Thursday, July 11, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ২৩

তুয়া বুঝতে পারে, আর ঘুমোনোর চেষ্টা করেও লাভ নেই। ঘুম ওর আসবেই না। এলেও, আবার সেই ভয়ানক দুঃস্বপ্ন। ও উঠে এসে বারান্দায় আরামকেদারায় গা এলিয়ে দেয়। বাইরে এখনো অন্ধকার। রাস্তা শুনশান। হাল্কা ঠান্ডা বাতাস বইছে। সামনের বাড়ির বাগান থেকে কামিনী ফুলের সুন্দর গন্ধ ভেসে আসছে। তুয়া কানে ইয়ারফোন গুঁজে নেয়। প্রাইভেট এফ এম চ্যানেলে গান চলতে থাকে। খানিক্ষণেই শুরু হবে "কালীকথা"। এই অনুষ্ঠানটা ওর ঠাকুমা নিয়মিত শোনেন। তুয়াও ঠাকুমার কাছে অনেকবার শুনেছে। অদ্ভুত শান্তি আসে মনে। তুয়া ঠিক করে, আজও শুনবে। রেডিও চলতে থাকে। যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আকাশ আস্তে আস্তে ফর্সা হতে থাকে। রাস্তায় এক এক করে মর্নিং ওয়াকার বের হয়। তাদের টুকরো টুকরো হাসি গল্প ছড়িয়ে পড়ে এদিক সেদিক। কখন জানি এসবের মধ্যে তুয়ার দু চোখ জুড়ে ঘুম এসে গিয়েছিল। কপালে একটা নরম হাতের ছোঁয়ায় ও ধড়ফড় করে উঠলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, জেঠিমা। "তোর জেঠু বাজার যাচ্ছিল, ওপরে তাকিয়ে দেখে তুই বারান্দায় শুয়ে আছিস। আমি তাই দেখতে এলাম। শরীর ঠিক আছে তো বাবা?" তুয়া আলতো মাথা নাড়ে। জেঠি খানিকক্ষণ ওর পাশে বসে। দুজনেই চুপ। কোনো কথা নেই। যথাসময়ে মীনাদি বাড়ি ঢোকে। গেট খোলার অজুহাতে জেঠিমা নীচে নেমে যায়।
তুয়া টাইমটেবিল দেখে। আজ শুধুই ফার্স্ট হাফে ক্লাস। শ্রীময়ীকে একটা মেসেজে সেটা জানায়। শ্রীময়ী লেখে, ঠিক সময়ে ও চলে আসবে, কলেজ গেটে। একসাথে লাঞ্চ করবে। তারপর ডক্টর মুন্সীর কাছে যাবে। উনি শহরের নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। তুয়া নাম শুনেই হেসে ফেলে। বলে, "এই ডক্টর মুন্সীও কি ডায়েরি লেখেন নাকি?" শ্রীময়ী ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে। মনে মনে ভাবে, যাক, মেয়েটা এখনও একটু হলেও ঠিক আছে। একদম ঠিক সময়ে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তুয়া সেরে উঠবেই। তুয়া ভালো থাকবে। থাকতেই হবে। মকবুলের বিরুদ্ধে কেসের শুনানি শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। কোর্ট কাছারির অনেক প্রেশার, অনেক নোংরামি। তার আগে মেয়েটাকে শক্ত হতে হবে। এই সময়ে তুয়ার সাথে ওর মা বাবা থাকতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওরা নিরুপায়। বাবার অফিস। ঠাকুমা শয্যাশায়ী। মায়ের পক্ষে আসাটা এক্কেবারে অসম্ভব। তা ছাড়া ওদের মধ্যে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সেইরকম ধারণা নেই। এই পরিস্থিতিতে তুয়ার যে কতটা প্রফেশনাল সাহায্য প্রয়োজন, ওরা ঠিক বুঝেই উঠছে না। আর তাই গোটা ব্যাপারে গা করছে না। সময়ের সাথে সব ঠিক হওয়ার যাবে, এই করলে যে মনের অসুখ সারে না, অনেকের মতোই, ওরা তা জানেনা। বা জানলেও সোশ্যাল স্টিগমার ভয়ে অস্বীকার করে। এরাই জ্বর পেট খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে এন্টিবায়োটিক খেতে ডাক্তারের কাছে ছুটবে, অথচ মনের জ্বর হলে সব চুপ। অদ্ভুত লাগে শ্রীময়ীর। দোষ দেব না ভাবাটাও ভুল। এই যুগে এসে কেন শিক্ষিত পরিবারেও এমন মানসিকতা হবে? কেন নিজের সন্তানের ভালোটা বুঝবে না এরা? শ্রীময়ী বোঝে, ওকেই সমস্ত দায়িত্ব নিযে হবে তুয়ার। তুয়াকে ভালো করতেই হবে ওকে। শ্রীময়ী ওর খুব ঘনিষ্ঠ মহলে দেখেছে, ছেলেবেলার এমন মেন্টাল ট্রমা কতটা এফেক্ট ফেলতে পারে বড় হয়ে। ও চায়না, তুয়ার জীবনটাও নষ্ট হোক। ওকেই লড়তে হবে তুয়ার সাথে। 

No comments:

Post a Comment