রঙ রুট
সুচেতনা
(৩)
"কী হল মা? কিছু বলছ না কেন?" জাহ্নবীর প্রশ্নে সম্বিৎ ফেরে সুভদ্রার। দার্জিলিং। নামটার সাথে যেন কত অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে। সেই কুয়াশা মাখা সকালগুলো, উঁচু নিচু রাস্তা, জলাপাহাড়ের দিকে উঠে যাচ্ছে, সেই সোনালী আলো মাখা ম্যাল, আর সেই খয়েরি কালো চেক চেক মাফ্লার। সব মনে পড়ে যাচ্ছিল সুভদ্রার। জাহ্নবীর ডাকে অন্যমনস্কতা কাটিয়ে জবাব দিলো, "এত জায়গা থাকতে সেই দার্জিলিং?" জাহ্নবী উত্তর দিল, "কেন? দার্জিলিঙে কী সমস্যা? তাছাড়া, আমি অবশ্য ঠিক দার্জিলিং যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি লেপচাজগত। তবে তুমি যে বলো দার্জিলিং খুবই সুন্দর? তাহলে?"
সুভদ্রা কী বলবে বুঝে ওঠেন না। সময় নিয়ে কফির কাপে চুমুক দেন। জাহ্নবী ছাড়ার পাত্রী নয়। ছাড়েও না। আবার মাকে জিজ্ঞেস করে, "কী গো? বলো?"
সুভদ্রা আর কোন উপায় খুঁজে পান না। অনেক বছর পর আবার ফিরতে হয় জীবনের সেই ফেলে আসা অধ্যায়ে। সেই অতীত, যেখানে ফিরতে একটা সময় ভীষণ কষ্ট হতো, চাননি ফিরতে। কফির কাপটা নামিয়ে রেখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "দার্জিলিং। এবং সেই ফাল্গুন মাস। সেইবার কলেজের পরীক্ষার পর গিয়েছিলাম দাদা বৌদির সাথে। দার্জিলিং বেড়াতে। সেখানে গিয়েই তোর বাবার সাথে দেখা হলো। আর তারপর..." কথায় ক্ষণিকের বিরতি দিয়ে আবার বলতে থাকেন সুভদ্রা, "আর তারপর তো তুই জানিসই। আমার সর্বনাশ। তাই চাই না তুই যাস। তুই গেলে তোরও যদি... "
মাকে থামিয়ে দিয়ে জাহ্নবী বলে, " প্রথমত, ওটা সর্বনাশ না। অই ভদ্রলোকের সাথে দেখা না হলে, আজ আমি থাকতাম না। আমায় ছাড়া এই নাকি তোমার আর কেউ নেই, তাহলে? সেই ঘটনাকেই বলছ সর্বনাশ? আর সেকেন্ডলি, মিস্টার অর্জুন রাঠোড়ের মত অমন চারমিং ভদ্রলোক আর দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাওয়া বেশ বেশ কঠিন মা। কাজেই, স্টে রেস্ট অ্যাশিয়রড, আমি তোমার হিস্ট্রি রিপিট করব না। আর যদি করেও ফেলি, আমার সাপোর্ট সিস্টেম তোমার সিস্টেমের চেয়ে ঢের বেশি স্ট্রং। কাজেই, আমি সামলে নেব। আমরা সামলে নেব। বুঝেছ? আর থার্ড পয়েন্ট, মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, আমি লেপচাজগত যাচ্ছি। দার্জিলিং না। রডোডেন্ড্রনের সন্ধানে। রঙের সন্ধানে। বাংলা রঙ। ইংরেজির কোন রঙ রুটে ভুলেও যাবো না। বুঝলে?"
সুভদ্রা আধুনিকা। জানেন মেয়ে বড় হয়েছে। ওর ইচ্ছেকে স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়াটা কর্তব্য। তাই আর দেরি না করে বললেন, "বেশ। যাবে। তবে হ্যাঁ, সব ডিটেলসে জানিয়ে যাবে আমায়। কবে কোথায় যাচ্ছ, থাকছ কোথায়, সব। আর শুনে রাখো, লেপচাজগত যাও যতই, মনে রেখো তোমার জগত কিন্তু এই আমি। দিল্লীতে বসে হাঁ করে অপেক্ষায় থাকবো। কেমন?"
"লাভ ইউ মা" এই বলে খুশীতে ডগমগো জাহ্নবী মায়ের গলা জড়িয়ে ফেলে আদরে, আহ্লাদে।
(ক্রমশ)
পুনশ্চঃ শনি রবি ছুটি। লেখা না আসারই চান্স বেশি। পুরো প্যাকড শিডিউল উইকেন্ডে।
No comments:
Post a Comment