১৪।
"হীরের আংটিগুলো কই"? ডেভের ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বরে প্রশ্নটা কানে এলো অ্যানার।
অট্টহাস্যে ফেটে পড়েছেন ডেভ। অ্যানার ভীষণ ভয় করছে।
"আমি ইচ্ছে করেই আজ দরজায় তালা দিয়ে যাইনি। আমি চেয়েছিলাম তুমি আজ এই ঘরে আসো অ্যানা। আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে দেখে আমি খুব খুশি।"
অ্যানা চেষ্টা করলো মুখে চোখে ভয়, বিস্ময় প্রকাশ না করতে।
"তুমি হীরের আংটিগুলো পাওনি তো?" ডেভ আবার জিজ্ঞেস করলেন।
অ্যানার মনে পড়ল, সত্যিই তো, আংটিগুলো তো ও দেখেনি। কোথায় সেগুলি?
ডেভ ঘরের ভিতরে এলেন। অদূরে রাখা একটি ছোট বাক্স খুলে সেখান থেকে আংটিগুলো বের করে টেবিলের ওপর ফেললেন।
"ওগুলো আপনার না। ওগুলো মিস গ্রেটা গরডনের।" অ্যানা বলল।
"এগুলি এখন আমার।" ডেভ নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললেন, "গ্রেটা গরডন এগুলো আমায় দিয়েছেন।"
"কিন্তু কেন? আর টাকাগুলো? সেগুলো কে দিল?"
"আমার স্পেশালঅর্ডার কাস্টোমাররা এগুলো দিয়েছেন সব আমায়।"
"এই টাকাগুলো তাহলে মাইক বেলি আর আর্থার রাইজম্যান দিয়েছেন?"
"ওরা বটে। সাথে আরো অনেকেই। তুমি সকলকে দেখোনি।"
"কিন্তু ওরা সকলে কেন দেন এই টাকা আপনাকে? কীসের বিনিময়ে?"
"কারণ আমি ওদের কাজে সাহায্য করি। সেই সাহায্যের পারিশ্রমিক এই টাকা ও ধন সম্পত্তি।।"
"কী কাজ?"
ডেভ ভাঙ্গা হাতওয়ালা পুতুলটা ধরে অ্যানার মুখের সামনে ধরে ফ্যাসফ্যাসে স্বরে বললেন, "মিস জোনা লি কে মনে পড়ে?"
অ্যানা ফ্যাকাসে গলায় উত্তর দেয়, "মিস লি? হ্যাঁ। ওই তো অভিনেত্রী। ওঁর হাত ভাঙল। গ্রেটা গরডন তাই ফিল্মে পার্ট পেলেন।"
"ঠিক বলেছ।" ডেভের চোখমুখ ক্রমশ হিংস্র হয়ে যাচ্ছে।
"এই যে দেখছ? এই যে এই পুতুলটা? এটি মিস জোনা লি।"
অ্যানা ভয়ে কাঁপছে। ডেভ স্লাটিন কি পাগল? কীরকম মানুষ ডেভ? এসব কী বলছে?
ডেভ এরপর একটি ছেঁড়া ছবির দিকে হাত বাড়ালেন। অ্যানার দৃষ্টি সেদিকে আকর্ষণ করে বললেন, "এটি বলো তো কে?"
অ্যানা তো স্পষ্ট চেনে এই মানুষটিকে। সেদিনের ফুটবল ম্যাচে, আহত হল। মাইক বেলির মারা বলের আঘাতে। মাইক বেলির দল জিতে গেল।
"ব্রায়ান টমাস। গোলকিপার।" অ্যানার স্বর এখন প্রায় অস্পষ্ট।
"গোলকিপার ছিল। এখন আর নেই।"
ডেভ ক্রমশ অ্যানার দিকে এগিয়ে আসছেন। অ্যানার বুক ভয়ে দুরুদুরু, কপাল থেকে ঘামের বিন্দুগুলো টপটপ করে গড়াচ্ছে। ডেভ স্লাটিনের চোখে শয়তানের দৃষ্টি। ভাঙ্গা এরোপ্লেনটি তুলে অ্যানার সামনে ধরে বললেন, "বলো দেখি এটা কী?"
অ্যানা জানে। কিন্তু ভয়ে আর গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না।
ডেভ হঠাৎ করে অ্যানার হাত চেপে ধরে এবার বলে উঠলেন, "আমায় বিয়ে করো অ্যানা। আমি তোমায় খুব খুশি রাখব। তোমার যা ইচ্ছে, সব পাবে। সব দেবো আমি তোমায় অ্যানা। আমায় বিয়ে করো। পিটারকে ছেড়ে দাও।"
"না না না। এ হয় না। আপনি আমায় ছাড়ুন।" অ্যানা বৃথা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলো। ডেভের শক্ত হাতের থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলো না।
"তুমি বুঝছ না অ্যানা। আমার তোমাকে দরকার।"
"প্লিজ, আমায় ছেড়ে দিন।" অ্যানা কাকুতি মিনতি করলেও ডেভ মুক্তি দিলেন না।
"অ্যানা আমার মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আছে। আমি তোমায় সবকিছু দিতে পারি। আমাদের সন্তানেরাও এই বিশেষ ক্ষমতা পাবে। প্লিজ অ্যানা। আমায় বিয়ে করো। তুমি আমার সন্তান ধারণ করবে। পরিবর্তে আমি তোমায় রাজরানী করে রাখব। ঐশ্বর্যে ভরিয়ে রাখব।"
অ্যানা প্রাণের দায়ে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে সজোরে লাথি মারল ডেভকে। ডেভ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলেন। অ্যানার হাত ছেড়ে দিলেন। অ্যানা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ল। স্পেশাল অর্ডার রুম থেকে। দোকান থেকে। ছুটতে ছুটতে পৌঁছল নিজের বাড়ি। ও হাঁপাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment