Sunday, March 15, 2020

রঙ রুট (৪)
সুচেতনা

II

জাহ্নবী আজ হাফ ডে নিয়েছে অফিসে। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় ওর ফ্লাইট। দিল্লী থেকে বাগডোগরা ডাইরেক্ট ফ্লাইট পায়নি। তাই এক রাত্তির কলকাতায় থেকে, সোজা পরেরদিন সক্কাল সক্কাল গন্তব্য। বাগডোগরাতে গাড়ি বলা আছে। হোম স্টে থেকেই পাঠিয়ে দেবে। তাই চিন্তার বা অসুবিধের কোনো ব্যাপার নেই। তবুও, দেশের যা অবস্থা, যা দিনকাল পড়েছে, সুভদ্রা নিশ্চিন্ত হতেই পারেন না। বারবার মনে কুডাক ডাকে, মেয়েকে যেতে এই যে অনুমতি দিলেন, এটা ঠিক করলেন কি আদৌ? পরে আফসোস হবে না তো? মায়ের মন। অথচ মেয়েকে বলতেও দ্বিধা করছেন। যদি জাহ্নবী রাগ করে? কিছু যদি বলে?
মেয়ের জন্য স্যান্ডউইচ আর কেকের টুকরো প্যাক করতে করতে বারবার সুভদ্রার চোখ চলে যাচ্ছে বড় ঘড়িটার দিকে। তিনটে সাড়ে তিনটে নাগাদ ও বেরোবে। আর মোটে কয়েকটা ঘন্টা। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, এরই মধ্যে নিতে হবে। আলমারি থেকে টিফিন বাক্স বের করতে গিয়ে একবার থমকে দাঁড়ালেন। কী মনে হতে সোজা চলে গেলেন মেয়ের ঘরে। জাহ্নবী তখন আলমারি খুলে কী কাপড় জামা পরে যাবে আজ, তা খোঁজাখুঁজি করছে। মাকে দেখে বললো, "মা, ওভারনাইট তো এয়ারপোর্টে বসে থাকতে হবে। ঠান্ডা পাবো, বলো? তাহলে বরং আমি সোয়েটশার্ট পরেই যাই। কী বলো?" সুভদ্রা মাথা নেড়ে খানিক তাকিয়ে থাকেন। তারপর বেরিয়ে যায়। কিছু বলতে পারেন না। আবার মিনিট দশেক পর ফিরে যান জাহ্নবীর ঘরে। প্রশ্ন করেন, "বাবু, গরম জামা ঠিক করে নিয়েছিস তো? সোয়েটার? মাফলার?" জাহ্নবী মাকে আশ্বস্ত করে। সব নিয়েছে ও। এক্কেবারে লিস্ট মিলিয়ে প্যাক করেছে সে। সুভদ্রা আবার ফিরে যান ডাইনিং হলে। কেকের টুকরোগুলো বক্সে ভরে, তা হাতে নিয়েই চলে আসেন আবার। মেয়ের ঘরে ফেরত। জাহ্নবী মুখ তুলে প্রশ্ন করে, "কী হলো?" সুভদ্রা একটু ইতস্তত করে বলেন, "শোন মা, ওখানে কিন্তু বৃষ্টি হয় হঠাৎ হঠাৎ। মোজা ভিজে যেতে পারে। নিয়েছিস সঙ্গে এক্সট্রা মোজা?" জাহ্নবী মায়ের হাত ধরে এনে বসায় নিজের খাটে। নিজে হাঁটু গেড়ে বসে সামনে। তারপর মায়ের দুটো হাত নিজের নরম দুই হাতের ভিতর শক্ত করে ধরে বলে, "তোমার কী হয়েছে বলো তো মা? সামথিং ইস বদারিং ইউ, না?" সুভদ্রা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, "আমার তোকে নিয়ে খুব টেনশন হয় রে মা। তোর যদি কিছু হয়ে যায়... আমার তো কেউই নেই আর মা। সেই জন্যই..."
"বুঝেছি। সেই জন্যই তুমি বারবার আষ্টেপৃষ্টে আমার কাছে থাকার জন্য নানান অজুহাতে ঘরে আসছো। তাই তো?"
সুভদ্রা উত্তরে চুপ থাকেন।
জাহ্নবী বলল, "মা, দেখো। আমি তোমার জাহ্নবী যমুনা হলেও বিগলিত করুণা নই। আমি তোমার ট্রেনিংয়ে শক্তপোক্ত মেয়ে। নিজের যত্ন, নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, আই উইল বি সেফ। কিন্তু তবুও, যদি তুমি চাও, তাহলে আমি যাবো না। নাথিং এট দ্য কস্ট অফ ইয়োর হ্যাপিনেস মা।"
সুভদ্রা ভেবে পান না কী বলবেন। নিজের ভয়ের জন্য মেয়ের এই আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন? হতেই পারে না। নাঃ। ভয়কে জয় করতে হবেই। জাহ্নবী তাঁর মেয়ে। তাঁরই মতো লড়াকু। ভয় পেলে চলবে না।
হাসিমুখে সুভদ্রা এগিয়ে গেলেন ডাইনিং রুমের দিকে। মেয়েকে বলে গেলেন, "বাবু, রেডি হয়ে যে তাড়াতাড়ি। বেরোতে দেরি করিস না। ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে শেষে!"

জাহ্নবী অবাক হয়ে চেয়ে থাকে মায়ের দিকে।

(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment