Tuesday, July 30, 2019
তুয়ার হিজিবিজি ৩০
তুয়া রিপোর্ট লেখা শেষ করলো প্রায় ভোর তিনটে নাগাদ। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীময়ী ম্যামকে মেল করেও দিলো। এরপর ও অপেক্ষা করে ম্যামের মেসেজের। জানে, ম্যাম এখন জেগে থাকেন। মেল দেখবেন এখনই। তুয়া অপেক্ষা করে বসে আছে মেসেজের। এবং সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীময়ীর মেসেজও এসে পড়ে। "আমি পড়ে নিচ্ছি। কাল কিন্তু অবশ্যই আমার অফিসে এসো। খুব জরুরি দরকার। সকাল এগারোটার দিকে চলে এসো।" তুয়া শুধু 'ওকে' লিখে ছেড়ে দেয়। মেসেজের বয়ান যখন এই, তাহলে তো মনে হচ্ছে না মিটিংটা কাটানো যাবে, বা উচিত। ঠিক আছে। না হয় গিনিকে নিয়েই বেরোবে। শ্রীময়ীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে তারপর দুই বন্ধু কোথাও একটা লাঞ্চ সেরে নেবে। ও সেইমতো জানিয়ে মেসেজ করে দেয় গিনিকে। তারপর নটার এলার্ম দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ ভীষণ হেকটিক গেছে। একটু ঘুমানো দরকার।
এলার্মের শব্দে তুয়ার ঘুম ভাঙে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে গিনির মেসেজ। প্ল্যান চেঞ্জ। তুয়া যেন ওর কাজ মিটিয়ে একেবারে সোজা গিনির মামাবাড়ি চলে আসে। ওখানেই লাঞ্চ হবে। কাকিমা পইপই করে বলে দিয়েছেন। হুম। তাহলে তো হাতে এখনো খানিকটা সময় আছে। এই ভেবে তুয়া আরো এক ঘন্টা শুয়ে থাকে। তন্দ্রা মতো এসেছিল। আবার এলার্মের শব্দে এবার একেবারে উঠে স্নান সেরে দুধ কর্ণফ্লেক্স দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্য তৈরি হয়ে নেয়। শ্রীময়ী সাড়ে এগারোটা বলেছেন মানে সেটা সাড়ে এগারোটাই। এক চুলও এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। সামারে ইন্টার্নশিপ করে এটা ভালোই বুঝে গিয়েছে। তুয়ার ভালো লাগে এই সময়ের দাম। ম্যামের অনেক কিছুই ও খুব পছন্দ করে। ম্যামকে ও ভীষণ শ্রদ্ধা করে।
যথাসময়ে পৌঁছে শ্রীময়ীর অফিসের বাইরে ওয়েটিং এরিয়াতে অপেক্ষা করে তুয়া। ঠিক এগারোটা কুড়ি নাগাদ শ্রীময়ী অফিস ঢোকে। তুয়াকে দেখে হেসে আর একটু অপেক্ষা করতে বলে নিজের চেম্বারে চলে যায়। সাড়ে এগারোটা, কাঁটায় কাঁটায়, তুয়ার ডাক পড়ে। তুয়া একটু নার্ভাস। রিপোর্টটা যদিও ও জান প্রাণ দিয়ে লিখেছে, তবুও, কোথায় জানি ভিতরে ভিতরে একটা ভয় থেকেই গিয়েছে। আসলে শ্রীময়ী ম্যাম ওর ওপর এতটাই ভরসা করেন, আশা করেন...তুয়া একটু বুক ধুকপুক নিয়েই ভিতরে গেল। শ্রীময়ীর চেম্বারের এসিটা বরাবর খুব ঠান্ডা। ঠান্ডা আর নার্ভাসনেসে তুয়া যেন ঠকঠক করে কাঁপতে থাকলো। শ্রীময়ী হেসে ওকে বসতে বললেন। তুয়া চেয়ার টেনে বসলো। শ্রীময়ী সামনে রাখা ডেস্কটপের বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। ওখানে তুয়ার রিপোর্টটা খোলা। কে জানে, কী বলেন।
"বুঝলে তুয়া, লেখাটা ভালোই হয়েছে। যা বুঝলাম, ইউ হ্যাভ ডান আ কমপ্রিহেনসিভ রিসার্চ। ভালো ভালো পয়েন্টস তুলে ধরেছ। তবে আরো একটু ডিটেলিং দরকার।" শ্রীময়ীর কথা শুনে তুয়া যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ও বললো, "ঠিক আছে ম্যাম। আমায় একটু বলে দিন কোথায় কোথায় কী ঠিক করতে হবে। আমি দেখে করে নেবো।" শ্রীময়ী হেসে উত্তর দিলো, "সে ঠিক আছে। তবে এক্ষুণি চাই না। এক্ষুণি তোমার সময় হবে না। ইউ হ্যাভ মোর ইম্পরট্যান্ট থিংস টু লুক ফর রাইট নাও।" তুয়া অবাক। ব্যাপারটা কী, বোঝেনা ও। শ্রীময়ীর চোখে মুখে এমন রহস্য কেন? আবার হাসছেনও। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শ্রীময়ী এবার জোরে হেসে বলেন, "অবাক হচ্ছ, তাই তো? আমি বুঝিয়ে বলি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে একটা ওয়ার্কশপ অর্গানাইজ করেছে পাবলিশিংয়ের ওপর। এটা তিন সপ্তাহের। প্রথম সপ্তাহ কলকাতায় হবে। তারপর ওরা লন্ডনে ওদের সেন্টারে নিয়ে যাবে। সেখানে বাকি দুই সপ্তাহ চলবে ইন্টেন্স ওয়ার্কশপ। আমাদের এখান থেকে আমি তোমার নাম রেকমেন্ড করি, বেসড অন ইয়োর পারফরমেন্স লাস্ট সামার। ওরাও তোমায় সিলেক্ট করেছে। এটা ডিসেম্বরের থার্ড উইকে হবে। সো, গেট সেট টু স্পেন্ড ইয়োর ক্রিসমাস ইন লন্ডন!"
খবরটা অভাবনীয়। এমন সুযোগ পেয়ে তুয়া বেদম খুশি। ব্যাপারটা ওর কাছে অভাবনীয় হলেও, তবুও, কোথাও গিয়ে যেন মনে হচ্ছে, ও এটা ডিজার্ভ করে। ইন্টার্নশিপে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। রেজাল্ট ভালো করেছে কলেজে। এটা যেন সত্যিই ওর প্রাপ্য। এই সম্মানীয় ওয়ার্কশপ ওর অধ্যবসায়ের পুরস্কার। এই প্রাপ্তিতে তুয়া আপ্লুত। অনেকটা দায়িত্বও বটে। নিজের যোগ্যতার ও এই প্রাপ্তির মর্যাদারক্ষার গুরুদায়িত্ব ওর ঘাড়ে। সামনে সোনালী দিন। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বছরের শেষটা তাহলে ভালোই কাটবে, মনে মনে হাসে তুয়া। এই বছরটা সত্যিই অদ্ভুত। নানান অনুভূতির রোলার কোস্টার।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment