Sunday, March 8, 2020

সকলের রাতের খাওয়া কমপ্লিট? তাহলে এই ফাঁকে একটু গপ্পো করি। আজকে সকালেই লিখলাম ওই উইকেন্ড নিয়ে। পড়েছেন? সেখানে বাহারি রান্নার কথাও বলেছি। তা হয়েছে কী, লিখতে লিখতে আমার নিজেরও মনে হলো যে না। ওই উইকেন্ডে নিজেই কিছু অন্যরকম রান্না করি। প্রত্যেকবার তো মায়ের ওপরই হম্বি তম্বি করি। লেখালিখিতে যতই ভালো ভালো জ্ঞান দিই না কেন, আমি আসলে জ্ঞানপাপীই বটে। তা যাই হোক। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ছটার সময় ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম শপিং মল। বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এসে টুকটাক কিছু কিনলাম বটে। তবে বাড়ি ফিরতে ফিরতেও ঠিক করে উঠতে পারলাম না, কী রান্না করা যায়। তারপর আর কী, ওই অগতির গতি। সকালে শুনে গিয়েছিলাম ফ্রিজে চিকেন আছে। আর সবচেয়ে সহজ রান্না চিকেন। কাজেই...

কিন্তু তাও তো হলো। তবে রাঁধবো টা কী? এই চিকেন ওই চিকেন সেই চিকেন নাকি সেই ওই যে ওইটা? ভেবে ভেবে একসা।

এবার সত্যি কথা বলি একটা। আমি না জীবনেও পড়া মুখস্থ করতে পারিনি। চিরকাল ওই পড়তাম ঠিকই। কিন্তু তারপর পরীক্ষার হলে গিয়ে নিজের মতো করে বানিয়ে বানিয়ে লিখে আসতাম। দু তিনটে রেফারেন্স বই থেকে পড়তাম। তাই এ বই সে বই মিলিয়ে মালমশলা মন্দ থাকত না। কাজেই নম্বর, বলতে নেই, ভালোই পেতাম।

একই গল্প হলো তাই আজও। সারাদিন সময় পেলেই রান্নাবান্নার ভিডিও আর পোস্ট দেখি। তবে কী রান্না করবো, ভেবেই পাইনি। অগত্যা, মস্তিষ্কপ্রসূত ও বাড়িতে যা যা সরঞ্জাম ছিল, সেসবের সাহায্যে এই রান্নাটি করলাম। খেতেও উপাদেয় হয়েছিল। নামকরণ করেছি "বাদাম চিকেন"। করে দেখবেন নাকি? খুব সোজা। আমার মতো অপদার্থ মানুষ রাঁধতে পেরেছে মানে দুনিয়ায় যে কেউ (অবশ্যই বেসিক হাতে খড়িটা হয়ে থাকতে হবে রান্নাঘরে) এটা সহজেই রেঁধে ফেলবেন। দেখুন দেখি, এই লম্বা ছুটি আসছে সামনে। এর মধ্যে করেন কি না। বিশেষ করে বলবো, আপনাদের, যাঁরা অন্যদিন অন্যের রান্না খান। একবার এইটা রেঁধেই খাওয়ান না তাঁকে। রান্নার স্বাদ যেমন খুশি হোক না কেন, জেশ্চারটা কিন্তু খুবই ভালো লাগবে। প্রশংসা পেলে আমায় একটা ক্যাডবেরি খাইয়ে দেবেন। ঠিকানা বলে দেব। ঠিক আছে?

নিন, এবার রেসিপি লিখেই দিচ্ছি।
(গতকাল বেনুদির রান্নাঘর বইটা পড়ছিলাম। তাই ওই স্টাইলে লিখতে চেষ্টা করেছি। অবশ্যই হয়নি। না রান্না, না লেখা।)

"আদা রসুন বাটা (দুই থেকে আড়াই চামচ, উঁচু উঁচু), টমেটো বাটা (একটা মাঝারি মাপের আস্ত টমেটো ঘষে দিয়েছি গ্রেটারে), টক দই (দুই টেবিল চামচ), নুন (স্বাদ অনুসারে), লঙ্কা গুঁড়ো (স্বাদ অনুসারে) দিয়ে চিকেনের টুকরোগুলো ম্যারিনেট করলাম। পাঁচশো চিকেন ছিল। ততক্ষণে পরপর বাকি কাজ সারলাম। বাড়িতে যাবতীয় যা যা বাদাম ছিল, সেই কাজু, আমন্ড, চিনেবাদম, আখরোট নিলাম। সব মিলিয়ে হাফ কাপ হবে। (ছোট কাপের হাফ কাপ) জলে ভিজিয়ে রাখলাম মিনিট পাঁচেক। সেই জলসহ ভিজে বাদাম, পেঁয়াজ (দেড়খানা, মাঝারি মাপ), একটা শুকনো লঙ্কা, অল্প নুন দিয়ে মিক্সিতে ভালো করে বেটে নিলাম। এবার কড়াইতে সাদা তেল (আমি একটু কমই দিই। তাও ধরুন, দুই টেবিল চামচ। দই দেওয়া আছে মাংসে, তাই তেল ছাড়বে) গরম করে পেঁয়াজ কুচি (আধখানা মাঝারি মাপের), অল্প নুন আর চিনি (চিনি দেওয়া ক্যারামেলাইজ করতে) দিয়ে কড়া খয়েরি করে ভাজলাম। তুলে রাখলাম। এর পরের স্টেপ, অপশনাল। আমাদের বাড়িতে চাইনিজ ছাড়া মাংসের সব প্রিপারেশনেই আলু পড়ে। তাই তেলে আলু ভাজলাম অল্প। একই কড়াইতে (প্রয়োজন হলে একটু তেল আরো দেওয়া যায়। তবে আমি কম তেল প্রেফার করি। এক কেজি ওজন আজই দেখলাম কমেছে কি না!) এবার শুকনো লঙ্কা (২টা), তেজ পাতা (২টা) আর আস্ত গোল মরিচ (গোটা পাঁচ ছয়েক)
এবং ইঞ্চি দেড়েক দারুচিনি ফোড়ন দিলাম। এরপর ওই বাদাম বাটার মিশ্রণ প্রায় ৩/৪ ঢেলে দিলাম। কষাতে লাগলাম খানিক। আলুর সাথে মাখামাখি হলো খানিক। এরপর চিকেনের টুকরো দিয়ে দিলাম। নাড়াচাড়া চলতে লাগল। বাকি বাদাম বাটা দিলাম। প্রয়োজন মতো এরপর নুন চিনি আর জল দিয়ে দিলাম। কড়াই ঢেকে মাংস সিদ্ধ হতে রাখলাম খানিকক্ষণ। হয়ে গেলে একটু (এক চামচ) ঘি ছড়ালাম। এবার ঢাকনা খুলে আরো একটু নাড়াচাড়া। তারপর নামানোর ঠিক আগে বেরেস্তা ছড়িয়ে নেড়ে ঘেঁটে গ্যাস বন্ধ।

স্পেনসার্স গিয়েছিলাম আজ গ্রসারি (পড়ুন খ্যাটনের সরঞ্জাম জোগাড় করতে) শপিং করতে। রেডিমেড কুলচা কিনেছিলাম। মাইক্রোতে গরম করে মাংসটা দিয়ে খেলাম। তবে এই প্রিপারেশন পরোটা বা গরম ভাত দিয়েও খাওয়া যায় মনে হয়। আর ভালো হবে যদি তেলের সাথে ঘি মিশিয়ে রাধলে ফোড়ন দেওয়ার সময়। তবে ওই যে, আমি হেলদি ইটিংয়ে বিশ্বাসী!😊😊

কেউ এটা ট্রাই করলে জানাবেন কিন্তু!

(তা বলে ভাববেন না এবার থেকে এখানে আমি লেখা আসছে না বলে ফাঁকি মেরে গান যেমন দিই, তোমন রান্না দেব। উঁহু। নেহাৎ এই বিশেষ রান্নাটি সম্পূর্ণ আমার ঊর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত, অগত্যা "ক্রিয়েটিভ ও অরিজিনাল কন্টেন্ট"। তাই সাম্পানের পাতায় স্থান দিলাম। হজম হলে হয়।)

- সুচেতনা

No comments:

Post a Comment