Tuesday, March 24, 2020

রঙ রুট ১২
সুচেতনা

হোম স্টেটা একটি ছোট্ট দোতলা কাঠের বাড়ি। এক তলায় সন্দীপ থাকে সপরিবারে। ওপর তলায় চারটি ডবল বেড ঘর। ট্যুরিস্টদের ভাড়া দেওয়া হয়। রান্নাঘর একতলাতেই। সাথে ছোট্ট একটা অফিস। আর ডাইনিং রুম। লিভিং রুম। দোতলায় ঘরগুলিতে বারান্দা রয়েছে। ওয়েদার ভালো থাকলে সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায়। ওইখানেই কাঠের টেবিল আর দুটি চেয়ার পাতা। ব্রেকফাস্ট আর মর্নিং টি ঐখানেই সার্ভড হয়। গোটা বাড়িটাই সন্দীপের। হ্যাপি হোম লেপচাজগৎরা এটিতে টাকা লগ্নি করেছে। হোম স্টে চালানোর রোজকার রোজ কাজ সন্দীপই করে। একটি বাচ্চা ছেলে, যে এতক্ষণ কিচেনে জিনিসপত্র তুলে রাখছিল গাড়ি থেকে, সে এসে জাহ্নবী আর শুভঙ্করের লাগেজ নিয়ে গেল ওপরে। ওরা দুজন পিছন পিছন উঠলো। জাহ্নবীর রুম নম্বর এক, শুভঙ্করের তিন। জানলো, অভি বা অভির পরিবারের কেউ এলে সাধারণত চার নম্বর ঘরে থাকেন। দুই নম্বর আপাতত খালি। বুকিং নেই। শুভ একবার হেসে বললো, "কী, রাত্রে খালি পাশের ঘর বলে ভয় পাবে না তো? ভূত তুত তো থেকেই থাকে এখানে। কী ভাই, ভূত আছে নাকি?" ছেলেটি লাজুক ভাবে মাথা নেড়ে জানায় যে সেইসব উৎপাত এখানে নেই। ওরা যেন নিশ্চিন্তে থাকে। জাহ্নবী শুভর দিকে চোখ কটমট করে তাকালো একবার। কিছু বললো না। শুভ দুষ্টু হাসি হেসে কানে দুই হাত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলো।
জাহ্নবী নিজের ঘরে এসে জুতো মোজা খুলে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। নরম গদি। আঃ। কী আরাম। এখন একটু ঘুম দরকার। শুয়ে শুয়েই মাকে ফোন করলো।
"হ্যালো মা, দার্জিলিং পৌঁছে গিয়েছি। এই সব রুমে এলাম। তুমি ঠিক আছো তো মা?"
"হ্যাঁ। তুই ঠিক আছিস? ঠান্ডা কেমন? একদম ঠান্ডা লাগাবি না। জানিস তো কথায় কথায় সর্দি কাশি বাধাস।"
"আরে না না। সাবধানে থাকবো। জানো মা, এখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাইনি। মেঘলা।"
"অত সহজে তিনি দেখা দেন না। সাধনা করতে হয়। Only the deserving see the majestic Kanchenjungha... উনি রাজা। যাকে তাকে দর্শন দেবেন না। কাজেই..."
"কাজেই?"
"কাজেই well behaved থাকতে হবে। তবেই।"
"মা! আমি এখন নার্সারিতে পড়ি না যে এখন এইভাবে শায়েস্তা করবে, ভালো রাখবে। এ কি স্যানটা ক্লজের গল্প নাকি?"
সুভদ্রা হাসেন। বেশ খানিকটা। তারপর বলেন, "সে যা ইচ্ছে ভাব। কিন্তু দেখিস। কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা সহজে মিলবে না।"
"ইশ। কি হিংসুটে তুমি। নিজে আসতে পারোনি বলে এইসব থ্রেট করছো। আমি বুঝিনা যেন?"

ওদের মায়ে মেয়েতে খুনসুটি চলছিল দিব্যি, এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। জাহ্নবী ফোনটা কেটে দরজা খুলল। বাইরে সন্দীপ দাঁড়িয়ে। বলতে এসেছে যে জাহ্নবী যেন ফ্রেশ হয়ে নেয় ঝটপট। গিজার চালানোই আছে। গরম জল পেয়ে যাবে। রান্নাও রেডি হয়ে যাবে আধ ঘন্টায়। জার্নি করে এসেছে। খেয়ে একটু রেস্ট নিক। তারপর বিকেলে কফি খেয়ে ম্যালে যাবে। সন্ধ্যেয় অভি স্যারের নির্দেশে বনফায়ারের ব্যবস্থা হবে। জাহ্নবী মাথা নেড়ে সায় জানায়। হুম। এখন একটু টানা ঘুম খুব দরকার। সুটকেসটা খুলে জামাকাপড় বের করে। মাথায় তেল মালিশ করে স্নান সারবে।
যাক। এই তাহলে ওর দার্জিলিং আসা হলো। মায়ের জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। দার্জিলিং।

(ক্রমশ)

বি: দ্র: সুস্থ থাকুন। ঘরে থাকুন। আশেপাশে কেউ নিয়ম ভাঙছে দেখলে বোঝান। না শুনলে থানায় জানান। এখন কঠোর হতেই হবে। নইলে কেউ বাঁচবো না।

No comments:

Post a Comment