গিনি। এই সময়? এখন তো ওদের ওখানে মাঝ রাত্তির। তুয়া খুব অবাক হয়। ফোনটা রিসিভ করে বলে, "হ্যাঁ গিনি। বল। এই এত রাত্রে, কী হলো?" উল্টোদিক থেকে গিনির সুরেলা কণ্ঠস্বর শোনে তুয়া। "রাত দশটা আবার এত রাত্তির কবে থেকে হলো আমার তুয়াপাখি?" তুয়া অবাক হয়ে যায়। বুঝতে পারে না গিনির কথা। গিনিই আবার কলকল করে বলতে থাকে, "বুঝলি না তো? কবে যে একটু বোধ বুদ্ধি হবে তোর? ওরে, আমি এখন কলকাতায় রে।" তুয়া এবার সজাগ। উত্তর দেয়, "অ্যাঁ সে কী? কবে এলি? হঠাৎ?" গিনি বলে, "তিষ্ঠ। তিষ্ঠ। বলছি। আমি এই এক্ষুনি ল্যান্ড করেছি। এখনও এয়ারপোর্টের বাইরেও বেরোইনি। ইমিগ্রেশনের লাইনে আছি। ওখানে এখন সামার ব্রেক। বাড়ি এসেছি তাই। তুই এর মধ্যে অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিস। তাই আর তোকে বলা হয়নি কিছু। প্লাস আমি ভাবলাম, তোকে সারপ্রাইজ দিই। তা বল, কেমন হলো সারপ্রাইজটা?" গিনির কণ্ঠস্বরে উচ্ছ্বাস উপচে পড়ছে। তুয়াও ভীষণ খুশি। বেস্ট ফ্রেন্ড শহরে। পরীক্ষাও শেষ। কয়েকটাদিন জমিয়ে মজা হবে। গিনির সাথে কথা বলে তুয়া জানলো যে গিনি এখন দেড় মাসের ছুটি নিয়ে এসেছে দেশে। সপ্তাহখানেক মামার বাড়িতে থাকবে কলকাতায়। তারপর আসানসোলে যাবে। দুজনে ঠিক করে নিলো, এই এক সপ্তাহে রোজ ওরা দুজনে দেখা তো করবেই, কাকিমা, মানে গিনির মায়ের থেকে স্পেশাল পারমিশান করে অন্তত দুদিন গিনি তুয়ার কাছে থাকবে। তারপর তুয়াও ওদের সাথে একসাথেই আসানসোলে ফিরবে। আগামীকাল সকাল সকাল তুয়া গিনির মামাবাড়ি পৌঁছে যাবে, ঠিকানা গিনি পাঠিয়ে দেবে। এমনটা কথা হলো।
তুয়া খুশিমনেই বাড়ি ফিরলো। ভাগ্যিস মেখলার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যানটা বাতিলকরে দিয়েছিল। এখন ফিরে তাড়াতাড়ি শ্রীময়ী ম্যামের দেওয়া কাজটা শেষ করতে হবে। ম্যামকে মেল করে দেবে। ব্যস। কাল থেকে এক সপ্তাহ শুধুই গিনির সাথে ঘুরে বেড়াবে, আড্ডা দেবে। কতদিনের জমা কথা রয়েছে। তারপর সপ্তাহখানেক বাড়িতে থেকে ফিরে এসেই ইন্টার্নশিপ। চেষ্টা করে দেখবে যদি কয়েকটাদিন ছুটি বাড়ানো যায়। গিনি আসায় পরিস্থিতিই আলাদা এখন। জেঠিমা জেগেই ছিলেন। দরজা খুলে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন টুকটাক পরীক্ষার কথা, বন্ধুদের কথা। তুয়া এই সুযোগে বলে দিলো গিনির কথা। জেঠিমা মনে মনে খুশি হলেন। আসলে তুয়াকে অনেকদিন ওরকম দুমড়ে মুচড়ে থাকতে দেখে সবাই এখন ওর হাসিমুখের অপেক্ষায় থাকে।
তুয়া ওপরে উঠে ঘরে এলো। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ খুলে বসলো। অনেকটা অ্যাসাইন্মেন্ট বাকি। মনে হচ্ছে আজ রাত জাগতে হবে। শ্রীময়ী ম্যামের মেসেজ এলো ফোনে। "কাল সকাল দশটায় আমার অফিসে এসো। উইথ দ্য অ্যাসাইন্মেন্ট।" এই রে, এদিকে যে কাল সকালে গিনির সাথে প্ল্যান? এখন শ্রীময়ীকে কিছু বলে লাভ নেই, তুয়া ভাবল। আগে কাজটা শেষ করুক, তারপর মেল করে মেসেজ করে দেবে। ঘড়ি দেখলো তুয়া, সোয়া এগারোটা। বাড়িতে ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলে অবশেষে যখন কাজ নিয়ে বসলো, প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। নাহ, এইবারে কাজটা শেষ করতেই হবে, ভাবল তুয়া। আগে কাজ। তারপর ছুটির কথা। গিনি তো রইলোই। চুটিয়ে আনন্দ হবে এরপরে কটাদিন।
No comments:
Post a Comment