Monday, July 22, 2019



শৈলজা মুখোপাধ্যায়। বয়স পঁয়ষট্টি। নিবাস উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়ি। সেই প্রাচীন বাড়ির সাথেই মানানসই প্রাচীন ওঁর ধ্যান ধারণা, ওঁর চিন্তা ভাবনা। এখনো বাড়িতে কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়া বিয়ের সম্পর্ক হয় না। ব্রাহ্মণী ছাড়া রান্নাঘরে কেউ ঢুকতে পারে না। "ম্লেচ্ছ"দের স্থান নেই। এমনকী, নিজের কনিষ্ঠ পুত্রী, আনন্দিতা যখন বাড়ির নিয়ম ও অনুশাসনকে অবজ্ঞা করে বিলেতে পড়তে গিয়ে এক ইউরোপীয় সাহেবকে বিয়ে করার কথা বলে, তৎক্ষণাৎ মুখোপাধ্যায় বাবু, গিন্নীর প্ররোচনায় কন্যাকে ত্যাজ্য করেন।
এই শৈলজা দেবী আজ বড়ই বিড়ম্বিত। ওঁর ছোট নাতি, শ্রীমান দেবমাল্য স্কুল থেকে ফেরার পথে এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। অস্ত্রোপচার করতে হবে। এবং তার জন্য প্রয়োজন রক্তের। আশু। সমস্যা এই যে নাতিবাবুর রক্তের গ্রুপ অত্যন্ত বিরল। ডোনার পাওয়া যাচ্ছেনা। খোঁজ চলছে। এদিকে রক্তের জোগাড় না হলে অস্ত্রোপচারও শুরু করা যাচ্ছে না।
গোটা পরিবার হয় নার্সিং হোমে রয়েছে, নয় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। রক্তের সন্ধানে। শৈলজা দেবী ঠাকুরঘরে বসে। সারাদিন জল পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি। ক্রমাগত ইষ্টনাম জপ করে চলেছেন। আজ উনি সমস্ত কিছু জনার্দনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় একমাত্র উনিই সব ঠিক করতে পারেন। নার্সিং হোম থেকে খবর আসছে মাঝে মাঝে। কোনো উন্নতি নেই অবস্থার। বরং যত সময় যাচ্ছে, ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ডাক্তারদেরও।
"ঠাকুর, আমার নাতিটাকে দেখো। ও সুস্থ হয়ে উঠলে, তোমায় সোনার মুকুট গড়িয়ে দেবো। কথা দিলাম।" ঈশ্বরের বেদির সামনে বসে কাঁদতে থাকেন শৈলজা। এমন সময় আদ্যিকালের ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে। কাজের লোক দুলাল ধরে। খানিক কথার পর ছুটতে ছুটতে এসে বলে, "গিন্নীমা, আপনার প্রার্থনা কাজে দিয়েছে। ছোটখোকার জন্য রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে। অপরেশন শুরু হবে এবার।"
শৈলজা দেবীর দু চোখ উপচে জল পড়তে থাকে। যাক, ঈশ্বর আছেন। শুনেছেন ওর প্রার্থনা। দুহাত জোরে ঠাকুরের সামনে প্রণাম সারেন।
নার্সিং হোমে তখন ডাক্তারদের তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফাতেমা বেগমের শরীর থেকে বিরল গ্রুপের রক্ত নিয়ে এবার অস্ত্রোপচার শুরু করতে হবে দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়ের। বাঁচাতেই হবে ওকে। ওর ঠাকুমার প্রার্থনার জোর আছে কি না, তার কঠিন পরীক্ষা আজ।
বিধাতা অলক্ষ্যে হাসেন। বড়ই বিচিত্র এ মানব সংসার।

No comments:

Post a Comment