Tuesday, March 24, 2020

রঙ রুট ১৩
সুচেতনা

তেল মেখে স্নান, এক রাত্তিরের জার্নির ধকল, আর তারপর গরম গরম ডাল ভাত আলু ভাজা মুর্গির মাংসের ঝোল দিয়ে লাঞ্চ। ঘুমটা যে জাহ্নবীর রীতিমতো সেরা হয়েছিল, সে আর বলতে? বিকেলে ঘুম ভাঙল শুভঙ্করের দরজা ধাক্কানিতে। "কী হে, বেড়াতে এসে খালি ঘুমোলেই চলবে নাকি?" জাহ্নবী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। "বিকেলে তো আমাদের ম্যালে যাওয়ার কথা। তাই তো?" প্রশ্ন করে শুভঙ্করকে। শুভ উত্তর দেয়, "হ্যাঁ। ওই জন্যই তো ডাকতে এলাম। চারটে বেজে গিয়েছে। চলো নীচে নামি। কফির জন্য তাগাদা দিই। তারপর বেরোই। অভিকেও ডেকে নিয়েছি। আজ ঘুরতে ঘুরতে কালকের বেড়ানোর প্ল্যানটা করে ফেলতে হবে। শুনেছি এখন রডোডেনড্রোনের সময়। চারিদিক লালে লাল। রঙের খেলা। যেতেই হবে।" জাহ্নবী উত্তর দেয়, "হ্যাঁ। মূলত ওই রঙের টানেই আমার আসা। অন্য একটা এক্সট্রা টান আছে বটে।" শুভঙ্কর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, "এক্সট্রা টান?" জাহ্নবী বলে, "হুম। সে আছে একটা।" শুভঙ্কর একটু দুষ্টু হাসি ছুঁড়ে দিয়ে বলে, "বাবা, আমি তো জানতাম না যে তুমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাও?" জাহ্নবী প্রশ্নসূচক দৃষ্টি মেলে তাকালো শুভর দিকে। শুভ নিজের কথা খোলসা করে জানালো, "ইয়ে মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে তুমি কি এটাও জানতে যে দার্জিলিংয়ে এলে আমার সাথে দেখা হয়ে যাবে?" জাহ্নবী উত্তরে বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কোনো মানে হয়? আর হ্যাঁ, শোনো, ফ্লার্টিং ইজ ফাইন। তবে লিমিট রেখে। বুঝলে? এখন প্লিজ আমায় যদি এক্সকিউজ করো, আমি তবে তৈরি হয়ে নীচে নামি।" এই বলে জাহ্নবী মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। শুভঙ্কর হা। এ আবার কী। মেয়েটার কিছু একটা ব্যাপার আছে। এক সময় এই কত হেসে কথা বলে, আবার হঠাৎ হঠাৎ কেমন চুপ করে যায়। রেগে যায়। অদ্ভুত কেস।
বন্ধ দরজার আড়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জাহ্নবী। নিজের মনের ওপর, হাবভাবের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। কেন? এ কী। দার্জিলিংয়ে আসা, পুরোটাই ডক্টর আস্থানার পরামর্শে। কিন্তু এখানে এসে যে এরকম মুড সুইং হবে, ভাবতে পারেনি। ফোন বের করে ডক্টরকে মেসেজ করলো ও। লিখলো মনের অবস্থার কথা। ডক্টর অনলাইন ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওকে উত্তরে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিলেন। সাথে বললেন, ওর ওই ফিলিং রেকর্ড বইয়ে গোটা ঘটনাটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখে রাখতে। এতে উপকার পাবে। আগেও যেমন পেয়েছে। জাহ্নবী ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে খেলো একটু। চকলেট খেলে নাকি হ্যাপি হরমোন সৃষ্টি হয়। মন ভালো থাকে। দেখা যাক। খসখস করে খাতায় লিখতে থাকে। পরপর ঘটনা। শুভর কথা শুনে ওর রাগের কারণ। রাগ? না দুঃখ? লিখতে লিখতে মনে হয়, আচ্ছা, শুভঙ্কর তো সত্যিই জানে না ওর অতীত। ওর মায়ের অতীত। তাই ও এও জানে না যে দার্জিলিংয়ের কী আলাদা মূল্য ওর জীবনে। তাই মজার ছলে বলেছে। জাহ্নবীর খারাপ লেগেছে। তবে শুভ তো যেচে ওকে কষ্ট দিতে যায়নি। অপরাধবোধ জাগে জাহ্নবীর মনে। শুভর সাথে এরকম ব্যবহার করা উচিত হয়নি।
তড়িঘড়ি বাথরুমে ঢুকে ঠান্ডা জলের ছিটে দেয় চোখে মুখে। তারপর পোশাক পরিবর্তন করে তৈরি হয়ে দরজা খুলতে যাবে, টোকা। নিশ্চয়ই শুভ। ইশ। ক্ষমা চাইবে। দরজা খুলেই জাহ্নবী বলে, "ভেরি সরি।" সামনে দাঁড়িয়ে অভি। জাহ্নবীর কথা শুনে অবাক। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, "না মানে ইয়ে, ঠিক আছে। দেরি হয়নি তেমন। আমি জাস্ট জানতে এসেছিলাম। আপনি কফি খাবেন, না চা।" জাহ্নবী ছোট্ট করে মাথা নেড়ে "চা" বলে এগিয়ে যায় দরজার বাইরে। অভি অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে। ঘরের চাবি লাগাতে লাগাতে জাহ্নবী প্রশ্ন করে, "আপনার বন্ধু কই?" অভি উত্তরে জানায় যে শুভঙ্কর একটু আগেই বেরিয়েছে। ম্যালের দিকেই গেছে। বলে গেছে অভি যেন জাহ্নবীর সাথে বেরোয়।
জাহ্নবী বোঝে, ওইদিকেও গোঁসা হয়েছে। হুম। কিছু একটা করতে হবে। চা খেতে খেতে অভিকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার বন্ধু বুঝি খুব অভিমান করে কথায় কথায়?" অভি এমন অবাক হয় এই প্রশ্নে, চা চলকে ওঠে। জাহ্নবী "এই রে, সরি সরি" বলে এগিয়ে যায় অভির দিকে। অভি কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, "ইটস ওকে। আসলে শুভ আর অভিমান, এই দুটো শব্দ একই বাক্যে শুনে একটু চমকে গিয়েছিলাম। একদম চিন্তা করবেন না। ও ব্যাটা মোটেই রাগে না।"
জাহ্নবী লক্ষ্য করে, অভির কথাবার্তাতে একটা অবাঙালি টান আছে। ওর কথার উত্তরে জিজ্ঞেস করে, "আপনি কি ওয়েস্ট বেঙ্গলে পড়াশোনা করেননি? আপনার বাংলায় একটা টান আছে.."
অভি উত্তর দেয়, "আমি তো বাঙালি নই। আমরা হিমাচলের। এখানে সেটেল্ড।" জাহ্নবী "আচ্ছা" বলে কাপ নামায়। চা শেষ। এইবার বেরোতে হবে।

(ক্রমশ)

বি: দ্র: আগের পর্ব খুব ছোট বললেন সবাই, তাই আজ আর একটু লিখলাম। প্লিজ আর পারবো না লিখতে আজ। লেখা আসবে না।

No comments:

Post a Comment