Monday, July 31, 2017

Happy birthday Harry


শুভ জন্মদিন হ্যারি পটার

সুচেতনা গুপ্ত

তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। গরমের ছুটিতে আমার জেঠি (উনি স্কুলের শিক্ষিকা হওয়ার সুবাদে লাইব্রেরী থেকে অনেক বই এনে দিতেন আমায়। ) আমায় হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বইটি এনে দেন। Harry Potter and the Philosopher's Stone তখন খুব চলছে। সিনেমার পর্দায় আসার সুবাদে বইটি তখন হই চই ফেলে দেয়, যদিও বইটি বেরিয়েছিল তার কিছু বছর আগে। আমি গোগ্রাসে সেই বই পড়া শুরু করি। এবং এর পরে প্রত্যেকটি পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে থাকতাম। সেই যে হ্যারির সাথে আমার প্রথম পরিচয়, সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট। এখনো মন খারাপ লাগলে উল্টে পাল্টে দেখে নিই কিছু কিছু চ্যাপ্টার। আর তৎক্ষণাৎ মন ভালো হয়ে যায়।

প্রিয় কিছু মুহূর্ত বলতে গেলে সবচেয়ে প্রথমে মনে আসে যেটা, সেটি হল যখন প্রথমবার ও হগওয়ারটস থেকে চিঠি পায়। ওই চিঠিই ছিল ওর মাসী মেসোর বাড়ির অত্যাচারের থেকে বেরোনোর পথ। হ্যাগ্রিডের সাথে Diagon Alleyতে গিয়ে স্কুলের জন্য সামগ্রী কিনে তৈরি হওয়া দেখতে দেখতে কখন জানি নিজের নতুন সেশনের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। প্রত্যেক বছর নতুন ক্লাসে ওঠার আগে বাবা মায়ের হাত ধরে লিস্ট মিলিয়ে বই কেনা, ইউনিফর্ম কেনা...হ্যারির ক্ষেত্রে বাবা মায়ের বদলে এই কাজে শুরুতে সাহায্য করেছে হ্যাগ্রিড, পরবর্তী গল্প গুলোতে রনের মা, মিসেস উইজলি। অনাথ হলেও হ্যারিকে বাবা মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসায় সর্বক্ষণ ভরিয়ে রেখেছে মিসটার ও মিসেস উইজলি, ডাম্বলডোর, হ্যাগ্রিড, প্রোফেসর ম্যাক গনাগাল, সিরিয়াস, প্রোফেসর লুপিন ও আরো অনেকে।

রন ও হারমাইনির সাথে অটুট বন্ধুত্ব, তথাকথিত "কুল" না যারা, যেমন, নেভিল, লুনা এদের সাথেও সমানভাবে বন্ধুত্ব করা, হেডউইগের সাথে সখ্যতা, ডবির প্রতি আমৃত্যু ভালোবাসা, সর্বদা ন্যায়ের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকার মনোভাব, ছোট বড় নির্বিশেষে সকলকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া, ভদ্রভাবে আচরণ করা, দুষ্টুমি করা, নিয়ম ভাঙ্গা (কিন্তু সব সময়েই প্রায় কোন ভালো বা মহৎ কাজের জন্যই) এইসব মিলিয়ে হ্যারির স্কুলজীবন। একটু একটু করে বড় হতে হতে ডাম্বলডোরের থেকে ও আরো অনেকের থেকেই নিজের ছেলেবেলা, অভিশপ্ত ভবিষ্যতের কথা শুনেও হার না মেনে এগিয়ে চলা, এই স্বভাবগুলির জন্যই বোধহয় পৃথিবী জুড়ে হ্যারির অগুনতি ভক্ত।


এরপর শুরু হল সিনেমাগুলি দেখা। ফিলসফারস স্টোনটি সিনেমায় এলো সরসারারস স্টোন নাম নিয়ে। একটা সিন আমার এখনো খুব মনে টানে (এবং বহু সময় দিয়ে আমার ডেস্কটপের বা ল্যাপটপের ওয়ালপেপার থেকেছে), সেটি হল হগওয়ারটসে কাটানো ওর প্রথম ক্রিসমাস। বাইরে বেরিয়ে নরম বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে, গ্লাভস পরা হাতটা বাড়িয়ে রাখা, রোবের ওপরে হেডউইগ বসে আছে। হ্যারির চোখে মুখে যে একটা অনাবিল আনন্দ, ওই নির্মল হাসিটুকু মন ছুঁয়ে যায়। হ্যারির সাথে সাথে ড্যানিয়েল র‍্যাডক্লিফের ওপর মুগ্ধতার সূচনা হল। হ্যারিকে বোধহয় আরো বেশী করে আমাদের প্রজন্মের আপন লাগে কারণ ছেলেটির সাথে আমরাও যে বড় হয়েছি। ওর সাথে হেসেছি, ওর সাথে অঝোরে কেঁদেছি। ও যখন mirror of erisedএ নিজের মা বাবাকে দেখেছে, ওর সাথে সাথেই আমরা সেই সামনে আছে কিন্তু তাও ধরাছোঁয়ার বাইরের কষ্টটা অনুভব করি। আমি বরাবর বই পড়তে বেশী ভালবাসি সিনেমার তুলনায়। এই সিরিজেও চতুর্থ সিনেমার পরে আমার আর আগ্রহ ছিলনা খুব একটা। বইয়ের অত ডিটেলিং মিসিং লাগত, তাই সিনেমা দেখলেও অতি উদগ্রীব হয়ে থাকতাম না প্রথম চারটি দেখার মত। মনে আছে স্কুল কামাই করে প্রিয়া সিনেমায় তৃতীয়টা দেখতে গিয়েছিলাম আমি আর আমার দিদি। বাসে করে ফেরার সময় বাংলা মিস কে বাসে দেখে প্রায় যায় যায় অবস্থা। যখন শেষ সিনেমাটি বেরোল, বইটা আগেই পড়া হয়ে গেলেও সিনেমাটি দেখার জন্য আগ্রহী ছিলাম। দেখার পরে মনে হল যেন এর সাথে সাথেই আমার এক টুকরো শৈশব শেষ হয়ে গেল।

Saturday, July 29, 2017

ভোজ

ফুলমতির খুব আনন্দ আজ। ওর স্বামী কিষাণ ঘরে ফিরছে চার মাস পরে। বিয়ের ছয় মাস পরে পরেই কিষাণের ডিউটি পড়েছিল বর্ডারে। কিষাণ সেনাবাহিনীতে রান্নার কাজ করে। সারাক্ষণ নিজের হাতে রান্না করে সকলকে খাওয়ায়। ফুলমতির তাই খুব শখ, আজ নিজে হাতে ওর জন্য ওর পছন্দের রান্না করে খাওয়াবে। যত্ন করে প্লাস্টিকের টেবিলে থালায় করে সাজালো বাজরার রুটি, আলু জিরার সব্জি, মসলা ওখরা, কালি ডাল। পাশে বাটিতে সিমাইয়ের পায়েস। সব শেষে নিজের হাতে বানানো ঘি চুপচুপে দুটো বড় এবং একটি ছোট্ট মুগ ডালের লাড্ডু রাখল কাঁচের ডিশে। আর মাত্র আধ ঘণ্টার অপেক্ষা। এই এলো বোধহয়, দরজায় টোকা মারার শব্দ। আসমানী রঙের বাঁধনি শাড়ীর ঘোমটাটা মাথায় ঠিক করে ছুটল ফুলমতি।


তেরোদিন পরে আজ আবার ফুলমতি থালায় করে কিষাণের পছন্দের সব খাবার সাজালো। পরনের সাদা থানটা বড্ড চোখে লাগছে যে সকলের। ধূপের গন্ধে গা টা গুলিয়ে ওঠায় সরে যেতে গিয়েই টের পেল পেটের ভিতরে ছোট্ট দুটি পায়ের প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা। শুরু হল এক  জীবন লম্বা যুদ্ধ baby steps দিয়ে।

Thursday, July 27, 2017

উত্তুরে হাওয়া



আমি যাকে বলে খাস দক্ষিণ কলকাতার মেয়ে। জন্ম আমার ল্যান্ডসডাউন রোডের হসপিটালে। তারপরেই সোজা পিন কোড সাত লক্ষ পঁচানব্বই, অবশ্য তখনও পঁয়তাল্লিশ ছিল। প্রাইমারী স্কুল ছিল দেশপ্রিয় পার্কে, তারপরে হাই স্কুল যাদবপুর থানায়। কলেজ পার্ক সার্কাস, ইউনিভার্সিটি যাদবপুর; তারপরে বছর খানেক রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ। তারপরে সেই ২০১৩'র গরমের ছুটির থেকে চেন্নাইতে। দেখতে গেলে উত্তর কলকাতার সাথে আমার নিত্যনৈমিত্তিক যোগাযোগ বলতে শুধু রাজাবাজারের এক বছর। অথচ উত্তর কলকাতার সাথে আমার কোর্টশিপ কিন্তু আরও আগে থেকে। মনে হয় সেই বাগবাজারে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার সময় থেকে।
আমি কিংবা আমার মা বাবা কেউই খুব একটা ভিড়ভাট্টা পছন্দ করিনা। কাজেই দুর্গা পুজোতে আমরা ঠাকুর দেখার পর্বটা সকাল সকাল কি নিদেনপক্ষে দুপুরেই মিটিয়ে ফেলি। আমাদের প্রথম স্টপই হয় বাগবাজার। হয় বাসে নয় ট্রামে যাতায়াতটা হয়, গাড়ি নিয়ে একবার খুব ফ্যাসাদে পড়েছিলাম। সে কথায় পরে আসছি। বেশ একটা impressionable age থেকেই এই পর্ব চলে আসছে বলে, বাগবাজারের ডাকের সাজ ও দুর্গা পুজো আমার কাছে synonymous। পুজো পরিক্রমা অসম্পূর্ণ লাগে বাগবাজারে না গেলে। ওই যে বছর বছর সনাতনী মা দুর্গার রূপ, কেন জানিনা, আমার দেখলেই গায়ে কাঁটা দেয়। মনে আছে কোন এক বছর উত্তরে যাওয়া প্রায় দুইবার ক্যান্সেল করে তৃতীয় বার যখন সম্ভব হল, সত্যি বলছি, অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে দিতে দুই গাল বেয়ে জল পড়ছিল। এছাড়া শোভাবাজার, আহিরিটোলা, হাতিবাগান, শিমলে ইত্যাদি ইত্যাদি বেশ কিছু নামজাদা ঠাকুরই দেখি। উত্তরের তো গলিতে গলিতে প্রবাদপ্রতিম ঠাকুর। এই গলি সেই গলিতে গেলেই মনে হয় যেন কত ইতিহাসের সাক্ষী। ইদানীং বেশীর ভাগ সময়েই পুজোতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, তাই মোটামুটি সব বারেই হাতে ছাতা নিয়ে বেরোতে হয়। বৃষ্টি নামলে কোন পুরনো বাড়ির গাড়িবারান্দায় বা ছোট্ট দোকানে আশ্রয় নিতে হয়। একবার আমরা গাড়ী নিয়ে বেড়িয়েছিলাম, সে এমন তুমুল বৃষ্টির তোড়, সামনে প্রায় কিচ্ছুটি দেখা যাচ্ছেনা। প্রায় মিনিট কুড়ি ওইরকম এক জায়গায় গাড়িটাকে পার্ক করে রাখা ছিল। ক্রমশ দেখতে পাচ্ছি রাস্তায় জল জমছে, আমাদের গাড়ি আবার প্রায়ই তখন বেগড়বাই করত, নিতান্তই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে ঈশ্বরের অসীম কৃপা, সেই যাত্রায় কোন অসুবিধে সেরকম হয়নি। হ্যাঁ যেইটুকু হয়েছিল, তা হলে আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আহিরিটোলা যেতে গিয়ে বোধহয় নিমতলার ঠাকুরের ওদিকে চলে গিয়েছিলাম বা উল্টোটা; কিছু বছর আগের ঘটনা, ঠিক খেয়াল নেই (আমার রাস্তার সেন্সটিও খুবই লজ্জাজনক ভাবে খারাপ)। গত বছর এক বন্ধুর থেকে ফোনে ডিরেকশন নিয়ে নিয়ে বাগবাজার ও শোভাবাজারের ঠাকুর দেখতে পেরেছিলাম।


মায়ের সাথে প্রায় কলেজে পড়াকালীনই কলেজ স্ট্রীট বিধান সরণিতে যেতাম শাড়ি কিনতে। নিজে শাড়িতে খুব একটা পটু না হলেও বাছাই করে অন্যদের জন্য কিনতে আজও ভালো লাগে। গত মাসে কলকাতা গিয়ে আবার সেই একই কাজ করলাম। কি তৃপ্তি যে হয় কি বলব। ওই ঢাকাই শাড়ি গুলো, আহা। হলফ করে বলতে পারি, ওই দামে ওই নকশা আমি কিন্তু দক্ষিণের নামজাদা দোকানে দেখিনি। কলেজ স্ট্রীট অঞ্চল মানেই বই কেনা। আনন্দর দোকানে ঢুকে কিছুক্ষণ কাটানো যে কি আরামের, সে যে না experience করেছে, সে বুঝবেনা। আমার আবার জুতোর সাইজটি বেশ ছোট, সচরাচর মাপের জুতো পাই না। তবে কলেজ স্ট্রীট বাটা (যেটা জানিনা, মা কেন ঘোরা নাকি ঘোড়া বাটা বলে) হল একমাত্র জায়গা যেখানে প্রত্যেকবারে যে মডেলের জুতোই খুঁজি না কেন, আমার সাইজে পেয়েছি।  এই দোকানপাট করতে করতে চলে খাওয়া দাওয়াও। ওই চত্বরে তো আবার সেই অপশনের কোন কমতি নেই। পুঁটিরাম, প্যারাডাইস, কফি হাউস, দিলখুশা - যা চাই তাই পাই। আর একটু এগোলে চাচার দোকান। কুসুম। উফ। একবার কি হয়েছে, আমার এক বান্ধবীর সাথে শীতকালে ঠিক করে গেলাম north calcutta food tripএ। প্রথমেই হামলে পড়লাম বিশ্ব বিখ্যাত গোলবাড়িতে। সেই যে কষা মাংস আর রুটির সাদ, জিভে লেগে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে ঘুরতে ঘুরতে তারপরে হেদুয়া চত্বরে গেলাম। নকুড়ের মিষ্টি চাইই চাই। বি এস সি থার্ড ইয়ারের প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষার সিট পড়েছিল আমার স্কটিশে। প্রথম দিন মা বাবা কে বলে দিয়েছিল যে মিষ্টি দিয়ে পাঠাতে ভুলে গেল, কাজের ফাঁকে টিফিন খাওয়ার জন্য। বাবা যেন ওখানে কোন দোকান থেকে কিনে দেয়। রাস্তায় পড়ল একটা অদ্ভুত রকমের দেখতে দোকান, ঠিক মনে হবে যেন একটা বসতবাড়ির একতলাটাকে দোকান বানিয়েছে। একটু মিষ্টি খেয়ে বাড়ি ফিরতে মা বাক্স দেখে বলে একই কাণ্ড, এ যে দেখি নকুড়ের সন্দেশ। সেই প্রথম আমি মায়ের কাছে নকুড়ের মহিমা শুনলাম। আমার কেন জানি উত্তরের ছোট্ট ছোট্ট মিষ্টির দোকানগুলির মিষ্টির স্বাদও খুব ভালো লাগে। রাজাবাজারে পড়াকালীন ভাইফোঁটার মিষ্টি আমহারস্ট স্ট্রীটের একটা দোকান থেকে কিনেছিলাম। আবার খাজা পাইনি বলে বউবাজারে নেমে জয়শ্রী থেকে কিনেছিলাম। সেখানে তো আবার পাশাপাশি জয়শ্রী, ভীম নাগ। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে ওকে।  গিরীশ পার্ক মেট্রো ষ্টেশনের কাছে একটা প্রায় পুঁচকে দোকান আছে, নিরঞ্জন আগার তার নাম। সেখানেই ডিমের ডেভিল নাকি নেতাজী পর্যন্ত খেতেন। আমার বান্ধবীর কল্যাণে সেই যাত্রায় সেটির স্বাদও পেয়েছি।

একবার কি হয়েছে, রাজাবাজারে পড়াকালীন কখনো বাস স্ট্রাইক জাতীয় কিছু একটা ছিল। নাকি কোথাও অবরোধ হবে হয়তো। শিয়ালদা দিয়ে ফিরতে গেলে ফেঁসে যাব বলে গুগুল ম্যাপের সাহায্যে ওইসব পুলিন দাস স্ট্রীট, আমহারস্ট স্ট্রীট, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রীট হয়ে কোনমতে এম জি রোড মেট্রো পৌঁছলাম। সে যেন এক্কেবারে বিশ্ব জয় করে ফেলেছি, এমন অবস্থা। সেই যে চিনলাম, তারপর থেকে কথায় কথায় শুরু হল আমার হাতিবাগান মার্কেটে হানা দেওয়া। গড়িয়াহাটে বাজার করে আরাম নেই, হাতিবাগানেও একই স্টক, কিন্তু অনেক শান্তিতে ঘুরে ফিরে বাজার করা যায়। অনেকটাই নিশ্চিন্ত নিরিবিলি গোছের। জগদ্ধাত্রী পুজো চলাকালীন একবার সায়েন্স কলেজের ঠিক পিছনের রাস্তাটা (নামটা এক্ষুণি খেয়াল পড়ছেনা) দিয়ে দুপুরবেলা যাচ্ছি আমরা তিন বান্ধবী। দেখলাম একটা বাড়িতে বড় করে পুজো হয়েছে। তখন বাড়ির লোকজন সবাই ভোগ খেতে বসেছেন। আমরা ঠাকুর নমস্কার করে সবে বেড়িয়ে যেতে যাচ্ছি, ওই মাসীমা জেঠিমারা কিছুতেই আমাদের ছাড়বেন না। রীতিমতো জোর করে আমাদের ভোগ খাইয়ে তবেই মুক্তি দিলেন। আহা, সে ভোগ যেন অমৃত। এইরকম আতিথেয়তা আমি আজ অবধি দক্ষিণে কখনো পাইনি।

উত্তরের রাস্তায় ঘাটে এত ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, মায়ের বাড়ি, প্রেসিডেন্সি, হেয়ার-হিন্দু, সিটি কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ, কলেজ স্কোয়ার, হেদুয়া - আকাশে বাতাসে ঐতিহ্য। প্রতি শ্বাসে কিছুটা পুরনো কলকাতাকে খুঁজে পাওয়া। 

Sunday, July 23, 2017

পরকীয়া

কাঁটায় কাঁটায় ছটা। প্রত্যেকদিনের মতই আজও কমপ্লেক্সের মাল্টি জিমে নিজের নাম এন্ট্রি করল দেয়া। দেয়ালা গুহ, বছর তিরিশেক বয়স। একটি বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চ পদস্থ কর্মী। ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রেস লেভেলও বাড়ছে। তার থেকে মুক্তি পেতে নিয়ম করে সকালে এক ঘন্টা জিম এবং তারপরে আধ ঘন্টা সুইমিং পুলে সময় কাটায় সে। গত দুই বছর ধরে এই একই অভ্যেস চলছে। ওর স্বামী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, এক সময় ওর সহপাঠী ছিল আই আই এম ব্যাঙ্গালোরে, বর্তমানে আরেকটি বহুজাতিকে সিনিয়র পোস্টে কর্মরত। ওর জীবনেও স্ট্রেস কিন্তু কম না কিছু, তবে ওর কোপিং আপ মেকানিজম আলাদা। ও সপ্তাহান্তে, অন্তত মাসে দুইবার রক ক্লাইমবিং করতে চলে যায়। আর সাথে আছে ফটোগ্রাফির নেশা। গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। দেয়া আবার এসবে নেই। ও এই শরীরচর্চা আর বই পড়ে, গান শুনে সময় কাটায়। নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা বজায় রেখেছে। গান গাওয়া না হলেও শোনাটা অবশ্যই প্রতিদিন চলে। বলতে গেলে, দুজনে প্রায় দুই মেরুর, তাও যে কিভাবে ওদের ভালোবাসা হয়েছিল, নিজেরাই অবাক হয়। হয়ত ওই "Opposites attract" কথাটি ওদের জন্য যথার্থ। ইদানীং অবশ্য সেই attractionটি অনেকটাই ভাটার পথে। দুজনের মধ্যে কথাবার্তাটুকু নেহাত কেজো ছাড়া প্রায় হয়েই ওঠেনা। তিরিশেই যেন মিড লাইফ ক্রাইসিস ওদের গ্রাস করেছে।
সারাদিনের জন্য তৈরি হতে, সমস্ত রকম বাধা বিপত্তির মোকাবিলা করতে দিনের শুরুটা খুব সুখকর হওয়াটা প্রয়োজন, দেয়া এটা খুব বিশ্বাস করে। তাই ওর একান্তই নিজের সময় বলতে এই জিম ও সুইমিঙের সময়টুকু ওর কাছে খুব মুল্যবান। কানে পছন্দের গান লাগিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে নিজের সাথে নিজের কথোপকথন, একটু ফেসবুক আর whatsapp। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।

পাঁচ মিনিট; ০.৫ কিঃমিঃ। কানে চলছে শানায়া টোয়েনের গান।
রাহুলের মেসেজ ঢুকল whatsappএ। 
- আমি বেরোচ্ছি আধ ঘন্টা পরে। দিল্লিতে একটা মিটিং আছে জরুরী। পরশু রাত্রে ফিরব।
ভুরুটা একটু কুঁচকল বটে দেয়ার।
- কবে ঠিক হল? আমায় আগে জানাওনি তো?
- কালই। যতক্ষণে ফিরেছি তুমি ততক্ষণে শুয়ে পড়েছিলে, তাই আর জাগাইনি।
- ঠিক আছে। 
মনে পড়ে গেল বছর চারেক আগের কথা, তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। রাহুলের অফিসের কাজের জন্য হঠাৎ করে বম্বে যেতে হত, দিনটা ছিল দেয়ার জন্মদিন। কত বুঝিয়ে শুনিয়ে দেয়াকে রাহুলকে পাঠাতে হয়েছিল, সে তো প্রায় চাকরীতে রেসিগনেশন দিতে পারলে বাঁচে এমন অবস্থা, কি না কেন বউয়ের জন্মদিনে সাথে থাকতে পারবেনা। তারপরে, ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে দেয়ার একটা অফিস ট্যুর পড়েছিল চেন্নাইতে। রাহুল নিজের বিজি শিডিউল থেকে সময় বের করে সাথে গিয়েছিল দেয়ার, যাতে একসাথে এনিভারসারিটা কাটাতে পারে। আর এখন চার বছরেই এরকম দাঁড়িয়েছে যে এয়ারপোর্ট যাওয়ার আধ ঘন্টা আগে একে অপরে জানছে ট্যুর প্ল্যান। নিজের অজান্তেই একটা হাল্কা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। 

দশ মিনিটঃ ১.১ কিঃ মিঃ
ওদের স্কুল গ্রুপের চ্যাটে নজর পড়তে দেখল, রত্নাবলী পোস্ট করেছে ওর বেরানোর ছবি। ও আর ওর বর ঘুরে এল অরুণাচল থেকে। ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় কতটা আনন্দ করেছে। ওরাও তো দুজনেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করে, অথচ একসাথে সময় কাটাতে পারে দিব্যি। মনে পড়ে গেল, শেষ বোধহয় দেড় বছর আগে একসাথে ঘুরতে গিয়েছিল, তাও মোটে সপ্তাহখানেকের ছুটি ম্যানেজ হয়েছিল। এদিকে ব্যাঙ্গালোরে পড়াকালীন ওই অত লেখাপড়ার চাপের মধ্যেও দুজনে একসাথে বা বন্ধুবান্ধব্দের পুরো বড় দল মিলে কত ঘুরে বেরিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সেই বন্ধুদের গ্রুপ এখনো বেরাতে যায়, বাদ পড়ে যায় শুধু দেয়া আর রাহুল। 

পনেরো মিনিটঃ ১.৮ কিঃ মিঃ
ঘাম মুছে ফেসবুকটা খুলল। হাবিজাবি পোস্টের ভিড়ে যখন হারিয়ে গিয়েছে, হঠাৎ একটা নোটিফিকেশন এল। " Byomkesh Bakshi wants to connect with you", ব্যোমকেশ বক্সী নামটা দেখে খুব কৌতূহল হল। ক্লিক করতে দেখল একটা মেসেজ।
- আমার সাথে পরকীয়া করবেন?






এরকম একটা অদ্ভুত মেসেজ দেখে খুবই অবাক হল দেয়া। এ আবার কিরকম উৎকট মেসেজ। কে এই পাব্লিক, করে কি, জানবার খুবই ইচ্ছে হল। দেখল মোটামুটি ফেক প্রোফাইল। ডিস্প্লে পিচারে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ছবি, ফ্রেন্ড লিস্টে গোটা দশেক ব্যাক্তি, প্রত্যেকের প্রোফাইলই এরকমই, ফেক, দেখেই বোঝা যায়। ছবি বলতে ব্যোমকেশের সিনেমার কিছু পোস্টার। পাত্তা দিয়ে কাজ নেই ঠিক করে মেসেজটি ডিলিট করল। হাতঘড়িতে সময় দেখে একবার ভাবল একদিন জিম বাদ দিয়ে টুক করে রাহুল কে সি-অফ করে আসবে কি না। পর মুহূর্তেই নিজেকে থামাল দেয়া। রাহুল কি আদৌ চায় যে ও যাক? আদৌ কি এক্সপেক্ট করে? করলে কি আগের মত ওর কাছে আবদার করত না ব্যাগ গুছিয়ে দেওয়ার জন্য?  সেইবারে রাহুল আর সৌরভ যখন এডিনবরা যায় একটা কনফারেন্সে পেপার প্রেজেন্ট করতে, দেয়ার ভিসা কোন কারণে আটকে যাওয়ায় ওর যাওয়াটা ক্যান্সেল হল, মনে আছে রাহুল কত চেষ্টা করেছিল ওর মুড ঠিক করতে। বেরনোর তিনদিন আগে দেয়াকে নিজের রুমে ডাকে।
- এই আমার লাগেজ প্যাক করে দাও।
- পারব না।
- প্লীজ দেয়া রানী।
- না পারব না বলেছি তো। যে যাচ্ছে তার লাগেজ সে নিজে প্যাক করবে।

-  ছায়া ঘনাইছে বনে বনে। গগনে গগনে ডাকে দেয়া।

রাহুলের হেঁড়ে গলায় এই গান শুনে আর দেয়া না হেসে পারেনি। প্রথম যখন দেয়া নিজের পরিচয় দিয়েছিল ক্লাসে, তখন দেয়া শব্দের মানে বোঝাতে উদাহরণ দিতে এই গানটি গেয়েছিল। রাহুল পরে স্বীকার করেছিল যে ওই মধুর কণ্ঠে গান শুনেই সে একেবারে ফ্ল্যাট হয়ে যায়। আর তাই মান অভিমান পর্বে এই গানটি খুব কাজে দিত। আজকাল আর গানটার কোনরকম প্রয়োজন পড়েনা। দুজনের মধ্যে কথাবার্তাই বা হয় কতটুকু। কথা হলে তো ঝগড়া বিবাদ মান অভিমানের প্রশ্ন উঠবে। এয়ারপোর্ট যাওয়ার ইচ্ছেটা কে স্থগিত রেখে নিজের নিত্যনৈমিত্তিক রুটিন মাফিক ট্রেডমিলের পর্ব চলতে থাকে। পঁচিশ মিনিটে ২.৬ কিঃ মিঃ দৌড়ে থামে।


দেয়া অফিস পৌঁছল নটা নাগাদ। লিফটে ঢুকতে যাচ্ছে, আবার মেসেঞ্জারে মেসেজ। সেই ব্যোমকেশ বক্সী।
- কি ম্যাডাম, পরকীয়াটা করুন না আমার সাথে।

কি অদ্ভুত রকমের নাছোড়বান্দা রে বাবা। কলেজ লাইফের কিছু বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেল। মেয়ে পটাতে তারা এরকম ছিনে জোঁকের মত লেপ্টে থাকত, কেউ কেউ ফল পেলেও বেশিরভাগই ফেল করত। এও নির্ঘাত কোন টিনেজার হবে, দেয়ার প্রোফাইল পিচার দেখে এই ধরণের অনেক মেসেজ পায় নিয়মিত, তবে এই প্রথম এত কম সময়ের ব্যাবধানে একই লোকের থেকে এরকম মেসেজ। যাক গে, প্রতিবারের মতই এবারেও দেয়া কোন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। সোমবার, অফিসে সাঙ্ঘাতিক কাজের চাপ থাকে। নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ থাকেনা, সেখানে এসব টুকরো টাকরা মেসেজে কি বা এসে যায়।

কাজ করতে করতে হঠাৎ খেয়াল পরে যে একটা বেজে গিয়েছে। ক্যাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ করতে যেতে যেতে ভাবল, এতক্ষনে নিশ্চয়ই রাহুল ল্যান্ড করে গিয়েছে। একবার কল করে দেখা যায় ভেবে ফোন বের করল। স্পীড ডায়ালে রাহুলের নম্বর প্রথমেই থাকে। অন্য প্রান্তে কল দুইবার রিং হয়ে কেটে গেল। তারপরে ছোট একটা মেসেজ এল, " Busy. Will call later. Love." পর মুহূর্তেই আবার মেসেঞ্জারে বক্সী বাবুর মেসেজ, " ম্যাডাম ভেবে দেখলেন?" সত্যি বাপু, এত টেনাসিটি? উত্তর না পেয়েও তিন বার এর মধ্যেই মেসেজ? ব্লক করবে নাকি? না থাক, দেখাই যাক না কত পেশেন্স, সাধারণত দুই একদিনের বেশী এরা চালায় না।






সন্ধ্যেবেলা দেয়া ফিরল বাড়ি, তখনো রাহুলের ফোন আসেনি। ফেরার পথে গাড়ি থেকে একবার কল করার চেষ্টা করেছিল বটে, একই উত্তর এল। ব্যাস্ত। নটা নাগাদ ডিনার করতে বসেছে যেই, রাহুলের ffফোন এল।

- হ্যাঁ শোনো, খুব ব্যাস্ত আছি। এখনও মিটিং চলছে। মাঝে একবার বেরিয়ে এসে ফোন করে নিলাম। সব ঠিক আছে তো?

- হুম, ফ্লাইট ঠিক ছিল?

- হ্যাঁ।

- আমি এক্সপেক্ট করেছিলাম তুমি নেমে জানাবে।

- খুব খুব ব্যাস্ত দেয়া, পরে কথা বলি?

- ঠিক আছে।

- গুড নাইট।

- খেয়ে নিয়ো ঠিক করে...

ততক্ষণে ওদিক থেকে কল কেটে গিয়েছে।



এরকম করে কি ভাবে চলে? এইটা কোন সম্পর্ক হচ্ছে? এ কিরকমের দাম্পত্য? ওরাই তো একমাত্র এম এন সি কাপল না, তাহলে... ফোন নিয়ে খুটুর খুটুর করতে করতে কৌতুহলবশত ব্যোমকেশ বক্সীর প্রোফাইলে চোখ চলে গেল। দেখল খানিক আগে একটা স্টেটাস দিয়েছে।

"ছায়া ঘনাইছে বনে বনে।

গগনে গগনে বাজে দেয়া।"

সাথে রয়েছে কোন এক শহরের স্কাইলাইন, আকাশে ঘন কালো মেঘ।

এত প্রিয় গানের এরকম বিতিকিচ্ছিরি বিক্রিতি দেখে খুব অপছন্দ হল। সটান মেসেজ করল।

- এই যে শুনুন, ওটা বাজে নয়, ডাকে হবে। দেয়া মানে জানেন? মেঘ।

- ও সরি সরি। মাই মিস্টেক, ক্ষমা করবেন। দেয়ার মানে জানি। অনেকদিন আগে এই গানটি শুনে মানে জেনেছিলাম।

- হুম।

- তা কি ভাবলেন? করবেন আমার সাথে পরকীয়া?

- আপনি আচ্ছা বিটকেল মানুষ তো? সকাল থেকে শুরু করেছেন এই পরকীয়া পরকীয়া।

- আহা বলুনই না। করবেন?

- কেন করব বলুন? আমার জীবনে কিসের অভাব?

- প্রেমের অভাব। Attentionএর অভাব।

- বাজে কথা বলবেন না। বড্ড বেশী জেনে রয়েছেন।

- ভুলে যাবেন না ম্যাডাম, আমার নাম ব্যোমকেশ বক্সী, আমি সব খবর রাখি।

- আপনার সাহস তো কম না, সমানে বাজে বকে চলেছেন।

- শুনুন, আমি জানি, আপনি খুব একলা ফীল করছেন। আকাশের মুখ এমনিই ভার হয়ে আছে। আর প্লীজ বাড়াবেন না। একটু নিজের নামের সার্থকতা রক্ষা করুন?


তিতি বিরক্ত হয়ে আর রিপ্লাই করলনা দেয়া। সারাদিনের ব্যাস্ততা আর রাহুলের থেকে একটু আগে এরকম ঠাণ্ডা ব্যবহার পেয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। সি ডি প্লেয়ারে বেজে চলেছে শ্রী রামকৃষ্ণ আরাত্রিক মন্ত্র, মন অশান্ত হলে এর চেয়ে ভালো টোটকা আর কিচ্ছু কাজ করেনা দেয়ার, সেই ছেলেবেলা থেকেই। ছোটবেলায় স্কুলে বোকা খেলে, বাড়িতে মা বাবার কাছে বকুনি খেলে ঠাম্মির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকত; ঠাম্মি চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে গেয়ে চলত "খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়।" শুনতে শুনতে কখন যে ছোট্ট দেয়া সব রাগ দুঃখও ভুলে ঘুমিয়ে পড়ত...


পরের দিন জিমে গিয়ে যথারীতি ট্রেডমিলে দৌড়তে দৌড়তে ফেসবুক চেক করতে করতে মেসেজ এল শ্রী বক্সীর।

- গুড মর্নিং ম্যাডাম। ঘুম ভালো হল?
কোন উত্তর দিল না দেয়া।
- আমার মুক্তি জানেন তো, আলোয় আলোয় না। আপনার হাসিতে। প্লীজ হাসুন, আপনাকে গম্ভীর মুখে দেখলে খুব মন কেমন করে।
- আমি হাসছি না গম্ভীর হয়ে আছি, কি করে জানলেন?
- আমি অন্তর্যামী। সব টের পেয়ে যাই।
- তাই বুঝি?
- হ্যাঁ, আবার কি? এই যে আমার মেসেজটি পড়তে পড়তে কিন্তু আপনার মুখে একটা হাল্কা হাসি এসছে, আমি পরিষ্কার দেখছি।
- আপনি কি আমায় স্টক করছেন নাকি?
- না না, স্টক করছিনা।
- সেই চেষ্টাও করবেন না। বুঝেছেন?
- বুঝলাম। কিন্তু ম্যাডাম... আমার প্রশ্নের উত্তরটা?
- না। করব না।
- আমার সাথে অন্তত বন্ধুত্ব করুন?
- ভেবে দেখব।

সারাদিন রাহুলের থেকে ফোন পায়নি। মাঝে একবার মেসেজ এসছিল, সব ঠিকঠাক জানাতে ও জানতে চেয়ে। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় ফেসবুক খোলেনি আর দেয়া আজ গোটা দিন। রাত্রে খেতে বসে অনলাইন হতে বক্সীর মেসেজ।

- দিন কেমন কাটল?

- আচ্ছা আমি তো আপনাকে চিনিও না, জানিও না। কেন বলুন তো আপনি এত মেসেজ করে যাচ্ছেন?

- আপনাকে তো বললাম বন্ধুত্ব করি।

- পারলাম না। এরকম অচেনা লোকজনের সাথে আমি বন্ধুত্ব করিনা।

- ম্যাডাম সকলেই প্রথমে অচেনা থাকে, তারপরেই কিনা মিতা হয়ে যায়। কিছু কিছু ভাগ্যবান রা আবার তার মধ্যে থেকে একে অপরের সাথে প্রাণ বেঁধে ফেলেন।

- আপনি অত্যন্ত প্রগল্ভ।

- কি করি? আমি যে কথার ব্যাপারী।

- আমি ঘুমোতে গেলাম।

- দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরবেন এবারে?

- সত্যি মশাই, আপনার ধৈর্য আছে বটে।

- ব্যোমকেশ বক্সী কি অত সহজে হাল ছাড়ে? ছাড়লে চলে নাকি?

- উফ।

- তা বলছি, চলুন না। একবার দেখা করি?

- দেখা করতে যাব কেন?

- প্লীজ? আপনি সত্যি করে বলুন তো, আমি কে, কি বৃত্তান্ত জানবার একটুও ইচ্ছে করছেনা?

- বয়ে গেছে। আমি তো জানি আপনি কে?

- কে বলুন?

- কে আবার। কোন ডেস্পারেট জবলেস টিনেজার।

- মোটেই না।

- বললেই হল? আমি সব জানি। হুহ।

- তাহলে কাল বিকেলে আপনার অফিসের কাছের সি সি ডি তে প্লীজ কফি খেতে আসুন? পাঁচটা নাগাদ। আপনার তো তখন কফি তেষ্টা পায়ই।

- বাব্বাহ! এও জানেন? নাহ, আপনাকে সামনা সামনি দেখতেই হচ্ছে। এত খবর জেনে গিয়েছেন আমার ব্যাপারে। আর কি কি জানেন, একটু সরেজমিনে দেখে আসতে হচ্ছে। ঠিক আছে, যাব।


সারা রাত ছটফট করে কাটল। এ কি করছে, এরকম ছেলেমানুষি করছে কেন ও? তাহলে কি সত্যিই ও এতটা একাকীত্বে ভুগছে যে এরকম যে কেউ দুদিন দুটো মিষ্টি করে কথা বলল আর ওমনি ও ছুটে যাবে দেখা করতে তার সাথে?


পরের দিন সুইমিং থেকে ফিরে এসে দেয়া দেখল রাহুল সবে ফিরেছে। এক ছুট্টে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল I missed you।
- আমিও।
- অফিস যাবে তো?
- হ্যাঁ। শোনো আজ ডিনারে যাবে একসাথে? কতদিন বেরোইনা।
- নিশ্চয়ই।


এই তো, আগের মতই যেন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওরা একসাথে খেতে যাবে। গল্প করবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।


বিকেল সাড়ে চারটে বাজতে মেসেঞ্জারে ব্যোমকেশ বক্সীর মেসেজ ঢুকল।
- আমি এই বেরোচ্ছি। একটা নীল ফুল স্লীভ শার্ট পরেছি, সি সি ডির সামনে দাঁড়াব। আপনি চলে আসুন।
- শুনুন, আমি পরকীয়া করব না। বন্ধুত্বও করতে চাই না। আমি আসব না। মাফ করবেন।
- প্লীজ, একবার আসুন। কথা দিচ্ছি, আর এরকম ডাকব না। আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিল।
- সরি, আমি যাব না।
- প্লীজ...


যাব না যাব না করেও কি যে হল, দেয়া ঠিক গেল। পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিটে পৌঁছল সি সি ডির সামনে। দেখল ওর দিকে পিঠ করে এক ভদ্রলোক একটা আকাশী নীল রঙের ফুল হাতা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে। হাতে তার একটি ব্রাউন পেপারের ব্যাগ। পিছন দিক থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে দেয়া বলে উঠল
- এসছি রাহুল। Oops, মিঃ বক্সী। এবার বল কি দেবে?
- সে দিচ্ছি। কিন্তু আগে বল তুমি কি করে বুঝলে?
- কি?
- যে আমিই ব্যোমকেশ?
- স্যার, মেয়েদের সিক্সথ সেন্সটি খুবই ভালো কাজ করে। ব্যোমকেশ বক্সী, কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ আওড়ানো; ছয় বছরের পরিচিতিটা নেহাত কম না তোমাকে, তোমার কথা বলার ভঙ্গি, তোমার আচরণের মানে বুঝবার।
- I am impressed!
- You ought too! I am, after all, the perfect Satyabati to your Byomkesh.
- এবারে গিফট টা নাও। অনেক খুঁজে খুঁজে রেড ফোরটের এই রেপ্লিকাটা পছন্দ করে আনলাম। প্রপোজের স্থানটিকে memorable করে রাখলাম। Happy anniversary sweetheart.
- ডিনারটা কোথায় হচ্ছে তাহলে? বেঞ্জারং চলবে?
- দৌড়বে।
- চল আগে কফিটা খেয়ে আসি। খুব তেষ্টা পেয়েছে।





রাত বারোটাঃ

- হ্যাপি বার্থডে মামণি।
-  থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ পুপ্লাই। এখনো জেগে আছিস?
- না না, আমি ঘুমোচ্ছিলাম। দেব খেলা দেখছে রাত জেগে, ওকে বলে রেখেছিলাম বারোটা বাজলে আমায় ওঠাতে।
- আচ্ছা। যা তুই এবারে ঘুমো।
- তুমিও শুয়ে পড়ো। গুড নাইট। কালকে ফোন করব পরে।
- হুম। আমি জানতাম তুই কল করবি, তাই জেগেই ছিলাম। এবারে শুতে যাব। গুড নাইট।





সকাল নটাঃ একটি এস এম এস।

মামণি আমি অফিসে পৌঁছে গিয়েছি। লিফটে আছি।




সকাল সাড়ে এগারোটাঃ
- পুপ্লাই তোর ড্রাইভার এই সবে গেল। এই এত এত কি পাঠিয়েছিস বল তো?
- কিচ্ছু এমন পাঠাইনি।
- বললেই হল? পায়েস, মাছের চপ, এই এত্ত এত্ত চকলেট, মিষ্টি...
- তা বার্থডে গার্লকে পাঠাব না তো কাকে পাঠাবো শুনি?
- অফিস কাছাড়ি ছেড়ে কখন এসব করলি? এত বাজারহাট?
- দেব করেছে, তুমি তো জানোই, আমার মাছের বাজারে গেলেই কিরকম একটা অস্বস্তি হয়।
- দেবের মত ভালো ছেলে দুটো হয়না।
- লে হালুয়া! আর আমি?
- তুই তো আমার সোনা মাম্মা।নইলে এত কিছুর পরেও যে তুই আমার সাথে যোগাযোগ রাখবি, এ ভাবা যায়? জানিস আমি রোজ ঠাকুরের কাছে ডাকি, তুই যেন সামনের জন্মে আমার কোল আলো করে আসিস।
- উফ মামণি,  ডিভোর্সটা আমার অনির সাথে হয়েছে, তোমার সাথে কিন্তু না। আর হ্যাঁ ওই কোল আলো টালো কি সব বলছিলে? সামনের জন্ম টন্ম না। সন্ধ্যেবেলাই আসছি। আমাদের আজ মাদার-ডটার ডিনার প্ল্যান। সাজুগুজু করে থাকবে, তোমায় পিক-আপ করে নেব। বুঝলে?


Friday, July 21, 2017

পিতা পুত্রী উবাচ ৩

বেশ কিছু বছর আগের কথা। সেই বছর ভারত পাকিস্তান বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। ছোট্ট মেয়েটা খুব দাঁতের যন্ত্রণায় ভুগছে। অথচ ডেন্টিস্টের কাছে দ্বিতীয় দিন আর কিছুতেই যেতে চাইছেনা, যদি দাঁত তুলে দেয়।


- পুচু বাবা ওরকম করে না। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তো।
- না। দাঁত তুলে দেবে। আমি যাব না। ব্যাথা লাগবে।
- আরে না না। কে বলেছে দাঁত তুলবে?
- আমি জানি।
- না রে বাবা। দাঁত তুলবে না। একটু জাস্ট নাড়াচাড়া করবে।
- ব্যাথা লাগবে।
- উহু। আগে একটু ক্রিম লাগাবে মাড়িতে। অবশ করে দেবে জায়গাটা।
- উ।
- তারপরে কুট কুট করে একটু ফোটাবে, একটুও লাগবেই না।
- পিঁপড়ে কামড়ানোর মতও না?
- একটুও লাগবে না। বুঝবিই না।
- উ।
- তারপর একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখবে। ব্যাস।
- শেষ?
- একদম। ব্যাথা ভ্যানিশ!


সত্যি সত্যিই ডাক্তার এই জিনিসগুলিই করেছিল। শুধু শেষের নাড়াচাড়াতে affected দাঁতটি তুলে দেয়। ছোট্ট মেয়েটার দাঁত তলার ভয় উপেক্ষা করে ব্যাথা কমে যায়।

অনেক বছর পরে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে খুব মিস করছিল বাবার এই গল্প!

পিতা পুত্রী উবাচ ২

#পিতা_পুত্রী_উবাচ

২।

- ফোন কোনটা কিনবি, ঠিক করলি?
- হুম। স্যামসাং।
- ব্যাটারি ট্যাটারি দেখে কিনিস। আবার সেই স্যামসাং?
- এটা ভালো। এই দামে আর অল্টারনেটিভ বলতে ওই চাইনিজ গুলো।
- না না ওসব নিতে হবেনা। তাহলে স্যামসাং ভালো। নিয়ে নে।

(পরের দিন)
- অর্ডার করে দিই?
- হ্যাঁ দাও।

(তারপরের দিন)
- ধুর ভাল্লাগছেনা।
- কেন আবার কি হল?
- পুরনো ফোনটা আর ব্যাবহার হবে না...
- কেন? ওটাও থাকবে। ওতে টম খেলিস।
- রজনীও তাই বলছিল।
- দেখ। কি সুন্দর চিন্তা করে।

(যেদিন ফোন এলো)

- নতুন ফোন থেকে টাইপ করলাম মেসেজ।
- ও ওই জন্যই এত পরিষ্কার এলো লেখাটা :P

(সেদিন সন্ধ্যেবেলা, কাঁদো কাঁদো গলায়)

- কিরকম একটা লাগছে। মনে হচ্ছে যেন পুরনো ফোনটাকে ডাম্প করলাম।
- কেন, ও তো থাকলই।
- না use তো করছি না আর। কিরকম মনে হচ্ছে ওর সাথে treachery করলাম। রস নিংড়ে ফেলে দিলাম ছিবড়েটা।
- সব সময় মাথায় রাখো যে ওটা মায়ের জন্য জমিয়ে রাখছ*। ব্যাস! সেই ভেবে যত্নে রেখো।
- এটা ভালো বললে।

#এলোমেলো

পুনশ্চঃ সেই ফোনটি মনে হচ্ছে কোমাচ্ছন্ন।

* আমার মাতৃদেবী স্মার্টফোন ব্যবহার করতেই চান না এক্কেবারে। নিতান্তই একটু অয়াটসআপ আর টকিং টম খেলেন। তাই আমার বাতিল ফোনগুলি মায়ের কপালেই জোটে। (না না, মা কে বেটার ফোনও দিই।)



পিতা_পুত্রী_উবাচ




১।

- বাবা ভীষণ depressed লাগছে।
- কেন?
- জানি না।
- weather কেমন?
- মেঘলা।
- কি খেয়েছ দুপুরে?
- ভাত ডাল আর ঘ্যাঁট মার্কা কিছু।
- ওই জন্যই। এরকম weatherএ মাংস খেতে হয়।
- ধুর।
- আরে হ্যাঁ। রাত্রে চিকেন খেয়ে নিয়ো। সব মুড ভালো হয়ে যাবে।


পুনশ্চঃ সত্যিই তাই হয়েছে।



Wednesday, July 19, 2017

অন্তর জ্বলে রে জ্বলে ২

- মিঠি তুমি ড্রাইভ করবে তো?
- আর নইলে কে করবে? বসে বসে তো একের পর এক গ্লাস whiskey সাঁটালে।
- হুম, অনেকদিন পরে। বেশ ভালো মুড এসছিল।
- আমিও খুব এঞ্জয় করেছি।
- yeah, it was a good party.
- চল চল, অনেক বেজে গিয়েছে। মালতী দি তো আবার সেই ঠিক ছটার সময় এসে বেল বাজাবে। By the way, কাল কিন্তু তোমার turn দরজা খোলার।
- হুম।


***************************************************************************

মিঠি আর রাহুল বাড়ি পৌঁছেছে খানিকক্ষণ হল। রাহুল বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে ফোন নিয়ে কিছু একটা করে চলেছে অনেকক্ষণ ধরে। মিঠি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে করছে তো রূপচর্চা। তবে চোখ কিন্তু আয়নাতেই, তখন থেকে রাহুলের ওপর নজর।

- এই তখন থেকে কি করে চলেছ বলো তো?
- এমনি একটু ফেসবুক করছি।
- কার সাথে চ্যাট করছ?
- ও অনেকের সাথেই। কেন?
- কে কে বল তো?
- উফ মিঠি, খুব বোকা বোকা হচ্ছে কিন্তু। এরকম করে জেরা করে নাকি কেউ? তাও আবার এত পুরনো বর কে?
- শোনো ওই পুরনো বরের হাবভাব যদি সন্দেহজনক ঠেকে, অবশ্যই জেরা করব। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
- ও হরি। এই একই কাজ যদি আমি করতাম, তাহলে তো তোমরা একেবারে সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলতে। মেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ব্লা ব্লা ব্লা।
- সে করতামই তো। আমাদের রাইট আছে।
- কি অদ্ভুত! আর আমাদের কেন রাইট থাকবে না?
- উফ রাহুল। তর্ক বন্ধ কর তো। আগে বল কার সাথে চ্যাট করছ?
- ওই তো আশিস, পুলক আর রাজর্ষি।
- আর?
- আর কেউ না।
- আবার মিথ্যে?
- আহা মিথ্যে বলছি না ডার্লিং।
- সুলগ্নার সাথে কথা বলছ না?


- কি হল? বল?
- আরে না বাবা। এসে দেখে যাও বিশ্বাস না হলে।
- আমি ওরকম লেভেলে নামিনি এখনো রাহুল।
- তাহলে এতক্ষণ জেরা করে গেলে যে?
- শোনো এই বয়সটা ঠিক ভালো না। চোখে চোখে রাখতে হয় বরদের।
- উফ। You and your silly সানন্দা।
- কিচ্ছু ভুল লেখেনা। দেখলামই তো আজ পার্টিতে।
- কি দেখলে? ল্যা!
- সারাক্ষণ একেবারে সুলগ্নার পাশে চিপটে চিপটে ছিলে না?
- ওমা, সুলগ্না একা ছিল নাকি। ওর বরও তো ছিল।
- তারপরে ডিনারের সময়ে সেজলের সাথে ওই ন্যাকা ন্যাকা কেম ছো!
- সেজল CRYতে আছে। আমাদের CSRএর ব্যাপারে কথা এগোচ্ছিলাম। অফিসে গিয়ে শান্তনুকে বলে দেবো কন্ট্যাক্ট মেন্টেন করতে।
- আর কৌশাণি?
- well...you know না...
- কি well?
- আহা তার মানে গোটা পার্টিটা তুমি শুধু আমার ওপর spy করেই কাটালে মিঠি?
- spy কেন করতে যাব। just নজরে আসছিল।
- এ বাবা, রজত, স্যামুয়েল... এদের পাত্তাই দিলে না। আমি ভাবলাম...
- idiot!!!
- এবার পেলে তো?
- কি?
- Dose of your own medicine?
- আর কৌশাণি?


Tuesday, July 18, 2017

কলকল

স্নান করে সবে বেরিয়েছি, মাথা থেকে এখনো টুপটুপ করে জল ঝরছে। দেখি আমার ছোট্ট বোনঝি আরিয়া, বছর তিনেক বয়স, ওর ঘর থেকে ওর প্লাস্টিকের চেয়ারটা টেনে টেনে আনছে আমার ঘরে।
- আরিয়া কি করছ সোনা? চেয়ারটা আনছ কেন?
- মানি আমি খেলব তোমার সাথে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। চেয়ারটা রাখো। আমি এখুনি আসছি।

 চুলটা আঁচড়াতে যাব,ওমনি ভ্যা ভ্যা করে আরিয়ার কান্না।

- কি হল মাম্মা?
- দেখো না মানি, আমার চেয়ারের পায়ে ধাক্কা খেয়ে একটা ant চোট পেয়েছে। ও হাঁটতে পারছেনা।
- কই দেখি?
- এই তো।

এগিয়ে গিয়ে দেখি, সত্যি একটা পিঁপড়ে আধমরা হয়ে রয়েছে। আরিয়া অনেক যত্নে ওটাকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলল
- মানি চল ওকে ডক্টর আন্টির কাছে নিয়ে যাই।

আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিক উল্টো দিকেই থাকেন এক ডাক্তার। ওদের বাড়িতে আরিয়ার অবাধ যাতায়াত। ছুট্টে গিয়ে ওর ডাক্তার আন্টির কাছে আরিয়া বলল এই পেশেন্টের কথা। ইতিমধ্যে চোখে চোখে "আন্টি" আর মানির কথা হয়ে গিয়েছে।

- ঠিক আছে আরিয়া, আমি ওকে ওষুধ দিচ্ছি। ও ভালো হয়ে যাবে।
- আন্টি তুমি কিন্তু ওকে ইনজেকশন দিয়োনা, ওর লাগবে।
- ঠিক আছে। আমি এমনি ওষুধ দেবো। তুমি এখন যাও। আমি ওকে ওষুধ দিই।


বিকেলবেলা আবার আরিয়া আমায় টেনে নিয়ে গেল উল্টো দিকের ফ্ল্যাটে।
- আন্টি আমার ফ্রেন্ড কোথায়?
- আরিয়া ও তো ভালো হয়ে গিয়েছে। ওর মা এসে ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। আর তোমায় খুব করে থ্যাঙ্ক ইউ বলেছে। আর এইটা তোমার জন্য রেখে গেছে।
 হাতে একটা এক্লেয়ারস নিয়ে আরিয়ার আবার প্রশ্ন।
- ও তো ছোট, ও এত হেভি জিনিস কি করে নিলো?
- আরিয়া পিঁপড়েরা নিজেদের চেয়েও দশগুণ ওজন ক্যারি করতে পারে।
-ও wow!

Sunday, July 16, 2017

বাজে করুণ সুরে

- রাহুল আমার মনে হয় আমাদের ব্রেকাপ করে নেওয়াই ভাল। এইভাবে আর চলছেনা।
- ওরকম বললে কি করে হয় অপা?
- দেখো লাস্ট পাঁচ মাস ধরে আমরা প্রতিদিন ঝগড়া করেছি। আমাদের মধ্যে আর সেই আগের বোঝাপড়াটাই নেই।
- দেখো সব কাপলের মধ্যেই এরকম একটু আধটু লেগেই থাকে, তা বলে কি আমরা হাল ছাড়লে হবে?
- আমরা চেষ্টা করেছি তো বল, করিনি?
- দশ বছরের সম্পর্ক এরকম পাঁচ মাসের ঝগড়ায় কাটেনা। আমার মনে হয় আমরা যদি আরেকটু এফোরট দিই, তাহলে ঠিক সমস্ত প্রব্লেম সরটেড হবে।
- লং ডিস্টেন্সে হয় না। সারাক্ষণ আমরা খিটিমিটি করে চলেছি।
- অপা আমার মনে হচ্ছে অন্য কিছু ব্যাপার। ঠিক করে বল তো, ব্যাপারটা কি?
- কিছু না, রাহুল।
- অপা...
- বলছি তো কিছু না।
- শোনো এতদিন ধরে চিনি, গলার স্বরেই বুঝে যাই কখন কি চলছে তোমার মনে। প্লীজ আমায় বলো।
- There's someone else in my life now
- কে? অভীক তো?
- কি করে জানলে?
- বললাম তো, আমি সব টের পেয়ে যাই।
- হুম। শোনো, আমার মনে, দুজনের ভালোর জন্যই আমাদের আর যোগাযোগটা বন্ধ করতে হবে। নইলে none of us can move on in life।
- দেখো অপা আমি কোনোদিনও তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। আজও তার ব্যাতিক্রম হবেনা। কাজেই তুমি যা বলবে। শুধু আরেকবার বলব। ভেবে দেখো।
- আমি ঠিক করে ফেলেছি রাহুল। ভালো থেকো।
- বেশ, তুমিও।

*****************************************************************************


- এবারে বল, কি হল যে এরকম হুঠ করে আমায় ডেকে আনলি?
- জানিস আজ অপা ফোন করেছিল।
- এই না তোরা ব্রেকাপ করে নিয়েছিলি আর কোন যোগাযোগ রাখার কথা ছিল না?
- তাইই আছে। ও বিয়ে করছে। ওর কলিগ অভীককে। বিয়ের নেমন্তন্ন করতে কল করেছিল।
- তুই কি বললি?
- বারবার করে বলল যেতে।
- তুই নিশ্চয়ই গলে জল হয়ে গেলি?
- বলেছি চেষ্টা করব।
- রাহুল আমি তোকে খুন করব যদি তুই যাস।
- কেন? প্রাক্তন প্রাক্তনের জায়গায়, মটন বিরিয়ানি বিরিয়ানির জায়গায়। জানিস আমার পছন্দের মেনু করেছে।
- তুই বাজে কথা বলা বন্ধ করবি গাধা কোথাকার?
- আরে সাথে চিকেন রেজালা, ভেটকির তন্দুরী, রাবড়ি আর মালাই চমচমও আছে।
- শালা, নাটক হচ্ছে? তুই গেলে না দেখ তোর ঠ্যাঙ খোঁড়া না করি তো আমার নাম পাল্টে ফেলব।
- কি নাম রাখবি, ঠিক করে ফেল। কারণ আমি যাবই!
- রাহুল!
- হরিদাস পাল কেমন হবে?
- তুই শুধরোবি না। নে দু পেগ গলায় ঢাল।






********************************************************************************




- রাহুল কি করছিস?
- কি আবার করব? কি হয়েছে বল তো? উইকডেতে ভর সন্ধ্যেবেলা কল? সব ঠিকঠাক?
- না, আসলে আজ অপার বিয়ের তারিখ কিনা, তাই।
- ও তাই খোঁজ নিচ্ছিলি যে আমি কলকাতা গেছি না এখানে পড়ে আছি?
- উফ। তোর মন মেজাজ কেমন আছে, সেটা জানতে কল করলাম।
- আমি হেব্বি আছি বস। একটা ডেট আছে, সেখানে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম ভাই।
- সত্যি?
- হ্যাঁ রে।
- কার সাথে?
- অফিস কলিগ, রিচা।
- বাওয়া! যাও যাও! এনজয় গুরু! এক্স এখনো মিসেস হল না আর মিস্টার চলল ডেটে! হেব্বি ব্যাপার। প্রাউড অফ ইউ ভাই।
- হ্যাঁরে কেউ ফেসবুকে কোন ছবি দিল টিল?
- ডেটে যাচ্ছ, যাও না। আবার ছবি দিয়ে কি হবে গুরু?
- আসলে অপাকে কনে সাজে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল কিনা। মনে মনে কতবার যে কল্পনা করেছিলাম ওকে, লাল বেনারসী, গোল্ডেন ভেল...
- ব্যাটা তুই সত্যি ডেটে যাচ্ছিস তো?
- হ্যাঁ, যাচ্ছি।
- তো যা। আর হ্যাঁ, ফেসবুকে কোন আপডেট নেই।
- ঠিক আছে। পরে কথা হবে। রাখলাম।


অন্ধকার ঘরে হাতে  whiskeyর গ্লাস্টা নিয়ে বসল রাহুল। সি ডি প্লেয়ারে এই নিয়ে বোধহয় ১৫ নম্বর বার বাজা শুরু হল " তুঝে ইয়াদ না মেরি আয়ি"।




              *************************************************************

অন্তর জ্বলে রে জ্বলে



অফিস থেকে ফেরার পথে লেটার বক্সটা চেক করাটা অনেকদিনের অভ্যেস মিঠির। বছর পাঁচেক আগে অবধি অল্প বিস্তর চিঠি আসত, নিয়মিত না হলেও, অন্তত নিউ ইয়ার, ক্রিসমাসে, বিজয়ায় আত্মীয় স্বজনদের থেকে আসত। তার কারণ তখন অবশ্যই ওর শ্বশুর শাশুড়ি; এখন আর তাঁরা এখানে থাকেন না, তাই চিঠিপত্রের হিড়িক অনেক কম। আজকাল আবার চিঠি বলতে শুধুই ওই ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট, ইলেক্ট্রিসিটির বিল আর কিছু বিজ্ঞাপনের কাগজ। বিল ও স্টেটমেন্ট অনলাইনে দেখে নেওয়া হয় বলে লেটার বক্সের কোন দরকারই নেই, তবুও মিঠি নিজের অভ্যেস থেকে সরতে পারে না। আর এই নিয়ে রোজ ওর পিছনে লাগে রাহুল। আজ লেটার বক্স হাতড়ে যখন একটা ঝলমলে নীল রঙের খাম পেল, আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় আর কি! ওর এতদিনের অভ্যেসের ফল মিলল তাহলে।

কোনমতে ঘরে ঢুকেই ঝটপট খামটা খুলে ফেলল মিঠি। কোনোদিনও ওর খুব একটা সূক্ষ্ম কারুকার্যে মনোযোগ ছিল না, ক্রাফটে তো একবার ফেল গ্রেড পেয়েছিল! তাই বেশ বিচ্ছিরি ভাবেই খামখানি ছিঁড়ে ভিতর থেকে চিঠিখানা বের করল। খামের কন্টেন্ট দেখে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার জোগাড়। মাধ্যমিক ২০০৪ ব্যাচের প্রথম রিউনিয়নের নিমন্ত্রণ। ফেসবুকে ওদের একটা গ্রুপ আছে, সেখানে কিছুদিন ধরে এই নিয়ে নানান প্ল্যান চলছিল, খুব বেশী তাতে না থাকলেও খবর ঠিক রাখত মিঠি। রাহুল ফিরলে বলতেই হবে। এত আনন্দ হচ্ছে ভাবতে, কি করবে বুঝেই উঠছেনা। কতদিন পরে সব বন্ধু বান্ধবীদের সাথে দেখা হবে। আহা, সেই ছোট্টবেলাকার বন্ধুত্ব, কাজের চাপে একেক জন একেক জায়গায় থাকে বলে অনেকের সাথেই বহু বছর দেখা নেই। কিন্তু এই রিউনিয়নে অন্তত যদি ৫০ জন ও আসে, তাদের সাথে তো আবার সাক্ষাতটা ঝালাই হয়ে যাবে। টুক করে ওইয়াটসাপে ওদের এক বন্ধু বান্ধবীর গ্রুপে মেসেজ ছেড়ে দিল।

রাত্রে খাবার টেবিলে বসে রাহুল তো অবাক যখন পাতে দেখে রোজের কেনা রুটি আর চিকেন কারীর জায়গায় একেবারে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, ঘি, মুগের ডাল, আলু ভাজা আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি।
- কি ব্যাপার? আজ এত এলাহি খাবার?
- এমনিই, ইচ্ছে হল। রেঁধে নিলাম।
- বাব্বা! সপ্তাহের মাঝখানে এরকম ইচ্ছে। লটারী টটারী জিতলে নাকি গো?
- বলতে পারো!
- রিয়েলি?
- হুম, তুমিও শুনলে বিশাল খুশী হবে।
- সাস্পেন্স থামাও প্লীজ মিঠি। কি হয়েছে সেটা বল।
- আজ লেটার বক্স থেকে একটা দারুন জিনিস পেয়েছি! তুমি চ্যালেঞ্জ হেরেছ, আমায় একটা সিল্ক এনে দেবে কাল। হ্যাঁ, যেটা বলার, চিঠি এসছে স্কুলের থেকে। আমাদের ব্যাচ রিউনিয়ন। আগামী শনিবার।
- তুমি যাবে নাকি?
- অফ কোর্স! তুমিও যাবে!!! স্পাউস নিয়ে যেতে বলেছে। ককটেল পার্টি।
- প্লীজ, তোমার ব্যাচের রিউনিয়নে গিয়ে আমি কি করব? তুমি যাও!
- প্লীজ রাহুল, চলো না!
- আহা আমি তো ওখানে কাউকেই প্রায় চিনব না, গিয়ে সাঙ্ঘাতিক বোরড হব।
- শোনো আমিও তোমার অফিস পার্টিগুলোতে কিন্তু যাই, কাউকে তেমন না চিনলেও দাঁত ঠিক কেলিয়ে দিই। তুমিও সেরকম করো।
- মিঠি প্লীজ, নেক্সট উইকেন্ডে আমার অন্য প্ল্যান। স্পোর্টস বারে গিয়ে ম্যাচ দেখার প্ল্যান আছে আশিসদের সাথে। বিসাইডস সেই পারুর বিয়েতে গিয়ে কি বোরিং কেটেছিল। বাপ রে। তুমি নিজের বন্ধুদের নিয়ে ছিলে আর আমায় ভিড়িয়ে দিয়েছিলে ওই কার একটা বরের সাথে। কি বোর পাব্লিক ছিল মাই গড!
- সত্যিই রাহুল। তোমায় আর কি বলব বল। একবার যখন ঠিক করে ফেলেছ, আর কি বলি বল? আমি এত করে বললাম, তাও আসবে না। সবাই বর বৌ নিয়ে আসবে।
- প্লীজ।
- কিন্তু আমি যাব, এই বলে দিলাম।
- হ্যাঁ যাও। আনন্দ করো। আমি বারণ করছি না তো!
- আর এমন কিছু দুরেও না, গাড়িটা আমি নিয়ে বেরবো।
- হুম ঠিক আছে।
- উফ, ভাবতেই কি আনন্দ হচ্ছে। ফাইনালি ফেসবুক গ্রুপ্টা একটা কাজের কাজ করল!
- হুম।
- কি তখন থেকে হুম হুম করে যাচ্ছ?
- হুম।
- ধ্যাত! কোন কথাই কানে যাচ্ছেনা। দেখো বসে অর্ণব গোস্বামীর চেঁচামিচি। হুহ। আমি পারুকে কল করি। প্ল্যান বানাই।
- হুম।

- হ্যালো পারু?
-
- হ্যাঁ রে, আমি আজই চিঠিটা পেলাম।
-
- সত্যি রে, কি এক্সাইটেড লাগছে। কে কে আসছে জানিস?
-
- শেলী আর মণীষা? ওরা কোথায়?
-
- ও। শেলীর খবর নিশ্চয়ই অনিরুদ্ধ জানবে? হিহি!
-
- সেই সেই, অনির বিয়ে হয়ে গেল তো। ও কি আর খোঁজ রাখবে!
-
- ছেলেরা কে কে আসছে?
-
- নির্মাল্য মানে যে ওই ক্লাস এইটে তোকে প্রেমপত্র দিয়েছিল?
-
- এখনো তোর সাথে যোগাযোগ আছে নাকি? রণদা জানে?
-
-রাহুল যদি জানত যে আমার সব এডমায়রাররা আসছে, নির্ঘাত অস্থির হয়ে যাবে!!!!
-
- না রে, ও আসবে না। ওর বন্ধুদের সাথে নাকি প্ল্যান করা আছে।
-
- আরে একদিক দিয়ে ভালোই হল। ও থাকলে মন খুলে ফ্লারট করতে পারতাম না! হি হি!
-
- ওমা। রজত বেচারাটা নেহাত সাহস জুটিয়ে আমায় লাভ লেটারটা দিতে পারল না। হেমার কাছে পরে শুনে মনে আছে হেসে কুটিপাটি আমরা! ও যদি সেদিন আমায় প্রোপোজ করত, আমি ভেবে দেখতাম ঠিক।
-
- তা বলে কি হবে। না হয় আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওর তো আর হয়নি। আর হলেই বা। জানিস এখনো ওর প্রোফাইল স্টক করি ফেসবুকে, হেবি স্মার্ট দেখতে হয়েছে। হিল্লি দিল্লি করে বেড়ায়। এক দুটো ডান্স না হয় করব ওর সাথে।
-
- ধুর, রাহুল পাশেই আছে। কিন্তু এত জোরে টিভি দেখছে, কিচ্ছু শুনতেই পাচ্ছেনা!!
-
- ওরা যখন কলিগদের সুন্দরী বৌদের সাথে ঢং করে বেড়াবে? সে বেলা? আমরা একটু পুরনো ক্লাসমেটদের সাথে না হয় হাল্কা মস্করা হাসি ঠাট্টা করব। তাতেই ওমনি দোষ?
-
- এই স্যামুয়েল আসবে রে?
-
- আরে স্যামুয়েল রে। ওই যে সি সেকশনের টিমে ক্রিকেট খেলত। ব্রাউন চুল, নীল চোখ।
-
- হ্যাঁ হ্যাঁ। সেই ছেলেটা। ক্লাস সেভেনে আমার পাশে বসেছিল পিকনিক বাসে বলে টেনের দিদিগুলোর কি হিংসা!
-
- মজা হবে কিন্তু। ওই বয়সে যাদের থেকে চোখ ফেরাতে পারতাম না, তাদের আবার দেখব।
-
-যাক গে, সেসব ছাড়। বলছি কাল একবার সন্ধ্যেবেলা কোয়েস্টে যাবি? ড্রেস আর ম্যাচিং জুতো কিনতাম।
-
- অবশ্যই! যোগা করে শরীরটা কে মেন্টেন করেছি এত সুন্দর, একটু ফ্ল্যাটারিং ড্রেস না পড়লে হয় নাকি? হেব্বি সেজেগুজে যাব দেখিস।
-
- মনে আছে স্কুলে কিরকম কালার ড্রেস হলে আমরা সব প্ল্যান করে কালার ম্যাচ করে সাজতাম? ঠিক সেই রকম করব। দাঁড়া, আমি কাজরীকে মেসেজ করি। নিয়ে কাল বা পরশু চল একসাথে শপিঙে যাই।
-
- চল, তাহলে দেখা হচ্ছে শিগগিরি। বাই।

- বাব্বাহ, হল তোমার ফোন পর্ব!
- হুম।
- কত বকে যেতে পারো।
- তুমি বুঝি কান পেতে শুনছিলে?
- আমি শুনতে যাব কেন? জাস্ট অনেকক্ষণ ধরে কানে শব্দ আসছিল তো। তাই।
- বুঝলাম।

***********************************************************************

সারা সপ্তাহ মিঠি আর ওর বান্ধবীর প্রচুর দোকান বাজার করল। পছন্দসই ড্রেস, ম্যাচিং জুতো, ব্যাগ আর গয়না সবই হল। শনিবার সকাল থেকেই একটা উত্তেজনা। অবশেষে ডি ডে এসেছে। পার্লারের মেয়েটা এসে চুল সেট করে দিয়ে বেরিয়ে যেতে মিঠি নিজের ঘরে ঢুকতে যাচ্ছে ড্রেস চেঞ্জ করতে, এমন সময় রাহুলের হাঁকডাক।

- মিঠি আমার সুটটা কোথায়?
- কোন সুট?
- আরে যেটা জন্মদিনে তুমি গিফট করলে।
- ওটা তোমার আলমারিতেই আছে। একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখো।
- পাচ্ছি না। প্লীজ একটু খুঁজে দিয়ে যাও।
- উফ আমার দেরী হয়ে যাবে। এখন ওটা দিয়ে কি করবে?
- ওটাই পরব তো।
- বল কি? স্পোর্টস বারে সুটেড বুটেড হয়ে যাবে??
- ওখানে যাচ্ছিনা তো।
- তাহলে কোথায় যাবে?
- তোমার সাথে, রিউনিয়নে।
- এ?? আর তোমার প্ল্যান?
- ক্যান্সেল করে দিয়েছি।
- কেন? কি কান্ড!
- ভেবে দেখলাম। এই বয়েসে বন্ধুরা গেলেও নতুন বন্ধু জুটে যাবে। কিন্তু যা চেহারা হয়েছে, বৌ গেলে আর নতুন করে মেয়ে পটানো মুস্কিল হয়ে যাবে। যে পার্টিতে বউয়ের এত এডমায়রার ঘুর ঘুর করবে, সেখানে না যাওয়াটা ভারী বোকামো!
- যাক! পারুর সাথে ফোন কলটা তাহলে কাজে দিল!!!

********************************************************