Tuesday, September 4, 2018

আগন্তুক ২



গ্রামবাসীরা তো সকলেই যারপরনাই অবাক। তাদের উডএন্ডের মতো ছোট গ্রামে একটা নতুন দোকান? লোকের মুখে মুখে এই কথাটা ঘুরতে লাগল। অবশ্য বহু বছর আগে গ্রামে একটি দোকান ছিল বটে, কিন্তু কুড়ি বছর আগে নানা কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে বর্তমানে কিছু মানুষ যেমন এই দোকানটি চাইছিলেন, ঠিক তেমনই কিছুজন এর বিরোধিতাও করছিলেন। সকলে ঠিক করলেন গণতান্ত্রিকভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন। তাই সন্ধ্যেবেলা গ্রামের সমস্ত মানুষ উপস্থিত হলেন গ্রামের হলে। সেখানে "দোকান হওয়া খুব দরকার। গ্রামে একটা দোকান থাকলে আমাদের আর বারবার লিডনি যেতে হবেনা।" কেউ বলে উঠলেন ভিড়ের মধ্যে থেকে। মিসেস হ্যারিসন, যিনি কিনা ডেভকে পছন্দ করতেন, এই মতে সায় দিলেন। "হ্যাঁ, আমাদের উডএন্ড বড্ড চুপচাপ, শান্ত আর নিস্তরঙ্গ। এখানে একটা দোকান হলে মন্দ হয়না। কর্নার শপ চলুক এখানে।" গ্রামের স্কুলের দিদিমণি, মিস ব্রাউন পালটা উত্তর দিলেন, "কোন প্রয়োজনই নেই উডএন্ডে নতুন দোকানের। লিডনিতে অনেক অনেক দোকান। সবকিছু পাওয়া যায়। আর তাছাড়া, লিডনি এমনকিছু দূরে তো না। দিব্যি ঘুরে আসা যায়। তাহলে আমরা এখানে দ্য কর্নার শপকে কেন নেবো? না না। এর কোন দরকারই নেই আমাদের।" আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ, যুক্তি তর্কের ভিড়ে হলে তখন শুধুই হই হট্টগোল। কারুর কথাই আর অন্যের শব্দে শোনা যাচ্ছেনা। এমন পরিস্থিতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, মিস্টার হার্ট তাঁর বাজখাই গলায় বলে উঠলেন, "বন্ধুরা শান্ত হোন। আমাদের গ্রামে এর আগে কিন্তু আমরা কখনও কোন বিষয়ে এরকম তর্ক বিতর্ক করি নিই। তাহলে আজ কেন? দিব্যি নিজেদের মধ্যে সুখে শান্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি যত অশান্তির মূলে দেখছি এই দোকানটি।"
"মিস্টার স্লাটিনকে কথা বলতে দিন না? দোকানটা যখন ওঁর। ওঁকেই বলতে দিন।" ভিড়ের মধ্যে একজন অবশেষে সুবুদ্ধি দিলেন।
"বন্ধুরা, নমস্কার। আমি ডেভ। আপনাদের গ্রামে নতুন এসেছি। বুঝতে পারছি আমার দোকানের জন্য অনেক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমায় মার্জনা করবেন। আসলে, আমি আপনাদের খুব ভালোবেসে ফেলেছি এবং আপনাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। আপানদের মধ্যে একজন হয়ে এখানে থাকা আমার উদ্দেশ্য।" ইতিমধ্যে ঘরের মধ্যে উপস্থিত বহু মানুষ মুগ্ধ, করতালিতে ঘর ভরে গেল। মিস্টার স্লাটিন বলে চললেন, "দ্য কর্নার শপে সমস্ত জিনিস সস্তায় পাবেন। আমি কথা দিচ্ছি। ঘর গৃহস্থালীর জন্য যাবতীয় যা যা লাগে, প্রতিটি জিনিস আপনি এখানে পেয়ে যাবেন।" শ্রোতারা এক মনে শুনে চলেছেন ওঁর কথা। "আমার মাথায় আরো একটি ফন্দি এসেছে। আমি এখানে গ্রামের মানুষের তৈরি সমস্ত জিনিস বিক্রি করব।" মিস ব্রাউন বললেন, "গ্রামের তৈরি জিনিস বলতে?"
মিস্টার স্লাটিন বললেন, " আমি বোঝাচ্ছি। ধরুন, এই যে আপনি এত সুন্দর কেক আর ব্রেড বানান।" মিস ব্রাউন নিজের বেকিংএর প্রশংসা শুনে খুশিই হলেন। অনেকেই হ্যাঁতে হ্যাঁ বললেন। তাঁরাও যে ওঁর কেক খেয়েছেন এর মধ্যে বহুবার। "আর আপনি, মিস্টার হার্ট, আপনি কত সুন্দর ফুল ফোটান বাগানে। আমি দেখেছি।" এইবারে মিস্টার হার্টের খুশি হওয়ার পালা। এত পরিশ্রম করে সারা বছর ফুল ফোটান বাগানে, নানা রঙের, নানা গন্ধের, তার স্বীকৃতি তো ভালো লাগবেই।
"মিস্টার এভারেট খুব ভালো মাটির জিনিস বানান।"
"মিসেস ডেভিসের পুতুলগুলো দেখার মতো।"
"আর আমি কখনও ছবিও আঁকি," বললেন মিস লুসি গ্রে।
"হ্যাঁ, আপনারা সকলেই অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং দক্ষ। আপনাদের বানানো নানান জিনিস আমি দ্য কর্নার শপে বিক্রি করতে চাই। গ্রীষ্মে যখন পর্যটকে ভরে যায় আমাদের গ্রাম, তখন বিক্রিবাট্টা ভালো হবে।" ডেভ বললেন। "আমরা অনেক টাকা রোজগার করতে পারব এইভাবে।"
শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমরা টাকা পাবো কী করে?"
ডেভ উত্তর দিলেন, "খুব সোজা। লাভের কিছু অংশ আমি রাখব। বাকিটা আপানদের হাতে তুলে দেব।"
সকলে সাধু সাধু বলে মিস্টার স্লাটিনের এই পরিকল্পনায় সহমত জানালেন। প্রত্যেকেই খুব খুশি।
সোমবার, ৪ঠা জানুয়ারি ১৯৬৫ সালে, আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল "দ্য কর্নার শপ"। দ্রুতই দোকানের বিক্রি বাড়তে লাগল। একা ডেভ পেরে উঠছিলেন না। তাই জানুয়ারির শেষের দিকে অ্যানাকে নিয়োগ করলেন সহকারী হিসেবে।

No comments:

Post a Comment