Monday, July 15, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২৭



সোশ্যাল মিডিয়ার যে কী অপরিসীম ক্ষমতা, তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। তুয়ার ওপর ফেসবুক পোস্ট তুলে নেওয়ার জন্য চাপের অডিও রেকর্ডিং এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। শুধু কলকাতায় নয়, বরং সারা দেশ, এমন কি বিদেশেও বহু ভারতীয় ছাত্র ছাত্রী সেটি শেয়ার করেছে। টিভি চ্যানেলগুলো পেয়ে গেছে নতুন মোড়। ইয়িমধ্যেই সেখানে প্যানেল ডিসকাশন বসে গিয়েছে। তুয়া আর কিচ্ছু করেনি। চুপচাপ বসে দেখে যাচ্ছে। ওর এই লড়াইয়ে এই চেনা অচেনা লোকজন ওকে সাপোর্ট করছে, ওর হয়ে ঝড় তুলছে, এটা তুয়াকে একটা বিরাট সাহস যোগাচ্ছে। ওর কলেজের এবং অন্যান্য কলেজ, রিসার্চ ইনস্টিটিউটগুলো থেকেই ক্রমে অনেকেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দিক থেকে হ্যারাসমেন্টের কথা জানাচ্ছে। তুয়ার বাবা মাও এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত। মেয়ের লড়াইয়ের গুরুত্ব তাঁরা বুঝেছেন। এর মধ্যে এসে মেয়ের কাছে থেকেও গিয়েছেন কদিন। তুয়ার সাথে ডক্টর মুন্সীর কাছেও গিয়েছেন। ওঁদের সাথে আলাদা ভাবে কথা হয়েছে ডাক্তারের।
কলেজে তুয়া নিয়মিত যাচ্ছে। ক্লাসও ঠিকমতোই হচ্ছে। ইউনিভার্সিটির হস্তক্ষেপে গভর্নিং বডি ও প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পরের দিনই ইন্টারনাল কমিটি বসে এবং তাঁরা প্রত্যেকেই সাসপেন্ডেড হন। ডিপার্টমেন্টের বাকি স্যার ম্যামেরা সত্যি সত্যিই তুয়ার পক্ষে, নাকি সাসপেনশনের ভয়ে কে জানে, তুয়াকে সব রকম সাহায্য করছেন।
লড়াইটা জোরদার চলছে। লড়াইয়ের মানসিকতা তুয়ার মন খারাপ ভয় অবসাদ সব যেন কোথায় উড়িয়ে দিয়েছে এক লহমায়। ডক্টর মুন্সী খুবই খুশি ওর প্রোগ্রেসে। কোর্টে কেস চলছে। গত হিয়ারিংয়ে তুয়াকে মিথ্যেবাদী প্রমাণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মকবুলের উকিলের। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি ফাইনাল জাজমেন্ট দেবেন। কারাদন্ড নিশ্চিত। আশা করা যায়, মকবুল সহ অন্যান্য অনেকেই এর থেকে যথেষ্ট শিক্ষা পাবে। ভবিষ্যতে দ্বিতীয়বার এমন আচরণ করার আগে দশবার ভাববে, ভয় পাবে।
তুয়া এখন অনেকটাই ভালো আছে। ও হাসে, সবার সাথে গল্প করে। আগের মতোই। কলেজের এই ঝড়ের পর থেকে ক্লাসমেটদের সাথে বন্ধুত্বটা এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে, অভাবনীয়। তুয়া কলেজ যেতে ভালোবাসে এখন। ক্লাস করে মন দিয়ে। পরীক্ষা এসে গেল আবার। তার জন্যও জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে। সাথে রয়েছে শ্রীময়ী ম্যামের দেওয়া কাজ। আবোল তাবোল নিয়ে লেখা। হ্যাঁ। তুয়াকে এই ইন্টার্নশিপটা পেতেই হবে। শ্রীময়ী ম্যামের থেকে অনেক কাজ শেখা বাকি ওর। নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে, শিগগিরই।

No comments:

Post a Comment