১২।
এরপর থেকে অ্যানা মিস্টার রাইজম্যান সঙ্ক্রান্ত কোন খবরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল। ওর পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, যখনই কোন স্পেশাল অর্ডার ক্রেতা এসেছেন ডেভের কাছে, এবং কিছু রেখে গিয়েছেন এখানে, দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি সংবাদে এসেছেন। আর্থার রাইজম্যানের বিষয়ে যে কোন খবর ও শিগগির পাবেই, সেই ব্যাপারে অ্যানা নিশ্চিত। ও এই তিন স্পেশাল অর্ডার ক্রেতাদের সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব। আর্থার রাইজম্যানের ব্রিফকেসে লেখা দেখেছিল A.R. I.C.S, A.R. আর্থার রাইজম্যান, কিন্তু বাকিটা? হয়তো এটি ওঁর কোম্পানির নাম? উনি হয়তো ব্যবসায়ী? কে জানে। অ্যানা মন দিয়ে খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন পড়তে লাগল। কিন্তু কোথাও এই বিষয়ে কিছু চোখে পড়ল না, কানেও এলো না। তারপর একদিন ঠিক করল, ও লন্ডন যাবে।
শুক্রবার সকাল সকাল ও ডেভের জন্য নোট রেখে গেল, "ডেভ, আমি লিডনি যাচ্ছি। বিয়ের জন্য কিছু কেনাকাটি করার আছে। আজ তাই আমি দোকানে আসতে পারছি না।" চিঠিতে অ্যানা সত্যি কথা লেখেনি পুরো, তবুও, ওর কিছু যায় আসল না।
অ্যানা বাসে করে লিডনি, তারপর সেখান থেকে ট্রেনে চেপে লন্ডন পৌঁছল। প্যাডিংটন স্টেশনে যখন ও নামে, তখন বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। একটা টেলিফোন বুথের জন্য ওর দুই চোখ আনচান করছে।
হ্যাঁ, ওই তো। অ্যানার চোখে পড়ল একটি টেলিফোন বুথ। স্টেশনের ঠিক বাইরেই। কিন্তু ভিড়। অপেক্ষা করতে করতে অ্যানার চোখে পড়ল একটা বিশাল বড় অ্যাডভারটাইসমেন্ট বোর্ড। লেখা, I.C.S, International Computer Services! ওই তো, মিস্টার রাইজম্যানের কোম্পানি তাহলে নিশ্চয়ই এটা।
অ্যানা একটা বুথ ফাঁকা পেতে সেখানে গেল আর ভয়ে ভয়ে বোর্ডে দেখে রাখা নম্বর ২২২৮৯৫৯ ডায়াল করলো। কয়েকটা রিং হওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে এক সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে শুনল, "হেলো, I.C.S., কীভাবে আপনার সাহায্য করতে পারি?"
অ্যানা একটু থমকে বলল, "আমি কি মিস্টার রাইজম্যানের সাথে কথা বলতে পারি? আর্থার রাইজম্যান। আমার ধারণা উনি এই কোম্পানিতে চাকরি করেন।"
ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, "চাকরি করেন? হ্যাঁ। উনি এই কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান। দাঁড়ান। আমি ওঁর সেক্রেটারিকে লাইনটা দিই।"
এবারে এক অন্য নারীকন্ঠ ফোনে বললেন, " মিস্টার রাইজম্যানের সেক্রেটারি বলছি। বলুন?"
" আমি মিস্টার রাইজম্যানের সাথে কথা বলতে চাই।"
"কে বলছেন?"
"উনি আমার নাম জানেন না।"
"আপনার কি ওঁকে এখন ফোন করার কথা ছিল?"
"না।"
"দুঃখিত। উনি একটি মিটিঙে রয়েছেন। এক ঘণ্টার মধ্যে ওঁর সুইজারল্যান্ডের ফ্লাইট। এখন তো কথা বলতে পারবেন না।"
"কিন্তু আমার যে খুব দরকার। কয়েক মিনিট মাত্র।"
বিরক্ত হয়ে সেক্রেটারি বললেন, "দুঃখিত। সম্ভব না। কোন মেসেজ দেওয়ার থাকলে বলতে পারেন।"
"না ঠিক আছে। আমি সামনের সপ্তাহে ফোন করব। উনি ফিরে আসবেন তো?"
"হ্যাঁ। ঠিক আছে। গুডবাই।" ঝনাৎ করে ফোন রাখার শব্দ পেল অ্যানা।
অ্যানা খুব খুশি। যদিও মিস্টার রাইজম্যানের সাথে কথা হয়নি, অন্তত ওঁর কোম্পানির নাম জেনেছে ও। ও একা একা সেইদিন লন্ডনে ঘুরে বেরাল। একটি ক্যাফেতে বসে চা খেলো। সিনেমা দেখল। সারা দিন লন্ডনে নিজের মতো কাটিয়ে অ্যানা সাড়ে ছটা নাগাদ সন্ধ্যের ট্রেন ধরতে প্যাডিংটন স্টেশনে ফেরত এলো। একটা সান্ধ্য সংবাদপত্র কিনে সিটে বসে গুছিয়ে নিলো নিজেকে। অ্যানা ক্লান্ত। কিন্তু খবরের কাগজে কিছু একটা দেখবে, এই ভরসায় ও কাগজটি খুলল। এবং সেখানে বড় করে লেখা দেখল,
"খানিক আগে একটি প্রাইভেট প্লেন ক্র্যাশ করেছে লন্ডনের কাছে। ছয় যাত্রীই মৃত। প্রত্যেকেই I.C.S.এর কর্মী। প্লেনটি সুইজারল্যান্ড যাচ্ছিল। মৃতদের মধ্যে ছিলেন মিস্টার ICSএর চেয়ারম্যান, মিস্টার অ্যালফ্রেড গ্লুক।
এই বিষয়ে আমাদের করেস্পন্ডেন্টকে ICS এর ভাইস চেয়ারম্যান মিস্টার আর্থার রাইজম্যান জানিয়েছেন "খুব সৌভাগ্য যে আমি বেঁচে আছি। আমারও ওই প্লেনেই যাওয়ার কথা ছিল। নেহাত আমার মিটিঙটি দেরিতে শেষ হয়। তাই ফ্লাইট মিস করি।"
মিস্টার রাইজম্যান সম্ভবত কোম্পানির পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে চলেছেন।"
No comments:
Post a Comment