Sunday, September 2, 2018

পুজো স্পেশাল


"এই প্রাণ ঢালা উৎসবে বারবার
alo asha bhalobasha mishe ekakar
ei shoroto topone pranero swopone chirosathi shalimar..."

টিভিতে এই বিজ্ঞাপন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই? ব্যস, পুজো তো তাহলে এসেই গেল। কাপড় মেলতে গিয়ে বারান্দায় বা ছাদে দাঁড়িয়ে যতই কালো মেঘ দেখুন না কেন, শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসুক কি না ভাসুক, রাস্তায় ঘাটে এখন থেকেই বাঁশ পোঁতা শুরু হয়ে যাক কি না, আনন্দবাজারের ভিতরের পাতা জুড়ে জুতোর বিজ্ঞাপন চোখে পড়ুক কি না, বছরের পর বছর ধরে এই একটি বিজ্ঞাপন আপামর বাঙালির কাছে "পুজো আসছে" অনুভূতি নিয়ে আসে।

তারপর আশ্বিনের এক শারদপ্রাতে সেই চিরপরিচিত ব্যারিটোন যেন আনুষ্ঠানিকভাবে পুজোর সূচনা করে দেয়। (আশ্বিনের শারদপ্রাতে plays in background. Followed by বাজল তোমার আলো বেণু) নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের সাথে তাল মিলিয়ে শপিং মলগুলিও উপচে পড়ে ভিড়ে। যদিও এখন অনলাইন কেনাকাটার যুগ, তবুও এই চারদিনের প্রস্তুতি যেন অসম্পূর্ণ থাকে পায়ে হেঁটে কেনাকাটি না করলে। সপ্তমীতে কুর্তি জিনস তো অষ্টমী সকালে ঢাকাই শাড়ি। বিকেলে অবশ্যই সিল্ক। নবমীতে চুড়িদার কামিজ, রাত্রে আনারকলি। ম্যাচিং দুল লিপস্টিক কাজলের কেনাকাটির পর দু হাত ভর্তি প্যাকেট নিয়ে অটোতে বসে বা ভিড় মিনিবাসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে যখন রেডিওতে পুজোর বিজ্ঞাপনগুলি বাজে, কোথায় যেন মনটা উড়ে যায় নিমেষে। এক ছুট্টে সেই ছোটবেলায়। দূরদর্শনের পর্দায় ছুটি ছুটিতে, বছরের পর বছর যেখানে গুপী বাঘার সাথে পরিচয় যেমন হত, তেমনি বেরিয়ে পড়তাম ফেলুদা আর তোপসের সাথে। বা কালার টিভির যুগে টিভিতে "সপ্তমীতে প্রথম দেখা, অষ্টমীতে হাসি, নবমীতে বলতে চাওয়া তোমায় ভালোবাসি। দশমীতে হঠাৎ কেন আকুল হল প্রাণ, প্রাণ প্রতিমা তুমি এবার যাবে কি ভাসান" উফ, কত উত্তেজনা। কী রোমাঞ্চকরই না লাগত তখন সেজেগুজে প্যান্ডেলে যেতে। সারাক্ষণ উৎসুক চোখে এদিক ওদিক দেখে নেওয়া, কেউ দেখছে? কেউ হাসলো?

একটা সময় ছিল যখন পুজোর বেশ কিছু সপ্তাহ আগে থেকে নিয়ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা কোন না কোন কাকিমা বা দিদির বাড়ি যেতাম। চলতো হয় নাটকের মহড়া বা  তবলা ঘুঙ্গুর আর হারমোনিয়াম সহযোগে নাচ গানের প্র্যাক্টিস। প্রিয় গানগুলির মধ্যে থাকতো মম চিত্তে নিতি নৃত্যে বা শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।"

কলেজ, চাকরি বা সংসারের চাপে এখন আর আগের মতো "শরত তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি..."তে নাচা হয়না পাড়ার পুজো মণ্ডপের অনুষ্ঠানে। সন্ধিপুজো কী, অনেক সময় তো অষ্টমীর অঞ্জলিটা পর্যন্ত কোনমতে দিয়ে ফিরতে হয় অফিসের কাজে। অঞ্জলি দেওয়ার পর লাইন দিয়ে প্রসাদী ফল আর নারকেল নাড়ু যে কবে শেষ খেয়েছি, মনেই পড়েনা। নবমীতে গোটা পাড়ার সাথে বসে খিচুরি বেগুনি খাওয়া হয়নি কত বছর। মায়ের বকা খেয়ে আনন্দমেলা ফেলে অষ্টমীর ভোগ আনা হয়না আজকাল আর। শারদীয়াগুলোও এখন কেমন অচেনা লাগে। নেই কাকাবাবু, নেই মিতিন মাসি। কলাবতীও কবে বড় হয়ে গিয়েছে। সাথে আমরাও...

তবুও বছরের এই চারটে দিন, যেখানেই থাকি না কেন,

"মন পবনের নাও এই বাংলার তীরে
আগমনী আলো জাগে মানুষের ভিড়ে।
বুকের ভিতরে পুজো এলো ফিরে..."



No comments:

Post a Comment