প্রিয় লুচি
এই শোন, তোরা কী ভেবেছিস বল তো? আমায় কি এতটুকুও শান্তিতে থাকতে দিবি না? পুজো আসতে আর কটাদিন বাকি জানিস তো? এক মাসও না। আমায় না হাল ফ্যাশনের জামাকাপড় পরে ভুবনমোহিনী হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে... তার জন্য তো এই ফুটবলের আকৃতিটা ঝরাতে হবে, নাকি? এদিকে তোরা যদি সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করিস, আমি কী করে সামলাই নিজেকে?
তুই নিজেই ভাব না। ধবধবে সাদা, তুলতুলে নরম, গাওয়া ঘিতে ভাজা গরম গরম ফুলকো লুচি যদি চোখের সামনে কড়াই থেকে নামতে দেখি, নিজের দুই হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকলেও আমি হ্যারি হুডিনির চেয়ে বেশি ক্ষিপ্র হয়ে বাঁধনমুক্ত করব নিজেকে। আর তারপর, এই একটা ইয়া বড় হাঁ করে সটান মুখে। আর যদি ভিতরে একটু কড়াইশুঁটি বা ডালের পুর থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। এই অভাগাকে দেখে কে?
সবচেয়ে খারাপ জিনিস কী জানিস? তোরা তো আবার একা একা থাকিস না। সব সময় কাউকে না কাউকে ঠিক পটিয়ে নিস। সে কিসমিস নারকেল কুচি দেওয়া ঘিয়ের গন্ধে ভরপুর মাখোমাখো ছোলার ডাল হোক, বা বেশ আদা রসুন গরম মসলা হিং দিয়ে রসিয়ে কষিয়ে আলুর দম। মাঝে সাঝে তো আবার আরও এক কাঠি ওপরে যাস। এক্কেবারে অতি সুসিদ্ধ তুলতুলে নরম পাঁঠার মাংসের ঝোলের সাথে দেখা দিস। ইয়ার্কি পেয়েছিস নাকি?
ফের যদি পুজো শেষ হওয়ার আগে তোদের দেখা পাই না, লাল দইয়ের মাথার কসম খাচ্ছি, ঠেঙ্গিয়ে চ্যাপ্টা করে দেবো। চুপসে গিয়ে তখন ওই হতচ্ছাড়া পুরি আলু সব্জি হয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে তোকে। মনে থাকে যেন?
আর শোন, আপাতত ছুটিতে যাচ্ছিস যা। যাওয়ার আগে এক হাঁড়ি ডায়েট রসগোল্লা রেখে যাবি। আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। জানি। দুনিয়ায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের রহস্য পর্যন্ত সমাধান হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ডায়েট রসগোল্লা কখনোই আমার মুখে রুচবে না। ঠিক আছে। এমনিটাই আনিস। একদম স্ট্রেট ফ্রম দ্য গামলা। গরম গরম। রসে টইটুম্বুর। মিষ্টি খেলে মন ভালো হয়। তোদের সাথে সাময়িক ব্রেক-আপ করছি, সেই দুঃখটা ভুলতে হবে তো, নাকি?
আর ফিরবি যখন, বিজয়া করতে, তখন কিন্তু সরভাজা আর ছানার জিলিপি মাস্ট। ঠিক?
নে, বিদেয় হ। আমি একটু কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে প্রাণের জ্বালা জুড়োই।
ইতি
তোর খাদ্যরসিক টিপিকাল বাঙালি
No comments:
Post a Comment