Saturday, February 9, 2019

সরস্বতী পুজো

ভোরবেলা ঘুম ভাঙার অভ্যেস ওর চিরকালের। তানপুরাটা নিয়ে বসে ও যখন রেওয়াজ করে বারান্দায় বসে, কোকিল তার কূজন থামিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে। সুরলোক থেকে ভেসে আসে যেন সেই সঙ্গীত মূর্ছনা।
আজ অবশ্য প্রভাতী সঙ্গীত সাধনার সময় কিঞ্চিৎ কমেছে। বসন্ত পঞ্চমী তিথি লেগেছে এইমাত্র। বাগদেবীর আরাধনা ছাড়াও অন্য বিশেষ কারণে আজ বঙ্গসমাজে যুবক যুবতীদের মধ্যে অন্যরকমের উত্তেজনা। বুকের ভিতর দামামা বাজছে।
আমাদের নায়িকাও এই জ্বরে কাবু হতে চায়। আর তাই এক মাস আগে থেকে মাতৃদেবীর আলমারি ঘেঁটে অনেক ট্রায়াল দিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি দুধ সাদা জমিতে সোনালী জরির কাজ করা পার আঁচল কেরালা কটন শাড়ি পরবে ঠিক করেছে।
গত রাত্রে চুলে শ্যাম্পু করে রাখা আছে, যাতে আজ সকালে এক ঢাল কোঁকড়া চুল শুকোতে সময় নষ্ট না হয়। কিঞ্চিৎ অপটু হাতে শাড়িটি পরে নায়িকা মাতৃদেবীর শরণাপন্ন হলো। উনি 'এত বড় হয়ে গেলি, তাও কুচি ধরতে জানিস না, আঁচলটা এত ছোট করলে কী করে চলবে' ইত্যাদি ভর্ৎসনা করে মেয়েকে রাজরাণীর মতোই সাজালেন।  যত্ন করে লম্বা চুল বেঁধে দিলেন একটি বড় খোঁপায়। তখনও একপ্রস্থ 'চুলে তেল না দিলে পেকে যাবে, কী উস্ক খুস্কো চুল তোর' চলল।
নায়িকা গয়নার বাক্স খুলে এবার ছোট্ট এক জোড়া সাদা মুক্তোর ঝুমকো দুল কানে পরলো। গলায় দিলো মুক্তোর চোকার।
ডাগর দুই চোখে সযত্নে লাগলো কালো কাজলের আঁচড়। মা বাবাকে প্রণাম করতে মা সদ্য বেটে আনা সাদা চন্দনের একটা ছোট্ট টিপ এঁকে দিলেন নায়িকার কপালে।
"খুউব সুন্দর লাগছে তোকে। দাঁড়া, সাজটা পরিপূর্ণ হয়নি। আসছি।" এই বলে মা ছুট লাগালেন বাগানে। সেখানে শীতের চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া সূর্যমুখী গাঁদার ভিড়। একটা হলুদ গাঁদা তুলে মেয়ের খোঁপায় গুঁজে বললেন, "এইবারে যেন লাগছে, বাসন্তী।" চোখের কোণ থেকে একটু কাজল নিয়ে মেয়ের কপালের এক ধারে লাগিয়ে বললেন, "নজর না লাগে আমার মেয়ের উপর। এত সুন্দর লাগছে।"
নায়িকাও "মা, তুমি প্রত্যেকবার এই বলে বলে আমার সব চান্স বন্ধ করে দাও। তোমার নজর কাটানোর টোটকায় আর কোনো ছেলেই যে আর আমার দিকে তাকায় না। সবাই খালি জ্যান্ত সরস্বতীর খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। বাসন্তীর ভিড়ে" বলে আক্ষেপ করতে থাকে।
"বিজয়িনী হও মা। আমার আশীর্বাদ রইলো।" বলে মেয়েকে এগিয়ে দিতে যান মা। মনে মনে বলেন, "দুগ্গা দুগ্গা।"


(বলি কী, এক ঝাঁক সুন্দরীদের ভিড়ে যদি কোনো শান্ত স্নিগ্ধ শুভ্রবসনাকে দেখেন চুপ করে আড়ালে একা একা বসে আছে, একবার কনফার্ম করে নিতে পারেন। বীণাপাণি নয় তো?)

No comments:

Post a Comment