১১।
দেখতে দেখতে আরেকটা অক্টোবর মাস এসে গেল। বাইরে আবহাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে, ঠাণ্ডা। মধ্যে মধ্যেই বৃষ্টি পড়ছে। মন মেজাজ শরীর কোনটাই আজকাল ভালো যাচ্ছেনা অ্যানার। আগের সেই প্রাণশক্তিটাই যেন কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। সর্বক্ষণ ওর মনের মধ্যে অস্থিরতা, অবসাদ। অসুস্থ থাকে বেশিরভাগ সময়েই। আর তাই তেমন বেরোয়ও না বাইরে।
উডএন্ডের সকলেই প্রায় জানেন অ্যানা আর পিটারের ঝগড়ার কথা। তাঁরা এও জানেন ঝগড়ার কারণ। অ্যানা যে ডেভের সাথে লন্ডন গিয়েছিল, সে খবর কারুর কাছে অজানা নয়। অ্যানা অসুখী। কিন্তু তাঁরা কেউ ওর সাহায্য করতে পারেননা চাইলেও। কারণ অ্যানা কারুর সাথে তেমন কথা বলেনা। অ্যানা নিয়ম করে দ্য কর্নার শপে যায়। অপেক্ষা করে থাকে আরো এক স্পেশাল অর্ডারের।
অ্যানাকে স্পেশাল অর্ডারের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাসের মাঝামাঝি একদিন দুপুরে অ্যানা একা দোকানে কাজ করছিল। এমন সময়ে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক এলেন দোকানে। ভারিক্কি চেহারা, দামী বেশভূষা। নাকের নিচে মোটা গোঁফ। হাতে একটা বড় ব্রিফকেস।
"সুপ্রভাত মিস।" উনি হেসে বললেন অ্যানাকে।
"সুপ্রভাত স্যার।" অ্যানাও নম্রভাবে উত্তর দিল। ইনি কে? সেই বিষয়ে ওর বিস্তর কৌতূহল।
"আমি মিস্টার ডেভ স্লাটিনকে খুঁজছি।"
অ্যানা হেসে উত্তর দিল, "আপনি কি কিছু বিক্রি করতে এসেছেন?"
"হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন," জবাব এলো।
অ্যানার কথাটা বিশ্বাসযোগ্য লাগল না। ও জানে, এই ভদ্রলোক কিছুতেই সেলসম্যান হতেই পারেন না। কিন্তু ওর অসীম কৌতূহল, তাই কথা চালিয়ে যেতে হবে যে কোন ভাবেই। অ্যানা বলল, "আচ্ছা, তা সাধারণত এই দোকানের জন্য আমিই সেলসের লোকজনের সাথে কথা বলে থাকি। আপনি আমায় নির্দ্বিধায় বলতেই পারেন।"
কথা বলতে বলতে অ্যানা খেয়াল করলো ব্রিফকেসে লেখা "A.R.I.C.S"।
"ধন্যবাদ, কিন্তু আমার ওঁর সাথে বিশেষ দরকার আছে। প্রাইভেটে। আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই এসেছি। সেই লন্ডন থেকে এসেছি। দয়া করে ওঁকে ডেকে দিন।"
"ক্ষমা করবেন। উনি এই মুহূর্তে ভীষণ ব্যস্ত। আমি ওঁকে জানাচ্ছি আপনার কথা। কী নাম বলবো?" অ্যানা প্রশ্ন করলো।
ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন, "বলুন আর্থার রবারটস।"
অ্যানা ওঁকে বসতে বলে দোকানের পিছনে চলে গেল। সিঁড়ির মুখে দেখল ডেভ নিচে নামছেন।
"আপনার কাছে একজন এসেছেন। দোকানে বসিয়েছি।"
"থ্যাঙ্ক ইউ। আমি দেখছি।" এই বলে ডেভ এগিয়ে গেলেন।
"আসুন মিস্টার রাইজম্যান। দেখা হয়ে ভালো লাগছে।"
রাইজম্যান? তবে যে বললেন রবারটস? কী মিথ্যেবাদী, অ্যানা ভাবল।
ভদ্রলোক অ্যানার দিকে তাকালেনই না আর। "আমারও ভালো লাগছে।" বললেন ডেভকে। তারপর ডেভের পিছু পিছু স্পেশাল অর্ডার ঘরে চলে গেলেন।
আবার একটা স্পেশাল অর্ডার কাস্টমার। অ্যানার কৌতূহল তুঙ্গে। ও দোকানেই রয়ে গেল।
A.R.I.C.S এ A.R. হল তার মানে আর্থার রবারটস। কিন্তু বাকিটা?
দেড়টা নাগাদ অ্যানা দোকানের পিছন থেকে কথা বলার শব্দ শুনতে পেল। তাকিয়ে দেখল আর্থার আর ডেভ বেরোচ্ছেন ঘর থেকে।
"আপনি আমার অনেক উপকার করলেন ডেভ। অশেষ ধন্যবাদ।"
" ঠিক আছে। আমার সহকারী দোকানে নেই। তবে আপনি নিজেই দরজা খুলে যেতে পারবেন। আসুন।" এই বলে ডেভ চলে গেলেন ওপরে। আর্থার দোকানের সামনে এসে দেখলেন অ্যানা একটা কোণে চুপ করে বসে আছে। দুজনের চোখাচুখি হল। সেই দৃষ্টিতে একে অপরের প্রতি ছিল চরম বিরক্তি।
"ও আপনি এখানে? আমি ভাবলাম আপনি নেই। চলে গিয়েছেন।"
"না, আমি আজ দোকানেই লাঞ্চ করবো।"
খানিক ইতস্ততার পর অ্যানা বলল, "মিস্টার রবারটস, দোকানে খুব ভালো ব্রেড আছে। নেবেন?"
"রাইজম্যান। আমার নাম রাইজম্যান।" আর্থার চেঁচিয়ে বললেন।
"দুঃখিত। মিস্টার রাইজম্যান, আপনি কি ব্রেড কিনবেন? বাড়ির বানানো।"
"ঠিক আছে। দিন। আমার স্ত্রীর ভালো লাগবে।" গলার স্বর একটু নামিয়ে আর্থার রাইজম্যান জবাব দিলেন।
"এই নিন। আপনার ব্রিফকেসে ভরে নিন। ও, আপনার ব্রিফকেস কই? আপনি বোধহয় ফেলে এসেছেন।" অ্যানা বলল।
"ব্রিফকেস? আমার কোন ব্রিফকেস নেই।" অবাক হয়ে মিস্টার রাইজম্যান বললেন কথাটা।
"না না আপনি আনলেন তো। দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি। সম্ভবত ভিতরের ঘরে রেখে এসেছেন। "
আর্থার অ্যানার হাত চেপে ধরলেন। রাগতস্বরে কেটে কেটে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, "আমার কোন ব্রিফকেস নেই। আমি কিছু ফেলে যাচ্ছিনা।"
অ্যানা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। "ঠিক আছে। প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন। লাগছে।" প্রবল আকুতিতে আর্থার ওর হাত ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। এই তাড়াহুড়োয় উনি ব্রেড নিতে ভুলে গেলেন।
অ্যানা দেখল ওঁকে গাড়ি করে বেরিয়ে যেতে। পাঁচ মিনিট পরও ওর হাত যন্ত্রণায় কাঁপছে।
No comments:
Post a Comment