Tuesday, March 17, 2020

রঙ রুট (৫)
সুচেতনা

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটা এক্ষুণি জানালো, ডিলেয়েড। পরিবর্তিত সময় রাত নটা। জাহ্নবীর অবশ্য অসুবিধে নেই এতে। এমনিতেও ওকে রাত্রে কলকাতা এয়ারপোর্টেই সময় কাটাতে হতো। এখন না হয় সেটা একটু কমলো। মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করে সুভদ্রাকে জানিয়ে দিল ও। তারপর ওর ফ্লাইটের নির্দিষ্ট গেটের কাছে, লাউঞ্জের এক কোণে একটা খালি চেয়ার পেয়ে গুছিয়ে বসলো। হাতে অনেকটাই সময়। গতবারের দিল্লী বইমেলা থেকে মায়ের কিনে দেওয়া "সেই সময়" উপন্যাসটা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। যদিও ওজন বেশ ভালোই, তবুও, পড়তে পড়তে একটা নেশা লেগে যায়, ছাড়তেই ইচ্ছে করেনা। তাই সেটিই সঙ্গে এনেছে। এখন হাতে যা সময়, অন্তত ঘন্টা দুইয়েক ও পড়তে পারবে, নিশ্চিন্তে।
বই পড়ছে জাহ্নবী। ইতিমধ্যে কখন যে ওর পাশের মানুষটি উঠে চলে গিয়েছেন, খেয়াল করেনি ও। সম্বিৎ ফিরল মোবাইলের আওয়াজে। স্ক্রিনে নাম লেখা সন্দীপের। সন্দীপ হ্যাপি হিল হোম স্টের ম্যানেজার। বুকিং, গাড়ি, সব ওই তদারকি করেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে জাহ্নবী ফোনটা রিসিভ করলো। সন্দীপ গাড়ির নম্বর, ফ্লাইটের ডিটেলস এইসব আরো একবার কনফার্ম করতেই ফোন করেছিল। জাহ্নবী সমস্ত ডিটেল জানালো। এবং সাথে কথায় কথায় দিল্লী কলকাতা ফ্লাইটের ডিলের কথাও জানালো। কথা বলতে বলতেই নজরে এলো, উল্টোদিকে এক যুবক। ওরই দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই রে, জাহ্নবী কি একটু বেশি জোরেই কথা বলে ফেললো? যাঃ, এই এক সমস্যা ওর। কথা বলতে বলতে এমনই বিভোর হয়ে যায় যে স্থান কাল পাত্র বজায় রাখতেই হিমশিম খেয়ে যায়।
একটু সঙ্কুচিত হয়েই ফোনটা ছেড়ে জাহ্নবী উঠে দাঁড়ায়। উঁহু, একটু দূরে গিয়েই বসবে না হয়। ফ্লাইটের তো দেরি আছে এখনো। বোর্ডিং শুরু হতে আরো আধ ঘন্টা। একটু কফি খেয়ে এলে হয় না? মায়ের দেওয়া স্যান্ডউইচ এখনো খোলেনি। ওটা কলকাতা এয়ারপোর্টের জন্য তোলা রইলো। কেক খেয়েছে অবশ্য। মায়ের স্পেশাল ক্যারোট কেক। বেশ ভারীও। তাই খিদে বিশেষ নেই। একটু কফিই তাই আপাতত যথেষ্ট। প্লেনে উঠলেই তো ডিনার দেবেই। এদিক ওদিক দেখতে দেখতে একটা কফি শপ নজরে পড়লো। ব্যাকপ্যাকটা পিঠে আর ক্যামেরার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে জাহ্নবী এগোলো সেদিকে। কাউন্টারে টাকা দিয়ে একটা ক্যাপুচিনো অর্ডার করে ও বসল। দোকানে ভিড় তেমন নেই। অন্তত বসার জায়গায়। সবাই প্রায় ওই আসছে, কফি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দোকানদার কফির কাপটা রেখে গেলেন। জাহ্নবী চিনির প্যাকেটটা ছিঁড়ে ফেলছে, এমন সময় কানে এলো, "হাই। আমি কি এখানে বসতে পারি?"
হঠাৎ করেই বাংলা শুনে জাহ্নবী চমকে উঠলো। মাথা তুলে দেখে, সামনে দাঁড়িয়ে লাউঞ্জের সেই ছেলেটি।

(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment