Sunday, March 29, 2020

রঙ রুট (১৮)
সুচেতনা

গভীর রাতে জাহ্নবীর ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎই। কিছু কি শব্দ কানে এলো? কী হলো? ও লেপের তলা থেকে হাত বের করে বেডসাইড টেবিলে রাখা মোবাইলে সময় দেখলো। আড়াইতে। ঢাকা দেওয়া জলের গ্লাসটা থেকে এক ঢোক জল খেলো। তারপর কী মনে হতে উঠে জানলার ধারে গেল। ভারী পর্দাটা সরাতেই চোখের সামনে যেন ম্যাজিকের মতো দৃশ্য। সে দৃশ্য না দেখলে কল্পনা করা যায় না। দুধ সাদা বিরাট কাঞ্চনজঙ্ঘা। তার ওপর চাঁদের জ্যোৎস্না ভেসে যাচ্ছে। সে এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। অবশেষে তাহলে মেঘ কাটলো। দেখা মিলল তার। গায়ে শালটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে জাহ্নবী একটু সাহস করেই দরজার বাইরে বেরোলো। আরো একটু ভালো করে যাতে দেখতে পারে। ক্যামেরাটা সাথে নিলো না। কিছু দৃশ্য মনের ক্যামেরায় বন্দী থাকাই ভালো বোধহয়।
দু চোখ ভরে দেখতে দেখতে কখন জানি গুনগুন করে গান শুরু করেছিল জাহ্নবী।
"সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা
রঙ ছিল ফাল্গুনী হাওয়াতে..."

"সত্যিই, আপনার গানের গলা কিন্তু অসামান্য। নিয়মিত চর্চা করেন?" অভির কথা শুনে চমকে যায় জাহ্নবী।
"ও মা, আপনি? কখন এলেন?"
অভি গেয়ে উঠলো, "যখন এসেছিলে, অন্ধকারে চাঁদ উঠেনি, সিন্ধুপারে চাঁদ উঠেনি।"
"আপনি তো অবাঙালি হয়েও বেশ ভালোই বাংলা গানের স্টক মেন্টেন করেন!"
"আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড বাঙালি। তার ওপর আমার বাবা বাংলা ভালোবাসে। ছোট থেকেই শুনে এসেছি। বাঙালিরাই আসল ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। তাই আর কী..."
জাহ্নবী কিছু বলে না আর। দু চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে সামনে। খানিক পর একটু গলা খাকরি দিয়ে অভি বলে, "একটা কথা ছিল।"
"বলুন?"
"বলছি যে এই দুদিন আমার ব্যবহারে নিশ্চয়ই আপনার খুব খারাপ লেগেছে।"
"কেন? খারাপ লাগবে কেন?"
"না মানে এটা খুবই অনভিপ্রেত। আপনার সামনে এরকম কথা কাটাকাটি, ঝগড়া। উচিত হয়নি।"
"সে বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া করা কখনোই উচিত না। আমার সামনেই হোক কি আড়ালে। তাই না?"
"হুম। আরো একটা কথা ছিল।"
"বলুন না।"
"আপনাকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি। আপনি ভীষণ লজিকাল। এবং ভালো মনের মানুষ।"
"ব্যস ব্যস। আর না। এত প্রশংসা আমার হজম হবে না।"
"না সত্যি বলছি। আপনি..."
"থাক না অভি। কিছু কথা, না বলাই থাকুক। তাই না?"
"থাকবে বলছেন?"
"হ্যাঁ। সেই ভালো।"
"আমারে না হয় না জানো..." (সুর করে)
"আমার ব্যাকুল নয়নও নেই, নেই উতল আঁচল বা এলোথেলো চুল।"
"সে ভাবনা ভাবতে হবে না। সেসবের আমার ব্যবস্থা অন্য। এই রে, আপনিও কি শুভর মতো ভাবলেন নাকি যে আমি আপনার প্রেমে পড়েছি?"
"পড়েননি?"
"উঁহু। আপনাকে ভালো বন্ধু মনে করেছি। ব্যস। আসলে আমাদের দেশে এইটাই সমস্যা। ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব যেন হতেই পারে না।"
"আপনি বাঁচালেন আমায়। নইলে ভীষণ অস্বস্তি হতো। খারাপ লাগতো। আসলে, আমি এখনো কাউকেই ভালোবাসতে, সেই অর্থে, বা কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মতো মেন্টাল স্টেটে নেই। চাইনি কোনো কমপ্লিকেশন।"
"শুভ জানে?"
"কী?"
"এই যে, সম্পর্কে জড়াবেন না।"
"সবটা জানাতেই হবে? আমি তো বলিনি যে জড়াবো। বন্ধু হিসেবেই তো থাকতে পারি। সেই কথা জানে।"
"হুম। ভালো তবে।"
"অনেক রাত হলো। এবার ঘুমোতে যাই। আপনিও শুয়ে পড়ুন।"
"হুম। কাল কিন্তু একটা দারুণ সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবো। ওয়েদার ভালো হয়ে গিয়েছে। কাজেই  ভিউ পয়েন্ট থেকে খুব সুন্দর দেখতে পাবেন। তিনজনেই যাবো।"
"আর আঙ্কেল?"
"যদি বাবা আমাদের বেরোনোর আগেই ফিরে আসে, তাহলে বলবো জয়েন করতে।"
"বেশ বেশ। আলাপ করতে আগ্রহী।"
"গুড নাইট।"
"গুড নাইট।"

(ক্রমশ)

বি: দ্র: আর হয়তো দুটো পর্ব। তারপর শেষ।
করোনা রিলিফ ফান্ডের জন্য বই নিলেন? বন্ধুমহলে জানালেন?

No comments:

Post a Comment