ছয়মাসের ম্যাটার্নিটি লিভটা শেষ হচ্ছে আজ। কাল থেকে আবার অফিসে জয়েন করতে হবে তুতুলকে। এতদিন পর কাল অফিস, নার্ভাস লাগছে খুব। রুনিকে ঘুম পাড়িয়ে আস্তে আস্তে পরেরদিনের জন্য ব্যাগ গুছিয়ে তারপর আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে একটু বসেছে সবে। এমন সময় রুনি ঘুম চোখে ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
তুতুল ঝটপট ওকে কোলে নিয়ে "কী হয়েছে সোনা মা আমার? কাঁদে না মা। আমার লক্ষ্মী মা তো। খিদে পেয়েছে?" বলে ওকে ফিডিং বোতল থেকে খাওয়াতে চেষ্টা করে। রুনি অল্প একটু দুধ খেয়ে মুখ সরিয়ে নিয়ে আবারও কাঁদতে থাকে। দীপালিদি, যার ভরসায় কাল থেকে রুনিকে রেখে অফিস যাবে তুতুল, তাড়াতাড়ি এসে ওকে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রুনির কান্না থামেনা।
সেই তুতুলকেই তারপর আবার ওকে কোলে নিয়ে এ ঘর ও ঘর করতে হয়। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে, পিঠ থাবরে তবে আবার রুনি শান্ত হয়। ঘুমোয়। ছোট্ট দুটি হাতের মুঠি দিয়ে তুতুলের হাতের আঙুল আকড়ে থাকে। তুতুল ওকে কোলে নিয়েই সোফায় বসল।
এই প্রাণের টুকরোকে কী ভাবে যে বাড়িতে রেখে কাল থেকে আবার অফিস করবে, ভাবলেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে ওর। এই কয়েক মাস একটা অন্যরকম জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। রুনির সাথে তাল মিলিয়ে জাগা, ঘুমানো। কখনো কখনো রাগ হওয়া। কেন ও ঘুমোচ্ছে না। কেন ও কাঁদছে। আর এখন মনে হচ্ছে, তাও তো সারাক্ষণ চোখের সামনেই থাকত। কাল থেকে কী হবে?
লিভিং রুমের বড় ঘড়িতে আটটার কাঁটা ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করেছে। চুপি চুপি চাবি ঘুরিয়ে বাড়ি ঢুকল ঋজু। পা টিপে টিপে এগোলো মেয়ের দিকে। পাছে ওর ঘুম ভেঙে যায়। এসে দেখে, তুতুল রুনির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। আর দুই গাল বেয়ে কান্না নামছে।
"কী হলো রে? কাঁদছিস কেন?" তুতুলের কানের কাছে।গিয়ে ফিসফিস করে বলে ঋজু।
"ওকে ছেড়ে কী করে থাকবো রে?" তুতুল কাঁদতে থাকে।
ঋজু ওর কাঁধে হাত রেখে আলতো চাপ দিয়ে বলে, "ঠিক পারবি। পারতেই হবে। রুনিকে জানতে হবে না ওর মা কতটা পারদর্শী?"
"না জানলেও চলবে।" তুতুল আধো আধো কণ্ঠে বলে।
"উহু। এটা আমার রুনির মা বলছে। কিন্তু আমার তুতুল মোটেই এইরকম বলবে না। তুই একদম ভাববি না। দেখবি, ঠিক অভ্যেস হয়ে যাবে। আমার মা, তোর মা, দিদি...এরা করেনি?" ঋজু বলতে থাকে।
"হুম। কিন্তু আমার অত সাহস নেই।"
"কে বলেছে? যুদ্ধে নামলে তবে না বুঝবি নিজের ক্ষমতা? এন্ড আই নো, মাই তুতুল ইজ এ ব্রেভ গার্ল। ও ঠিক লড়ে জিতবেই। পারবেই। আর তাছাড়া, আমি তো রইলামই।" বলে ঋজু তুতুলকে আঁটোসাঁটো করে জড়িয়ে ধরে। রুনিও বাবার স্পর্শে একটু একবার চোখ মেলে চারিদিক দেখে আবার চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
No comments:
Post a Comment