Thursday, August 22, 2019
হৃদয়পুর ৯
ফোন ছেড়ে মোহর খানিক চুপ করে বসে রইলো। এক্সিডেন্ট? এমন কী হলো যে সব শেষ? সৃজনীর কথাটা বিশ্বাস হয়না মোহরের। ও আরো একবার ফোন করে সৃজনীকে। সৃজনী ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, "বললি কাকু কাকীমাকে? আমরা আসছি। দু মিনিটে রওনা দিচ্ছি।" মোহর কিচ্ছু বলতে পারে না। ডুকরে কেঁদে ওঠে ফোনে। একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষ, এই তো এক্ষুণি বেরোলো বাইক নিয়ে, যাওয়ার আগে চোখাচুখি হলো... আর এই এত অল্প সময়ের মধ্যেই সে আর নেই? হেলমেট পরেছিল। তাও কী করে এমন হলো? এ হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না। বিশ্বাস হয়না মোহরের। এখনো কত কথা বলা বাকি ছিল ওর প্রমিতকে। এরকমভাবে প্রমিত ওদের ছেড়ে চলে যেতে পারে না। ফোনের অপর প্রান্তে সৃজনীর "হ্যালো, হ্যালো মোহর? দেখ, ব্যাপারটা ভীষণ শকিং। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। শক্ত হ। কাকু আর মাসীমাকে সামলাতে হবে তো তোকেই। আমরা এই দশ পনেরো মিনিটে আসছি।" মোহর কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আমি ঘরে আছি। তোরা খবর দিবি। আমি মোটেই পারবো না এই কথাগুলো কাকীমাকে বলতে। অসম্ভব।" সৃজনী নাক টেনে বলে, "আচ্ছা ঠিক আছে। বলতে হবে না। তুষার বলবে। তুই শান্ত হ।" শান্ত কি আর হওয়া যায়? মোহর তবুও কাঁদতেই থাকে। সৃজনী ফোন ছেড়ে দেয়। ঠিক পনেরো মিনিটের মাথায় কলিং বেলের শব্দ শোনে। বার দুয়েক বেল বাজে। কী হলো, গেল কোথায় সব? কেউ দরজা খুলছে না যে। কাকীমা, কাকু, কাজের লোকজন, কেউ কোথাও নেই নাকি? এই তো আধ ঘন্টা আগেও কলকল কলকল শুনছিলো লোকজনের। মোহর তিনতলা থেকে নিচে নেমে দরজা খোলে। দেখে মুখ ভার করে সৃজনী আর তুষার দাঁড়িয়ে। সৃজনী ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, কোথায় সবাই?" মোহর মাথা নাড়ে। বলে, "জানি না। বাড়ি নেই মনে হচ্ছে।" সৃজনী মোহরের দিকে তাকায়। মায়া হয়। এইটুকু সময়েই মেয়েটা কেঁদেকেটে একশা। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে সৃজনী আর তুষার। মোহর ওদের উল্টোদিকে বসে। কেউ কোনো কথা বলছে না। মোহরের দুই চোখ দিয়ে সমানে জল গড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর। মাথা নিচু। সৃজনী উঠে গিয়ে মোহরের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত দেয়। মোহর মুখ তুলে বন্ধুর দিকে তাকায়। কাঁদতে কাঁদতে মোহরের দু চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। ও বলে, "এটা কী হলো সৃজনী? এরকমভাবে কী করে চলে গেল প্রমিত? সব আমার দোষ। সব।" সৃজনী মোহরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "অমন বলে না মোহর। তোর কোনো দোষ নেই। তুই কোত্থেকে এলি এতে?" মোহর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, "আমি সেদিন দুর্ব্যবহার করেছিলাম ওর সাথে। ক্ষমাও চাওয়া হয়নি। নির্ঘাত ওই নিয়েই চিন্তা করতে করতে বাইক চালাচ্ছিল। আর তাই এমন হলো। কান্ট ফরগিভ মাইসেলফ সৃজনী। ইটস অল বিকজ অফ মি। হে ডাইড বিকজ অফ মি। কত কথা বলার ছিল ওকে। মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, আই হ্যাড টু এপলোজাইস।" সৃজনী উত্তরে চুপ থাকে। কিচ্ছু বলতে পারে না। কিছু বলার নেই এই সময়ে। তুষার একবার গলা খাকরি দিয়ে বলে, "আই থিংক উই শুড লিভ নাউ। হসপিটালে গিয়ে ফর্মালিটিজ আছে অনেক। কাকু মাসীমা কোথায় গেছেন, জানি না। ফোনে ট্রাই করছি। তবে যেতে যেতে। মোহর তুমি রেডি হয়ে নাও।" মোহরের ইচ্ছে করে না। তবুও, সৃজনীরা বারবার করে বললো। তাই ও যাবে। আস্তে আস্তে ঘরে ফিরে আলমারি থেকে জামা বের করে বদলে নেয়। চোখে মুখে একবার জল দেয়। কোনো প্রসাধন না। শুধু চুলটা বেঁধে নেয় ঠিক করে। নিচে নেমে মোহর। ওকে দেখে তুষার আর সৃজনী উঠে দাঁড়ায়। "চল" বলে ও। এগোয় ওরা। তুষার গাড়ি নিয়ে এসেছে। গাড়িতে উঠতে গিয়ে মোহরের চোখ চলে যায় গ্যারেজে। লাল গাড়িটা দিব্যি দাঁড়িয়ে। এক রাশ স্মৃতি এসে চোখ ভিজিয়ে দেয় মোহরের। তুষার গাড়ি স্টার্ট দেয়। ওরা এগোয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কাছেই হসপিটাল। সারা রাস্তা সবাই চুপ। পিছনের সিটে বসে সমানে কেঁদে চলে মোহর। সামনের সীটে বসে সৃজনী। কুড়ি মিনিটের মধ্যে ওরা এসে পৌঁছয় হসপিটালের বাইরে। কী দৃশ্য দেখতে হবে ওকে ভেবে শিউড়ে ওঠে মোহর।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment