Monday, March 23, 2020



রঙ রুট (১১)
সুচেতনা

IV
তিন ঘন্টার একটু বেশি জার্নির পর অবশেষে ওরা এসে পৌঁছলো দার্জিলিং। জাহ্নবী যখন ট্রিপটি প্ল্যান করে, শুরুতে লেপচাজগৎ দেখলেও, সাথে দার্জিলিংকেও জুড়েই নেয়। হ্যাপি হিল হোম স্টের দুটি হোম স্টে। একটা দার্জিলিং, একটা লেপচাজগৎ। তাই একইসাথে দুই জায়গাতেই বুকিং করে জাহ্নবী।
দার্জিলিংয়ে পৌঁছে একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করতে লাগল ওর মধ্যে। এই তবে সেই দার্জিলিং? এত গল্প শুনেছে ছোট থেকে, ভূগোল বইয়ের পাতায় পড়েছে, দেখেছে সিনেমার পর্দায়। এই তবে সেই পাহাড়ের রানী? ইনোভা থেকে নেমে এখনো হোম স্টের দরজার সামনে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জাহ্নবী। এই জায়গাটা একদম মহাকাল মন্দিরের কাছেই। ম্যাল হাঁটা পথ। এমনিও, ঘর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার কথা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে। আপাতত মেঘে ঢেকে আছে সামনেটা। তাই আন্দাজ করতে পারছে না জাহ্নবী। তবে বুক ভরে টাটকা তাজা নিঃশ্বাস নিয়ে চাঙ্গা হচ্ছে ও। পাশে শুভঙ্কর আর অরিজিৎ গাড়ি থেকে ওদের দুজনের লাগেজ নামাচ্ছে। হোটেলের জন্য কিছু আনাজপত্রও কিনে এনেছিল অরিজিৎ। সেইসব নামবে এরপর। জাহ্নবীর মন অন্য কোথাও নেই। এক দৃষ্টে হোম স্টের কাঠের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। অপেক্ষা শুভঙ্করের আর অরিজিতের। ওরা এলে ভিতরে ঢুকবে। চেক ইন করবে। মাকেও একটা ফোন করতে হবে। জাহ্নবী ঠিক করেছে, মাকে ভিডিও কল করবে, পঁচিশ বছর আগে মায়ের ফেলে আসা দার্জিলিংয়ের সাথে এখনের দার্জিলিংকে মিলিয়ে দেবে, পরিচয় করাবে।
বাগানে একটা নাম না জানা পাখি সমানে ডেকে চলেছে, আপনমনে। কোনো চিন্তা দুঃখ ভয়, কিচ্ছুটি নেই। শুধু গান আর গান। জাহ্নবী ভাবে, ওর জীবনটাও যদি এরকম হতে পারতো... কাঁধ থেকে ক্যামেরার ব্যাগটা নামায় বারান্দাতে। ক্যামেরা বের করে জুম লেন্স তাক করে পটাপট ছবি তুলতে থাকে আশেপাশের। লেন্সে ইতিমধ্যে ধরা দেয় শুভঙ্কর। ধরা দেয় অরিজিৎ। আরো একজন।
এক অচেনা যুবক। বয়স, ওই চব্বিশ পঁচিশ হবে। কোঁকড়া চুল, রোগা, লম্বা। পরনে সাদা সবুজ ভি গলা ফুল হাতা সোয়েটার, খয়েরি কর্ডের ট্রাউজার। পায়ে রঙিন বাহারি রানিং শু। হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছে। সোজা শুভঙ্করের কাছে। জাহ্নবী ক্যামেরা নামালো। দেখলো আগন্তুক আর শুভঙ্কর একে অপরের গলা জড়াজড়ি করে অভিবাদন জানাচ্ছে। বুঝলো, তাহলে এই অভি। মালিক। শুভর বন্ধু। অভি এবার এগিয়ে এলো জাহ্নবীর দিকে। এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, "হাই, আমি অভিমন্যু। নাইস টু মিট ইউ। জার্নি কম্ফোর্টেবল ছিল তো?" জাহ্নবী হ্যাঁতে মাথা নাড়লো।
"আসুন। ভিতরে আসুন।" এই বলে অভিমন্যু এগিয়ে চললো বাড়ির ভিতর। শুভঙ্করও এসে পড়েছে, জাহ্নবীকে ডেকে নিলো। এর মধ্যে, বাড়ির পিছন থেকে এতক্ষণে মালপত্র নামিয়ে গুছিয়ে এগিয়ে এলেন যিনি, বছর পঁয়ত্রিশ বয়স, মোটাসোটা কেজো চেহারা, জাহ্নবীর কাছে নিজেকে সন্দীপ বেল পরিচয় দিলেন। হোম স্টের ম্যানেজার। জাহ্নবী নমস্কার জানিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
শুভঙ্কর ইতিমধ্যেই রেজিস্টারে নাম লিখে ফেলেছে। অভিমন্যু জাহ্নবীর দিকে পেন আর রেজিস্টার এগিয়ে দিল। শুভঙ্কর পাশ থেকে দেখে বললো, "বাঃ, তোমার হাতের লেখাটা তো বেশ খারাপ। যাক। এতক্ষণে একটা ইমপারফেকশন দেখলাম।" জাহ্নবী উত্তর দিলো না। শুধু মুচকি হাসলো। শুভঙ্কর আবার বলতে থাকলো, "জানিস অভি, জাহ্নবী দুর্দান্ত গান গায়। চল না, আজ সন্ধ্যেয় একটা বনফায়ার হোক। তোর গিটারটা আছে তো?" অভি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। সাথে এও জানালো যে সদ্য কাহন কিনেছে ও। কাজেই, গান বাজনা জমবে ভালো।
জাহ্নবীর হঠাৎ সব খুব ভালো লাগতে লাগলো। কিছু ভালো নিশ্চয়ই হতে চলেছে, মন বলছে ওর।

(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment