Wednesday, March 25, 2020

রঙ রুট ১৪

চা খেয়ে জাহ্নবী আর অভি ম্যালের দিকে হাঁটা লাগালো। যেতে যেতেই দুজনের মধ্যে টুকরো গল্প চলতে লাগলো। ম্যালে পৌঁছে অবশ্য এদিক ওদিক খুঁজেও শুভর দেখা মিলল না। অভি জাহ্নবীকে আশ্বস্ত করে বলল, "ঠিক আছে। শুভ হয়তো এগিয়ে গিয়েছে, এদিক ওদিকে ঘুরছে। কোন অসুবিধে নেই। ম্যাপ দেখে দেখে ঠিক চিনে ফিরে আসবে, দেখা না হলেও। আসুন, আমরা এইদিকটা বসি।" জাহ্নবী সায় দিল। অভির সাথে গল্প করতে খুব ভালো লাগছে। মিশুকে ছেলে। এবং বেশ মজার মজার কথা বলে। জাহ্নবী বেশিরভাগ সময়ই চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল। কথায় কথায় অভি জানালো, ও সিঙ্গল পেরেন্টের কাছে মানুষ। বাবার কাছে। ছোট থেকে বড় হওয়া, পুরোটাই হোস্টেলে কাটিয়েছে। বাবার সাথে সময় কাটানো বলতে ওই স্কুলের ছুটিগুলোতে। খুবই আনন্দের ছিল সেসব দিন। কিন্তু বাবা ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। তাই ছোট্ট অভিকে হোস্টেলেই থাকতে হয়েছে। হোস্টেলের বন্ধুরাই কখন জানি বন্ধুর গন্ডি টপকে হয়ে গিয়েছে পরিবার। শুভঙ্করও তেমন। একদম স্কুল জীবনের বন্ধু। এখনো যোগাযোগটা সমানভাবে বজায় রয়েছে। অভির কথা শুনতে শুনতে জাহ্নবীর বারবার মনে হচ্ছিল, এ যেন ও নিজের কথা শুনছে। অভির শুধু বাবা আছে। ওর আছে মা। আর এই যে বন্ধুরা, পরিবারের চেয়ে কোনো অংশে কম না। এইটাও তো একদম বর্ণে বর্ণে সত্যি। জাহ্নবী বললো, "আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি অভি। আমারও জীবনের গল্প ডিটো।" অভি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, "তাই ভাবি। এত মিল লাগছে কেন। আপনিও তার মানে এক ধাতুতেই গড়া। ও আরেকটা কথা, আপনাকে সকাল থেকে দেখেই খুব চেনা চেনা লাগছিলো। মনে হচ্ছিল যেন কোথায় দেখেছি এই মুখ। এখন বুঝছি। এটা বোধহয় আমাদের মতোদের চেহারার বৈশিষ্ট্য। আমরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট, আমরা একটু আলাদা। তাই না?" জাহ্নবী একটু থেমে উত্তরে বলে, "আলাদা কি না জানি না। তবে হ্যাঁ, মানুষ হয়েছি আলাদা ভাবে। অন্যদের তুলনায়। ছোট থেকে সব সময় দেখে এসেছি বন্ধুরা সবাই পেরেন্ট টিচার্স মিটিংয়ে বাবা মা সহ এসেছে। আই হ্যাড ওনলি মাই মাদার। ফেস্টিভ্যালসে, জন্মদিনে, ভেকেশনে, সব্বাই মা বাবা নিয়ে আনন্দ করেছে। কিন্তু আমি? শুধু মা। এমন কী, আই ডিড নট ইভেন হ্যাভ আ সেট অফ গ্র্যান্ডপেরেন্টস।" অভি মাথা নাড়লো, তারপর জিজ্ঞেস করলো, "ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, হোয়াট এবাউট ইয়োর ড্যাড?"
"লেফ্ট। মাকে ছেড়ে চলে যায়, আমার জন্মের আগে।"
"আই সি। আর তোমার, আয়াম সরি, আপনার মায়ের রিলেটিভস? তারা?"
"তুমিটাই বরং থাকুক বুঝলে? ঐটাই বেস্ট। আমারও অসুবিধাই হচ্ছিল আপনিতে। জানি না। তোমায় কেন সব কথা বলছি। ইউজ্যুয়ালি আমি বলিনা কাউকে। অনেকেই শুনলে ভাবে আমি সিমপ্যাথি গ্যাদার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু না। আই হ্যাড এ ডিফিকাল্ট চাইল্ডহুড। আমার মায়ের রিলেটিভসরাও মাকে ডিচ করেছিল। অল বিকজ শি chose টু হ্যাভ মি as an unmarried লেডি। আই হ্যাভ অলওয়েজ হ্যাড দিস সেন্স অফ ইনকমপ্লিটনেস। এই জন্য, ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছি। ভুগেছি। মেন্টালি। আমার লেখাপড়া হ্যাম্পার্ড হয়েছে। থ্যাংকফুলি আমি এখন প্রফেশনাল হেল্প নিচ্ছি। তাই অনেক ভালো আছি। মাঝে মধ্যে মুড সুইংস হয়। থেরাপিস্টের সাহায্যে আমি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি।"
অভি কয়েক পলক তাকায় জাহ্নবীর দিকে। তারপর "এক মিনিট, আসছি" বলে এগিয়ে যায় আইসক্রিম বিক্রেতার দিকে। তারপর দু হাতে দুটো সফটি কিনে নিয়ে এসে বসে বেঞ্চে, জাহ্নবীর পাশে। ওর দিকে একটা কোন এগিয়ে দিয়ে বলে, "এই নাও। ধরো। বাবা বলে, দেয়ার ইজ নো স্যাডনেস দ্যাট এন আইসক্রিম ক্যান নট সল্ভ। এটা খাও। ভালো লাগবে। আর রাত্রে ভালো ভালো গান গেয়ে আমরা দারুণ টাইম স্পেন্ড করবো। ঠিক আছে? সন্দীপকে বলে দিই, বার্বিকিউ এর ব্যবস্থা রাখতে। গুড ফুড, গুড মিউজিক। সব মন খারাপ সেরে যাবে।" জাহ্নবী মাথা নেড়ে যোগ দেয়, "গুড কম্পানি টু।"
অভি বলে, "দেখো, তোমার সাথে আমি এমপাথাইজ করতে পারছি। অনেকটা একইরকম আমাদের অবস্থা। আরো শুনবে? আমি আবার হলাম গিয়ে, adopted। কাজেই বুঝতে পারছ। তবে হ্যাঁ, আমার বাবা কোনোদিনও আমায় সেটা ফিল করতে দেয়নি। বাবা আমায় খুব ভালোবাসে। বাবা ইজ মাই লাইফ। আমার বাবা খুব ভালো। খুব মিশুকে। খুব ফ্রেন্ডলি। আই থিংক ইউ উইল লাভ হিম। এই তো, আমরা পরশু লেপচাজগৎ যাবো। বাবা ওখানে থাকবে। রোডডেনড্রোন ট্রেইলে বাবা আমাদের গাইড করবে। মিট হিম। ইউ উইল ফিল হ্যাপি।"
জাহ্নবী সম্মতি জানায়। অভির মধ্যে একটা বন্ধু খুঁজে পেয়ে ভালো লাগে ওর। অনেক হালকা লাগে কথা বলে।


(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment