টুকটুকি বারান্দায় টুল নিয়ে বসে পড়ছে। সামনেই মাধ্যমিক, এখন শেষ মুহূর্তের পড়াশোনা তুঙ্গে। তবে আজ তেমন মন বসছে না পড়ায়। সকাল সকাল দেখেছে ওপর তলার জন্য বাজার করে এনেছে মিনতি মাসি। ব্যাগ ভর্তি ছিল সিম, বেগুন, পালং, রাঙা আলু, মটরশুঁটি। আজ তো ষষ্ঠী। টুকটুকি জানে, জেঠিমা আজ গোটা সেদ্ধ বানাবে। ওদের চক্রবর্তী বাড়ির তো এটাই রেওয়াজ। সরস্বতী পুজোর পরেরদিন গোটা সেদ্ধ খাওয়া। ঠাকুমা কত রসিয়ে রাঁধত। সব্বাই আঙ্গুল চাটত খাওয়ার পরে। স্কুল ও পাড়ার বন্ধুরাও আসত কেউ কেউ ওদের বাড়ি, একেক বছর একেক বন্ধু। জেঠিমার রান্না মনে হয় হয়ে গিএয়ছে। দারুণ গন্ধনাকে ভেসে আসছে ওর।
ঠাকুমা চলে গিয়েছে পাঁচ বছর হয়ে গেল। তারপর বাবা জ্যাঠার মধ্যে মন কষাকষি, সম্পত্তি ভাগাভাগি করে এখন দুই পরিবারের হেঁসেল আলাদা। একই বাড়িতে থাকলেও ওপর তলা থেকে নীচ তলা বা নীচ থেকে ওপর, এই সাড়ে চার বছরে কখনও খাবার আদান প্রদান হয়নি।
টুকটুকির মা পাঁচদিন হল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। শরীর দুর্বল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এবার ওদের বাড়ি গোটা সিদ্ধ হচ্ছেনা। আর সেই জন্যই মেয়েটার এত মন খারাপ। এই ষোল বছরে প্রথম ও ওর প্রিয় গোটা খেতে পাবে না। বাবাও সকালে বাজার করে এসে একটু আক্ষেপ করছিল বটে এই নিয়ে। কিন্তু ঠাকুমার আমল থেকে নিয়ম চলে আসছে, বাড়ির বউরা ছাড়া কেউ রাঁধতে পারবেনা এটা। তাই রান্নার দিদিকেও বলতে পারেনি ওরা।
এক রাশ মন খারাপ নিয়ে টুকটুকি উঠল, মাকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজে খাবে বলে। এমনসময় সিঁড়ি দিয়ে চটাস চটাস শব্দ করতে করতে দেখল জেঠিমা নামছে, হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার।
"টুকটুকি, এই এদিকে শুনে যা একবার।" কতদিন পর জেঠিমার মুখে নিএজ্র নাম শুনে টুকটুকি অবাক।
"আসছি বড়মা" বলে ও ছুটল।
"শোন, ছোট তো নিশ্চয়ই রাঁধতে পারেনি আজ গোটা। আমি করেছি। এই নে। তোরাও খাস। অন্যান্যদিন যাই যেমন হোক না কেন, গোটা বাড়িটাই তো একটা পরিবার। তাই না? তাই এক হেঁশেলের গোটা, গোটা পরিবারের জন্যই রইল আজ।"
টুকটুকি আনন্দে বিহ্বল, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
"দাঁড়িয়েরইলি কেন রে মেয়ে? ধর এটা। আমার মেলা কাজ। আর শোন, পাকামি করে কিছু ভরে ফেরত দিতে যাস না। তোর মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোক, ঠেসে মিষ্টি ভরে দিস তখন, কেমন?" টুকটুকির মাথায় হাত বুলিয়ে কৌটো ধরিয়ে জেঠিমা আবার ওপরে উঠতে লাগল। টুকটুকি এখনও হাঁ।
No comments:
Post a Comment