Wednesday, March 18, 2020

রঙ রুট (৭)
সুচেতনা


III


বাগডোগরা এয়ারপোর্টের লাগেজ ক্যারুজেল থেকে নিজের সুটকেসটা নিয়ে বেরোনোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো জাহ্নবী। ভাগ্যিস ওরটা আগে এসেছে, নইলে আবার ওই শুভঙ্করের সাথে কথা বলতে হতো। বাপ রে, কীভাবে যে দিল্লী এয়ারপোর্টে বাকিটা সময় ওকে অ্যাভোয়েড করে কাটিয়েছে জাহ্নবী, তা ওইই জানে। তারপর কপাল ভালো, প্লেনেও দূরে দূরে সীট পড়েছিল। কলকাতা এয়ারপোর্টে ঘুমের কারণ দেখিয়ে সময় কাটিয়েছে। আসলে শুধু শুভঙ্কর বলেই না, জাহ্নবী যে কোনো অচেনা মানুষ, বা অনেক সময় চেনা মানুষের সাথেও খুব একটা ভালো করে মিশতে বা কথা বলতে পছন্দ করে না। অস্বস্তি হয়। একটা অদ্ভুত বাজে অনুভূতি হয়। ও চায় এই ব্যাপারটা এড়াতে, এই ভয়কে জয় করতে। এই নিয়ে তাই ও ওর কাউন্সেলর, ডক্টর আস্থানার সাথে বেশ অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছে। ডক্টর ওকে নানান টোটকা দিচ্ছেন, কিন্তু জাহ্নবী পারছে না। যেমন, ওর খুব ইচ্ছে ছিল, কলকাতা এয়ারপোর্টে বসে গল্প করবে শুভঙ্করের সাথে। সেই জন্য নিজে থেকে আগ্রহ দেখিয়ে শুভঙ্করের পাশে বসেছিল, নিজের স্যান্ডউইচ অফার পর্যন্ত করেছিল, কিন্তু তারপর ওই, যেই শুভঙ্কর একটু হেসে আড্ডা জুড়তে বসেছে, অমনি কী যে হলো। বুকের ভিতর ধড়পাকড়, হাত পা ঘামতে থাকা। কোনমতে ঘুমের অজুহাত দেখিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে ছিল।
জাহ্নবী অনেক পড়াশোনা করেছে এই নিয়ে ইন্টারনেটে। জেনেছে যে এই সমস্যা ওর একার নয়। এই সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতেই পারে। যেহেতু সিঙ্গল পেরেন্টের কাছে মানুষ, সেটাও কোন কারণ হয়তো হতেই পারে। তবে জাহ্নবী এও জানে যে চেষ্টা করলেই এই ভয়টাকে কাটানো যায়। ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কাটাবেই। থেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী বাগডোগ্রার ফ্লাইটে বসে ও সাথে রাখা নোটবইতে এই ঘটনা, মানসিক টালমাটাল অবস্থা, সমস্তটা লিখে রেখেছে। লিখলে নাকি উপকার হয়। অনেক বেশি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা যায়। শেষের কলামে ও লিখেছে, কী করে এই অবস্থা কাটাবে? না, বাগডোগ্রা থেকে দার্জিলিং, এই রাস্তাটা ও শুভঙ্করের সাথে একদম স্বাভাবিকভাবেই কাটাবে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে, গল্প করবে, ওর কথা শুনবে। ভয় ও পাবে না। এম্নিও এক গাড়িতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সন্দীপের সাথে কাল কথা বলে জেনে গিয়েছে। হোম স্টের নিজস্ব গাড়ি একটাই আপাতত। তাই দুই গেস্টের জন্যই একি ব্যবস্থা। সন্দীপ খুব করে ক্ষমা চেয়েছে জাহ্নবীর কাছে। প্রথমে ভয়ানক রেগে থাকলেও পরে জাহ্নবী বুঝেছে, এ ছাড়া সত্যিই আর কোনো উপায় ছিল না। ও নিজে সন্দীপের জায়গায় থাকলেও হয়তো একই কাজ করত। অগত্যা...
মোবাইল বের করে ও সন্দীপকে ফোন করে জানালো। সন্দীপ উত্তরে বলে দিলো যে গাড়ি এয়ারপোর্টের বাইরেই রয়েছে। ও ড্রাইভারকে জানিয়ে দিচ্ছে সামনে চলে আসতে। জাহ্নবী যেন গাড়িতে অপেক্ষা করে। জয় মা, জয় মা মনে মনে বলে জাহ্নবী এগোলো। WB21J2305 গাড়ির নম্বর। গাঢ় লাল ইনোভা। দরজা খুলে ওর লাগেজ ডিকিতে রেখে এক গাল হাসি মেখে নমস্কার জানালো এক কিশোর। পরনে জিন্স ও রঙ বেরঙের টিশার্ট। "নমস্কার দিদি। আপনি বসুন গারিতে। দাদা আসছেন। আমার সাথে ফোনে কথা হয়ে গিয়েছে।"
চালকের হাসিটি বড্ড মিষ্টি। কিছু কিছু মানুষ হয় না, যাদের দেখলেই ভালো লাগে? এও মনে হয় সেইরকম। জাহ্নবী খুশি হয়।




(ক্রমশ)
‍‍

No comments:

Post a Comment