বারবার পৃথার চোখ চলে যাচ্ছিল সহযাত্রীর দিকে। কে এ? এত চেনা, অথচ মনে পড়ছে না। খুব অস্বস্তি হতে থাকে। ট্রেনও না যে নেমে রিজার্ভেশন চার্ট দেখে নেবে। কী মুশকিল। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পৃথা ভাবতে থাকে। ইনি কি কোনো সেলিব্রিটি? বম্বের ফ্লাইট। হতেই পারে। অভিনেতা? নাঃ। তবে? গায়ক? জার্নালিস্ট? টিভিতে দেখেছে? ক্রিকেট প্লেয়ার? ধুত্তেরি। নির্ঘাত ফেসবুকে কারুর না কারুর প্রোফাইলে দেখেছে। কে জানে? এইসব ভাবছে, এমন সময় শুনতে পেল পাশ থেকে, "কিছু বলবেন?" পৃথা চমকে গেল। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই বললো, "আমায় বলছেন?" সহযাত্রী মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল, "হুম। আপনাকেই। আপনি কি কিছু বলবেন?" পৃথা কোনোমতে মাথা নেড়ে বলে, "না। মানে। কেন বলুন তো?" সহযাত্রী উত্তর দেয়, "মনে হলো। যাক গে। আমার মনের ভুল হতেই পারে। সরি।" পৃথা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই পাশেরজন ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আচ্ছা লোক তো, কথা শুরু করে শেষ না করেই চুপ। উফ। এই জন্যই বাঙালি পুরুষগুলোকে দেখলেই পৃথার গা পিত্তি জ্বলে আজকাল। ও নিজে ট্যাব খুলে বইয়ে মন দিলো। কিন্তু মন আর লাগে কই? সমানে খচখচ করে যেতে লাগলো। নির্ঘাত সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছে। পৃথা এর তার প্রোফাইল ঘাঁটতে ওস্তাদ। সেই করতে গিয়েই দেখেছে হয়তো। প্লেনের ভিতর যে কেন ইন্টারনেট নেই? যতক্ষণ না প্লেন টাচডাউন করছে, এই অস্বস্তি চলতেই থাকবে। ধুর। বিরক্ত হয়ে ও ও ইয়ারফোনে গুঁজে অডিও স্টোরি শুনতে থাকে। শুনতে শুনতে কখন কে জানে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে ল্যান্ডিংয়ের বার্তা শুনে। বাবাঃ, আড়াই ঘণ্টা কেটে গেল কীরকম।
প্লেন ল্যান্ড করতেই সকলের মধ্যে একটা হুড়মুড় করার প্রবণতা দেখা যায়। যেন এক্ষুণি না উঠলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। আজকেও হলো তাই। লোকজন সামনে পিছন থেকে ঠ্যালাঠেলি হুড়োহুড়ি করে ধাক্কাধাক্কি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। পৃথা বিরক্তিসূচক মুখ করে মাথাটা নাড়লো। ফোনে একটার পর একটা মেসেজ ঢুকছে। সবই ওই সার্ভিস প্রোভাইডারের। বাড়িতে একটা মেসেজ করে দিলো পৃথা। 'জাস্ট ল্যান্ডেড'। ভিড়টা এবার কমেছে। লোকজন নাম শুরু করেছে। সহযাত্রীও নিজের লাগেজ নামালো। পৃথাকে জিজ্ঞেস করলো ওরটা নামিয়ে দেবে কি না। পৃথা 'শিভালরি' দেখে ঈষৎ খুশি হলো। হালকা হাসি মেখে দেখিয়ে দিল নিজের ব্যাকপ্যাক। প্লেনের দরজায় পৌঁছলো ওরা দুজনেই, একসাথে। সহযাত্রী বললো, "তাহলে, বিদায় বন্ধু। ও, আমার নাম বলা হলো না। আপনার নামও জানা হলো না। আমি উপমন্যু। উপমন্যু রায়চৌধুরী। আপনি?" পৃথা উত্তর দিতে যাবে, এমন সময় ফোনে টুংটুং করে মেসেজ ঢুকলো। প্রেরকের নাম দেখে খানিক অবাক হলো ও। ঋষি।
No comments:
Post a Comment