Monday, July 29, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২৮

আজ সেমিস্টার শেষ হলো। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে তুয়ার। কয়েকটাদিন ভীষণ চাপের মধ্যে ছিল এই পরীক্ষা নিয়ে। একেই মকবুলের কেসটা চলছিল। তার জন্য ওকে মাঝে মধ্যে কয়েকবার কোর্টে যেতে হয়েছে। এখন অবশেষে ওই চ্যাপ্টার ক্লোজড। মকবুলের শাস্তি হয়েছে। কলেজের স্যার ম্যামেরা যারা প্রথমে ওকে চাপ দিচ্ছিলেন ওঁর ফেসবুক পোস্ট উলে নেওয়ার জন্য, তাঁরাও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবল ক্ষমতার কাছে মাথা নত তো করেইছেন, এছাড়াও, ওঁরা প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। সমস্ত ঝঞ্ঝাট মিটতে মিটতে সেমিস্টার পরীক্ষা এক্কেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছিল। তাই তুয়ার একটু চিন্তা ছিলই।  তবে আজ অনেকটা নিশ্চিন্ত।যতটা খারাপ হবে ভেবেছিল, তেমন তো হয়েইনি। বরং মোটামুটি ভালোই হয়েছে। র‍্যাঙ্ক ওয়ান না হলেও প্রথম পাঁচে থাকবেই। এই পরিস্থিতিতে এটা ওর কাছে বিরাট। কাউন্সেলিং সেশন চলছে। ডাক্তার মুন্সী ওর উন্নতিতে বেশ সন্তুষ্ট। এখন দু সপ্তাহে একদিন গেলেই হয়। আর ওষুধের ডোজও কমিয়ে দিয়েছেন।
পরীক্ষা শেষে ক্লাসমেটরা সব হইহই করে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেললো। তুয়ার টিকিটও কাটা হয়েছে। ছটার শো তে সিনেমা দেখে তারপর ডিনার সেরে যে যার ডেরায়। তুয়ার একটু চিন্তা হলো। দশটার মধ্যে ও ফিরতে পারবে? জেঠু জেঠিমাকে বলে দিলেই হবে। ওরা রাগ করবেন না ঠিকই। কিন্তু ওদের অসুবিধের মধ্যে ফেলা। তুয়া খানিক ইতস্তত করে। মেখলা বলে, "আরে, কোনো চিন্তা নেই। তুই আমার সাথে চল। আমার বাড়িতে থেকে যাবি। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে না হয় ফিরিস। এমনিও কাল থেকে ছুটি। কোনো তাড়া নেই তো?" তুয়া খানিক ভাবে। হ্যাঁ, এমনটা হতেই পারে।  বরং এতেই সুবিধে। ও টুক করে জেঠিমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। জেঠিমা একটু কিন্তু কিন্তু করেন। বলেন যে তুয়ার ফিরতে দেরি হলেও কোনো ব্যাপার না। এক আধদিন এমন হতেই পারে। উনি অপেক্ষা করবেন। তুয়া একটু দোটানায় পড়ে যায়। কী করবে? মেখলা ভালো বন্ধু। সব ভালো। কিন্তু ওর যে বাড়ি ফিরে কাজ আছে। শ্রীময়ী ম্যাম কাজ দিয়েছেন। সেটা শেষ করতে হবে। কাল সকালের মধ্যে পাঠানোর কথা। হয়তো ও বললে ম্যাম ডেডলাইন বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু তাও। তুয়ার ইচ্ছে করে না ম্যামকে দেওয়া কথা ফেলতে। ও মেখলাকে না করে দেয়। মনে মনে ঠিক করে, বন্ধুদের বলবে সিনেমা শেষে ফুড কোর্টেই ডিনার করতে। তাহলে একটু তাড়াতাড়িই হবে। আর ওর ফিরতেও বেশি দেরি হবে না।
সিনেমাটা দারুন উপভোগ করলো ওরা সব্বাই। আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প হলেও, বেশ ঝকঝকে, নিউ এজ। তারপর ফুড কোর্টে পিজ্জা বার্গার আর মোয়িতো খেয়ে যে যার মতো বেরোলো। তুয়ার বাড়ি যেতে গেলে দুবার অটো বদলাতে হবে। নইলে বাস। তবে বাসের ফ্রিকিউন্সি কম। ও রাস্তা পার হয়ে। এখন পৌনে দশটা। যাক। নিশ্চিন্ত হয়। বেশি দেরি হয়নি। বাস স্টপে ওর সাথে মেখলা, শঙ্খ আর রুবাইয়াত রয়েছে। শঙ্খ আর রুবাইয়াত একই দিকে যাবে। নাকতলা। মেখলা মুকুন্দপুর। ছেলে দুটো ওদের দুই মেয়েকে বাসে অটোতে তুলে তবে নিজেরা ফিরবে। তুয়ার ভালো লাগে এইটা। এইজন্যই  তো বন্ধুত্ব। এই এদের ভরসায়ই তো ও এখনো এত কিছুর পরেও কলকাতায় এক রয়ে গিয়েছে। মনে মনে ঠাকুরের কাছে ও মাঝে মাঝেই এদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় তুয়া।
আজ কপাল ভালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাস এসে গেল। খুব বেশি ভিড় নেই। বন্ধুদের হাত নেড়ে ও উঠে পড়ে। আধ ঘন্টার রাস্তা। জানলার ধারে সিট পেয়ে যায় তুয়া। জেঠিমাকে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয়। তারপর ইয়ারফোনে গুঁজে ফেলে কানে। রাতের কলকাতা। ঠান্ডা হাওয়া। আর কানে রেট্রো মিউজিক। অদ্ভুত ভালো কম্বিনেশন। তুয়া চোখ বুজে গানের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে। হঠাৎ গান থেমে যায়। ফোন বাজছে। তুয়া চোখ খোলে। স্ক্রিনে ভাসছে একটা নাম। তুয়া অবাক হয়।

No comments:

Post a Comment