Tuesday, July 9, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২১



পুজোর ছুটির পর আবার কলেজ খুলে গিয়েছে। পুজোটা তুয়ার খুব একটা ভালো কাটেনি। মিডিয়ার দৌলতে বেশ কিছুদিন মকবুলের কেসটা টিভির পর্দায় প্রাইম টাইমে প্রচুর ফুটেজ পাওয়ায়, তুয়াকে অনেকেই চিনতে পেরেছে। সবাই যেন ওকে দেখেই ফিসফিস শুরু করে দিচ্ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসতো তুয়ার। দিন গুনছিলো, কবে ছুটি শেষ হবে। কবে ও ফিরবে কলকাতা। ক্লাস করতে।
অবশ্য এখানে এসেও সেই অস্বস্তি বোধটা কাটেনি। সারাক্ষণ যেন মনে হচ্ছে, সবাই বুঝি ওকে নিয়েই হাসাহাসি করছে, আড়ালে। ওর নিন্দে করছে। স্যার ম্যামেরা যেন বাঁকা হাসি হাসছে। কিছুই ভালো লাগছেনা। জেঠু জেঠিমা আবার যেন বেশিই ভালো ব্যবহার করছেন। সকাল সন্ধ্যে ওর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মাঝেমাঝেই লক্ষ্মীদির হাত দিয়ে এটা সেটা পাঠাচ্ছেন রান্নাবান্না। মানুষ এত ভালোও হয়? নাকি সবই মেকি? তুয়া বুঝে উঠতে পারে না। আর তাই বাড়তে থাকে আরো অস্বস্তি। হাঁসফাঁস। দম বন্ধ হয়ে আসে ওর।
রাত্রে চেষ্টা করলেও ঘুম হয়না ঠিক করে। চোখ বন্ধ করলেই মকবুলের ফ্ল্যাটের সেই লিভিং রুমটা ভেসে ওঠে। মকবুলের ভয়ঙ্কর মুখ। দু হাত দিয়ে তুয়াকে চেপে রাখে। যেন গলা টিপে মেরে ফেলবে। ঘামতে ঘামতে তুয়ার ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারে, সবই দুঃস্বপ্ন। টেবিলে রাখা জলের বোতল থেকে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেয়ে নেয় ও। যত তুয়া নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে এগুলো দুঃস্বপ্ন, মকবুল এখন পুলিশ হেফাজতে, ওর আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, তবুও, এইটা যেন প্রতি রাতের নিয়মিত ঘটনা হয়ে গিয়েছে। হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে তুয়া। ও আর পারছে না। শ্রীময়ী ম্যাম বলেছিলেন ওর কাউন্সেলিং করাতে। আসানসোলে থাকাকালীন সে সব সম্ভব হয়নি। মা বাবা খুব একটা গা করেনি। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে সব, এই ভেবে। কিন্তু, কিচ্ছু যে ঠিক হচ্ছে না। আর নিতে পারছেনা তুয়া দিনের পর দিন এই মানসিক কষ্ট।
এবার নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। রাত আড়াইটা বাজে। শ্রীময়ী ম্যামকে একটা ছোট্ট মেসেজ করে। "আমায় ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের খোঁজ দেবেন? আমি আর পারছিনা।" মুহূর্তের মধ্যেই মেসেজ ব্লু টিক হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসে, "কাল দেখা করো। ক্লাসের পরে। টাইম জানিয়ে দিয়ো। আমি পিক আপ করে নেব। এখন চেষ্টা করো ঘুমোতে। গান চালাও বরং।"
তুয়া মেসেজটা পড়ে। মোবাইলটা পাশে রেখে শুয়ে পড়ে। গভীর রাত। আলো ফুটতে এখনো অনেকটাই দেরি...

No comments:

Post a Comment