মর্নিং ওয়াক থেকে ফেরার সময় পলাশের চায়ের দোকানে বসে এক কাপ বেশ অনেকটা চিনি দিয়ে দুধ চা খেয়ে তবে বাড়ি ঢোকার অভ্যেস নিত্যহরিবাবুর। ডায়াবিটিসের পেশেন্ট তো, বাড়িতে তাই দুধ চিনি ছাড়া চা জোটে। তাই আর কী... প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে একবার আনন্দবাজারটা উল্টে পাল্টে দেখলেন রোজের মতো। পাতা জুড়ে শুধুই ভ্যালেন্টাইনস ডের বিজ্ঞাপন।
তাই তো। আজ তো চোদ্দ তারিখ। হুম। ওই জন্যই ফুল দিদির দোকানে আজ বেশি বেশি লাল গোলাপ নজরে পড়লো। এইবার বুঝেছেন নিত্যহরিবাবু।
ছেলে বৌমা নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার ওঁর। আদ্যোপান্ত রোমান্টিক নিত্যবাবু তবুও লোকলজ্জার ভয়ে চাইলেও গিন্নির জন্য ফুল কিনে নিয়ে যেতে সাহস পেলেন না। তবে অন্যভাবে সেলিব্রেট করতেই হবে। ভালোবাসার দিন বলে কথা।
"জেঠু, তোমার চা টা এবার দিই?" পলাশের প্রশ্নে নিত্যহরিবাবু স্মিত হেসে বললেন, "না রে পলাশ। আজ আর দুধ চিনি চা খাবো না। আজ বাড়ি গিয়ে তোর জেঠির হাতের গ্রীন টি খাবো। আজ জানি, ওটা এমনিই বেশি মিষ্টি লাগবে। তুই বরং পনেরোটা জিলিপি প্যাক করে দে দেখি। নিয়ে যাই। তোর জেঠি তো খুব ভালোবাসে।"
গরম গরম ভাজা জিলিপির ঠোঙা হাতে নিত্যহরিবাবু বাড়ি ফিরে বললেন, "কই গো। ঝটপট চা দাও তো।"
রান্নাঘর থেকে স্ত্রীর কন্ঠস্বর শোনা গেল। "কেন, আজ পলাশের দোকান বন্ধ ছিল নাকি?"
নিত্যহরিবাবু চুপ। এ কী, পলাশের চায়ের কথা তো ওর জানার কথা না। তাহলে? গেল রে। বাড়ির চাও জুটল না বোধহয় আজ। পলাশের কাছে কেন যে ভালোমানুষী করতে খেয়ে এলো না... আক্ষেপ।
এইবার রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আঁচলে ভিজে হাত মুছতে মুছতে স্ত্রী বললেন, "অবাক হচ্ছ? আমি অনেকদিন ধরেই জানি। একদিন পুষ্প তোমায় দেখেছে চা খেতে। আমি তবে থেকেই জানি।"
"তা তাহলে এতদিন কিছু বলোনি যে?"
"ও একটু আধটু ছাড় তো দিতেই হয়।"
"তাহলে এই নাও। জিলিপি ভাজছিলো গরম গরম। এনে দিলাম। তুমি ভালোবাসো..." বলে ঠোঙাটি স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিলেন নিত্যবাবু।
"তুমিও পাবে। তোমার জন্য আজ সব ছাড়। দাঁড়াও, চা টা এনে দিই। অনেকটা দুধ আর মাঝারি চিনি দিয়ে করছি। চলবে তো?"
"গিন্নি, তোমার হাতের ছোঁয়ায় তো উচ্ছেও চাটনির মতো লাগে।"
"তাই বুঝি? আচ্ছা। কাল থেকে দুবেলা সেই চাটনি খেয়ো।" বলে হাসতে হাসতে উনি রান্নাঘরের দিকে চলে যান।
No comments:
Post a Comment