Wednesday, July 10, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২২



একটা অন্ধকার গলি। সরু খুব। দু পাশ দিয়ে টিনের ছাদের বাড়ি। রাস্তাটা খুবই নোংরা। জায়গায় জায়গায় ময়লা ফেলা। ময়লা ফেলার ভ্যাট উপচে পড়ছে কোথাও। কিছু ঘেয়ো কুকুর নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করছে সেখান থেকে খাবার তোলার জন্য। হলুদ স্ট্রীট লাইট টিমটিম করে জ্বলছে। মাঝেমাঝেই দপদপ করছে। রাস্তায় তেমনভাবে মানুষজনের যাতায়াত নেই। ওই মাঝে মধ্যে এক দুজন সাইকেল চেপে এদিক ওদিক আসছে যাচ্ছে। আলোর অভাবে ভালো করে তাদের মুখ বোঝা যাচ্ছে না। শীত পড়বো পড়বো করছে শহরে। ইতিমধ্যেই তাই আগেভাগেই সবাই যে যার ঘরে ফিরে গেছে। তুয়ার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন যে রাজি হলো ও এখন এবং এরকম জায়গায় শুভ্রর সাথে দেখা করতে। সেই কতক্ষণ ধরে হেঁটে চলেছে এখান দিয়ে। রাস্তা আর শেষ হয় না। গুগুল ম্যাপ অনুযায়ী আরো মিনিট পনেরোর পথ বাকি। খুব আফসোস হচ্ছে তুয়ার।
আচ্ছা, তখন থেকে পিছন পিছন কে একটা আসছে না? তুয়া একবার পিছন ফিরে তাকালো। একটা লোক। বিশেষ সুবিধার না চেহারা। গায়ে একটা কালচে চাদর জড়ানো। মাথা ঢাকা। তুয়া মুখ ঘুরিয়ে নিলো। খানিক গিয়ে আবার পিছন ফিরে দেখলো। হ্যাঁ ঠিক। ওই তো। আসছে এখনও। তুয়া হাঁটার গতি বাড়ালো। চৌমাথায় এসে দাঁড়ালো। সিগনাল লাল। কোনদিকে কোনো গাড়ি নেই। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হলো। উল্টো ফুটপাথে গিয়ে দেখে লোকটা এখনো ওপারে। সিগনালে আটকে গেছে। তুয়া একটু স্বস্তি বোধ করে। জোরে জোরে হাঁটতে থাকে। সেই অন্ধকার অন্ধকার রাস্তা। শুনশান। হঠাৎ পিছনে টের পায় পায়ের শব্দ। ভয়ে ভয়ে ও পিছন ফিরে তাকায়। দেখে লোকটা ওর দিকে তেড়ে আসছে। তুয়া সামনের একে দুই হাত জড়ো করে প্রায় দৌড়োতে থাকে। লোকটাও তাড়া করে ওকে। ছুটতে ছুটতে তুয়া সামনেই একটা এ টি এম দেখতে পেয়ে সেখানে ঢুকে যায়। এ টি এমের সিকিউরিটি গার্ড ঝিমোচ্ছিলো। তুয়ার শব্দ পেয়ে নড়ে চড়ে ওঠে। একবার এদিক ওদিক দেখে বিড়ি জ্বালিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা লাগায়। তুয়া ওকে ডাকতে যায়, সাহায্যের জন্য। কিন্তু ভয়ে গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না কোনো। এদিকে লোকটা ওকে ধাওয়া করে এসে পৌঁছে গেছে এ টি এমে। তুয়া ভয়ে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করে। পারে না। লোকটাও এখন এ টি এমের মধ্যে এসে গেছে। সেই চড়া আলোর মধ্যে তুয়া লোকটার মুখ দেখতে পায়। বীভৎস। ভয়ানক। ক্রুর হাসি হাসছে। এ কী। এ তো মকবুল। তুয়া ভয় পেয়ে নিজেকে বাঁচাতে এ টি এম যন্ত্রের পিছনে লুকোতে যায়। পারে না। মকবুল ওকে ধরে ফেলেছে। দু হাত দিয়ে ওর গলা টিপে রয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তুয়ার। ঘামছে। হাঁসফাঁস লাগছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে ভয়ে। আর পারছে না। না। রুখে দাঁড়াতেই হবে ওকে। শরীরের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে দু হাত দিয়ে জোরে ঠ্যালা মারে ও মকবুলকে। মকবুল টলে যায়। তুয়া চোখ মেলে।
চারিদিক অন্ধকার। তুয়া বোঝে, সবটাই স্বপ্ন ছিল। দুঃস্বপ্ন। একই রাতে এই নিয়ে দুবার। ঢকঢক করে জল খায় খানিক। মোবাইলে সময় দেখে। সাড়ে তিনটে। ভোর হতে এখনো দেরি আছে। তুয়া বোঝে, এরকম চলতে থাকলে, ও পাগল হয়ে যাবে। চিকিৎসা করাতেই হবে। ঠিকঠাক প্রফেসনালকে দিয়েই। মনের এই অসুখ না সারলে, ও যে বাচঁবেই না।

No comments:

Post a Comment