তুয়ার পোস্টটা নিয়ে ফেসবুক সহ তামাম সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালোমতোই সাড়া পড়ে গিয়েছে। আর সেখানেই ভুরু কুঁচকে গিয়েছে কলেজের প্রিন্সিপালের। ওঁর ধারণা, যখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তুয়াকে কেসটা চালাতে বাধা দেয়নি কোনো, তা সত্ত্বেও কলেজের নাম পোস্টে দেওয়ায়, কলেজের বদনাম। পরেরদিন ফার্স্ট পিরিয়ডে ক্লাস চলাকালীন প্রিন্সিপালের অফিসকর্মী, শ্যামলবাবু এসে তুয়াকে প্রিন্সিপালের ঘরে নিয়ে যান। ঘরে ঢুকে তুয়া দেখে রাশভারী প্রিন্সিপাল অমিয়শঙ্কর মুখোপাধ্যায় তো রয়েইছেন, এ ছাড়াও কলেজের গভর্নিং বডির আরো চারজন স্যার এবং হৈমন্তী ম্যাম আছেন। তুয়াকে বসতে বলে অমিয়বাবুই প্রথম মুখ খুললেন।
"তুমি ফেসবুকে যে পোস্টটা করেছো, সেটা ডিলিট করে দাও।"
তুয়া চমকে যায়। বলে, "কেন স্যার? কোনো লিগ্যাল অসুবিধে?"
এবার রামতনু স্যার বললেন, "দেখো, লিগ্যাল কিছু কিনা আমরা জানি না। তুমি বললে ভালোই হলো। আমরা এই পয়েন্টটা চেক করবো। কিন্তু বর্তমানে বারবার কলেজের নাম আসায় আমাদের কলেজের এবং এখানকার বাকি স্টুডেন্ট ও টিচারদের সুখ্যাতি নষ্ট হচ্ছে। তাই আমরা চাই তুমি ওই পোস্ট তুলে নাও।"
কথাগুলো শুনে তুয়ার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এসব কী বলছেন ওঁরা? ও খানিক চুপ করে থাকে। মাথা নিচু। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলে, "আমার মনে হয় না আমার পোস্টের জন্য কলেজ বা কলেজের সাথে বর্তমানে যুক্ত কারুর মানহানি হচ্ছে বলে। আমি আমার পোস্টে কোনো অন্যায় দেখিনা। তাই ওই পোস্ট আমি তুলবো না।" উপস্থিত কেউই বোধহয় এই উত্তরের আশা করেননি। তুয়ার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ। নির্বাক। হৈমন্তী ম্যাম গলা খাকরি দিয়ে বললেন, "দেখো, তোমায় যেটা বলা হচ্ছে, সেটা শোনো। যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। ছেলেমানুষ তুমি। যা বলা হয়েছে, পালন করো। দেখি, ফোনটা দাও। ডিলিট করো পোস্ট।"
তুয়া এইবারে রেগে যায়। একটু জোরের সাথেই বলে, "আমি ডিলিট করবো না। আমায় জোর করতে পারেন না। তা ছাড়া আপনার রিক্রুট, মকবুল সিদ্দিকী যখন আমার সাথে এরকম জঘন্য ব্যবহার করলো, আমার শ্লীলতাহানি করলো, কই, তখন কলেজের বদনাম হয়নি? ইমিডিয়েটলি তো মকবুলকে আপনারা স্যাক করেননি। পুলিশ কেস শুরু হওয়ার পরে আপনারা ওকে স্যাক করেন, তাও পুলিশ কাস্টোডিতে ওকে তোলার পরে। আমি সামান্য এই ঘটনাচক্র জনসমক্ষে আনলেই সব প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে যায় কী ভাবে? আমায় বোঝান।"
তুয়ার এই তেজের জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। অমিয়বাবু উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, "তোমায় ঠিক এক ঘন্টা সময় দিলাম। দ্য পোস্ট মাস্ট বি টেকেন ডাউন। এলস, ইউ উইল সি ফর ইয়র্সেলফ, কলেজ কমিটির অবাধ্য হলে কী হয়। টেক দিস সিরিয়াসলি।"
"আপনি আমায় চ্যালেঞ্জ করছেন? তাও এই বিষয়ে? দুঃখিত স্যার। আপনি এটা ঠিক করলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতার কথা আপনি বোধহয় জানেন না। আমিও দেখে নিচ্ছি কী হয় এরপর।" এই বলে তুয়া হনহন করে বেরিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে কথা কাটাকাটি বাকবিতণ্ডার সম্ভাবনা ভেবে বাইরে লোক জমে গিয়েছিল। তুয়া ওর ক্লাসের বন্ধুদের সাথে নিয়ে কলেজ কম্পাউন্ডের একটা কোণে জড়ো হয়। রুনা এগিয়ে এসে তুয়াকে জিজ্ঞেস করে, "দেখি। ফোনটা দে। রেকর্ডিংটা ঠিকমতো এসেছে তো?" তুয়া ফোনটা এগিয়ে দেয়। রুনা স্পিকার অন করে।
পনেরো মিনিট পর যখন রেকর্ডিং থামে, সবার মুখে হাসি। প্রত্যেকে তুয়ার ফোন থেকে ব্লুটুথে ফাইল কপি করে নেয়। এইবার শুরু হবে সোশ্যাল মিডিয়াতে পুরোটা তুলে ধরার। রুনা ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকের মেয়ে। ওরই বুদ্ধিতে পুরো ব্যাপারটা প্ল্যান করা। ও সবাইকে আশ্বস্ত করে বললো, "দেখবি এবার মজাটা। জাস্ট দেখ। উইদিন আ ডে। দেখবি কী হয়।"
তুয়া শ্রীময়ীকেও পাঠিয়ে দিয়েছে ক্লিপিং। ওদিকে শ্রীময়ীও শুরু করে দিয়েছে কাজ। লড়াই জমে উঠেছে।
No comments:
Post a Comment