Tuesday, February 26, 2019

ডিক্যাফ

দমদম এয়ারপোর্টের কফিশপে বসে কিং সাইজ লাতে খাচ্ছি। চেন্নাইয়ের ফ্লাইটের দেরি আছে ঘন্টাখানেক। হঠাৎ কানে এলো,
"ওয়ান ডিক্যাফ এস্প্রেসো প্লিজ।"
চমকে উঠলাম।
"অগ্নি, তোর এই ডিক্যাফের ঢপবাজিটা বন্ধ কর তো। কফিশপে এসে এস্প্রেসো খাবি। এদিকে তা হবে নাকি ডিক্যাফ।"
"আমি তো আসি জাস্ট তোকে কম্পানি দিতে।"
"কম্পানি দিবি তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবি। বেকার টাকা খরচা করে ডিক্যাফ নেওয়ার কী আছে? বসে বসে সিসিডিকে বড়লোক বানানো শুধু। সেভ করা প্র্যাকটিস কর। অন্তত তাতান আর তিতিরের জন্য।"
"অত ফিউচার ফিউচার করলে প্রেজেন্টকে উপভোগ করবি কী করে? তুই বুঝবি না রুমুন। ছাড়।"
"হুহ।"
"আরে, রুমুন না?" ভেবেছিলাম কফি কাপ আর সাতকাহনের আড়ালে আমায় দেখতে পাবে না ও। কিন্তু না। দশ বছর আগের মতোই হাজার ভিড়ের মধ্যেও ওই চোখ জোড়া আমায় ঠিক খুঁজে নিয়েছে।
"অগ্নি যে! কেমন আছিস?"
"খুব ভালো। তুই?"
"ফার্স্ট ক্লাস!"
ও এসে আমার টেবিলেই বসল। উল্টোদিকে।
"তা, কোথায় আছিস এখন? চললি কোথায়?"
"চেন্নাই। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। ফিরছি। তুই?"
"আমি যাচ্ছি বম্বে। কাজ কাম ভেকেশন।"
"স্যার, আপনার এস্প্রেসো। ডিক্যাফ।" ওয়েটার একটা কাঁচের কাপ নামিয়ে গেল ওর সামনে। আমি বললাম, "এখনও অভ্যেস গেল না?"
হাসলো। কিছু বলল না।
আমি আবার বললাম, "কী রে, হাসছিস যে?"
উত্তর দিলো, "ভাগ্যিস আজও অভ্যেসটা যায়নি। তাই তো এই যে, কম্পানি দিতে পারছি।"
"রুমুন, হলো কফি খাওয়া? তাতানকে মোমো খাইয়ে আনলাম। আমিও খেলাম। তোমার জন্য আনবো?" মুখ তুলে দেখলাম। সোমক। সাথে আমার সাত বছরের ছেলে, তাতান।
আমি অগ্নির সাথে পরিচয় করে দিলাম সোমকের।
"সোমক, অগ্নি। আমার মাস্টার্সের বন্ধু। অগ্নি, সোমক। আমার বর। আর এই আমার ছেলে। তাতান।"
দুজনে করমর্দন করলো।
তাতানের গালে আলতো হাত বুলিয়ে আমার দিকে ফিরে বললো, "ওই যে ওইখানে দেখ, নীল কুর্তা, লাল কার্ডিগান, কাঁধে গ্রে ব্যাগ...ও শ্রেয়া। আমার বউ। ওর পাশে ঠেস দিয়ে বসে বই পড়ছে... আমার মেয়ে। তিতির। এখন থেকেই বইয়ের পোকা। ঠিক তোর মতো। আয়, আলাপ করিয়ে দিই।"
আমি একবার রিস্ট ওয়াচের দিকে তাকালাম। তারপর সোমকের দিকে।
বললাম, "আজ থাক। পরে কখনও। বোর্ডিং শুরু হবে এইবার আমাদের। এগোই। দেখা হয়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকিস।"
কফি কাপটা টেবিলে নামিয়ে তাতানের হাত ধরে "চলো" বলে সোমককে ডেকে আমি কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেলাম। কফিশপে ডিক্যাফ হাতে রয়ে গেল অগ্নি। দশ বছর আগের মতোই।
প্লেনে বসেছি। ওয়াটসআপটা খুললাম একবার। দেখলাম দশ বছর পর একটা চ্যাট উইন্ডোতে আবার একটা ছোট্ট মেসেজ ঢুকেছে।
"পরেরবার কলকাতায় এলে অন্তত দেখা দিস। আর হ্যাঁ, ভালো থাকিস।"
ফোনটাকে দুই হাত দিয়ে চেপে বুকের ওপর ধরে রাখলাম খানিকক্ষণ। কিছু মুহূর্ত চোখ দুটো বন্ধ করলাম।
এয়ারহোস্টেসের সিকিউরিটি এনাউন্সমেন্টে আবার চোখ মেলতে দেখি সোমক ব্যস্ত ছেলের সিট বেল্ট বাঁধতে। আমায় দেখে বললো, "টায়ার্ড? ঘুমিয়ে নাও খানিক। তাতানকে আমি ম্যানেজ করছি।" কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ওর হাতটা মুঠোর মধ্যে বন্দী করলাম।
প্লেন যথাসময়ে চলতে লাগলো। পাশে দাঁড়ানো অনেকগুলোর মধ্যে বম্বেরটা কোনটা ছিল, কে জানে?

No comments:

Post a Comment