- হ্যাঁ কাকা, বলুন।
-
- না না। এখনও অবধি কিছু পাইনি। পেলে জানাবো।
-
- কীরকম?
-
- বাহ, এটা তো খুবই ভালো হয়। তবে...
-
- না, মানে মোহরের অরাজি হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনাদের অসুবিধে?
-
- মাসীমার কোন প্রব্লেম নেই তো?
-
- তাহলে তো হয়েই গেলো। একদম পারফেক্ট সেটআপ।
-
- হ্যাঁ ঠিকই। পরে বেটার কিছু পেলে আবার শিফট করে নেওয়া যাবে। লঙ টার্ম ব্যাপার।
-
- ঠিক আছে। আমি বলছি মোহরকে। ও একবার দেখে আসুক।
-
- আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
-
- না মানে কাজ তো আছে। কিন্তু অ তো চিনে যেতে পারবে না।
-
- আরে না না। আবার প্রমিতদাকে এর মধ্যে টানা কেন?
-
- শিয়োর? আমাদের একটুও অসুবিধে হত না কিন্তু।
-
- বেশ ঠিক আছে। মোহর দশ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে নিছে।
-
- অনেক উপকার করলেন কাকা। এমনি এমনি কি আর মুশকিল আসান বলি আমরা?
সকলেই আগ্রহ সহকারে সৃজনীর দিকে তাকিয়ে আছে। এক তরফা যা কথা শোনা যাচ্ছিলো, তাতে এইটুকুই বোঝা গেলো যে কিছু একটা সমাধান হয়েছে। ফোন ছাড়তেই সৃজনীর শাশুড়ি ওকে জিজ্ঞেস করলেন, "কী বললেন ঠাকুরপো? কোন বাড়ির ব্যবস্থা হলো?" সৃজনই হাসি মুখ করে উত্তর দিলো, "সমাধান বলে সমাধান? এই জন্যই তো কাকার ওপর ভরসা করি আমরা। কাকা বললেন মাসীমার সাথে কথা বলে ঠিক করেছেন, ওঁদের বাড়ির তিনতলায় একটা ঘর খালি পড়ে আছে। সেইখানেই আপাতত মোহরের থাকার ব্যবস্থা হোক। আর হ্যাঁ, মোহরের সব আবদার মেনে নেওয়া যাবে তাতে। এক্কেবারে সাউথ ফেসিং, তিনতলা। কলেজ থেকে হাঁটা পথ না হলেও রিকশায় মোটে দশ থেকে পনেরো মিনিট। আর ইন্টারনেট পাবে ভালোই। প্রমিতদা নিজেই কাজ করেন, কাজেই ওঁদের কানেকশন আছেই। মোহর ওখানে আরেকটা কানেকশন নিয়ে নিতে পারবে লাগলে। আর কাকার হোম ডেলিভারি থেকেই খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ঘর ভাড়া বাবদ সাড়ে চার হাজার। আর খাবার খরচ সেটা কবেলা খাবার নেবে কী খাবে সেই অনুযায়ী।" মোহর সব শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। সৃজনী তাই দেখে ওকে বললও, "কীরে? অমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? ঘরের ব্যবস্থা তো হয়ে গেলো। অমন ভালো ব্যবস্থা হতো না কিন্তু। প্রায় নিজেদের বাড়ির মতোই থাকবি। চেনা জানা মানুষ। কোন অসুবিধে হবে না।"
"কিন্তু, তুই আমায় না জিজ্ঞেস করেই ফাইনাল করে দিলি কেন?" মোহর প্রশ্ন করে।
"কারণ আমি মনে করেছি এইখানে এইটার চেয়ে এই মুহূর্তে তোর জন্য অ্যাঁ অন্য কোন অপশন নেই। এটাই বেস্ট অপশন। তুই গিয়ে দেখেই আয় না। দেখ পছন্দ হয় কি না। তা ছাড়া শুনলি তো, এটা টেম্পোরারি ব্যাপার। খোঁজ চলতে থাকবে। বেটার অপশন পেলে তুই চলে যাস।" সৃজনীর উত্তর ঠিক মনোঃপুত হয় না মোহরের। কিন্তু অকাট্য যুক্তির বিরুদ্ধে পাল্টা উত্তরও খুঁজে পায় না। বান্ধবী তাড়া লাগায়, "নে নে, তৈরি হয়ে নে। প্রমিতদা আসছে। তোকে নিয়ে যাবে ওঁদের বাড়ি। ঘরদোর দেখে নে। সব ঠিকঠাক হলে কাল পরশুর মধ্যেই শিফট করে নিবি। কলেজ শুরুর আগেই।"
প্রমিত? ওই লোকটার সাথে ওকে একা একা যেতে হবে? দুর্ভোগই দুর্ভোগ।
একদম কথা মেনেই একদম দশ মিনিটের মাথায় ওঁদের বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। তুষার ওঠে দরজা খুলতে। মোহর দেখতে পায়, বাইরে হেলমেট মাথায় দাঁড়িয়ে প্রমিত। হাতে আরেকটা হেলমেট। তুষার ওকে ভিতরে আসতে বলে। কিন্তু প্রমিত কাজের দেরি হয়ে যাচ্ছে এই অছিলায় আর ঢোকে না। মোহর বাইরে বেরোয়। হাতে মোবাইল আর পার্স। এই রে। এই এত উঁচু বাইক। এমনিতেই স্কুটিতে চড়তেও অস্বস্তি হয়। এই বাইকে কী করে উঠবে? প্রমিত ওঁর দিকে হেলমেট এগিয়ে দিয়ে বলে, "পরে নিন।" প্রমিত নিজে বাইকে উঠে বসে, মোহরের অপেক্ষা করতে থাকে। মোহর ইতস্তত করতে থাকে। কী করে উঠবে? প্রমিতের কাঁধে ভর না দিয়ে উঠতেই পারবে না। এখনও মোহর কেন উঠলো না, দেখতে গিয়ে প্রমিত দেখে মোহরের মুখ। কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রমিত বাইকটাকে একটু বাঁদিকে এলিয়ে বলে, "উঠে পড়ুন এবার। আমার কাঁধে ভর দিন। পড়বেন না।" মোহর সমস্ত আড়ষ্টতা জলাঞ্জলি দিয়ে কোনমতে উঠে বসে। প্রমিত বলে, "বসেছেন তো ঠিক করে? চেপে ধরে বসুন। আমি একটু স্পীডেই চালাই সাধারণত। তবে আজ না হয় কম করবো। কিন্তু তাও, ভালো করে চেপে বসুন।"
মোহর নিচুস্বরে বলে, "হুম। ঠিক আছে। চলুন। বসেছি।"
প্রমিত বাইক স্টার্ট দেয়। এবং প্রায় ঝড়ের গতিতে চালাতে থাকে। মোহর প্রাণপণে সিট আঁকড়ে চেপে বসে থাকে। ভয়ে চোখ বন্ধ। এই জন্যই ও একদম বাইক স্কুটি চড়ে না। ভীষণ ভয়। বাইরে হাওয়া দিচ্ছে। বৃষ্টি নামবো নামবো। সেই হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে প্রমিতের বাইক ছুটছে। মোহর কিচ্ছু টের পাচ্ছে না। কোন অনুভূতিই নেই। এমন কী, প্রমিতের দামী পারফিউমের গন্ধও নাকে ঢুকছে না।
পনেরো মিনিটের মধ্যেই এসে ওরা থামল মুখারজি বাড়ির সামনে। মোহর এই এতক্ষণে চোখ খুললো।
"নামুন। আমি এটা গ্যারেজে রেখে আসছি। বেল বাজাতে হবে না। আমার কাছে চাবি আছে।" প্রমিত বলে। মোহর মাথা নাড়ে। এখনও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে যেন। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
প্রমিত বাইকটা পার্ক করে রেখে এসে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ওকে বলে, "আসুন।" প্রমিত সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। মোহর একবার ইতস্তত করে। তারপরে দৃঢ় পায়ে প্রমিতের পিছন পিছন সিঁড়ি ভাঙতে লাগে।
No comments:
Post a Comment