"মেঘের পরে মেঘ জমেছে।"
লাল কুর্তি আর নীল টি-শার্টের ভারী বন্ধুত্ব। ফার্স্ট ইয়ারে, ফ্রেশার্স থেকেই। তারা ক্লাসে পাশাপাশি বসে। একসাথে লাইব্রেরি যায়। দিনের শেষে বাস স্ট্যান্ডের লাগোয়া মামার দোকান থেকে রোজ চা টোস্টও খায়। ঝিল পাড়ে ঝিম মারা দুপুরে বসে পিট সিগার আর লালন নিয়ে গভীর আলোচনায়ও মত্ত থাকে। ৪৫ আর মেট্রোর অটো দুজনকে আলাদা করতে গিয়েও পারে না। ওয়াটসআপের সবুজ আইকনের জোরে ওদের ট্র্যাফিকও দিব্যি স্মুদলি চলতে থাকে। বন্ধুত্বে আবার যানজট কী?
কিন্তু, হঠাৎই একদিন সিগন্যালে গাড়ি থমকে যায়। লাল কুর্তি একদিন আবিষ্কার করে, নীল টিশার্টের সাথে যেন হলুদ কামিজ বড্ড বেশিই মানাচ্ছে। ফিজিক্সে পড়া কালার থিয়োরির এমন প্র্যাকটিক্যাল উদাহরণ এত সহজে পাবে, লাল কুর্তি ভাবতেই পারেনি। ঘুণাক্ষরেও না। নীল আর হলুদে মিলে মিশে ঈর্ষার সবুজ ঢেকে দিচ্ছে সব কিছু। দুঃখে, যন্ত্রনায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে লাল কুর্তির। এই বন্ধুত্ব? এই দোসর?
ঝিল পাড়টা আজ বড্ড নির্জন। নিরিবিলি। গাছের পাতা নড়ছে না। আকাশ থমথমে। মেঘ করে আছে। গুমোট চারিদিক। ভালো লাগছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না লাল কুর্তির। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাথর ছোড়া ঢেউ রাশির দিকে। আনমনে।
এমন সময়, কাঁধে অনুভব করে একটা হাত। বড় চেনা এই স্পর্শ। এক রাশ ভরসা মাখা একটা দৃঢ় হাত। চোখ না তুলেই লাল কুর্তি বলে দিতে পারে, এ হাতের মালিক কে। মুখ তুলে তাকায় না সে। তাকাবেই বা কী ভাবে? এক বুক অভিমান আর দলা পাকানো দুঃখগুলো তো ইতিমধ্যেই বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নীল টিশার্ট চুপ করে এসে পাশে বসে। দুজনেই চুপ। পাশে রাখা গিটারটা নিয়ে খানিক টুংটাং করে নীল টিশার্ট। কখন জানি তারই মধ্যে এসে যায় সুর, আসে লয়, আসে ছন্দ।
আর ঠিক তখনই, আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। মুষলধারে। ঝাপসা চারিপাশ। পারিপার্শ্বিকের 'ক্যাকফোনি' পায় সুর, দুটি আনাড়ি ঠোঁটের ফাঁকে।
পার্কিং লট থেকে গাড়ির রেডিওটা আপন মনে জানায় আলিপুরের বিপদসীমার সতর্কবার্তা।
বর্ষা এলো শহরে।
No comments:
Post a Comment