Saturday, September 8, 2018

আগন্তুক ৭

৭।

দিন যায়। দ্য কর্নার শপের রমরমা দিনদিন বাড়তে থাকে। এমনও সপ্তাহ যায় যখন ডেভ রবিবারেও দোকান খোলা রাখেন। অ্যানারও তখন বাড়তি উপার্জন হয়। সকলে ভাবে অ্যানা বুঝি খুব সুখী।
কিন্তু আসলে তা না। অ্যানা এক অদ্ভুত দোলাচলের মধ্যে দিয়ে যায়। সে ডেভকেও ভালোবাসে, আবার এদিকে ও পিটারের বাগদত্তা। ডেভ সুপুরুষ, বয়সে বড়। বিত্তশালী। অ্যানাকে বহু উপহারে ভরিয়ে রাখেন। দিনেরবেলাটা অ্যানার ডেভের সাথেই কাটে। পিটারের বয়সও কম, সামর্থ্যও। ও অ্যানাকে মূল্যবান উপহার এনে দেয়না। এমন কি, ডেভের মত কোথাও বেড়াতেও নিয়ে যায় না। পিটারের শুধুই খেলা নিয়ে উৎসাহ। এদিকে অ্যানা খেলা ভালোবাসেনা।

সেপ্টেম্বর মাস, খেলার সীজন। টিভিটে এক শনিবার দুই বড় দলের মধ্যে ফুটবল খেলা দেখানোর কথা। উডএন্ডে মিস্টার হার্টের বাড়িতে সবচেয়ে বড় টিভি স্ক্রিনটি উপস্থিত। তিনি খেলার দিন কিছু পরিচিতদের ওনার বাড়ি নিমন্ত্রণ জানালেন, খেলা দেখতে। অ্যানা আর পিটারেরও ডাক পড়েছিল।
খেলার আগেরদিন, শুক্রবার, বিকেল যখন প্রায় পাঁচটা, দোকান বন্ধ করতে যাবে অ্যানা, এমন সময়ে একটি গাড়ি থেকে এক অল্পবয়সী যুবক নামলেন। হাতে একটি ব্রিফকেস। পরনে সুট। হন্তদন্ত হয়ে এসে তিনি দোকানের বেল বাজালেন। অ্যানা হেসে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল, "হেলো, আমি কি আপনার কোন সাহায্য করতে পারি?" 
যুবকটি উত্তর দিলেন, "আশা করি। মিস্টার ডেভ স্লাটিন আছেন?"
"আপনি দয়া করে আগামীকাল আসুন। দোকান তো এখন বন্ধ।"
"কিন্তু আমার আজই ওঁর সাথে দেখা করার কথা। আপনি দয়া করে ওঁকে ডেকে দিন।"
তখনই পিছন থেকে ডেভের কণ্ঠস্বর শুনে অ্যানা চমকে গেল, "হ্যাঁ, আপনার আজ আসার কথা বইকি। কিন্তু আপনি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি করেছেন। আমি অনেকক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।"
"আমি দুঃখিত, আসলে..."
"থাক। চলুন চলুন।" ডেভের গলায় স্পষ্টই রাগ। ডেভ স্লাটিনকে এমন রাগতস্বরে কথা বলতে শুনে তো অ্যানা অবাক। যুবকের মুখেও ক্ষণিকের দুশ্চিন্তা।
"আর দেরি না করে আমার সাথে চলুন আপনি।"
"অ্যানা, পাঁচটা বেজে গিয়েছে। তুমি বরং চলে যাও।" অ্যানার উদ্দেশ্যে ডেভ নির্দেশ দিলেন।
"আমার দেরি হবে না ডেভ। অসুবিধে নেই কোন।" অ্যানা বলল।
"আমি বললাম তো তোমায় চলে যেতে, কথা কানে যায়না?" কাঠ কাঠ ভাবে কথাগুলি বললেন মিস্টার স্লাটিন।  ডেভ মনে হয় খুব রেগে গিয়েছেন, অ্যানা বুঝল। আর কথা বাড়াল না। যদিও ভিতরে ভিতরে কৌতূহল অপরিসীম। আর এর কারণ এই যে  যুবকটি ডেভ স্লাটিনের পিছু পিছু স্পেশাল অর্ডার রুমে ঢুকলেন। তার মানে ইনিও আরেক বিশেষ ক্রেতা। অ্যানার উত্তেজনা তুঙ্গে।
সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল। অ্যানা আর অপেক্ষা করল না। সশব্দে দরজা বন্ধ করে ও দোকান থেকে বেরিয়ে দোকানের পিছনে একটু আড়ালে বসল। এখান থেকে দোকানের সামনের দরজা বেশ ভালই দেখা যায়।
খানিক পরেই অ্যানা একটা শব্দ পেল দরজা খোলার। আর তারপর পায়ের শব্দ। ওই তো, ডেভ আর যুবকটি বেরিয়েছেন। ওদের কথা শোনা যাচ্ছে।
"আপনি একদম নিশ্চিত তো মিস্টার স্লাটিন?" যুবকটি দ্বিধা করে প্রশ্ন করলেন।
"কী বলতে চাইছেন?" ডেভের উত্তর এল।
"এইটা ছাড়া কি আর অন্য কোন উপায় নেই?"
"না নেই। আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আসুন আপনি।"

অ্যানা দেখল ডেভ স্লাটিন দোকানের ভিতরে চলে গেলেন। যুবক নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছেন। অ্যানা এক ছুটে সামনে গিয়ে পৌঁছল। ও দেখল যুবকের হাত ফাঁকা। সুটকেসটি নেই, নিজেকে সামলাতে না পেরে ও তখন বলেই বসল, "এক্সকিউজ মি। আপনি মনে হয় কিছু ফেলে গেলেন দোকানে।"
যুবকটি যখন পিছন ফিরে ওর দিকে তাকালেন, ওঁর মুখ ফ্যাকাশে। ভয়ার্ত স্বরে আমতা আমতা করে বললেন, " আমার কাছে আসবেন না। আমায় ছেড়ে দিন, যেতে দিন আমায়।" এই বলে তিনি দ্রুত পায়ে নিজের গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন।

আবারও একটা স্পেশাল অর্ডার, আবার ডেভের কাছে সুটকেস ফেলে যাওয়া। এবারেও ক্রেতার অদ্ভুত আচরণ। কী ব্যাপার? অ্যানা বেশ অবাক, চিন্তিতও। কেন এসেছিলেন যুবকটি?






No comments:

Post a Comment