Tuesday, September 4, 2018

আগন্তুক ১



১।

গল্পের পটভূমি ইংল্যান্ডের এক শান্ত নিরিবিলি গ্রাম, উডএন্ড। ৩১শে অক্টোবর ১৯৬৪, শনিবার। গ্রামের হলে গ্রামবাসীরা হ্যালোউইন পার্টি পালন করে যে যার গৃহে ফিরে গিয়েছেন। এমন সময়ে ওই গ্রামে এসে উপস্থিত হন বছর তিরিশ বত্রিশের এক ব্যক্তি। অত রাতে গ্রামে এসে তিনি আকুল হয়ে রাত কাটানর জন্য তখন একটি বাসস্থান খুঁজছেন। সামনে দেখলেন একটি একতলা বাড়ি, তখনও আলো জ্বলছে ঘরে। টোকা মারলেন। এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দেখেন এক সুপুরুষ ব্যক্তি। মাথার চুল ঘন কালো, চোখ দুটি সবুজ। উনি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, "হেলো, কী চাই?" ভদ্রলোক একটু কিন্তু কিন্তু করে উত্তর দিলেন, "নমস্কার। মার্জনা করবেন এত রাতে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আসলে আমি এই গ্রামে প্রথম এলাম। রাত্রিযাপনের জন্য একটি থাকার জায়গা খুঁজছি। আপনি কি আমায় কোন হোটেলের সন্ধান দিতে পারেন?"

ভদ্রমহিলা বেশ হেসে বললেন, "হোটেল? এই গ্রামে? না মশাই, আপনি সেইসব কিচ্ছু পাবেন না উডএন্ডে।"

ভদ্রলোক রীতিমতো বিমর্ষ হয়ে বললেন, "আমারই দুর্ভাগ্য। আমি আপনাদের এই মনোরম গ্রামটি কাল ঘুরে দেখবো ভাবছিলাম।"

ওঁর ভদ্র ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, "মিসেস হ্যারিসনের বাড়িতে ঘর খালি আছে। উনি হয়তো আপনাকে রাত কাটাতে দিতে পারেন। একটু অপেক্ষা করুন, আমি কোটটা গায়ে দিয়ে আসি। আপনাকে আমিই না হয় মিসেস হ্যারিসনের কাছে নিয়ে যাবো।"

সৌভাগ্যবশত মিসেস হ্যারিসন নিজের বাড়িতে থাকতে দিলেন এই ভদ্রলোককে। উনিও নিশ্চিন্ত হলেন। অক্টোবরের শেষ দিন, বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা। রাস্তায় রাস্তায় এই ঠাণ্ডায় ঘুরে না বেরিয়ে বরং এখন দিব্যি আরাম করে নরম বিছানায় রাত কাটাতে পারবেন।

পরেরদিন রবিবার এই ব্যক্তি পায়ে হেঁটে গ্রামে ঘুরে বেড়ালেন। উডএন্ড গ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে উনি বিশেষভাবে কৌতূহলী ছিলেন। একে তাকে জিজ্ঞেস করে গ্রামের সম্পর্কে অনেক কথাই জানলেন। কিছু গ্রামবাসীদের সাথে পরিচয়ও হল। তাঁরা এই সুপুরুষ ব্যক্তিটিকে খুবই পছন্দ করে ফেলেছিলেন ইতিমধ্যে, বিশেষত মহিলারা।

উডএন্ড গ্রামের গির্জাটি অপূর্ব সুন্দর। গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেক মানুষ আসেন শুধুমাত্র এই গির্জাটিকে দেখবেন বলে। কিন্তু অবাকের বিষয়, এই ভদ্রলোকটি গির্জায় প্রবেশই করলেননা। গ্রামের বাসিন্দারা রবিবারের প্রার্থনা সেরে বাইরে এসে দেখেন, উনি চলে গিয়েছেন। ওঁরা নিজেদের মধ্যে খানিক জল্পনা কল্পনা করে যে যার শান্ত নিজস্ব জীবনযাত্রায় ফিরে গেলেন।

কিছু সপ্তাহ পর ডিসেম্বরের প্রথম রবিবারে উডএন্ড গ্রামের বাসিন্দারা সকালের প্রার্থনা সেরে গির্জা থেকে বেরিয়ে দেখেন সেই সুপুরুষ ভদ্রলোক বাইরে দাঁড়িয়ে। ওঁদের সকলকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত নেড়ে চেঁচিয়ে বললেন, "ভালো আছেন তো সবাই? আমি আবার ফিরে এলাম এই গ্রামে। বড় ভালো লেগেছিল আমার আপানদের সকলকে। আমি এখানেই থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমায় এই গ্রামে একটা বাড়ি কিনতে কেউ সাহায্য করতে পারেন দয়া করে?" ওঁর কথা শুনে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে গেলেন। যেখানে গ্রামের বেশিরভাগ যুবক কাজের অভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, সেখানে এমন বহিরাগত এক ব্যক্তি, তাও এই কম বয়সে, এই গ্রামে এসে থাকবেন বলছেন, বেশ অভাবনীয়। সকলেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। "কিন্তু এখানে কেন? এখানে তো কোন চাকরি নেই। গ্রামের ছেলেরা সবাই লিডনি চলে যায়। আর আপনি এখানে নতুন করে এই অল্প বয়সেই থাকবেন?" গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তি আর থাকতে না পেরে প্রশ্নটা করেই ফেললেন। "চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক কিছু না কিছু জোগাড় করেই নেবো। তেমন হলে লিডনিতে গিয়েও কাজ করতে পারি। কিন্ত আমি এই গ্রামেই থাকতে চাই। আপনারা কি কেউ কোন বাড়ির সন্ধান দিতে পারেন?" ভিড়ের মধ্যে থেকে এক ভদ্রলোক বললেন, "আপনি মিস্টার স্মিথের বাড়িটি দেখতে পারেন। চার্চ লেন আর মেন স্ট্রিটের চৌমাথায় বাড়িটি। ভদ্রলোক কিছু মাস আগে মারা গিয়েছেন। ফাঁকাই পড়ে আছে। ওই বাড়িটি যদি বিক্রি হয়।"

"অনেক ধন্যবাদ। আমি তাহলে আগামীকালই বাড়িটির খোঁজ নেবো।" এই বলে উনি চলে গেলেন। সকলে দেখলেন, আজ উনি এসেছিলেন নিজের গাড়িতে। গাড়িটি বেশ বড়, দেখেই বোঝা যায়, পয়সাওয়ালা মালিকের গাড়ি। সুসজ্জিত, বিলাসবহুল। ভদ্রলোক নিজে নির্ঘাত বিত্তশালী।

কিছুদিনের মধ্যে মিস্টার স্মিথের বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেল। ভদ্রলোক পুরনো বাড়িটিকে মেরামত করে ও বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে দিব্যি বসবাসযোগ্য করে ফেললেন অল্পদিনের মধ্যেই। তবে গ্রামবাসীদের জন্য অপেক্ষা করেছিল একটি বড় চমক।

২১শে ডিসেম্বর, সোমবার, বাড়ির সামনে সকালে তাঁরা দেখলেন একটি বিরাট সাইনবোর্ড। তাতে বড় অক্ষরে লেখা, "দ্য কর্নার শপ। প্রপ্রাইটর ডেভ স্লাটিন।"

No comments:

Post a Comment