Saturday, July 13, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২৫



আজ প্রথম হিয়ারিং ছিল কেসের। এবং স্বাভাবিকভাবেই তুয়ার অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো না। প্রথমত, দুর্ঘটনার প্রায় দু মাস পরে মকবুলের মুখোমুখি হতে হলো তুয়াকে। ওকে দেখে তুয়ার সারা শরীর অস্থির অস্থির করছিল। কী সাংঘাতিক অস্বস্তি। রাগ। ঘেন্না। বিরক্তি। মকবুলের উকিল সমানে ব্যাপারটাকে মিথ্যে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওদের যুক্তি, তুয়া নাকি আসন্ন পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য নিজে থেকে মকবুলকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এবং গোটা ঘটনাটাই মকবুলকে মিছিমিছি হ্যারাস করার জন্য সাজানো। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো বড় ষড়যন্ত্র আছে। তুয়ার হয়ে সওয়াল জবাব করছেন, শ্রীময়ীর পরিচিত, এডভোকেট পল্লবী মিত্র। তিনি একের পর এক যুক্তি তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে অপরপক্ষের সমস্ত এলিগেশন ভুল বলে দেখিয়ে দিচ্ছেন। দিনের শেষে আঘাত পাল্টা-আঘাত জেরায় জেরায় জীর্ণ তুয়া। আবার দশদিন পরে হিয়ারিং। পল্লবী বললেন, "চিন্তা করো না তুয়া। মকবুল শাস্তি পাবেই। শুধু কদিন নোংরামি কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। নিজেকে শক্ত রেখো।" তুয়া মাথা নাড়ে। শ্রীময়ী ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নেন। বাড়ি ড্রপ করবেন।
তুয়ার মা বাবা আজকের হিয়ারিংয়ে আসতে পারেননি। কিন্তু শ্রীময়ীর থেকে ইতিমধ্যেই সমস্ত ঘটনা জেনে নিয়েছেন। ওঁরা ভীষণ চিন্তিত। তুয়ার নিরাপত্তার জন্য। ওঁরা চাননি কেসটা এগোক। একলা থাকে তুয়া। পাছে ওর কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। আর জল ঘোলা করে কী হবে। এই তাঁদের বক্তব্য। তুয়া মানতে নারাজ। এরকমভাবে চলতে দিলে, শাস্তি না পেয়ে পেয়ে ক্রিমিনালগুলো আরো সাহস পেয়ে যাবে। বাড় বাড়বে ওদের। এ হতে দেওয়া যায় না। তুয়া লড়াকু মেয়ে। ও ঠিক করেছে, নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়বে না ও। কেসটা চালাবেই। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ফান্ড থেকে জমানো টাকা দিয়েই আপাতত চালাচ্ছে। দেখা যাক, এরপর কী হয়।
ও বাড়ি ফিরে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে একটা পোস্ট করলো। গোটা ঘটনাটা জানিয়ে। এবং সাথে আজকের শুনানির কথা। পোস্টটা পাব্লিক রাখলো। তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে রাত্রে শোয়ার আগে একবার আবার ফেসবুক খুললো। দেখলো ইতিমধ্যেই হাজার হাজার লাইক কমেন্ট ও শেয়ার হয়ে গেছে। বহু চেনা অচেনা লোকজন ওকে সাহস জুগিয়েছে। ইনবক্সেও কেউ কেউ নিজেদের ঘটনার কথা লিখেছে। বেশিরভাগের দাবি, মকবুলের শাস্তি হোক। কড়া শাস্তি। যা অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়। আবার কিছু কিছু লোক এরই মধ্যে ধর্ম নিয়ে তাজিয়া শুরু করে দিয়েছে। তুয়া যত্ন করে সেসব ডিলিট করলো। ওর লড়াইয়ে ধর্ম বা রাজনীতি, কোনটাই আসতে ও দেবে না। অপরাধীর কোনো ধর্ম হয় না। রাজনৈতিক রং হয় না।

No comments:

Post a Comment