বেশি সকলের হয়। হয়তো অনেকে চেপে রেখে দেয়। তারপর তাদের সমস্ত শান্তি আনন্দ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় সেই দুঃখ। ইউ আর লাকি তুয়া, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। দেখবে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও আদেশ মেনে চললে, ইউ উইল বি ফাইন ভেরি সুন মাই গার্ল। বাড়িতে এখানে আবোল তাবোল আছে?"
তুয়া হ্যাঁ বলে।
শ্রীময়ী বলেন, "আজ ৩০শে অক্টোবর। সুকুমার রায়ের জন্মদিন। আজকের দিনে এই এডভাইস নাও। মন খারাপ হলেই এই বইটা খুলে পড়বে। দেখবে, ইনস্ট্যান্ট মুড ভালো হয়ে যাবে। বুঝলে?"
তুয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
শ্রীময়ী বলতে থাকেন, "আর হ্যাঁ, এই বইটার ওপর একটা লেখা চাই। দেড় হাজার শব্দ। বাই মিড নেক্সট মান্থ। সাথে একটা এপ্লিকেশন দেবে। আমার অফিসে উইন্টার ব্রেকে ইন্টার্নশিপ করতে হবে তো, নাকি? ও হ্যাঁ, সিলেক্টেড হলে কিন্তু দুর্দান্ত একটা সুযোগ আছে। অফিসের পেড ট্রিপ। লন্ডনে। দুদিনের কাজ আর তিনদিন ঘুরে বেড়ানো। সাউন্ডস গুড?"
তুয়ার চোখে মুখে হাসি ফোটে। উত্তর দেয়, "টু গুড!"
শ্রীময়ী অন্য দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মোছেন নিজের। মেয়েটাকে আজ অনেকদিন পর একটু যেন রিলিভড দেখছেন। যাক। ভালো থাকলেই ভালো।
Thursday, July 11, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২৩
তুয়া বুঝতে পারে, আর ঘুমোনোর চেষ্টা করেও লাভ নেই। ঘুম ওর আসবেই না। এলেও, আবার সেই ভয়ানক দুঃস্বপ্ন। ও উঠে এসে বারান্দায় আরামকেদারায় গা এলিয়ে দেয়। বাইরে এখনো অন্ধকার। রাস্তা শুনশান। হাল্কা ঠান্ডা বাতাস বইছে। সামনের বাড়ির বাগান থেকে কামিনী ফুলের সুন্দর গন্ধ ভেসে আসছে। তুয়া কানে ইয়ারফোন গুঁজে নেয়। প্রাইভেট এফ এম চ্যানেলে গান চলতে থাকে। খানিক্ষণেই শুরু হবে "কালীকথা"। এই অনুষ্ঠানটা ওর ঠাকুমা নিয়মিত শোনেন। তুয়াও ঠাকুমার কাছে অনেকবার শুনেছে। অদ্ভুত শান্তি আসে মনে। তুয়া ঠিক করে, আজও শুনবে। রেডিও চলতে থাকে। যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আকাশ আস্তে আস্তে ফর্সা হতে থাকে। রাস্তায় এক এক করে মর্নিং ওয়াকার বের হয়। তাদের টুকরো টুকরো হাসি গল্প ছড়িয়ে পড়ে এদিক সেদিক। কখন জানি এসবের মধ্যে তুয়ার দু চোখ জুড়ে ঘুম এসে গিয়েছিল। কপালে একটা নরম হাতের ছোঁয়ায় ও ধড়ফড় করে উঠলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, জেঠিমা। "তোর জেঠু বাজার যাচ্ছিল, ওপরে তাকিয়ে দেখে তুই বারান্দায় শুয়ে আছিস। আমি তাই দেখতে এলাম। শরীর ঠিক আছে তো বাবা?" তুয়া আলতো মাথা নাড়ে। জেঠি খানিকক্ষণ ওর পাশে বসে। দুজনেই চুপ। কোনো কথা নেই। যথাসময়ে মীনাদি বাড়ি ঢোকে। গেট খোলার অজুহাতে জেঠিমা নীচে নেমে যায়।
তুয়া টাইমটেবিল দেখে। আজ শুধুই ফার্স্ট হাফে ক্লাস। শ্রীময়ীকে একটা মেসেজে সেটা জানায়। শ্রীময়ী লেখে, ঠিক সময়ে ও চলে আসবে, কলেজ গেটে। একসাথে লাঞ্চ করবে। তারপর ডক্টর মুন্সীর কাছে যাবে। উনি শহরের নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। তুয়া নাম শুনেই হেসে ফেলে। বলে, "এই ডক্টর মুন্সীও কি ডায়েরি লেখেন নাকি?" শ্রীময়ী ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে। মনে মনে ভাবে, যাক, মেয়েটা এখনও একটু হলেও ঠিক আছে। একদম ঠিক সময়ে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তুয়া সেরে উঠবেই। তুয়া ভালো থাকবে। থাকতেই হবে। মকবুলের বিরুদ্ধে কেসের শুনানি শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। কোর্ট কাছারির অনেক প্রেশার, অনেক নোংরামি। তার আগে মেয়েটাকে শক্ত হতে হবে। এই সময়ে তুয়ার সাথে ওর মা বাবা থাকতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওরা নিরুপায়। বাবার অফিস। ঠাকুমা শয্যাশায়ী। মায়ের পক্ষে আসাটা এক্কেবারে অসম্ভব। তা ছাড়া ওদের মধ্যে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সেইরকম ধারণা নেই। এই পরিস্থিতিতে তুয়ার যে কতটা প্রফেশনাল সাহায্য প্রয়োজন, ওরা ঠিক বুঝেই উঠছে না। আর তাই গোটা ব্যাপারে গা করছে না। সময়ের সাথে সব ঠিক হওয়ার যাবে, এই করলে যে মনের অসুখ সারে না, অনেকের মতোই, ওরা তা জানেনা। বা জানলেও সোশ্যাল স্টিগমার ভয়ে অস্বীকার করে। এরাই জ্বর পেট খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে এন্টিবায়োটিক খেতে ডাক্তারের কাছে ছুটবে, অথচ মনের জ্বর হলে সব চুপ। অদ্ভুত লাগে শ্রীময়ীর। দোষ দেব না ভাবাটাও ভুল। এই যুগে এসে কেন শিক্ষিত পরিবারেও এমন মানসিকতা হবে? কেন নিজের সন্তানের ভালোটা বুঝবে না এরা? শ্রীময়ী বোঝে, ওকেই সমস্ত দায়িত্ব নিযে হবে তুয়ার। তুয়াকে ভালো করতেই হবে ওকে। শ্রীময়ী ওর খুব ঘনিষ্ঠ মহলে দেখেছে, ছেলেবেলার এমন মেন্টাল ট্রমা কতটা এফেক্ট ফেলতে পারে বড় হয়ে। ও চায়না, তুয়ার জীবনটাও নষ্ট হোক। ওকেই লড়তে হবে তুয়ার সাথে।
তুয়া টাইমটেবিল দেখে। আজ শুধুই ফার্স্ট হাফে ক্লাস। শ্রীময়ীকে একটা মেসেজে সেটা জানায়। শ্রীময়ী লেখে, ঠিক সময়ে ও চলে আসবে, কলেজ গেটে। একসাথে লাঞ্চ করবে। তারপর ডক্টর মুন্সীর কাছে যাবে। উনি শহরের নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। তুয়া নাম শুনেই হেসে ফেলে। বলে, "এই ডক্টর মুন্সীও কি ডায়েরি লেখেন নাকি?" শ্রীময়ী ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে। মনে মনে ভাবে, যাক, মেয়েটা এখনও একটু হলেও ঠিক আছে। একদম ঠিক সময়ে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তুয়া সেরে উঠবেই। তুয়া ভালো থাকবে। থাকতেই হবে। মকবুলের বিরুদ্ধে কেসের শুনানি শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। কোর্ট কাছারির অনেক প্রেশার, অনেক নোংরামি। তার আগে মেয়েটাকে শক্ত হতে হবে। এই সময়ে তুয়ার সাথে ওর মা বাবা থাকতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওরা নিরুপায়। বাবার অফিস। ঠাকুমা শয্যাশায়ী। মায়ের পক্ষে আসাটা এক্কেবারে অসম্ভব। তা ছাড়া ওদের মধ্যে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সেইরকম ধারণা নেই। এই পরিস্থিতিতে তুয়ার যে কতটা প্রফেশনাল সাহায্য প্রয়োজন, ওরা ঠিক বুঝেই উঠছে না। আর তাই গোটা ব্যাপারে গা করছে না। সময়ের সাথে সব ঠিক হওয়ার যাবে, এই করলে যে মনের অসুখ সারে না, অনেকের মতোই, ওরা তা জানেনা। বা জানলেও সোশ্যাল স্টিগমার ভয়ে অস্বীকার করে। এরাই জ্বর পেট খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে এন্টিবায়োটিক খেতে ডাক্তারের কাছে ছুটবে, অথচ মনের জ্বর হলে সব চুপ। অদ্ভুত লাগে শ্রীময়ীর। দোষ দেব না ভাবাটাও ভুল। এই যুগে এসে কেন শিক্ষিত পরিবারেও এমন মানসিকতা হবে? কেন নিজের সন্তানের ভালোটা বুঝবে না এরা? শ্রীময়ী বোঝে, ওকেই সমস্ত দায়িত্ব নিযে হবে তুয়ার। তুয়াকে ভালো করতেই হবে ওকে। শ্রীময়ী ওর খুব ঘনিষ্ঠ মহলে দেখেছে, ছেলেবেলার এমন মেন্টাল ট্রমা কতটা এফেক্ট ফেলতে পারে বড় হয়ে। ও চায়না, তুয়ার জীবনটাও নষ্ট হোক। ওকেই লড়তে হবে তুয়ার সাথে।
Wednesday, July 10, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২২
একটা অন্ধকার গলি। সরু খুব। দু পাশ দিয়ে টিনের ছাদের বাড়ি। রাস্তাটা খুবই নোংরা। জায়গায় জায়গায় ময়লা ফেলা। ময়লা ফেলার ভ্যাট উপচে পড়ছে কোথাও। কিছু ঘেয়ো কুকুর নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করছে সেখান থেকে খাবার তোলার জন্য। হলুদ স্ট্রীট লাইট টিমটিম করে জ্বলছে। মাঝেমাঝেই দপদপ করছে। রাস্তায় তেমনভাবে মানুষজনের যাতায়াত নেই। ওই মাঝে মধ্যে এক দুজন সাইকেল চেপে এদিক ওদিক আসছে যাচ্ছে। আলোর অভাবে ভালো করে তাদের মুখ বোঝা যাচ্ছে না। শীত পড়বো পড়বো করছে শহরে। ইতিমধ্যেই তাই আগেভাগেই সবাই যে যার ঘরে ফিরে গেছে। তুয়ার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন যে রাজি হলো ও এখন এবং এরকম জায়গায় শুভ্রর সাথে দেখা করতে। সেই কতক্ষণ ধরে হেঁটে চলেছে এখান দিয়ে। রাস্তা আর শেষ হয় না। গুগুল ম্যাপ অনুযায়ী আরো মিনিট পনেরোর পথ বাকি। খুব আফসোস হচ্ছে তুয়ার।
আচ্ছা, তখন থেকে পিছন পিছন কে একটা আসছে না? তুয়া একবার পিছন ফিরে তাকালো। একটা লোক। বিশেষ সুবিধার না চেহারা। গায়ে একটা কালচে চাদর জড়ানো। মাথা ঢাকা। তুয়া মুখ ঘুরিয়ে নিলো। খানিক গিয়ে আবার পিছন ফিরে দেখলো। হ্যাঁ ঠিক। ওই তো। আসছে এখনও। তুয়া হাঁটার গতি বাড়ালো। চৌমাথায় এসে দাঁড়ালো। সিগনাল লাল। কোনদিকে কোনো গাড়ি নেই। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হলো। উল্টো ফুটপাথে গিয়ে দেখে লোকটা এখনো ওপারে। সিগনালে আটকে গেছে। তুয়া একটু স্বস্তি বোধ করে। জোরে জোরে হাঁটতে থাকে। সেই অন্ধকার অন্ধকার রাস্তা। শুনশান। হঠাৎ পিছনে টের পায় পায়ের শব্দ। ভয়ে ভয়ে ও পিছন ফিরে তাকায়। দেখে লোকটা ওর দিকে তেড়ে আসছে। তুয়া সামনের একে দুই হাত জড়ো করে প্রায় দৌড়োতে থাকে। লোকটাও তাড়া করে ওকে। ছুটতে ছুটতে তুয়া সামনেই একটা এ টি এম দেখতে পেয়ে সেখানে ঢুকে যায়। এ টি এমের সিকিউরিটি গার্ড ঝিমোচ্ছিলো। তুয়ার শব্দ পেয়ে নড়ে চড়ে ওঠে। একবার এদিক ওদিক দেখে বিড়ি জ্বালিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা লাগায়। তুয়া ওকে ডাকতে যায়, সাহায্যের জন্য। কিন্তু ভয়ে গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না কোনো। এদিকে লোকটা ওকে ধাওয়া করে এসে পৌঁছে গেছে এ টি এমে। তুয়া ভয়ে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করে। পারে না। লোকটাও এখন এ টি এমের মধ্যে এসে গেছে। সেই চড়া আলোর মধ্যে তুয়া লোকটার মুখ দেখতে পায়। বীভৎস। ভয়ানক। ক্রুর হাসি হাসছে। এ কী। এ তো মকবুল। তুয়া ভয় পেয়ে নিজেকে বাঁচাতে এ টি এম যন্ত্রের পিছনে লুকোতে যায়। পারে না। মকবুল ওকে ধরে ফেলেছে। দু হাত দিয়ে ওর গলা টিপে রয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তুয়ার। ঘামছে। হাঁসফাঁস লাগছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে ভয়ে। আর পারছে না। না। রুখে দাঁড়াতেই হবে ওকে। শরীরের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে দু হাত দিয়ে জোরে ঠ্যালা মারে ও মকবুলকে। মকবুল টলে যায়। তুয়া চোখ মেলে।
চারিদিক অন্ধকার। তুয়া বোঝে, সবটাই স্বপ্ন ছিল। দুঃস্বপ্ন। একই রাতে এই নিয়ে দুবার। ঢকঢক করে জল খায় খানিক। মোবাইলে সময় দেখে। সাড়ে তিনটে। ভোর হতে এখনো দেরি আছে। তুয়া বোঝে, এরকম চলতে থাকলে, ও পাগল হয়ে যাবে। চিকিৎসা করাতেই হবে। ঠিকঠাক প্রফেসনালকে দিয়েই। মনের এই অসুখ না সারলে, ও যে বাচঁবেই না।
Tuesday, July 9, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ২১
পুজোর ছুটির পর আবার কলেজ খুলে গিয়েছে। পুজোটা তুয়ার খুব একটা ভালো কাটেনি। মিডিয়ার দৌলতে বেশ কিছুদিন মকবুলের কেসটা টিভির পর্দায় প্রাইম টাইমে প্রচুর ফুটেজ পাওয়ায়, তুয়াকে অনেকেই চিনতে পেরেছে। সবাই যেন ওকে দেখেই ফিসফিস শুরু করে দিচ্ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসতো তুয়ার। দিন গুনছিলো, কবে ছুটি শেষ হবে। কবে ও ফিরবে কলকাতা। ক্লাস করতে।
অবশ্য এখানে এসেও সেই অস্বস্তি বোধটা কাটেনি। সারাক্ষণ যেন মনে হচ্ছে, সবাই বুঝি ওকে নিয়েই হাসাহাসি করছে, আড়ালে। ওর নিন্দে করছে। স্যার ম্যামেরা যেন বাঁকা হাসি হাসছে। কিছুই ভালো লাগছেনা। জেঠু জেঠিমা আবার যেন বেশিই ভালো ব্যবহার করছেন। সকাল সন্ধ্যে ওর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মাঝেমাঝেই লক্ষ্মীদির হাত দিয়ে এটা সেটা পাঠাচ্ছেন রান্নাবান্না। মানুষ এত ভালোও হয়? নাকি সবই মেকি? তুয়া বুঝে উঠতে পারে না। আর তাই বাড়তে থাকে আরো অস্বস্তি। হাঁসফাঁস। দম বন্ধ হয়ে আসে ওর।
রাত্রে চেষ্টা করলেও ঘুম হয়না ঠিক করে। চোখ বন্ধ করলেই মকবুলের ফ্ল্যাটের সেই লিভিং রুমটা ভেসে ওঠে। মকবুলের ভয়ঙ্কর মুখ। দু হাত দিয়ে তুয়াকে চেপে রাখে। যেন গলা টিপে মেরে ফেলবে। ঘামতে ঘামতে তুয়ার ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারে, সবই দুঃস্বপ্ন। টেবিলে রাখা জলের বোতল থেকে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেয়ে নেয় ও। যত তুয়া নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে এগুলো দুঃস্বপ্ন, মকবুল এখন পুলিশ হেফাজতে, ওর আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, তবুও, এইটা যেন প্রতি রাতের নিয়মিত ঘটনা হয়ে গিয়েছে। হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে তুয়া। ও আর পারছে না। শ্রীময়ী ম্যাম বলেছিলেন ওর কাউন্সেলিং করাতে। আসানসোলে থাকাকালীন সে সব সম্ভব হয়নি। মা বাবা খুব একটা গা করেনি। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে সব, এই ভেবে। কিন্তু, কিচ্ছু যে ঠিক হচ্ছে না। আর নিতে পারছেনা তুয়া দিনের পর দিন এই মানসিক কষ্ট।
এবার নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। রাত আড়াইটা বাজে। শ্রীময়ী ম্যামকে একটা ছোট্ট মেসেজ করে। "আমায় ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের খোঁজ দেবেন? আমি আর পারছিনা।" মুহূর্তের মধ্যেই মেসেজ ব্লু টিক হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসে, "কাল দেখা করো। ক্লাসের পরে। টাইম জানিয়ে দিয়ো। আমি পিক আপ করে নেব। এখন চেষ্টা করো ঘুমোতে। গান চালাও বরং।"
তুয়া মেসেজটা পড়ে। মোবাইলটা পাশে রেখে শুয়ে পড়ে। গভীর রাত। আলো ফুটতে এখনো অনেকটাই দেরি...
Thursday, July 4, 2019
বিবাহ অভিযান ৭
- প্রি ওয়েডিং শুটে রাজি হলে না কেন?
- ধুর। ওসব ছেলেমানুষি।
- কীসের ছেলেমানুষি? বিসাইডস এটা আমার শখ।
- কী যে অসুবিধায় ফেলো...
- আবার কী হলো?
- এই যে। বললে। তোমার শখ। আর আমি কথাটা ফেলতে পারবো না। এমনিতে আমি খুব ক্যামেরা শাই। ভীষণ অকওয়ার্ড লাগে। কিন্তু ঠিক আছে। তোমার শখ। ইচ্ছে। রাখতে তো হবেই।
- ও। দ্যাটস সো সুইট অফ ইউ।
- হুম।
- আমি তাহলে সায়নের সাথে কথা বলে নিই। সায়ন ইস দ্য ফটোগ্রাফার। ও একদিন মিট করে সমস্ত ব্রিফিং দেবে। তুমি কবে ফ্রি বলো, আই উইল ফাইনালাইজ দ্য ডেট।
- দেখো আগে ওর সাথে কথা বলে। ও কবে ফ্রি। সেই অনুযায়ী আই উইল মেক মাইসেলফ ফ্রি।
- তুমি না খুউউউউব ভালো।
- ছবি সেশনে রাজি হলাম বলে?
- শুধু তাই না। এটা তো জাস্ট ম্যানিফেস্টেশন। অফ ইয়োর লাভ এন্ড কনসার্ন।
- হুম।
- ও মা। ব্লাশ করছো নাকি? দেখো কান্ড।
- ধুর। ব্লাশ করবো কেন।
- উঁহু। যতই অস্বীকার করো... আই ক্যান সি।
- সি ওয়াট?
- দ্যাট ইউ জাস্ট ব্লাশড। ইভেন মোর।
- পাগল।
- অলসো দ্যাট, তুমি যতই আই লাভ ইউ বলাকে মাশি ইত্যাদি বলে কাটানোর চেষ্টা করো, ডিপ ডাউন, ইউ আর আ রোম্যান্টিক ফেলো এট হার্ট। তুমি আমার খুব যত্ন করো। রীতিমতো চোখে হারাও। একটাই রিক্যুয়েস্ট, প্লিজ বিয়ের পরেও এমনিই থেকো। একটুও পালটিও না। তোমার এই তুমিটাকেই ভীষণ ভালোবাসি আমি।
- তুমিও পাল্টাবে না, প্রমিস করো? তোমার ছেলেমানুষি, উদ্ভট উদ্ভট শখ, কথায় কথায় ঠোঁট ফোলানো...
- প্রমিস।
- কান্ট ওয়েট টু বি টুগেদার!
- মি নাইদার!
(এরপর আর কী। বিবাহ অভিযান শেষ হবে ওদের সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন বিবাহ দিয়ে। তারপর আশা করা যায় রূপকথার গল্পের মতোই, they will live happily ever after...)
Wednesday, July 3, 2019
bibah obhijan 6
- কাল রাতে একদম ভালো ঘুমোতে পারিনি।
- কেন?
- দুঃস্বপ্ন।
- কী নিয়ে? জোর করছি না। ইচ্ছে হলে বলো।
- সেই একই। anxiety। আগেও যেমন দেখতাম। যার জন্য কাউন্সেলিং করিয়েছি।
- আজকাল ওষুধ খাচ্ছ না কেন?
- ডাক্তার বারণ করেছেন। বলেছেন এখন অনেকটাই স্টেবল। তাই ডোজ কমেছিলো ক্রমশ। এখন অফ মেডিসিন।
- কিন্তু রেকারেন্ট রিপিটিং স্বপ্ন এলে?
- আই গেস টেনশন থেকে হচ্ছে এসব।
- কীসের টেনশন? বিয়ের এখনো চার মাস বাকি।
- টেস্ট রিপোর্টসের। ওগুলো তো কাল ডিউ।
- ধ্যাৎ। ও নিয়ে টেনশন কেন? ওগুলো তো রুটিন
- ধরো ভুলভাল কিছু এলো। যাতে আমাদের বিয়েটা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
- দেখো এইচ আই ভি বা অন্য কোনো মারাত্মক সংক্রামক রোগ না থাকলেই হলো। ওগুলো হলে, সরি বস। ক্যানসেল করতেই হবে। বাকি সবেতেই আই এম ওকে। ম্যানেজ হয়ে যাবে। দেয়ার ইজ নাথিং দ্যাট মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্স ক্যানট হ্যান্ডল। মোস্টলি। আমার এই রোগগুলো নেই। রিসেন্টলি ব্লাড দিয়েছি। তখন এক প্রস্থ টেস্ট হয়েছে। তোমারও ধরেই নিচ্ছি, নেই। তাহলে ভয় কীসের?
- ধরো ইট টার্নস আউট যে উই আর ইনকমপ্যাটিবল টু হ্যাভ কিডস?
- Adopt করবো। সমস্যা কোথায়? ইন ফ্যাক্ট, এডোপশন ইজ আ গুড প্ল্যান এমনিতেও।
- হুম।
- কেন তোমার সায় নেই তাতে?
- মনে তো হয় আছে।
- ব্যস। হয়েই গেল। শোনো, এত ভয় পাওয়াটা কমাও তো। ইনসিকিউরিটি ঝেড়ে ফেলো। আমি একবার যে লটকে পড়েছি, কিছুতেই ছাড়বো না তোমায়। ছিনে জোঁকের মতো আঁকড়ে থাকবো। দিস ম্যান ইজ মাইন। মাই প্রেশাস ওয়ান। দেখি কোন ফোর্সের কী ক্ষমতা আমাদের আলাদা করে? আমি কথা দিচ্ছি। আমি ছেড়ে যাবো না তোমায়। কখনো না।
- অনেকটা আশ্বস্ত হলাম।
- শোনো, যখন একসাথে বাকি পথটা চলার ডিসিশন নিয়েছি, প্লিজ, কোনো কথা কখনো মনে এলে এরকম নিজের মনের মধ্যে রেখো না। আমায় নির্দ্বিধায় বলবে। কাজের কাজ না করতে পারি, অন্তত শুনে যাবো। প্রমিস, জাজ করবো না। অন্তত কথা বলে মন হালকা হবে।
- হুম। থ্যাংক ইউ। এন্ড দ্য সেম গোজ ফর ইউ কিন্তু।
- সে তুমি না বললেও আমি নিজে থেকে ঘ্যানঘ্যান করতাম।
- গ্রেট।
- তবে একটা কথা আছে।
- বলো?
- একবার তোমার ডাক্তারের কাছে আমায় নিয়ে যাবে?
- তা বেশ তো। কিন্তু কেন?
- প্রি ম্যারিটাল কাউন্সেলিং। আই বিলিভ ইট উইল হেল্প আস বোথ। দুজনেই তো নেহাৎ কম ব্যাগেজ নিয়ে ঘুরিনা...
- সে মন্দ বলোনি।
- আমি আবার কবে কী মন্দ বললাম?
- তাও ঠিক। শোনো না।
- হুম। বলো।
- তোমার সাথে কথা বলে ফিলিং মাচ বেটার। ফুরফুরে।
- লাভলি! হওয়াই উচিত। উড বি স্পাউস আফটার অল।
- বাইরের ওয়েদারও টু গুড। গঙ্গার ধারে যাবে হাওয়া খেতে?
- সাউন্ডস লাইক আ প্ল্যান।
- কতক্ষণে পারবে বেরোতে? আমি গাড়ি নিয়ে চলে আসছি।
- মেসেজ করছি!
- সি ইউ।
Tuesday, July 2, 2019
"বিবাহ অভিযান" ৫
- আচ্ছা কিছু ডিসকাশন আছে। কোনো সময়ে দেখা করা যায় আজ?
- আজ তো হবে না। ভেরি প্যাকড শিডিউল। কাল বা পরশু হোক?
- আমাদের বাড়ি জানি কবে আসছেন তোমার মা বাবা?
- কাল। ও ভালোই তো হয়। আমিও না হয় যাবো। তখনই আলোচনা হোক।
- না। আমি তার আগেই কথা বলতে চাইছি।
- তাহলে তো ফোন কল ছাড়া উপায় নেই। কী ব্যাপার বলো? সামথিং আর্জেন্ট?
- নট আর্জেন্ট। বাট বদারিং মি। যত তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নেওয়া যায়। তাই আর কী।
- বেশ। বলো।
- শোনো, বিয়েতে সব রিচুয়ালস মানা নিয়ে তোমার কী মত?
- যেমন?
- মানে, ভালো লাগে? মানতে চাও সব?
- হ্যাঁ। আই মিন, মন্দ কী? আশা করি বিয়ে একবারই করবো। তা পুরোটা নিয়ম মেনে করাই ভালো। ছবি টবি উঠবে। জাঁকজমক। হইহুল্লোড়। আত্মীয়স্বজন। বন্ধুবান্ধব। ভালোই তো। কেন তোমার পছন্দ না?
- খুব একটা না। আমি ভেবেছিলাম প্লেন রেজিস্ট্রি করবো। তারপর একটা পার্টি। মজাও হলো। আনন্দও হলো। কিন্তু রিচুয়ালস নেই।
- রিচুয়ালসে তোমার কী সমস্যা?
- ওই যে, কন্যাদান। তোমার বাবা আমার পায়ে হাত দিয়ে আমায় বলবেন, তোমায় গ্রহণ করতে। খুব খুব খারাপ ব্যাপারটা। দিদিভাইয়ের সময়ে দেখেছি। তখনই ঠিক করি। আমার বিয়েতে এরকম হবে না।
- হুম। ওইটা আমারও ঠিক জুতের লাগে না।
- তারপর ধরো ওই কনকাঞ্জলি। ওইটা মোস্ট রাবিশ। এরকম আবার মা বাবার ঋণ শোধ হয় নাকি? নাকি বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সেই সম্পর্ক?
- ওটা আমি এমনিও করতাম না।
- তারপর ধরো সিঁদুরদান। হিস্ট্রিটা জানো তো?
- জানি। ছবি ভালো ওঠে। তাই ওইদিন পরলেও বিয়ের পরে পরবো না। সাজের অঙ্গ হিসেবে পরতে পারি। বাধ্যবাধকতা হিসেবে না। সেম গোজ ফর শাঁখা পলা লোহা।
- গুড। তা এইসবের জন্যই আমি ভাবছিলাম যদি রেজিস্ট্রি আর তারপর পার্টি হয়।
- না না। আপত্তিজনক রিচুয়াল বাদ। বাকিগুলো যেগুলো হাৰ্মলেস, যেমন ধরো ওই জুতো চুরি, শয্যা তুলুনি, ওগুলো বাদ যাবে কেন? জানো, আমার ভাই বোনেরা সব কবে থেকে উদগ্রীব হয়ে আছে। কবে জামাইবাবুর ঘাড় ভাঙবে।
- মরেছি! কত ক্যাশ আনবো সাথে, বলে দিয়ো।
- হাজার কুড়ি।
- মাই গড। প্লিজ। বার্গেনিং হবে না? প্লিজ বোঝাও ওদের।
- উঁহু। আমি তো কাট মানি পাবো। আমি এই ব্যাপারে হেল্প করছি না।
- গৃহশত্রু দেখছি।
- না না। গৃহে পদার্পণ করিনি। গৃহশত্রু ভুল টার্ম।
- বুঝলাম। ভাষাবিদ।
- হেঁহে! তা ফাইনালি কী ঠিক হলো?
- কীসের?
- আচার অনুষ্ঠান।
- তুমি তো মনে হচ্ছে না আমার প্ল্যানে সহমত।
- ওই যে বললাম। হোপফুলি বিয়ে একবারই করবো। তো মোটামুটি নিয়ম মেনেই করি। ডেরোগেটোরি পার্টসগুলো বাদ।
- নট ব্যাড। এই প্রস্তাব আমি দুপক্ষের মা বাবাকে দেব। দেখি কী বলেন।
- আর কে কী বলবে, জানি না। মা তোমায় এক্সট্রা দশটা রসগোল্লা খাইয়ে দেবে আনন্দে। এমন প্রোগ্রেসিভ জামাই কজন পায়?
- বলছো?
- হ্যাঁ! একটা সিক্রেট বলবো?
- বলো।
- তুমি খুব ভালো, জানো?
- এ তো সবাই জানে। সিক্রেট কী?
- উফ। কথা শেষ করতে দাও।
- আরো বাকি? বেশ বেশ বলো।
- এই যে, তুমি প্রোপোজ না করলে, আমিই করে দিতাম।
- দ্যাট উড বি মাই প্লেজার। এই, একটা রিকুয়েস্ট।
- কী?
- আমায় প্লিজ অফিশিয়ালি প্রোপোজ করো একবার। প্লিজ?
- আচ্ছা আচ্ছা বেশ। করব।
- কবে?
- বলবো না। সারপ্রাইজ! কিন্তু করবো।
- ইয়ে!
বিবাহ অভিযান ৪
- একটা সমস্যা হয়েছে।
- কী হলো?
- আমার এক ঠাকুমা, মানে আপন না। কিন্তু ওই জ্ঞাতি। ওঁকে বাড়ির সকলে খুব মানে। সেই ঠাকুমা বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
- প্রশ্ন তুলেছেন মানে?
- মানে ওই কুষ্ঠী মেলানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।
- ও।
- তোমার এতে কোনো আপত্তি নেই?
- দেখো, ওঁরা গুরুজন। আত্মীয়। যদি সামান্য কুষ্ঠী বিচার করলে ওঁরা সুখী হন, না হয় করলাম। তাতে?
- ধরো যদি সেসব করতে গিয়ে দেখা যায় যে বিয়েতে বাধা আছে কোনো। আমাদের বিয়েটা ভেঙে গেলে?
- সেদিন তো খুব বড় গলায় যুক্তি সহকারে প্রোপোজ করলে। আর আজ এই এক পাতা কুষ্ঠীর ভয়ে বিয়ে ভাঙা অবধি ভেবে ফেললে? নট ইম্প্রেসড।
- না মানে আমি তোমায় সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার সাথেই সারা জীবন কাটাতে চাই। সেই গানের কথার মতো, 'আই ওয়ান্ট টু গ্রো ওল্ড উইথ ইউ'। তোমায় হারাতে চাই না। কিন্তু এসব করতে গিযে যদি বিয়েটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে?
- ফার্স্ট থিংস ফার্স্ট। আর কত ওল্ড হবে?? এমনিই তো বুড়ো! সেকেন্ডলি, কুষ্ঠিতে বললো বিয়েতে অমঙ্গল। অমনি সুরসুর করে বিয়ে ভেঙে দেবে? মামদোবাজি নাকি?
- না আমি ভাঙবো না। কিন্তু বাড়ির লোকজন?
- তোমার মনে হয়?
- আমার এই ঠাকুমা ব্যাগড়া দেবেন। আমি শিওর।
- শোনো, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। গড়িয়াহাটের মোড়ে অনেক জ্যোতিষীর বিজ্ঞাপন দেখবে। সবার কি বিশাল হাইফাই ব্যবসা নাকি? পসারও তেমন না। তেমন একটা কারুর কাছে গিয়ে দুটো পাঁচশোর নোট ধরিয়ে দেব। আপনে আপ রাজজোটক বানিয়ে দেবে।
- এ বাবা। গুরুজনদের মিথ্যে বলবো?
- ভালোবাসো বললে তো? এভরিথিং ইস ফেয়ার ইন লাভ। এটা তো ওয়াইট লাই।
- আর তারপর ধরো বিয়ের পর আমরা খুব ঝগড়া করলাম। বিয়েটা টিকলো না। তখন আফসোস হবে না?
- ও মশাই। ঝগড়া এমনিও হবে। ওমনিও হবে। তার জন্য বিয়েই ভেঙে যাবে? হাসালে। ইন ফ্যাক্ট, এতই কম ভরসা? ভালোবাসায় বল নেই নাকি? আমায় যে দেখছি এবার একটু ভাবনা চিন্তা করতে হবে...
- এই না না। মাইন্ড করো না। আমি জাস্ট আমার মনের কথাগুলো বলছি।
- উঁহু। লক্ষণ ভালো না। আই থিংক উই আর রাশিং আ বিট টু ফাস্ট।
- না না। মাথা ঠান্ডা করে ভাবো। আমি প্র্যাকটিক্যাল কথা বললাম।
- আমার ভালোবাসা ও কমিটমেন্টের প্রতি নিজের যথেষ্ট ভরসা বিশ্বাস আছে। তোমার ক্ষেত্রে সেখানে অভাব দেখে আমি আবার ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।
- প্লিজ। ওয়ান লাস্ট টাইম। সরি। আমি এত গভীরে গিয়ে ভাবিনি।
- ল্যুজ টক করা স্বভাব? নাকি আজ স্পেশাল?
- অবুঝ হয়ো না। প্লিজ।
- হুম।
- বলো, হাউ ক্যান আই মেক ইট আপ ফর ইউ?
- কাল আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে। প্রি ম্যারিটাল ব্লাড টেস্টস যা করার, জেনে নেবো। কখন সুবিধে হবে বলো।
- ঠিক আছে। সন্ধ্যের দিকেই হোক। দেন উই ক্যান হ্যাভ এ কোয়ায়েট ডিনার টুগেদার। মাই ট্রিট!
- তোমায় রাগালেই ট্রিট পাওয়া যায়? জানতাম না! কাজে লাগবো!
- মানে?
- উফ। এতক্ষণ তোমার লেগ পুল করছিলাম জাস্ট।
- আর আমি দুশ্চিন্তায় একশা।
- ও! ইউ আর টু সুইট!
বিবাহ অভিযান ৩
- কী গো?
- রেডি হচ্ছি তো। আর পাঁচ মিনিট।
- সেই তখন থেকে পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করে চলেছ।
- তুমি যতবার মেসেজ করে প্রশ্ন করবে, তত আমার দেরি হবে।
- ধ্যাৎ কখন থেকে বসে আছি রেডি হয়ে। আর এদিকে তুমি এখনো বেরোলেই না। বললেই পারতে। দশ পনেরো মিনিট আরেকটু খেলাটা দেখতে পারতাম।
- তা দেখো। সমস্যা কোথায়?
- না। মাকে রিমোটটা দিয়ে দিয়েছি। মা শাড়ির প্রোগ্রাম দেখছে।
- তুমি ফোনে দেখো।
- চার্জ শেষ হয়ে যাবে।
- পাওয়ার ব্যাংক নেই?
- ওটাও চার্জে দিতে হবে।
- তাহলে আর কী। চুপচাপ বসে থাকো। আমি বেরিয়ে মেসেজ করে দিচ্ছি।
- ওই জন্যই বলেছিলাম আমি গাড়িটা নিই।
- তাতে কী হতো?
- আমি ঠিক টাইম মতো পৌঁছে যেতাম।
- আর তারপর প্যা প্যা করে হর্ন বাজিয়েই যেতে।
- তুমি তার ফলে আরেকটু তাড়াহুড়ো করতে।
- তুমি তখন থেকে এত ইরিটেট করছো না? নেহাত তোমারই শেরওয়ানি কিনতে যাচ্ছি, তাই। নইলে আমি যখন কাটিয়ে দিতাম।
- আমারও ভালো হতো। ম্যাচটা দেখতে পেতাম। আরাম করে।
- ফাইন। আসতে হবে না আমার সাথে। ভার মে যায়ে তোমার শেরওয়ানি। নিজের বাজার নিজে করে নিয়ো। মাকে বলে দেবো। আমি পারলাম না এটা করতে। আমি আমার মতো কেনাকাটা করে নেব। এমনিও আই হ্যাভ আ লট টু বাই। ভালোই হলো। একা একাই যাবো। পারফিউম কেনার আছে। সেগুলো করি।
- আরে আরে আরে, রাগ করছো কেন। সরি সরি। চলো। আমি ওয়েট করছি। এসো সময় মতো।
- না যাবো না। তোমার সাথে। আমি একা যাবো।
- বেশ। যেয়ো না। আমার শেরওয়ানি আমি কিনে নেবো। একটা ক্যাটক্যাটে কোনো রঙের। তারপর সারা জীবন ওই ছবির বোঝা বয়ে বেরিও।
- জ্বালালে। বড্ড জ্বালালে। চুপচাপ বসো দশ মিনিট। আমি পৌঁছে যাচ্ছি। রেডি। জুতোটা গলাচ্ছি পায়ে।
- এসো, এসো মা লক্ষ্মী, আমার ঘরে।
- শাঁখ বাজাবে?
- মাকে বলি?
- থাক। ড্রেস রিহার্সাল এত তাড়াতাড়ি কী?
- সেই!
- রেডি হচ্ছি তো। আর পাঁচ মিনিট।
- সেই তখন থেকে পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করে চলেছ।
- তুমি যতবার মেসেজ করে প্রশ্ন করবে, তত আমার দেরি হবে।
- ধ্যাৎ কখন থেকে বসে আছি রেডি হয়ে। আর এদিকে তুমি এখনো বেরোলেই না। বললেই পারতে। দশ পনেরো মিনিট আরেকটু খেলাটা দেখতে পারতাম।
- তা দেখো। সমস্যা কোথায়?
- না। মাকে রিমোটটা দিয়ে দিয়েছি। মা শাড়ির প্রোগ্রাম দেখছে।
- তুমি ফোনে দেখো।
- চার্জ শেষ হয়ে যাবে।
- পাওয়ার ব্যাংক নেই?
- ওটাও চার্জে দিতে হবে।
- তাহলে আর কী। চুপচাপ বসে থাকো। আমি বেরিয়ে মেসেজ করে দিচ্ছি।
- ওই জন্যই বলেছিলাম আমি গাড়িটা নিই।
- তাতে কী হতো?
- আমি ঠিক টাইম মতো পৌঁছে যেতাম।
- আর তারপর প্যা প্যা করে হর্ন বাজিয়েই যেতে।
- তুমি তার ফলে আরেকটু তাড়াহুড়ো করতে।
- তুমি তখন থেকে এত ইরিটেট করছো না? নেহাত তোমারই শেরওয়ানি কিনতে যাচ্ছি, তাই। নইলে আমি যখন কাটিয়ে দিতাম।
- আমারও ভালো হতো। ম্যাচটা দেখতে পেতাম। আরাম করে।
- ফাইন। আসতে হবে না আমার সাথে। ভার মে যায়ে তোমার শেরওয়ানি। নিজের বাজার নিজে করে নিয়ো। মাকে বলে দেবো। আমি পারলাম না এটা করতে। আমি আমার মতো কেনাকাটা করে নেব। এমনিও আই হ্যাভ আ লট টু বাই। ভালোই হলো। একা একাই যাবো। পারফিউম কেনার আছে। সেগুলো করি।
- আরে আরে আরে, রাগ করছো কেন। সরি সরি। চলো। আমি ওয়েট করছি। এসো সময় মতো।
- না যাবো না। তোমার সাথে। আমি একা যাবো।
- বেশ। যেয়ো না। আমার শেরওয়ানি আমি কিনে নেবো। একটা ক্যাটক্যাটে কোনো রঙের। তারপর সারা জীবন ওই ছবির বোঝা বয়ে বেরিও।
- জ্বালালে। বড্ড জ্বালালে। চুপচাপ বসো দশ মিনিট। আমি পৌঁছে যাচ্ছি। রেডি। জুতোটা গলাচ্ছি পায়ে।
- এসো, এসো মা লক্ষ্মী, আমার ঘরে।
- শাঁখ বাজাবে?
- মাকে বলি?
- থাক। ড্রেস রিহার্সাল এত তাড়াতাড়ি কী?
- সেই!
Subscribe to:
Posts (Atom)