Saturday, August 31, 2019

আলোতে আলো ঢাকা ৫

আরো একটা রবিবার। আজ আবার পৃথা আর উপমন্যু দেখা করবে। আজকের এজেন্ডা এমনিই পায়ে হেঁটে একটু বম্বে শহরটা ঘুরে বেড়ানো। তারপর কোথাও একটা ডিনার। এবং এই উদ্যোগটা পৃথারই নেওয়া। সত্যি বলতে কী, গত সপ্তাহে উপমন্যুর সাথে লাঞ্চটা মন্দ লাগেনি। আর পাঁচটা ছেলের থেকে একটু হলেও আলাদা লেগেছে ওকে। কথাবার্তা, হাব ভাব। অ্যাডভারটাইজিং জগত থেকে এসে এখন এক বিখ্যাত ইউটিউব চ্যানেলের স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়ে বম্বে এসেছে। সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে। কাজের ব্যাপারেও বেশ প্যাশোনেট। ভালো লেগেছে পৃথার। নিজে প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। সারাদিন ওই হিসেব নিকেশের মধ্যে কেটে যায়। সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোও কেমন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এই জন্যই আরো উপমন্যুর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে পৃথার। নিজের ভিতরের সৃজনসত্ত্বাটা যেন একটু সাথী পায়। এই এক সপ্তাহে প্রতিদিনই সন্ধ্যেয় অফিস ফেরতা অনেকক্ষণ চ্যাটে কথা হয়েছে দুজনের। একদিন তো ভয়স কলও হয়েছে। উইকেন্ডের প্ল্যান বানাতে গিয়ে নির্দ্বিধায় পৃথা উপমন্যুকে জিজ্ঞেস করেছে দেখা করার কথা। সেই কথোপকথনটিও ছিল খুব মজার। বৃহস্পতিবার, ক্যাবে বসে বসে পৃথা মেসেজ করছিলো উপমন্যুকে। "বন্ধু বান্ধব হলো অফিসে?" উপমন্যুর উত্তর এলো, " কলিগ কখনও তেমন বন্ধু হতে পারে না। তবে ওই আর কী, মারামারির পর্যায়ে পৌঁছইনি।"
পৃথাঃ মারামারি নাকি? আপনি বুঝি এত ভায়োলেন্ট?
উপমন্যুঃ এত বলতে?
পৃথাঃ এত বলতে, অফিস কলিগদের সাথে বন্ধুত্বের কথা জিজ্ঞেস করতে মারামারির প্রসঙ্গ আনলেন যে...
উপমন্যুঃ ও, তাই বলুন। ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমার মতো এমন নিরীহ একটা মানুষকে আপনি এরকম দুমদাম ভায়োলেন্ট বলে দিলেন...
পৃথা হাসির ইমোজি পাঠালো।
উপমন্যুঃ হাসলে হবে না। বলুন বলুন।
পৃথাঃ আমিও তো অবাক। আপনার মতো একজন... মনে তো হয় না একটা মশাও মারতে পারেন বলে।
উপমন্যুঃ একসাথে ২৫টা।
পৃথাঃ অ্যাঁ?
উপমন্যুঃ একসাথে ২৫টা মশা মেরেছি। রেকর্ড আছে।
পৃথাঃ ধ্যাত। বললেই হলো?
উপমন্যুঃ রনি বান্টি সাক্ষী।
পৃথাঃ তারা কারা?
উপমন্যুঃ আমার রুমমেট ছিল কলেজে।
পৃথাঃ বাই দ্য ওয়ে, আপনার কোন কলেজ?
উপমন্যুঃ জে এন ইউ। ইংলিশ অনার্স।
পৃথাঃ আই সি।
উপমন্যুঃ আপনি তো সেন্ট জেভিয়ারস। কমার্স।
পৃথাঃ রিসার্চ করে নিয়েছেন?
উপমন্যুঃ মোটামুটি। স্ক্রিপ্ট লিখতে হয়। নানান মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া ভালো। চরিত্রগুলো বানাতে সুবিধে হয়।
পৃথাঃ রিয়েলি?
উপমন্যুঃ আবার কী? এমনি এমনি কি ডেটিং অ্যাপে আছি নাকি?
পৃথাঃ ডেটিঙের জন্য অ্যাপে নেই?
উপমন্যুঃ এই বুড়ো বয়সে ওইসব চক্করে কে যায়? আমি তো স্রেফ রিসার্চ পারপাসে আছি।
পৃথাঃ হুম। বুঝলাম।
উপমন্যুঃ কী বুঝলেন?
পৃথাঃ কিছু না।
উপমন্যুঃ আপনি কি এখানে ডেট ফেটের জন্য এসেছেন নাকি?
পৃথাঃ ঠিক তা না...
উপমন্যুঃ তবে ঠিক কী?
পৃথাঃ উফ, আপনি বড্ড ইন্টারোগেট করেন।
উপমন্যুঃ ওই যে বললাম, রিসার্চ।
পৃথাঃ শুনুন।
উপমন্যুঃ বলুন?
পৃথাঃ রবিবার ফ্রি আছেন? দেখা করবেন? আপনার রিসার্চের সুবিধে হবে হয়তো।
উপমন্যুঃ দোহাই আপনার, আমার রিসার্চের নামে চালাবেন না। বলুন আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে হয়েছে।
পৃথাঃ ওয়াট রাবিশ।
উপমন্যুঃ আহা, রাগ করছেন কেন।
পৃথা উত্তর দেয়নি। পরপর উপমন্যুর কয়েকটা মেসেজ আসতে লাগলো ফোনে। "ও কী, গেলেন কই?" "কী হলো? এ বাবা, রাগ করলেন? সরি সরি", ইত্যাদি। পৃথা সব মেসেজই দেখছে, কিন্তু উত্তর দিচ্ছেনা। রাগ কিন্তু মোটেই করেনি ও। বরং ধরা পড়ে যাওয়ায় মনে মনে একটু আনন্দও পাচ্ছে। তবুও উপমন্যুকে একটু মজা করে বিব্রত করতে ভারী আনন্দ হচ্ছে ওর। ও ঠিক করেছে, ঘণ্টা দুই পর রিপ্লাই দেবে। তার আগে না। দেখিই না, কতক্ষণ চেষ্টা করে যায়। ওর দিকটাও তো বুঝতে হবে।
আধ ঘণ্টা ধরে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে সমানে টুং টুং করে মেসেজ এসেই যাচ্ছে। তারপর হঠাৎ একটা ভয়েস নোট এলো। কৌতূহলবশতই পৃথা প্লে করলো। উপমন্যুর গলা। গান গাইছে। "Jo dil mein hain hothon pe lana bhi mushkil
Magar usko dil mein chhupana bhi mushkil
Nazar ki zubaan se samajh jaiyega
Nazar ki zubaan se samajh jaiyega
Samajh kar zara gaur farmaiyega
Aji rooth kar ab kahan jaiyega
Jahan jaiyega hamein paiyega
Aji rooth kar ab"

এক তো এমন সুন্দর গান, তার ওপর অসামান্য কণ্ঠস্বর... পৃথা আর নিজেকে সামলাতে পারে না। মুচকি হাসি হেসে রিপ্লাই পাঠায় ছোট্ট করে, "জানা রইলো। গোঁসা করলে এমন ভালো গান শোনা যায়। রবিবার বিকেল পাঁচটায় আমায় পিক-আপ করবেন। লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি।" 

   

No comments:

Post a Comment