Friday, March 20, 2020

রঙ রুট ৮
সুচেতনা

চালকের নাম অরিজিৎ। বয়স ওই একুশ। ডিগ্রি কলেজে পড়ে। সাথে প্রয়োজন মতো হোম স্টের হয়ে গাড়িও চালিয়ে দেয়। আসলে হোম স্টের চালক ওর বাবা, সুরজিৎ। তবে বর্তমানে উনি মালিকের সাথে কোনো কাজে গৌহাটি গিয়েছেন। তাই অরিজিতের দায়িত্ব পড়েছে জাহ্নবী আর শুভঙ্করকে নিয়ে আসার। এইসব কথাই এক নাগাড়ে ও নিজেই বললো জাহ্নবীকে। জাহ্নবীও খুশি মনেই শুনলো। নিজের নামের সাথে মিল অরিজিৎ সিংএর। অরিজিৎ নিজেও গান ভালোবাসে। তাই জাহ্নবী গাড়িতে উঠতেই মিউজিক প্লেয়ারে চালিয়ে দিলো বেস্ট অফ অরিজিৎ। হালকা খিদে পেয়েছে। তাই জাহ্নবী হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা চকোলেটের বার বার করে নিজেও নিলো দুটো টুকরো, অরিজিৎকেও দিলো।
অরিজিৎ হাসি মুখে "থ্যাংক ইউ দিদি" বলে সাগ্রহে তা গ্রহণ করলো। ইতিমধ্যেই নিজের লাগেজ নিয়ে হাজির শুভঙ্কর।
অরিজিতের সাথে করমর্দন করে বলল,"কী ভাই অরিজিৎ, ডিকিটা খুলে দাও। সুটকেস রাখি।" জাহ্নবী মুখ তুলে জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখলো শুভঙ্করকে। একটা হলুদ সাদা শর্ট ঝুলের চেক শার্ট , নীল জিন্স আর উডল্যান্ডসের জুতো। চোখে নীলচে কেতাদুরস্ত সানগ্লাস। দেখলেই কেমন একটা বিদেশ ফেরত মনে হয়।
জাহ্নবী হাসিমুখে শুভঙ্করকে চকোলেট এগিয়ে দিয়ে বলল, "নিন। যাত্রার শুরুতেই মিষ্টি মুখ। যাত্রা শুভ হবে।"
শুভঙ্কর ততক্ষণে গাড়ির সামনের সিটের দরজা খুলে  উঠতে যাচ্ছে, চকলেটটা নিয়ে মুখে পুরে উত্তর দিলো, "সে ম্যাডাম, আমার নামেই শুভ। যাত্রা তো শুভ হবেই। দ্যাট রিমাইন্ডস, আপনিও আমাকে শুভ বলেই ডাকতে পারেন। অনেক বেশি ইনফরম্যাল হবে। আফটার অল, বেশ কিছুদিনের ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার যখন, খুব বেশি ফরম্যালিটি বজায় রাখলে বেশ মুশকিল।"
জাহ্নবী কয়েক সেকেন্ড ভাবলো। তারপর অরিজিতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "অরিজিৎ, এই দাদা কিন্তু রাত্রে এয়ারপোর্টে ঘুমাননি। ভোরের ফ্লাইটেও না। কাজেই জার্নিতে ঘুমিয়ে পড়ার হাই চান্সেস। তাহলে তো তোমার পাশে সামনের সিটে বসা উচিত না। বলো?"
অরিজিৎ ব্যাপারটা ভালো বুঝলো না। একটু বোকা বোকা হাসি হেসে বললো, "সে কোনো প্রব্লেম না দিদি।"
জাহ্নবী বললো, "উঁহু। তোমার প্রাণের মায়া না থাক। আমার আছে। আমি ছাড়া আমার মায়ের আর কেউ নেই। কাজেই আমার প্রাণের মূল্য আছে। পাহাড়ি রাস্তায় তাই নো রিস্ক। শুভঙ্কর বাবু, আপনি বরং ব্যাগটা সামনের সিটে রেখে এই পিছনে এসে বসুন আমার এখানে। আমি অত মোটাও নই। আর ইনোভার স্পেস বেশ ভালোই। জায়গা হয়ে যাবে। আরামসে।"
শুভঙ্কর বুঝি এই আমন্ত্রণের অপেক্ষাতেই ছিল। তড়িঘড়ি পিছনের সিটে বসে বেজায় খুশি মনে বলল, "এইবার যাত্রা সত্যিই শুভ হবে। চলো অরিজিৎ, চলো।"
অরিজিৎ গাড়িতে স্টার্ট দেয়। গাড়ি গুটিগুটি পায়ে এগোতে থাকে এয়ারপোর্ট থেকে, দার্জিলিংয়ের পথে।
জাহ্নবী জানলার বাইরে চেয়ে দেখে। একটা নতুন সকাল। নরম আলো। নিজের আচরণে নিজেই আশ্চর্য, কিন্তু খুব আনন্দ হয় ওর। ব্যাগ খুলে ডায়রি বের করে ঝটপট লিখে রাখে মনের কথা, ভাব। আজ মনে হয় দিনটা বেশ ভালোই যাবে ওর।

(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment