Tuesday, March 17, 2020

রঙ রুট (৬)
সুচেতনা

জাহ্নবী একটু অবাক হয়েই এদিক ওদিক তাকালো, তারপর বলল, "সে বসলে বসুন।" যুবকটি স্মিত হেসে "ধন্যবাদ" বলে চেয়ারটা টেনে বসলো। জাহ্নবী নিজের কফির কাপে মনোযোগ দিল। সবে এক চুমুক কফি মুখে গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে এই আগন্তুকের "আমি শুভঙ্কর" গলার স্বরে জাহ্নবী চমকে, বিষম খেয়ে একাকার। সে কী কাশি, চোখ মুখ লাল হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আগন্তুক রীতিমত অপ্রস্তুত। নিজের ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে জাহ্নবীকে জল অফার করে বলল, "আই অ্যাম সরি। আমি বুঝতে পারিনি আসলে যে এরকম রিঅ্যাক্ট করবেন আপনি।"
জাহ্নবী মনে মনে অত্যন্ত লজ্জিত বোধ করে। এ বাবা, কী যে সব কাণ্ড কারখানা বাধিয়ে ফেলে ও, না চাইতেই। ছি ছি, উনি কী ভাবলেন। কতটা লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়ালো গোটা মুহূর্তটা।
জাহ্নবী অন্তর্মুখী মেয়ে। আর তাই তখন লাউঞ্জে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলার ভয়ে কফিশপে এলো। আর এখানেই এসেও এই। কী যে করবে, ভেবে পায় না। কফি এখনো পড়ে আছে কাপে। বেশ খানিকটা। এখন এখান থেকে উঠেও যাওয়া যায় না। খুবই খারাপ দেখায়। কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, "না না। ইটস ওকে। আই অ্যাম অলরাইট। আপনি ব্যস্ত হবেন না। আর হ্যাঁ, আমিও সরি। এরকম হলো বলে। আসলে আমি অন্যমনস্ক ছিলাম কিছুটা। তাই আর কী..." জাহ্নবীকে থামিয়ে দিয়ে আগন্তুক বলে, "ও ঠিক আছে। যাক সেসব মিটে গেলো। লেটস স্টার্ট অ্যাফ্রেশ?" জাহ্নবী আর কীই বা বলে, নিরুপায় হয়েই বলল,"ইয়েস অফ কোর্স। ওকে।" আগন্তুক নিজের ডান হাতটা জাহ্নবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "হাই, আমি শুভঙ্কর।" জাহ্নবী নিজের ডান হাতটা একটু কিন্তু কিন্তু করেই এগিয়ে দিয়ে উত্তরে জানালো, "আমি জাহ্নবী।"
কয়েক সেকেন্ডের হ্যান্ডসেক। তারপর জাহ্নবীই নিজে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল। এইবারে আর শুভঙ্কর ভুল করেনি। অপেক্ষা করল জাহ্নবীর কফিটা ঢোঁক গেলা অব্ধি, তারপর বলল, "সরি, তখন আপনার কথা ওভারহিয়ার করে ফেললাম। তবে নেহাতই কোয়েন্সিডেন্স, তাই নিজেকে সামলাতে না পেরে আলাপ করব ভাবলাম। তার মধ্যেই দেখি আপনি লাউঞ্জ থেকে কফিশপের দিকে চলে এলেন। অগত্যা..."
"অগত্যা, আপনিও আমার পিছু পিছু এলেন, তাই তো?" জাহ্নবী নিজের মনেই বলল কথাগুলো। অবশ্য সামনাসামনি শুধুই হাসি। উঁহু, অস্বস্তি হচ্ছে। কী আবার কোয়েন্সিডেন্স?
শুভঙ্কর জাহ্নবীর কৌতূহলের উত্তর দিল সঙ্গে সঙ্গে। বলল, "আপনি তো হ্যাপি হিল হোম স্টেতে যাচ্ছেন? আমিও। ইন ফ্যাক্ট আমাদের সেম শিডিউল। আমাদের দুজনেরই সেম ত্র্যাল আইটিনারি।"
জাহ্নবী অবাক। এ যে দেখি কোয়েন্সিডেন্সেরও বড় ব্যাপার। বলে কী? লোকজনের ফ্লাইট এক হয়, এ দেখি গন্তব্য পর্যন্ত এক।
শুভঙ্কর বোধহয় মুখের ভাব ভালোই পরতে জানে। জাহ্নবীর মুখ দেখে এইবারে হেসে বলল, "আসলে এই হোম স্টেটার ওনার আমার বন্ধু অভি। ওই বলেছিল আমায় যে একই দিনে আপনিও ট্র্যাভেল করছেন। তখনো আমার ফ্লাইট টিকিট কাটা ছিল না। তাই একই ফ্লাইটের টিকিট কাটতে জানায় আমায়। যাতে একই সাথে ওরা পিক-আপ করতে আসতে পারে।"
জাহ্নবী কিন্তু এই কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলো। এ কেমন হোম স্টে, মানলাম না হয় ওদের ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্টে সুবিধে হবে। কিন্তু তাই বলে ওকে না জিজ্ঞেস করে এরকম ওর ট্র্যাভেল শিডিউল জানিয়ে দিল? এবং ওর সাথে কথা না বলেই একই সাথে ট্র্যাভেল প্ল্যান পর্যন্ত? দিস ইস সো নট ডান। এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। সন্দীপের সাথে কথা বলতেই হবে। ঢকঢক করে কফিটা শেষ করে, শুভঙ্করের সাথে আর একটি কথাও না বলে, হতভম্ব শুভঙ্করকে কফিশপে ফেলে নিজের লাগেজ নিয়ে গটগট করে এগিয়ে গেল, এয়ারপোর্টের নির্ধারিত ডিপারচার গেটের দিকে।
শুভঙ্কর ঘড়ি দেখল। বোর্ডিং শুরু হতে এখনো মিনিট কুড়ি বাকি। ও হতবাক। এই মেয়েটা এত কথায় কথায় পালিয়ে যায় কেন?
ধুর, এই ভেবে নিজেও তাড়াতাড়ি নিজের কাপ থেকে চা শেষ করে উঠতে যাবে, তাড়াহুড়োয় পড়ে থাকা চা চলকে পড়লো জিন্সে। ধ্যাত্তেরিকা।

(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment