ভিড় বাস, জ্যাম, ঘাম, ঠেলাঠেলি কাটিয়ে মানিকতলা বাজারে নেমেছি অফিস
ফেরতা। শার্টের বুকপকেটে গিন্নীর যত্ন করে হাতে লেখা ফর্দ। পরশু আমাদের
ছেলেটার পাঁচ বছরের জন্মদিন। ঘটা করে পালন হবে। তাই লিস্টিও লম্বা। মাছ,
মাংস, হরেক রকম সব্জি। মাছওয়ালার কাছে দাঁড়িয়ে কানকো টিপে টিপে টাটকা কাতলা
বেছে, দর করে বেশ একটা যুদ্ধজয়ের ভাব মনে। কী করব। মধ্যবিত্ত সাধারণ
মানুষ। মাসের শেষ। ২১০টাকা কিলোটা ১৯০এ পেয়েই তাই মন বেজায় প্রসন্ন। হঠাৎ
পাশ থেকে কানে এলো এক রিনরিনে কণ্ঠস্বর:
"দাদা, ইলিশ কত করে?"
ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা।
চোখ তুলে তাকালাম।
একটা সাধারণ লাল কালো সবুজ জংলা ছাপ শাড়ি। তেল চুপচুপে চুল টেনে একটা
খোঁপায় বাঁধা। দুই ভুরুর মাঝখানে, একটু উঁচু করে বড় সিঁদুরের টিপ। চোখে সেই
হাই পাওয়ারের চশমা। মোটা কালো ফ্রেম। সরু কব্জি আলো করে আছে শাঁখা আর
দুগাছা চুরি। ডান হাতটা ধরে পাশে দাঁড়িয়ে বছর ছয়েকের একটা ফুটফুটে মেয়ে।
ঠিক যেমন সাজে কল্পনা করতাম ওকে। আজ থেকে বছর দশেক আগে। কলেজ ফেরত। এই
মানিকতলা বাস স্ট্যান্ডেই। ও ফিরত ভিকটোরিয়া কলেজ থেকে। আমি আসতাম
সুরেন্দ্রনাথ থেকে।
এখনও সেই একই রকম মায়ামাখা মুখ। সেই পাগলকরা দুই
চোখ। খানিক চেয়ে রইলাম ওর দিকে। কে জানে কতক্ষণ। এক মিনিট? দু মিনিট? নাকি
হাজার হাজার বছর?
"এই যে দাদা, আপনার মাছটা ধরুন। বলুন বৌদি, কতটা চাই?"
মাছওয়ালার কথায় সম্বিৎ ফিরল। দুজনেরই?
এখানে বাল্বের হলুদ আলোটা যেন বড্ড ম্লান।
হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটি নিয়ে ঘুরলাম। দু পা এগোতেই সব্জির বাজার শুরু।
লিস্টে এখনো ফুলকপি, এঁচোর, বেগুন বাকি।
পাশের কোনো এক দোকানির রেডিওতে বেজে উঠলো, "অভি না যাও ছোড়কার, কে দিল অভি ভরা নহি..."।
হাসলাম মনে মনে। দিল আদৌ কবেই বা ভরেছিলো?
(না, এরা কিন্তু আর যেই হোক না কেন, কিছুতেই অগ্নি আর রুমুন না। ওদের এমন বিয়োগান্তক গল্প হতেই পারে না।)
Thursday, March 28, 2019
- কী ব্যাপার সকাল থেকে এই নিয়ে থার্ড এরকম লাভি ডাভি মেসেজ?
- ভালো লাগলো। তাই।
- সারাদিন এইসবই করছিস? কাজ নেই?
- আজ একটু হালকা আছি। ভালো লাগলো। তাই তোকে পাঠালাম।
- বুঝলাম।
- ভালো না লেখাগুলো?
- হুম। বেশ ভালো।
- আমাদের নিয়ে যদি কেউ এমন লিখতো...
- শুনলাম নাকি লেখে। ফেসবুকে। সাম্পান না কি একটা নাম পেজটার।
- ওই তো গুটিকয়েক লোকে পড়ে। ভাইরাল হয় না আমাদের গল্প।
- একদিক দিয়ে ভালো।
- কীসের ভালো?
- বেশি লোক জেনে গেলে কার না কার নজর লেগে যাবে শেষে।
- যত বাজে কথা।
- পাগলী!
- তাড়াতাড়ি ফিরিস আজ।
- চেষ্টা করছি।
- ভালো লাগলো। তাই।
- সারাদিন এইসবই করছিস? কাজ নেই?
- আজ একটু হালকা আছি। ভালো লাগলো। তাই তোকে পাঠালাম।
- বুঝলাম।
- ভালো না লেখাগুলো?
- হুম। বেশ ভালো।
- আমাদের নিয়ে যদি কেউ এমন লিখতো...
- শুনলাম নাকি লেখে। ফেসবুকে। সাম্পান না কি একটা নাম পেজটার।
- ওই তো গুটিকয়েক লোকে পড়ে। ভাইরাল হয় না আমাদের গল্প।
- একদিক দিয়ে ভালো।
- কীসের ভালো?
- বেশি লোক জেনে গেলে কার না কার নজর লেগে যাবে শেষে।
- যত বাজে কথা।
- পাগলী!
- তাড়াতাড়ি ফিরিস আজ।
- চেষ্টা করছি।
Tuesday, March 26, 2019
প্রেমে পড়া বারণ
দাশনগরের এই পাড়াতে নন্দিনীর আসার সবে ছয় মাস হয়েছে। বাবা শিবপ্রসাদ সান্যাল সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। এতদিন মালদা, বহরমপুর ইত্যাদি জায়গায় বদলিসূত্রে থেকে এই এবারে দাশনগরের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্ব পেয়েছেন। নন্দিনীর উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হলো এবছর। এতদিন বাবার বদলির জেরে যাতে ওকে জেরবার না হতে হয়, লেখাপড়ায় কোনো ক্ষতি না হয়, তাই শিলিগুড়িতে মামা বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছে। মামাবাড়িতে ওর বয়সী তেমন কেউ নেই। একমাত্র মামাতো দিদি, টুলুদি, নন্দিনীর চেয়ে পনেরো বছরের বড়। বহু বছর হলো বিয়ে করে বম্বেতে থাকে। মামা মামীও অন্যের সন্তানকে মানুষ করছেন দায়িত্ব নিয়ে, তাই কড়া শাসনের মধ্যে রাখতেন ভাগ্নিকে। এইসবের জেরেই নন্দিনী হয়েছে এক্কেবারে মুখচোরা, লাজুক। সাত চড়েও রা কাটেনা।
জয়েন্টে রেজাল্ট ভালো না হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে এবছর প্রেসিডেন্সিতে বটানি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু মনে প্রাণে ইচ্ছে, বাবার মতোই ডাক্তার হবে। তাই সারাদিন কলেজে ক্লাস করে, সিনিয়রদের দাদাগিরি, ক্লাসমেটদের এদিক সেদিক বেফাঁস মন্তব্য সব মুখ বুজে সহ্য করেও নিয়ম করে সপ্তাহে তিনদিন জয়েন্টের স্পেশাল কোচিং ক্লাসে ঠিক যাবেই যাবে। তার অবশ্য দুটো কারণ। মুখ্য কারণ ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে হলেও, দ্বিতীয় কারণটিও ইদানিং নেহাত গৌণ নয়। অন্তত নন্দিনীর কাছে। এই দ্বিতীয় কারণটি হলো বিশ্বম্ভর রায় চৌধুরী। দাশনগরের বিখ্যাত মাস্টার। অমন ভারিক্কি নাম শুনে প্রথমদিন দুরুদুরু বুকে ক্লাস করতে গিয়ে তো নন্দিনী একেবারে থ। আরে, এ যে একেবারে ইয়ং স্যর। বছর তেইশ কি চব্বিশ বয়স। নিজে মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে এখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আর সাথে এই একটা ব্যাচ পড়ায়। ভারী আমুদে এই বিশ্বম্ভর স্যর। ছাত্রদের প্রিয় বিশুদা।
নন্দিনীর ওকে খুব ভালো লেগে গেলো। কী সুন্দর মিশুকে। ওদের সাথে ওদের মতন করে মিশে গিয়ে গল্পের ছলে কঠিন কঠিন টপিক পড়িয়ে দেয়। প্রশ্নোত্তর পর্বেও সাহায্য করে।
কলেজের মতোই এই টিউশন ক্লাসেও নন্দিনী প্রায় চুপচাপ থাকে বেশিরভাগ সময়। হয়তো ব্যাচের বেশিরভাগই ওর চেয়ে ছোট বলে। তাও তাদের মধ্যে ওই রমিতা আর পিউয়ের সাথে যা অল্পবিস্তর কথা হয়। তার কারণ অবশ্য ওরা একই রুটের অটোতে যাতায়াত করে। তার মধ্যেও বিশ্বম্ভর স্যর মাঝে মাঝে নন্দিনীর থেকে প্রশ্নের উত্তর ঠিক বের করে নেয়। কনফিডেন্স বাড়ানোর চেষ্টায়।
সেদিন কলেজে হাফ ডে হয়ে ক্লাস অফ হয়ে যায়। বাড়ি এসে নন্দিনী একটু এফ এম রেডিওটা চালিয়ে শুয়েছে। বাবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মা দুদিন হলো শিলিগুড়ি গিয়েছে। মামীর শরীরটা ভালো না। তাই ওদের সংসার সামলাতে মাই ভরসা। কোনোদিনও সেরকমভাবে টিভি বা রেডিও দেখার বা শোনার অভ্যেস ছিল না নন্দিনীর। আজ কী মনে হলো, কে জানে। ইয়ারফোন লাগিয়ে চালালো একটা স্টেশন। ভারী সুন্দর ভরাট গলায় একটি মেয়ে গাইছিল।
"তোমায় যত গল্প বলার ছিল
সব পাপড়ি হয়ে গাছের পাশে ছড়িয়ে রয়েছিল,
দাওনি তুমি আমায় সেসব কুড়িয়ে নেওয়ার কোনো কারণ।"
আহা। ভারী মনকাড়া তো। একবার ফোনের নেট অন করে নন্দিনী ইউটিউবে গানটা খুঁজে শুনলো। একবার। দুবার। দশবার। অপূর্ব। কী সুর। কীসব শব্দ। কী গায়কী। দুপুরের ঘুমটা দিলো তো মাটি করে এই গানটা।
সন্ধ্যে হলো। এবার বিশ্বম্ভরের টোলে যাওয়ার পালা। হ্যাঁ, ওর বাবা মজা করে এই নামেই বলে কোচিং ক্লাসটাকে। বাবা ডাক্তার জানার পর এক দুবার বিশ্বম্ভর স্যর এসে বাবার সাথে দেখা করে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও মাঝেসাঝে বসে। তাই নন্দিনীর বাবার সাথে ভালোই আলাপ পরিচয়। কিন্তু নন্দিনী এখনো তেমনভাবে জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মনে মনে অল্প ভালোলাগা জন্মালেও, সেটিকে পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টাই করে চলেছে প্রাণপণ। মোটামুটি পারলেও মাঝে মাঝে সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।
ঠিক যেমন আজ হলো। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েই আকাশটা কেমন ভার হয়েছিল। ক্লাসে পৌঁছতে পৌঁছতে আকাশ ভেঙে জোরে বৃষ্টি নামলো। চারিদিক অন্ধকার। হাওয়া বইছে বেশ জোরেই। আজকাল প্রায়ই চৈত্র মাসেই ঈশান কোণ কালো করে কালবৈশাখী এসে তান্ডব নৃত্য করে দিয়ে যাচ্ছে।
ছাতা থাকলেও খানিক ভিজেই নন্দিনী যখন ক্লাসে ঢুকল, দেখল ও ছাড়া আর জনা ছয়েক ছেলে মেয়ে বসে আছে। তাদের মধ্যে অবশ্য পিউ আর রমিতা নেই। বিশ্বম্ভর নিজের চেয়ার পেতে সামনে বসে। চুপচাপ ক্লাসের পিছনদিকে একটা কোণে গিয়ে বসতেই যাচ্ছিল নন্দিনী, এমন সময়ে বিশ্বম্ভর স্যরের গম্ভীর গলা শুনল, "এই তো কজন এসছিস তোরা আজ। যা বৃষ্টি নেমেছে, মনে হয় না আর কেউ আসবে বলে। আজকে আর ওই লাস্ট বেঞ্চে যাস না নন্দিনী। এই সামনেটায় চলে আয়।"
নন্দিনী নিরুপায়। কালো সুতির ওড়নাটা দিয়ে ভেজা মুখ মুছে পিঠের ব্যাগটা তুলে গুটিগুটি পায়ে এলো ফার্স্ট বেঞ্চে। বসতে যাবে, ঠিক সেই সময় গেল লোডশেডিং হয়ে। রাস্তার আলো, আসে পাশের সব বাড়ির আলোই চলে গিয়েছে। ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। ছেলেদের দিক থেকে সমবেত প্রস্তাব এলো, 'বিশুদা, আজ প্লিজ ক্লাস করিয়ে এমন দুর্দান্ত ওয়েদারকে নষ্ট করো না। প্লিজ বিশুদা। ছুটি দাও।" বিশ্বম্ভর হেসে বললো, "সে ঠিক আছে। বুঝলাম। ছুটি না হয় দিলাম। কিন্তু একটা কথা বল, এই বৃষ্টির মধ্যে বাইরেই বা যাবি কী করে তোরা? ভিজে স্নান হয়ে যাবি। তারপর জ্বর হলে আরো তিনটে ক্লাস কামাই হবে। উহু। তার চেয়ে বরং সবাই মিলে এখানেই গল্প করি। গানটান গাই।"
হইহই করে ছেলেরা সায় দিলো এই কথায়। বিশ্বম্ভর।বললো, "দাঁড়া, আমি কটা মোমবাতি নিয়ে আসি। তোরা ইতিমধ্যে গান শুরু কর কেউ।" এই বলে বিশ্বম্ভর মোবাইলের আলো জ্বেলে ভিতরের ঘরে গেল। তারপর মিনিট দু তিনেকের মধ্যেই ফিরেও এলো। হাতে গোটা ছয়েক সরু সাদা মোমবাতি। আর একটা দেশলাই বাক্স। সুবীর বলে একটি ছেলে তখন গান ধরেছে। রীতিমতো হেড়ে গলায়। "কিছুতে কেন যে মন লাগে না..."
বিশ্বম্ভর একে একে মোমবাতিগুলো জ্বালাচ্ছে। আর নন্দিনীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এদিক ওদিক রাখার জন্য। এক আধবার এই দেওয়া নেওয়ার সময়েই আলতো করে দুজনের আঙুল স্পর্শ করে গেলো একে অপরকে।
"সুবীর, এবার থাম। একটুও সুর নেই তোর গলায়।" হেসে বললো বিশ্বম্ভর।
"ঠিক বলেছ বিশুদা, ও গাইলে এই গা ছমছমে পরিবেশে ভূতেরা এসে পড়বে।" ফুট কাটলো রক্তিম বলে আরেক ছাত্র।
বিশ্বম্ভর এবার নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই নিশ্চয়ই ভালো গান গাস। একটা গান ধর না।" নন্দিনী খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কোনোমতে তা কাটিয়ে উঠে বলে, "না। মানে আমি ঠিক গান জানি না।"
"বললেই হলো? তোর গলার আওয়াজ এত মিষ্টি। আবার আজ ক্লাসে ঢুকলি ইয়ারফোন কানে। গান জানিস না বললেই হলো? উহু। গান গাইতে হবেই। নইলে ছাড়ছি না।" বিশ্বম্ভর ঈষৎ গম্ভীর হয়েই বলে কথাগুলো।
নন্দিনী তো ঘেমে নেয়ে একশা। একেই এতজনের সামনে গান। তার ওপর বিশ্বম্ভর রয়েছে। কী মুশকিল। এদিকে মাথায় গানও আসছে না। ওই একটিই ছাড়া। আবার তাড়া খেয়ে এবার চোখ বুজে গান ধরতেই হলো। নন্দিনী নিজেও অবাক। কী গাইছে এটা?
"প্রেমে পড়া বারণ।
কারণে অকারণ।"
মোমের নরম আলো পড়ে তখন ওর নিষ্পাপ মুখখানি ভারী সুন্দর লাগছে। অমায়িক। নির্মল। নিরালা। নরম। বিশ্বম্ভরের চোখদুটিও কারণে অকারণে মাঝে মাঝেই ওর দিকে চলে যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসিতে ওকেও বেশ লাগছে কিন্তু।
বৃষ্টি থেমে আসে। ঘোর বসন্ত।
"শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরসুম..."
জয়েন্টে রেজাল্ট ভালো না হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে এবছর প্রেসিডেন্সিতে বটানি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু মনে প্রাণে ইচ্ছে, বাবার মতোই ডাক্তার হবে। তাই সারাদিন কলেজে ক্লাস করে, সিনিয়রদের দাদাগিরি, ক্লাসমেটদের এদিক সেদিক বেফাঁস মন্তব্য সব মুখ বুজে সহ্য করেও নিয়ম করে সপ্তাহে তিনদিন জয়েন্টের স্পেশাল কোচিং ক্লাসে ঠিক যাবেই যাবে। তার অবশ্য দুটো কারণ। মুখ্য কারণ ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে হলেও, দ্বিতীয় কারণটিও ইদানিং নেহাত গৌণ নয়। অন্তত নন্দিনীর কাছে। এই দ্বিতীয় কারণটি হলো বিশ্বম্ভর রায় চৌধুরী। দাশনগরের বিখ্যাত মাস্টার। অমন ভারিক্কি নাম শুনে প্রথমদিন দুরুদুরু বুকে ক্লাস করতে গিয়ে তো নন্দিনী একেবারে থ। আরে, এ যে একেবারে ইয়ং স্যর। বছর তেইশ কি চব্বিশ বয়স। নিজে মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে এখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার জন্য পড়ছে। আর সাথে এই একটা ব্যাচ পড়ায়। ভারী আমুদে এই বিশ্বম্ভর স্যর। ছাত্রদের প্রিয় বিশুদা।
নন্দিনীর ওকে খুব ভালো লেগে গেলো। কী সুন্দর মিশুকে। ওদের সাথে ওদের মতন করে মিশে গিয়ে গল্পের ছলে কঠিন কঠিন টপিক পড়িয়ে দেয়। প্রশ্নোত্তর পর্বেও সাহায্য করে।
কলেজের মতোই এই টিউশন ক্লাসেও নন্দিনী প্রায় চুপচাপ থাকে বেশিরভাগ সময়। হয়তো ব্যাচের বেশিরভাগই ওর চেয়ে ছোট বলে। তাও তাদের মধ্যে ওই রমিতা আর পিউয়ের সাথে যা অল্পবিস্তর কথা হয়। তার কারণ অবশ্য ওরা একই রুটের অটোতে যাতায়াত করে। তার মধ্যেও বিশ্বম্ভর স্যর মাঝে মাঝে নন্দিনীর থেকে প্রশ্নের উত্তর ঠিক বের করে নেয়। কনফিডেন্স বাড়ানোর চেষ্টায়।
সেদিন কলেজে হাফ ডে হয়ে ক্লাস অফ হয়ে যায়। বাড়ি এসে নন্দিনী একটু এফ এম রেডিওটা চালিয়ে শুয়েছে। বাবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মা দুদিন হলো শিলিগুড়ি গিয়েছে। মামীর শরীরটা ভালো না। তাই ওদের সংসার সামলাতে মাই ভরসা। কোনোদিনও সেরকমভাবে টিভি বা রেডিও দেখার বা শোনার অভ্যেস ছিল না নন্দিনীর। আজ কী মনে হলো, কে জানে। ইয়ারফোন লাগিয়ে চালালো একটা স্টেশন। ভারী সুন্দর ভরাট গলায় একটি মেয়ে গাইছিল।
"তোমায় যত গল্প বলার ছিল
সব পাপড়ি হয়ে গাছের পাশে ছড়িয়ে রয়েছিল,
দাওনি তুমি আমায় সেসব কুড়িয়ে নেওয়ার কোনো কারণ।"
আহা। ভারী মনকাড়া তো। একবার ফোনের নেট অন করে নন্দিনী ইউটিউবে গানটা খুঁজে শুনলো। একবার। দুবার। দশবার। অপূর্ব। কী সুর। কীসব শব্দ। কী গায়কী। দুপুরের ঘুমটা দিলো তো মাটি করে এই গানটা।
সন্ধ্যে হলো। এবার বিশ্বম্ভরের টোলে যাওয়ার পালা। হ্যাঁ, ওর বাবা মজা করে এই নামেই বলে কোচিং ক্লাসটাকে। বাবা ডাক্তার জানার পর এক দুবার বিশ্বম্ভর স্যর এসে বাবার সাথে দেখা করে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও মাঝেসাঝে বসে। তাই নন্দিনীর বাবার সাথে ভালোই আলাপ পরিচয়। কিন্তু নন্দিনী এখনো তেমনভাবে জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মনে মনে অল্প ভালোলাগা জন্মালেও, সেটিকে পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টাই করে চলেছে প্রাণপণ। মোটামুটি পারলেও মাঝে মাঝে সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।
ঠিক যেমন আজ হলো। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েই আকাশটা কেমন ভার হয়েছিল। ক্লাসে পৌঁছতে পৌঁছতে আকাশ ভেঙে জোরে বৃষ্টি নামলো। চারিদিক অন্ধকার। হাওয়া বইছে বেশ জোরেই। আজকাল প্রায়ই চৈত্র মাসেই ঈশান কোণ কালো করে কালবৈশাখী এসে তান্ডব নৃত্য করে দিয়ে যাচ্ছে।
ছাতা থাকলেও খানিক ভিজেই নন্দিনী যখন ক্লাসে ঢুকল, দেখল ও ছাড়া আর জনা ছয়েক ছেলে মেয়ে বসে আছে। তাদের মধ্যে অবশ্য পিউ আর রমিতা নেই। বিশ্বম্ভর নিজের চেয়ার পেতে সামনে বসে। চুপচাপ ক্লাসের পিছনদিকে একটা কোণে গিয়ে বসতেই যাচ্ছিল নন্দিনী, এমন সময়ে বিশ্বম্ভর স্যরের গম্ভীর গলা শুনল, "এই তো কজন এসছিস তোরা আজ। যা বৃষ্টি নেমেছে, মনে হয় না আর কেউ আসবে বলে। আজকে আর ওই লাস্ট বেঞ্চে যাস না নন্দিনী। এই সামনেটায় চলে আয়।"
নন্দিনী নিরুপায়। কালো সুতির ওড়নাটা দিয়ে ভেজা মুখ মুছে পিঠের ব্যাগটা তুলে গুটিগুটি পায়ে এলো ফার্স্ট বেঞ্চে। বসতে যাবে, ঠিক সেই সময় গেল লোডশেডিং হয়ে। রাস্তার আলো, আসে পাশের সব বাড়ির আলোই চলে গিয়েছে। ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। ছেলেদের দিক থেকে সমবেত প্রস্তাব এলো, 'বিশুদা, আজ প্লিজ ক্লাস করিয়ে এমন দুর্দান্ত ওয়েদারকে নষ্ট করো না। প্লিজ বিশুদা। ছুটি দাও।" বিশ্বম্ভর হেসে বললো, "সে ঠিক আছে। বুঝলাম। ছুটি না হয় দিলাম। কিন্তু একটা কথা বল, এই বৃষ্টির মধ্যে বাইরেই বা যাবি কী করে তোরা? ভিজে স্নান হয়ে যাবি। তারপর জ্বর হলে আরো তিনটে ক্লাস কামাই হবে। উহু। তার চেয়ে বরং সবাই মিলে এখানেই গল্প করি। গানটান গাই।"
হইহই করে ছেলেরা সায় দিলো এই কথায়। বিশ্বম্ভর।বললো, "দাঁড়া, আমি কটা মোমবাতি নিয়ে আসি। তোরা ইতিমধ্যে গান শুরু কর কেউ।" এই বলে বিশ্বম্ভর মোবাইলের আলো জ্বেলে ভিতরের ঘরে গেল। তারপর মিনিট দু তিনেকের মধ্যেই ফিরেও এলো। হাতে গোটা ছয়েক সরু সাদা মোমবাতি। আর একটা দেশলাই বাক্স। সুবীর বলে একটি ছেলে তখন গান ধরেছে। রীতিমতো হেড়ে গলায়। "কিছুতে কেন যে মন লাগে না..."
বিশ্বম্ভর একে একে মোমবাতিগুলো জ্বালাচ্ছে। আর নন্দিনীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এদিক ওদিক রাখার জন্য। এক আধবার এই দেওয়া নেওয়ার সময়েই আলতো করে দুজনের আঙুল স্পর্শ করে গেলো একে অপরকে।
"সুবীর, এবার থাম। একটুও সুর নেই তোর গলায়।" হেসে বললো বিশ্বম্ভর।
"ঠিক বলেছ বিশুদা, ও গাইলে এই গা ছমছমে পরিবেশে ভূতেরা এসে পড়বে।" ফুট কাটলো রক্তিম বলে আরেক ছাত্র।
বিশ্বম্ভর এবার নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই নিশ্চয়ই ভালো গান গাস। একটা গান ধর না।" নন্দিনী খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কোনোমতে তা কাটিয়ে উঠে বলে, "না। মানে আমি ঠিক গান জানি না।"
"বললেই হলো? তোর গলার আওয়াজ এত মিষ্টি। আবার আজ ক্লাসে ঢুকলি ইয়ারফোন কানে। গান জানিস না বললেই হলো? উহু। গান গাইতে হবেই। নইলে ছাড়ছি না।" বিশ্বম্ভর ঈষৎ গম্ভীর হয়েই বলে কথাগুলো।
নন্দিনী তো ঘেমে নেয়ে একশা। একেই এতজনের সামনে গান। তার ওপর বিশ্বম্ভর রয়েছে। কী মুশকিল। এদিকে মাথায় গানও আসছে না। ওই একটিই ছাড়া। আবার তাড়া খেয়ে এবার চোখ বুজে গান ধরতেই হলো। নন্দিনী নিজেও অবাক। কী গাইছে এটা?
"প্রেমে পড়া বারণ।
কারণে অকারণ।"
মোমের নরম আলো পড়ে তখন ওর নিষ্পাপ মুখখানি ভারী সুন্দর লাগছে। অমায়িক। নির্মল। নিরালা। নরম। বিশ্বম্ভরের চোখদুটিও কারণে অকারণে মাঝে মাঝেই ওর দিকে চলে যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসিতে ওকেও বেশ লাগছে কিন্তু।
বৃষ্টি থেমে আসে। ঘোর বসন্ত।
"শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরসুম..."
hijibiji kotha
#হিজিবিজি_কথা
আমি যে ডেস্কে বসে কাজ করি রোজ, সেখানে একদম সামনেই জানলা না থাকলেও, আমাদের ঘরটার জানলাগুলো এমনিতে খুব বড় বলে ভালো মতোই দেখা যায় সব। জানলার বাইরে দিয়ে বড় বড় তাল, সুপুরি ও আরো অনেক গাছ দেখতে পাই। আমি আবার গাছপালা ভালোবাসি বলে আমার এতে খুব আনন্দ হয়। এইসবের পিছনে, খানিকটা দূরে দেখি একটা টেলিফোনের টাওয়ার দাঁড়িয়ে আছে। কীরকম নিঃসঙ্গ। একা। মনে হয়, কোথাও গিয়ে যেন আমরাও ওই টাওয়ারটার মতো। এত ভিড়ের মাঝে থেকেও হয়তো একা। টাওয়ারটার মতোই যোগাযোগ স্থাপন করি, করাই ঠিকই, তবুও হয়তো আমাদের দিনের শেষে সেই একাই রয়ে যেতে হয়। মহাপুরুষদের বাণীই তাই বলে গিয়েছে যুগ যুগ ধরে। একাই আসি, একাই ফিরি। মাঝে শুধু কিছুদিন সবাই মিলে আনন্দ করি।
আমি যে ডেস্কে বসে কাজ করি রোজ, সেখানে একদম সামনেই জানলা না থাকলেও, আমাদের ঘরটার জানলাগুলো এমনিতে খুব বড় বলে ভালো মতোই দেখা যায় সব। জানলার বাইরে দিয়ে বড় বড় তাল, সুপুরি ও আরো অনেক গাছ দেখতে পাই। আমি আবার গাছপালা ভালোবাসি বলে আমার এতে খুব আনন্দ হয়। এইসবের পিছনে, খানিকটা দূরে দেখি একটা টেলিফোনের টাওয়ার দাঁড়িয়ে আছে। কীরকম নিঃসঙ্গ। একা। মনে হয়, কোথাও গিয়ে যেন আমরাও ওই টাওয়ারটার মতো। এত ভিড়ের মাঝে থেকেও হয়তো একা। টাওয়ারটার মতোই যোগাযোগ স্থাপন করি, করাই ঠিকই, তবুও হয়তো আমাদের দিনের শেষে সেই একাই রয়ে যেতে হয়। মহাপুরুষদের বাণীই তাই বলে গিয়েছে যুগ যুগ ধরে। একাই আসি, একাই ফিরি। মাঝে শুধু কিছুদিন সবাই মিলে আনন্দ করি।
সন্ধ্যের সময়টা
ভারি সুন্দর লাগে আমার। কী সুন্দর সারি দিয়ে দলে দলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা
বাসায় ফেরে। ওই যে তখন পাখীর কূজন, যে কোন অপেরা অর্কেস্ট্রাকে হার মানিয়ে
দেবে বলে আমার বিশ্বাস। একটু কান পেতে শুনবেন কখনও। এয়ারপোর্টটা খুব কাছে
হওয়ায় দিনের কিছু কিছু সময় আবার প্রায় পাঁচ দশ মিনিট অন্তর প্লেনগুলো খুব
নীচ দিয়ে উড়ে যায়। তখন খুব মনে হয়, এই যদি পাখিগুলোর মতো দিনের শেষে
প্রিয়জনদের কাছে, বা নিজের বাসায় ফিরতে পারতাম। যদি...
জানি, "ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি?" তবুও, সাধ জাগে। কোন একদিন আমার ডেস্কটা খালি পড়ে থাকবে। বা অন্য কেউ হয়তো এখানে বসে দেখবে। জানলা দিয়ে। নীল আকাশের বুক চিড়ে একটা সাদা লাল প্লেন উড়ে গেলো। দূরবীনে চোখ রাখলেও দেখতে পাবে কি জানি না, কিন্তু সেই প্লেনের কোন এক জানলার ধারে তখন মুক্তির হাসি হাসব আমি। হয়তো কোনদিন। শিগগিরই।
তখন রোজের জীবন আর প্রকৃতি কেমন মিলে মিশে এক হয়ে যাবে।
জানি, "ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি?" তবুও, সাধ জাগে। কোন একদিন আমার ডেস্কটা খালি পড়ে থাকবে। বা অন্য কেউ হয়তো এখানে বসে দেখবে। জানলা দিয়ে। নীল আকাশের বুক চিড়ে একটা সাদা লাল প্লেন উড়ে গেলো। দূরবীনে চোখ রাখলেও দেখতে পাবে কি জানি না, কিন্তু সেই প্লেনের কোন এক জানলার ধারে তখন মুক্তির হাসি হাসব আমি। হয়তো কোনদিন। শিগগিরই।
তখন রোজের জীবন আর প্রকৃতি কেমন মিলে মিশে এক হয়ে যাবে।
ভিলেন
- উফ এই যা ওয়েদার। ভীষণ প্রেম পাচ্ছে।
- আমার পাচ্ছে না।
- তুই বড্ড আনরোমান্টিক।
- বিশ্বাস কর, সারা দুপুর আজ বসের জন্য ফালতু ফালতু রোদে টো টো করে ঘুরে কাজ করতে হয়েছে। তাও ইউজলেস কাজ। আমার মাথা ধরে আছে। ঘুম পাচ্ছে। এরপর আর যাই হোক প্রেম পাচ্ছে না।
- ধুর ধুর। সব সময় তোর এই বসটা ভিলেন হয়ে থাকে আমাদের লাভ স্টোরিতে।
- নামের ইনিশিয়ালসেই এ পি। অমরীশ পুরি।
- বেকার। টোটাল বেকার।
- এক কাজ কর। ইউটিউব চালিয়ে অরিজিৎ সিং শোন। প্রেম পালিয়ে যাবে। বিরহ মোড অন।
- বিরহ মধুর হলো আজি...
- ভরি দিয়া পূর্ণিমানিশা অধীর অদর্শনতৃষা।
- হয়েছে। এবার থাম। জানি সব গানের সব লাইন তোর মুখস্থ। গান শোন। আমি ঘুমাই।
- লাভ ইউ টু।
- হুম। সুইট ড্রিমস।
অপু-অপর্ণা
(স্থান: ধরুন, যাদবপুর সি আই টি মার্কেটের সামনে। একগাদা অটো যেখানে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাণীকুঠি আর টালিগঞ্জ মেট্রো যাওয়ার জন্য।
কাল: সকাল দশটা। ব্যস্ত সোমবার।
পাত্র পাত্রী: নিজের মতো নাম ভেবে নিন। সাজেশন চাইলে বলবো অগ্নি আর রুমুন, নয়তো পাল্কি আর কৃশানু।) - আচ্ছা, আমি যদি অপু হই, তুই আমার অপর্ণা হবি?
(খানিক থতমত খেয়ে) - হতে পারি। তবে কথা দিতে হবে। কাজলকে দেখতে আসতে যেন পাঁচ বছর না লেগে যায়।
- ধুর পাগলী, কাজল তো আমার সামনেই জন্মাবে। ও যখন আসবে, আমি তোর পাশেই থাকবো। আমার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে তোর দুই হাত চেপে ধরে রাখবো। যাতে তুই কোত্থাও না চলে যাস...
কাল: সকাল দশটা। ব্যস্ত সোমবার।
পাত্র পাত্রী: নিজের মতো নাম ভেবে নিন। সাজেশন চাইলে বলবো অগ্নি আর রুমুন, নয়তো পাল্কি আর কৃশানু।) - আচ্ছা, আমি যদি অপু হই, তুই আমার অপর্ণা হবি?
(খানিক থতমত খেয়ে) - হতে পারি। তবে কথা দিতে হবে। কাজলকে দেখতে আসতে যেন পাঁচ বছর না লেগে যায়।
- ধুর পাগলী, কাজল তো আমার সামনেই জন্মাবে। ও যখন আসবে, আমি তোর পাশেই থাকবো। আমার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে তোর দুই হাত চেপে ধরে রাখবো। যাতে তুই কোত্থাও না চলে যাস...
(সলজ্জ হাসি। ঈষৎ রক্তিম গাল।) - বেশ। তবে তাই হোক।
Thursday, March 21, 2019
ফাগ
কাল রাত থেকেই পাল্কির খুব মন খারাপ। দেশে গতকাল ছিল দোল। সোশ্যাল মিডিয়া ভর্তি শুধুই আবীর আর রঙের ছবি। এই পোড়া দেশে না আছে এইসব উৎসব, না আছে একটা মন ভোলানো বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাস। উল্টে ক'দিন ধরে এমন বিচ্ছিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, কিচ্ছু ভাল্লাগছেনা। চারিদিকে শুধুই গ্রে। রঙের ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও।
আর পাঁচটা সাধারণ বৃহস্পতিবার সকালের মতোই তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে বাড়িতে কথা বলছিল পাল্কি। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা। ল্যাবে গিয়ে আজ কী কী এক্সপেরিমেন্ট করার আছে, তার একটা খসড়া করা, ফ্রিজে সব্জি মাছ মাংস কমে এসেছে, বিকেলে স্টোরে গিয়ে সেসব কেনার ফিরিস্তি। এমন সময়ে কলিং বেল বাজল ওর অ্যাপার্টমেন্টে। এই অসময়ে আবার কে, একটু অবাক হয়েই ফোন ছেড়ে পাল্কি এগলো দরজা খুলতে। আই-হোল দিয়ে দেখল ফেড এক্সের ডেলিভারি দিতে এসেছে। আরো অবাক। কিছু তো আসার কথা না। পাল্কি দরজা খুলে পার্সেলটা সই করে নিলো। এবং সেন্ডার ডিটেল দেখেই এক লহমায় মুখে একটা চওড়া হাসি খেলে গেলো ওর। কৃশানু।
দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পার্সেলটা খুলে পাল্কি পেল একটা ট্রান্সপারেন্ট প্যাকে এক মুঠো সুগন্ধী গোলাপি আবীর। আর একটা ছোট্ট চিরকুট। হাল্কা গোলাপি রঙের কাগজে বেগুনি রঙের স্পার্কল কালিতে লেখা...
" আমার পাগলি,
মন খারাপ, না? জানি তো। বসে বসে শুধু পুরনো ছবিগুলোই দেখে চলেছিস। ঠিক তো, বল?
আমি তো যেতে পারলাম না, তাই প্রক্সি দিতে এই এক মুঠো আবীরই রইল। তোর ওই নরম গালে একটু ছুঁইয়ে নিস। ভাবিস আমিই না হয় এই ফাগের ছোঁওয়ায় রাঙালাম। আর হ্যাঁ, সাথে রইল তোর পছন্দের মিষ্টি। বলরাম থেকে রীতিমতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কিনেছি গতকাল।
ইতি
তোর চৈত্র রাতের উদাসী...
পুনশ্চঃ সন্ধ্যেবেলা ল্যাব থেকে ফিরে লাল পার সাদা ঢাকাইটা পরবি, প্রত্যেক বছরের মতো। বেলের মালাটা পাবি না, জানি। ওটা মাফ। বাকি সাজগোজ যেন প্রত্যেক বছরের মতোই থাকে। ঝুমকোটা একটু বড় চাইই চাই। আর হ্যাঁ, কাজল পরবি, আই লাইনার না। তারপর আমায় ভিডিও কল করবি। আমি এখানে হারমোনিয়ামটা বাজাবো। আর তুই গান গাইবি। একটার পর একটা। বসন্তের গান। আমাদের বসন্তোৎসবটা যেন এবারে মিস না যায়। "
এই যে "দিনেকের দেখা, তিলেকের সুখ , ক্ষণেকের তরে শুধু হাসিমুখ" এইটুকুই তো সম্বল।
নতুন করে কুড়িয়ে পাওয়া এই প্রাণোচ্ছ্বাসভরে পাল্কি বেরোয় জীবনযুদ্ধে।
আর পাঁচটা সাধারণ বৃহস্পতিবার সকালের মতোই তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে বাড়িতে কথা বলছিল পাল্কি। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা। ল্যাবে গিয়ে আজ কী কী এক্সপেরিমেন্ট করার আছে, তার একটা খসড়া করা, ফ্রিজে সব্জি মাছ মাংস কমে এসেছে, বিকেলে স্টোরে গিয়ে সেসব কেনার ফিরিস্তি। এমন সময়ে কলিং বেল বাজল ওর অ্যাপার্টমেন্টে। এই অসময়ে আবার কে, একটু অবাক হয়েই ফোন ছেড়ে পাল্কি এগলো দরজা খুলতে। আই-হোল দিয়ে দেখল ফেড এক্সের ডেলিভারি দিতে এসেছে। আরো অবাক। কিছু তো আসার কথা না। পাল্কি দরজা খুলে পার্সেলটা সই করে নিলো। এবং সেন্ডার ডিটেল দেখেই এক লহমায় মুখে একটা চওড়া হাসি খেলে গেলো ওর। কৃশানু।
দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পার্সেলটা খুলে পাল্কি পেল একটা ট্রান্সপারেন্ট প্যাকে এক মুঠো সুগন্ধী গোলাপি আবীর। আর একটা ছোট্ট চিরকুট। হাল্কা গোলাপি রঙের কাগজে বেগুনি রঙের স্পার্কল কালিতে লেখা...
" আমার পাগলি,
মন খারাপ, না? জানি তো। বসে বসে শুধু পুরনো ছবিগুলোই দেখে চলেছিস। ঠিক তো, বল?
আমি তো যেতে পারলাম না, তাই প্রক্সি দিতে এই এক মুঠো আবীরই রইল। তোর ওই নরম গালে একটু ছুঁইয়ে নিস। ভাবিস আমিই না হয় এই ফাগের ছোঁওয়ায় রাঙালাম। আর হ্যাঁ, সাথে রইল তোর পছন্দের মিষ্টি। বলরাম থেকে রীতিমতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কিনেছি গতকাল।
ইতি
তোর চৈত্র রাতের উদাসী...
পুনশ্চঃ সন্ধ্যেবেলা ল্যাব থেকে ফিরে লাল পার সাদা ঢাকাইটা পরবি, প্রত্যেক বছরের মতো। বেলের মালাটা পাবি না, জানি। ওটা মাফ। বাকি সাজগোজ যেন প্রত্যেক বছরের মতোই থাকে। ঝুমকোটা একটু বড় চাইই চাই। আর হ্যাঁ, কাজল পরবি, আই লাইনার না। তারপর আমায় ভিডিও কল করবি। আমি এখানে হারমোনিয়ামটা বাজাবো। আর তুই গান গাইবি। একটার পর একটা। বসন্তের গান। আমাদের বসন্তোৎসবটা যেন এবারে মিস না যায়। "
এই যে "দিনেকের দেখা, তিলেকের সুখ , ক্ষণেকের তরে শুধু হাসিমুখ" এইটুকুই তো সম্বল।
নতুন করে কুড়িয়ে পাওয়া এই প্রাণোচ্ছ্বাসভরে পাল্কি বেরোয় জীবনযুদ্ধে।
বেগুন ভাজা
সবাই ছোটবেলায় গল্প টল্প লেখে, কবিতা লেখে। সেসব কত সাহিত্যরসে পূর্ণ
থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। ছোটবেলায় একটা টেপ রেকর্ডারে আমার লেখা ও পাঠ করা
একটা গল্প শুনতাম। আশা করি ওই সময়ে আর কোন লিখিনি। ওই এক পিসই যা প্রমাণ
আছে। (এখন আর ক্যাসেটগুলো আদৌ চলে কি না, জানিনা। ক্যাসেটটা আছে কোথাও
হয়তো...)
যাই হোক, গল্পটা যতটা যা মনে পড়ছেঃ (বানান অপরিবর্তিত)
"একটা বেগুন ভাজা ছিল। আরো একটা বেগুন ভাজা ছিল। একদিন বাইরে খুব বিশটি পড়ছিল। ওরা বাইরে ছিল। ছাতা মাথায় হাঁটছিল। বিশটিতে ভিজে একটা বেগুন ভাজার জ্বর হয়ে গেলো। "
যাই হোক, গল্পটা যতটা যা মনে পড়ছেঃ (বানান অপরিবর্তিত)
"একটা বেগুন ভাজা ছিল। আরো একটা বেগুন ভাজা ছিল। একদিন বাইরে খুব বিশটি পড়ছিল। ওরা বাইরে ছিল। ছাতা মাথায় হাঁটছিল। বিশটিতে ভিজে একটা বেগুন ভাজার জ্বর হয়ে গেলো। "
ব্যস। এইটুকুই।
(তখন মনে হয় বেগুন ভাজা খেতাম নিয়মিত, রুটি দিয়ে। তাই এরকম অদ্ভুত গল্পের চরিত্র। যাক গে, মনে হয় তখনের চেয়ে এখন অল্প হলেও বেটার লিখি...)
Edit: মা বললো এটা নাকি মায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। আমি আমার মতো করে রেকর্ড করেছিলাম মাত্র।
আর গল্পে বেগুনভাজাটিকে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল!☺️
(তখন মনে হয় বেগুন ভাজা খেতাম নিয়মিত, রুটি দিয়ে। তাই এরকম অদ্ভুত গল্পের চরিত্র। যাক গে, মনে হয় তখনের চেয়ে এখন অল্প হলেও বেটার লিখি...)
Edit: মা বললো এটা নাকি মায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। আমি আমার মতো করে রেকর্ড করেছিলাম মাত্র।
আর গল্পে বেগুনভাজাটিকে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল!☺️
World Happiness Day
- তুমি খুশি থাকো।
- তোমার পানে চেয়ে চেয়ে?
- ওর'ম তাকিয়ো না।
- তুমি এমনিই ক্যাবলা, নতুন করে আর কী হবে?
- ফেসপাম।
- ডাবল ফেসপাম।
- তুমি খুশি থাকো, আমার পানে চেয়ে চেয়ে খুশি থাকো।
- তার চেয়ে বরং ক'টা ভালো pun বলো, হাসি পাবে।
- তোমার পানে চেয়ে চেয়ে?
- ওর'ম তাকিয়ো না।
- তুমি এমনিই ক্যাবলা, নতুন করে আর কী হবে?
- ফেসপাম।
- ডাবল ফেসপাম।
- তুমি খুশি থাকো, আমার পানে চেয়ে চেয়ে খুশি থাকো।
- তার চেয়ে বরং ক'টা ভালো pun বলো, হাসি পাবে।
Tuesday, March 19, 2019
জোড়া শালিক
- গুড মর্নিং
- এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছিস কেন?
- কাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, ভুঁড়িখানা বেশ জম্পেশ তৈরি হয়েছে। একটু কমাতে হবে। তাই হাঁটতে বেরোলাম।
- সে বেশ করেছিস। তা ছাড়া তোকে একটু গোলগালই কিউট লাগে। কিন্তু তা বলে আমায় ফোন করে ওঠালি কেন?
- আরে আমি যেই পার্কে হাঁটতে এসেছি, ভীষণ সুন্দর জায়গাটা। প্রচুর গাছপালা। ফুল। আর মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, অনেক পাখি।
- সব বুঝলাম। কিন্তু তাও, সাড়ে পাঁচটায় আমার ঘুম ভাঙালি??
- এই যে, চোখ খুলে দেখ। দেখতে পাচ্ছিস?
- আরে, দু শালিক যে।
- প্রচুর আছে। তুই দেখার জন্য হা পিত্তেশ করে থাকিস। আমার চোখে পড়ল। তাই কল করলাম। নে এবার ঘুমো।
- থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। আজ আবার প্রেজেন্টেশন আছে। আই ব্যাডলি নিডেড দিস।
- ওই জন্যই তো।
- তুই না থাকলে যে আমার কী হতো...
- হয়েছে। যা। ঘুম দে। আমি হাঁটি।
- গল্প করতে করতে হাঁট না। এমনিও আমার ঘুম চলে গেছে।
- পারলাম না অত ঢং করতে। ঘুম ভেঙে গেলে নীচে নেমে দৌড়ে নে কয়েক রাউন্ড।
- এরকম করতে পারলি?
- হুম।
- বেশ।
- পরে কথা বলছি আবার। বাই।
- টাটা!
- এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছিস কেন?
- কাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, ভুঁড়িখানা বেশ জম্পেশ তৈরি হয়েছে। একটু কমাতে হবে। তাই হাঁটতে বেরোলাম।
- সে বেশ করেছিস। তা ছাড়া তোকে একটু গোলগালই কিউট লাগে। কিন্তু তা বলে আমায় ফোন করে ওঠালি কেন?
- আরে আমি যেই পার্কে হাঁটতে এসেছি, ভীষণ সুন্দর জায়গাটা। প্রচুর গাছপালা। ফুল। আর মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, অনেক পাখি।
- সব বুঝলাম। কিন্তু তাও, সাড়ে পাঁচটায় আমার ঘুম ভাঙালি??
- এই যে, চোখ খুলে দেখ। দেখতে পাচ্ছিস?
- আরে, দু শালিক যে।
- প্রচুর আছে। তুই দেখার জন্য হা পিত্তেশ করে থাকিস। আমার চোখে পড়ল। তাই কল করলাম। নে এবার ঘুমো।
- থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। আজ আবার প্রেজেন্টেশন আছে। আই ব্যাডলি নিডেড দিস।
- ওই জন্যই তো।
- তুই না থাকলে যে আমার কী হতো...
- হয়েছে। যা। ঘুম দে। আমি হাঁটি।
- গল্প করতে করতে হাঁট না। এমনিও আমার ঘুম চলে গেছে।
- পারলাম না অত ঢং করতে। ঘুম ভেঙে গেলে নীচে নেমে দৌড়ে নে কয়েক রাউন্ড।
- এরকম করতে পারলি?
- হুম।
- বেশ।
- পরে কথা বলছি আবার। বাই।
- টাটা!
Monday, March 18, 2019
সংলাপ
বিরহ পর্ব চলছে। তারই সংলাপ।
(হ্যাঁ, অগ্নি আর রুমুনের...)
- বৃষ্টি থামল?
- থেমেছিল। সেই দেখে বেরোলাম। ক্যাবে উঠতে আবার শুরু হল।
- ভাগ্যিস ক্যাব পেলি। এই ওয়েদারে তো সেও এক অ্যাডিশানাল সমস্যা।
- সাত কিলোমিটার ডিস্টেন্স তিনশো পড়ল।
- ভগবান! তবে হ্যাঁ, আর কী করবি। সাইড এফেক্টস অফ সাচ আ লাভ্লি ওয়েদার।
- নিকুচি করেছে লাভ্লি।
- কেন কী হল?
- প্র্যাক্টিকালি ভাবতে গেলে এই যে এরকম অস্বাভাবিক ক্যাব ফ্যের। প্লাস রাস্তায় জল কাদা প্যাচপ্যাচ।
- কন্টিন্যু।
- আর ইমোশনালি ভাবতে গেলে যত রাজ্যের মন খারাপ এসে বাসা বাঁধছে আমার মনে।
- সে কী কেন?
- এরকম ডিপ্রেসিং ওয়েদারে আমার সব সময়ই এমন মন খারাপ লাগে।
- ডোন্ট ব্লেম দ্য ওয়েদার।
- নয়তো কী? বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। আর সেই সাথে আমার মন খারাপটা এক্সপোনেনশিয়ালি বেড়েই চলেছে।
- আমার এখানে সারাদিন সূর্যের তেজ গোবি সাহারাকে বলে বলে অন্তত সাত গোল দেবে। গাছগুলোকে দিনে দু'বার ধরে জল দিতে হচ্ছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির। এমন ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও আমার ভীষণ মন কেমন করছে। সারাদিন ভুলভাল এদিক ওদিক কত কমেডি ভিডিও দেখলা। গান শুনলাম। কিছুতেই কিছু হল না। মন যেমন ভার ছিল সকালে, এখনও তেমনই আছে। এবার বল?
- একটাই চিকিৎসা।
- কী?
- ফিরে আয়।
- আই উইশ...
- প্লীজ... আমার একটুও ভালো লাগছে না।
- আমারই কি ভালো লাগছে নাকি?
- তাহলে পড়ে আছিস কেন?
- আমার হাতে নেই তো। থাকলে তোর মনে হয় এই এতদূরে এরকম পড়ে থাকতাম...
- টেস্টিং টাইমস।
- অ্যান্ড উই উইল কাম আউট উইদ ফ্লায়িং কালারস। দেখিস?
- মিস ইউ।
(অপর প্রান্তে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে ঢেকে যায় বৃষ্টিস্নাত ব্যস্ত শহরের ট্র্যাফিকের পাগল করা শব্দ। আরেকটা দিন কেটে যায় জীবন থেকে। অপেক্ষায়। আশায়। একটা ছোট্ট আশাকে আঁকড়ে থেকে। )
(হ্যাঁ, অগ্নি আর রুমুনের...)
- বৃষ্টি থামল?
- থেমেছিল। সেই দেখে বেরোলাম। ক্যাবে উঠতে আবার শুরু হল।
- ভাগ্যিস ক্যাব পেলি। এই ওয়েদারে তো সেও এক অ্যাডিশানাল সমস্যা।
- সাত কিলোমিটার ডিস্টেন্স তিনশো পড়ল।
- ভগবান! তবে হ্যাঁ, আর কী করবি। সাইড এফেক্টস অফ সাচ আ লাভ্লি ওয়েদার।
- নিকুচি করেছে লাভ্লি।
- কেন কী হল?
- প্র্যাক্টিকালি ভাবতে গেলে এই যে এরকম অস্বাভাবিক ক্যাব ফ্যের। প্লাস রাস্তায় জল কাদা প্যাচপ্যাচ।
- কন্টিন্যু।
- আর ইমোশনালি ভাবতে গেলে যত রাজ্যের মন খারাপ এসে বাসা বাঁধছে আমার মনে।
- সে কী কেন?
- এরকম ডিপ্রেসিং ওয়েদারে আমার সব সময়ই এমন মন খারাপ লাগে।
- ডোন্ট ব্লেম দ্য ওয়েদার।
- নয়তো কী? বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। আর সেই সাথে আমার মন খারাপটা এক্সপোনেনশিয়ালি বেড়েই চলেছে।
- আমার এখানে সারাদিন সূর্যের তেজ গোবি সাহারাকে বলে বলে অন্তত সাত গোল দেবে। গাছগুলোকে দিনে দু'বার ধরে জল দিতে হচ্ছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির। এমন ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও আমার ভীষণ মন কেমন করছে। সারাদিন ভুলভাল এদিক ওদিক কত কমেডি ভিডিও দেখলা। গান শুনলাম। কিছুতেই কিছু হল না। মন যেমন ভার ছিল সকালে, এখনও তেমনই আছে। এবার বল?
- একটাই চিকিৎসা।
- কী?
- ফিরে আয়।
- আই উইশ...
- প্লীজ... আমার একটুও ভালো লাগছে না।
- আমারই কি ভালো লাগছে নাকি?
- তাহলে পড়ে আছিস কেন?
- আমার হাতে নেই তো। থাকলে তোর মনে হয় এই এতদূরে এরকম পড়ে থাকতাম...
- টেস্টিং টাইমস।
- অ্যান্ড উই উইল কাম আউট উইদ ফ্লায়িং কালারস। দেখিস?
- মিস ইউ।
(অপর প্রান্তে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে ঢেকে যায় বৃষ্টিস্নাত ব্যস্ত শহরের ট্র্যাফিকের পাগল করা শব্দ। আরেকটা দিন কেটে যায় জীবন থেকে। অপেক্ষায়। আশায়। একটা ছোট্ট আশাকে আঁকড়ে থেকে। )
সংলাপ
অগ্নি আর রুমুনের ওয়াটসঅ্যাপের চ্যাট:
- খেয়েছিস?
- হুম। এই তো।
- বেশ।
- তা হঠাৎ?
- এমনিই।
- এমনি এমনি তো এরকম প্রশ্ন করার মেয়ে তুই নোস। কোনোদিনও করিসও না। ব্যাপারটা কী?
- ঠিক বুঝে যাস, বল?
- বল, বল।
- এই এখন ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম। প্রেম ১০১। লেখা "you are not a true girlfriend if you have never messaged him 'mele babu ne thana thaya?'"
- ফেসপাম!
- আহা, সাড়ে থেকে হোল নাম্বারে প্রোমোশন পেয়ে গিয়েছিস, অথচ একদিনও এরকম মেসেজ করলাম না, তা হয়? তবে এতোটাও ঢং আমি করতে পারবো না বাবা। তাই মডিফায়েড ভার্সান।
- বুঝলাম।
- যা। কাজ কর। আমিও কাজ করি। প্রচুর ডেডলাইন্স।
- লাভ ইউ টু!
- ও হ্যাঁ। লাভ ইউ!
- খেয়েছিস?
- হুম। এই তো।
- বেশ।
- তা হঠাৎ?
- এমনিই।
- এমনি এমনি তো এরকম প্রশ্ন করার মেয়ে তুই নোস। কোনোদিনও করিসও না। ব্যাপারটা কী?
- ঠিক বুঝে যাস, বল?
- বল, বল।
- এই এখন ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম। প্রেম ১০১। লেখা "you are not a true girlfriend if you have never messaged him 'mele babu ne thana thaya?'"
- ফেসপাম!
- আহা, সাড়ে থেকে হোল নাম্বারে প্রোমোশন পেয়ে গিয়েছিস, অথচ একদিনও এরকম মেসেজ করলাম না, তা হয়? তবে এতোটাও ঢং আমি করতে পারবো না বাবা। তাই মডিফায়েড ভার্সান।
- বুঝলাম।
- যা। কাজ কর। আমিও কাজ করি। প্রচুর ডেডলাইন্স।
- লাভ ইউ টু!
- ও হ্যাঁ। লাভ ইউ!
সংলাপ
সকাল সকাল চমক
- গুড মর্নিং!
- উমম। মঅঅর্নিং। এত সকাল সকাল? কটা বাজলো?
- আটটা। এমন কিছু সকাল সকাল না।
- হুম।
- উঠে পড়ো।
- উঠছি। দু'মিনিট একটু আড়মোড়া ভাঙি। প্লিজ।
- ঠিক আছে। দেরি করো না। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করেছি। টেবিল সেট করছি। চলে এসো।
- হুম।
(খানিক পরে হাত মুখ ধুয়ে ব্রাশ টাশ করে ডাইনিং রুমে প্রবেশ।)
- বসে পড়ো।
- এই এক মিনিট।
- কী?
- আমি কি কোনো ভুল করেছি? আগাম সরি!
- ধ্যাৎ। ভুল করতে যাবে কেন?
- ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে লাগছে। টেবিলে কড়া কফির সুগন্ধ ভুরভুর করছে। তার সাথে দেখতে পাচ্ছি চিকেন এন্ড এগ স্যান্ডউইচ। তোর মুখে হাসিও রয়েছে। এদিকে আবার তুমি তুমি করে কথা বলছিস সকাল থেকে। আই এম কনফিউজড!
(বেশ জোরে হেসে) - ওই জন্যই আগেভাগে সরি বললি? বাবা রে। মা রে। কান্ট স্টপ লাফিং নাউ।
- যাক। ব্যাক টু তুই। রিলিভড। কিন্তু কেসটা কী হয়েছিল বল?
- একচ্যুয়ালি আমি ওয়াটসআপে আমাদের সেই প্রাচীন চ্যাটগুলো পড়ছিলাম।
- পাঁচবছর আগের চ্যাট এখনও কোথায় পেলি?
- চ্যাট তো আমি ডিলিট করিনা। আমাদের চ্যাট উইন্ডোতে স্ক্রল করছিলাম। কাল মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম আসছিল না। কী করব। তাই।
- ভগবান। ওই জন্যই তোর এত ডার্ক সার্কলস। না ঘুমিয়ে ওয়াটসআপ।
- তা কী করবো? তুই ভসভস করে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিস পাশে। টায়ার্ড ছিলি। আর ডিস্টার্ব করিনি। তাই বসে বসে চ্যাট পড়ছিলাম। আর ভয়েস নোটগুলো শুনতে শুনতে তবে ঘুম এলো।
- ফেসপাম! তা যাক গে। চ্যাট পড়ে কী হলো?
- হলো এই যে দেখলাম শুরুর এক মাস আমরা কীরকম তুমি তুমি করে কথা বলতাম নিজেদের মধ্যে। এত হাসি পেয়ে গেল!!! তাই ভাবলাম, লেট মি রি-লিভ দোজ ডেজ। তাই।
- তুই পাগল জানতাম। তা বলে এতটা, ভাবতে পারিনি।
- চমকে গেছিলি তো?
- তা আর বলতে?
- যাক। মাঝে মাঝে চমকে দেওয়া ভালো। প্রেম অটুট হয়।
- এটা কোন মহান ব্যক্তির বাণী?
- হবে কোনো করণ জোহরের সিনেমা টিনেমা।
- ডাবল ফেসপাম।
- গুড মর্নিং!
- উমম। মঅঅর্নিং। এত সকাল সকাল? কটা বাজলো?
- আটটা। এমন কিছু সকাল সকাল না।
- হুম।
- উঠে পড়ো।
- উঠছি। দু'মিনিট একটু আড়মোড়া ভাঙি। প্লিজ।
- ঠিক আছে। দেরি করো না। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করেছি। টেবিল সেট করছি। চলে এসো।
- হুম।
(খানিক পরে হাত মুখ ধুয়ে ব্রাশ টাশ করে ডাইনিং রুমে প্রবেশ।)
- বসে পড়ো।
- এই এক মিনিট।
- কী?
- আমি কি কোনো ভুল করেছি? আগাম সরি!
- ধ্যাৎ। ভুল করতে যাবে কেন?
- ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে লাগছে। টেবিলে কড়া কফির সুগন্ধ ভুরভুর করছে। তার সাথে দেখতে পাচ্ছি চিকেন এন্ড এগ স্যান্ডউইচ। তোর মুখে হাসিও রয়েছে। এদিকে আবার তুমি তুমি করে কথা বলছিস সকাল থেকে। আই এম কনফিউজড!
(বেশ জোরে হেসে) - ওই জন্যই আগেভাগে সরি বললি? বাবা রে। মা রে। কান্ট স্টপ লাফিং নাউ।
- যাক। ব্যাক টু তুই। রিলিভড। কিন্তু কেসটা কী হয়েছিল বল?
- একচ্যুয়ালি আমি ওয়াটসআপে আমাদের সেই প্রাচীন চ্যাটগুলো পড়ছিলাম।
- পাঁচবছর আগের চ্যাট এখনও কোথায় পেলি?
- চ্যাট তো আমি ডিলিট করিনা। আমাদের চ্যাট উইন্ডোতে স্ক্রল করছিলাম। কাল মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম আসছিল না। কী করব। তাই।
- ভগবান। ওই জন্যই তোর এত ডার্ক সার্কলস। না ঘুমিয়ে ওয়াটসআপ।
- তা কী করবো? তুই ভসভস করে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিস পাশে। টায়ার্ড ছিলি। আর ডিস্টার্ব করিনি। তাই বসে বসে চ্যাট পড়ছিলাম। আর ভয়েস নোটগুলো শুনতে শুনতে তবে ঘুম এলো।
- ফেসপাম! তা যাক গে। চ্যাট পড়ে কী হলো?
- হলো এই যে দেখলাম শুরুর এক মাস আমরা কীরকম তুমি তুমি করে কথা বলতাম নিজেদের মধ্যে। এত হাসি পেয়ে গেল!!! তাই ভাবলাম, লেট মি রি-লিভ দোজ ডেজ। তাই।
- তুই পাগল জানতাম। তা বলে এতটা, ভাবতে পারিনি।
- চমকে গেছিলি তো?
- তা আর বলতে?
- যাক। মাঝে মাঝে চমকে দেওয়া ভালো। প্রেম অটুট হয়।
- এটা কোন মহান ব্যক্তির বাণী?
- হবে কোনো করণ জোহরের সিনেমা টিনেমা।
- ডাবল ফেসপাম।
আক্ষেপ
এক বন্ধুকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে এসেছিল রুমুন আর ওর আরো কটা বন্ধু। এবার
ফেরার পালা। বাকি বন্ধুরা খেয়াল করেছে। কীরকম জানি ঝিম মেরে গেছে ও।
আসলে এয়ারপোর্টে এলেই রুমুনের মনটা এলোমেলো হয়ে যায়। হুড়মুড়িয়ে কত অনুভূতি, কত মুহূর্তেরা ভিড় করে এসে ওর গোছানো মনটাকে এক্কেবারে নেড়ে ঘেঁটে দিয়ে চলে যায়। এদিক ওদিক এত অচেনা মানুষের মধ্যে থেকেও একা লাগে বড়। কী করবে? সাথে যে অগ্নি নেই। কর্মসূত্রে দুজনে দুই শহরে। রোজ ভিডিও কলে 'দেখা' হলেও, দিনের শেষে একটু আঙুলের ফাঁকে আঙুল জড়িয়ে বসা যায় না। বা ইচ্ছে হলে ব্যের হাগ দিতে পারে না।
আজও তেমনই হয়েছে রুমুনের।
আসলে এয়ারপোর্টে এলেই রুমুনের মনটা এলোমেলো হয়ে যায়। হুড়মুড়িয়ে কত অনুভূতি, কত মুহূর্তেরা ভিড় করে এসে ওর গোছানো মনটাকে এক্কেবারে নেড়ে ঘেঁটে দিয়ে চলে যায়। এদিক ওদিক এত অচেনা মানুষের মধ্যে থেকেও একা লাগে বড়। কী করবে? সাথে যে অগ্নি নেই। কর্মসূত্রে দুজনে দুই শহরে। রোজ ভিডিও কলে 'দেখা' হলেও, দিনের শেষে একটু আঙুলের ফাঁকে আঙুল জড়িয়ে বসা যায় না। বা ইচ্ছে হলে ব্যের হাগ দিতে পারে না।
আজও তেমনই হয়েছে রুমুনের।
ভাল্লাগছেনা কিচ্ছুটি। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। যতবার চোখ পড়েছে, দেখেছে
ডিসপ্লে বোর্ডে উঠছে বারবার, 6E 6385 সঠিক সময়ে উড়বে। খুব ইচ্ছে করছিল।
খুউব। টুক করে একটা টিকিট কেটে এক্ষুণি চলে যায় ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির
কাছে। কিন্তু... কিন্তু, বাস্তবতার শিকলে যে ওদের হাত পা বাঁধা। কেন যে বড়
হয়...
বেশ তো চলছিল। আবার সব উল্টে পাল্টে গেল।
ভাল্লাগেনা।
ধুর।
আবার সারা রাত বালিশ ভিজবে। আবার। আবার।
আবার...
বেশ তো চলছিল। আবার সব উল্টে পাল্টে গেল।
ভাল্লাগেনা।
ধুর।
আবার সারা রাত বালিশ ভিজবে। আবার। আবার।
আবার...
Thursday, March 14, 2019
মেমোরিজ
সকাল হলেই ফেসবুক খুলে রুমুনের প্রথম কাজই হলো "মেমোরিজ" দেখা। বেশ লাগে
ওর। ফেলে আসা বছরগুলিকে কী সুন্দর আরো একবার "রি-লিভ" করা যায়। আজও তেমনই
দেখতে দেখতে দু'বছর আগের একটা স্ট্যাটাস চোখে পড়লো ওর। অগ্নিকে ডেকে দেখিয়ে
বলল, "দেখ, দেখ। কীসব লিখতাম তখন ফেসবুকে। 'সাড়ে পাঁচ বছরে সাড়ে পাঁচখানা
ক্রাশ/ভালোবাসা। এত সেরোটোনিন/ডোপামিন আসে কোত্থেকে আমার?'"
অগ্নি বেশ গম্ভীর মুখ করে বলে, "তা এই সাড়ে পাঁচখানা ক্রাশ/ভালোবাসার গল্পটা একজ্যাক্টলি কী? সাড়েটা কে?"
রুমুন মুচকি হেসে বলে, "তুই। আবার কে!"
"মানে? সাড়ে কেন?" অগ্নি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
"তখনও তুই আমায় প্রোপোজ করিসনি। হাবেভাবে বুঝছি অল্পস্বল্প। ভালোবাসিস। এদিকে আমি বলতে পারছিনা, চাইলেও। তার আগের চারটের এক্সপিরিয়েন্স আমায় বিরত রাখছে নিজে থেকে তোকে প্রোপোজ করতে। তাই ওই আর কী..."
"ভগবান!" অগ্নি কপালে হাত দিয়ে বলে।
"থাক, আর ভগবানকে ডাকতে হবে না। ভাগ্যিস কোনো একদিন সুমতি হয়েছিল তোর.."
"না মানে সেটাই জিজ্ঞেস করতাম ওঁকে। কেন কেন কেন সেদিন 'সুমতি'টা দিয়েছিলেন আমায়। ফেঁসে গেলাম তো আগামী সাত জন্ম।" হাসতে হাসতে অগ্নি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। খানিক দ্রুতপদেই।
প্রায়র এক্সপিরিয়েন্স বলছে, এরপর ওর কপালে বিশেষ দুর্ভোগ আছে।
অগ্নি বেশ গম্ভীর মুখ করে বলে, "তা এই সাড়ে পাঁচখানা ক্রাশ/ভালোবাসার গল্পটা একজ্যাক্টলি কী? সাড়েটা কে?"
রুমুন মুচকি হেসে বলে, "তুই। আবার কে!"
"মানে? সাড়ে কেন?" অগ্নি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
"তখনও তুই আমায় প্রোপোজ করিসনি। হাবেভাবে বুঝছি অল্পস্বল্প। ভালোবাসিস। এদিকে আমি বলতে পারছিনা, চাইলেও। তার আগের চারটের এক্সপিরিয়েন্স আমায় বিরত রাখছে নিজে থেকে তোকে প্রোপোজ করতে। তাই ওই আর কী..."
"ভগবান!" অগ্নি কপালে হাত দিয়ে বলে।
"থাক, আর ভগবানকে ডাকতে হবে না। ভাগ্যিস কোনো একদিন সুমতি হয়েছিল তোর.."
"না মানে সেটাই জিজ্ঞেস করতাম ওঁকে। কেন কেন কেন সেদিন 'সুমতি'টা দিয়েছিলেন আমায়। ফেঁসে গেলাম তো আগামী সাত জন্ম।" হাসতে হাসতে অগ্নি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। খানিক দ্রুতপদেই।
প্রায়র এক্সপিরিয়েন্স বলছে, এরপর ওর কপালে বিশেষ দুর্ভোগ আছে।
Wednesday, March 13, 2019
ঘুঙুর
সারা সপ্তাহ শান্ত চুপচাপ এই অ্যাপার্টমেন্টটা উইকেন্ড এলেই প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। তখন এক দঙ্গল কচি কাঁচার ভিড়ে, তাদের হাসির কলরবে আর ঘুঙুরের শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। ডালিয়ার নিস্তরঙ্গ জীবনেও প্রাণের ঝাপটা আসে শনি আর রবি - এই দুদিনে। দুপুর থেকেই শুরু হয় আলমারি খুলে পছন্দের শাড়ি বাছা। তারপর ঘন্টাখানেকের ওপর ধরে চলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ওর মেকআপ। পছন্দসই সাজগোজের শেষে ঝুঁকে বসে পায়ে সযত্নে পরে নেয় পরম প্রিয় ঘুঙুর।
তারপর বড় হলঘরে এসে সিডি প্লেয়ারটা চালিয়ে দেয়। একের পর এক নাচের বোল বাজতে থাকে। সাথে সাথে বাচ্চাগুলোও তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। আর উইলচেয়ারে বসে দুই হাত দিয়ে ওদের ভুলগুলো শুধরে দেয় ডালিয়া।
এই রেওয়াজ চলে আসছে গত দু'বছর ধরে। সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর থেকে শরীরের নীচের অংশের সাড় চলে যাওয়ার পরও নাচকে ছাড়তে পারেনি ডালিয়া। বা বলা চলে, নাচ ডালিয়াকে ছেড়ে যেতে পারেনি।
তারপর বড় হলঘরে এসে সিডি প্লেয়ারটা চালিয়ে দেয়। একের পর এক নাচের বোল বাজতে থাকে। সাথে সাথে বাচ্চাগুলোও তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। আর উইলচেয়ারে বসে দুই হাত দিয়ে ওদের ভুলগুলো শুধরে দেয় ডালিয়া।
এই রেওয়াজ চলে আসছে গত দু'বছর ধরে। সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর থেকে শরীরের নীচের অংশের সাড় চলে যাওয়ার পরও নাচকে ছাড়তে পারেনি ডালিয়া। বা বলা চলে, নাচ ডালিয়াকে ছেড়ে যেতে পারেনি।
Tuesday, March 12, 2019
বসন্ত এসে গেছে
অফিস থেকে ফিরে রুমুন দেখল অগ্নি বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। মনে হয় বসের সাথে মিটিংটা ভালোয় ভালোয় মিটেছে। ঘরে ঢুকে দেখল ও গুনগুন করে গান গাইছে। একটু কাছে আসতে কানে এলো জনপ্রিয় গান, "বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা..."
একটু হেসেই রুমুন জিজ্ঞেস করলো, "কী ব্যাপার? গান ধরেছিস যে?"
অগ্নি গান না থামিয়েই হেসে মাথা নাড়ে।
রুমুন বলতে থাকে, "অবশ্য তোর আর দোষ কী? বসন্ত কাল। দক্ষিণের বারান্দা থেকে বেশ একটা ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আমারই গান পাচ্ছে!"
তখনই ফ্ল্যাটের কলিং বেলটা বাজল। অগ্নি "আমি দেখছি" বলে মোবাইলটা হাতে উঠে গেলো দরজা খুলতে।
মিনিট দুয়েক পর অগ্নির গলা শোনা গেলো, "এদিকে চলে আয়। এইবারে বুঝবই গানের তাৎপর্য।"
"কী হয়েছে?" জিজ্ঞেস করতে করতে রুমুন বেরিয়ে এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে ফুড ডেলিভারি অ্যাপের প্যাকেট থেকে দুটো বড় বাক্স বের করছে অগ্নি।
"নে, দুটো বড় প্লেট নামা। এইবারে সত্যিই "বসন্ত এসে গেছে"।"
রুমুন একটু ভেবলে তাকিয়ে রইল।
"আরে, বুঝছিস না? ফিস কবিরাজি অ্যান্ড চিকেন কাটলেট। স্ট্রেট ফ্রম বসন্ত কেবিন।"
রুমুন এবার হেসে কুটিপাটি। বলল, "ও হরি! এতক্ষণে বুঝলাম!"
Monday, March 11, 2019
বালিশ
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটে অনিতা আর হর্ষবর্ধনের আরো ছোট্ট সংসার। দুজনেই গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস। ল্যাবের কাজ, তার প্রেশার, বিদেশ বিভূঁইয়ে একলাযাপন, পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকা। সব মিলিয়ে দুজনেই নাজেহাল। তাই সংসারের বয়স ছয়মাস না পেরোলেও হানিমুন পিরিয়ডটা কবে যে ফুরুত করে উড়ে গিয়েছে, টেরই পায়নি ওরা।
আজ ওদের সকাল থেকে ঝগড়া শুরু হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কে পাউরুটি টোস্ট করে গ্যাস মুছে রাখেনির মতো নিতান্তই সামান্য হলেও সমস্ত জমে থাকা মান অভিমান উপচে উপচে পড়েছে সারাদিন। ডিপার্টমেন্ট গিয়ে পর্যন্ত একসাথে লাঞ্চ সারেনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে যে যার মতো নিজে নিজে। আলাদা সময়ে।
সারাদিন কেউই কারুর সাথে কথা না বললেও যে যার মতো নির্দিষ্ট কাজ করে চলেছিল। একজন কাচা জামা ভাঁজ করে তুলে রাখলো, তো আরেকজন ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করলো। বিনা বাক্যব্যায়ে একজন টিভি চালিয়ে সোফায় বসে খেয়েও নিলো। অন্যজন হাতে বই নিয়ে। এই অবধি সব ঠিক চলছিল।
বাধ সাধলো শোয়ার সময়। বেডরুম একটাই। আজ তো কিছুতেই দুজনে এক ঘরে শোবে না। অন্যান্যবার হর্ষবর্ধন শিভালরি দেখিয়ে অনিতার জন্য বেডরুম ছেড়ে দিয়ে নিজে লিভিং রুমে বালিশ কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ যে সকালবেলা রাগের মাথায় অনিতা কাঁচি চালিয়ে বালিশের সমস্ত তুলো বের করে দিয়েছে। অগত্যা?
খানিক ইতস্তত করলো দুজনেই। ঘড়ির কাঁটা দশটা পেরিয়ে এগারোটা পৌঁছে গেল। কিন্তু ওয়াকিবহাল দম্পতির কেউই আগ বাড়িয়ে আর শুতে যেতে পারছেনা।
সোয়া এগারোটার দিকে অনিতা একবার গলা খাকরি দিয়ে বলল, "বালিশ তো মোটে একটাই। ফর অল প্র্যাকটিক্যাল পারপাজেস, আপাতত যুদ্ধ বিরতি হোক। কী বলিস?"
হর্ষবর্ধন যেন ঠিক এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ও অনিতার কথাটা লুফে নিয়ে বলল, "এমনিও চব্বিশ ঘন্টা ঝগড়া বহাল রাখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কাজেই এবার মিটিয়ে নিলেই তো হয় একেবারে পাকাপাকিভাবে?"
অনিতা কিছু বলেনা। মুচকি হেসে বেডরুমে ঢোকে, সাধের বালিশের বৃহত্তর ভাগের দখল নিতে।
আজ ওদের সকাল থেকে ঝগড়া শুরু হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কে পাউরুটি টোস্ট করে গ্যাস মুছে রাখেনির মতো নিতান্তই সামান্য হলেও সমস্ত জমে থাকা মান অভিমান উপচে উপচে পড়েছে সারাদিন। ডিপার্টমেন্ট গিয়ে পর্যন্ত একসাথে লাঞ্চ সারেনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে যে যার মতো নিজে নিজে। আলাদা সময়ে।
সারাদিন কেউই কারুর সাথে কথা না বললেও যে যার মতো নির্দিষ্ট কাজ করে চলেছিল। একজন কাচা জামা ভাঁজ করে তুলে রাখলো, তো আরেকজন ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করলো। বিনা বাক্যব্যায়ে একজন টিভি চালিয়ে সোফায় বসে খেয়েও নিলো। অন্যজন হাতে বই নিয়ে। এই অবধি সব ঠিক চলছিল।
বাধ সাধলো শোয়ার সময়। বেডরুম একটাই। আজ তো কিছুতেই দুজনে এক ঘরে শোবে না। অন্যান্যবার হর্ষবর্ধন শিভালরি দেখিয়ে অনিতার জন্য বেডরুম ছেড়ে দিয়ে নিজে লিভিং রুমে বালিশ কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ যে সকালবেলা রাগের মাথায় অনিতা কাঁচি চালিয়ে বালিশের সমস্ত তুলো বের করে দিয়েছে। অগত্যা?
খানিক ইতস্তত করলো দুজনেই। ঘড়ির কাঁটা দশটা পেরিয়ে এগারোটা পৌঁছে গেল। কিন্তু ওয়াকিবহাল দম্পতির কেউই আগ বাড়িয়ে আর শুতে যেতে পারছেনা।
সোয়া এগারোটার দিকে অনিতা একবার গলা খাকরি দিয়ে বলল, "বালিশ তো মোটে একটাই। ফর অল প্র্যাকটিক্যাল পারপাজেস, আপাতত যুদ্ধ বিরতি হোক। কী বলিস?"
হর্ষবর্ধন যেন ঠিক এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ও অনিতার কথাটা লুফে নিয়ে বলল, "এমনিও চব্বিশ ঘন্টা ঝগড়া বহাল রাখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কাজেই এবার মিটিয়ে নিলেই তো হয় একেবারে পাকাপাকিভাবে?"
অনিতা কিছু বলেনা। মুচকি হেসে বেডরুমে ঢোকে, সাধের বালিশের বৃহত্তর ভাগের দখল নিতে।
songlap
রবিবার সন্ধ্যায় রুমুন আর অগ্নির বাড়ি ঠিক কী হচ্ছে? ছোট্ট এক ঝলক।
(দুই হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে প্রবেশ অগ্নির।)
- নে, চা'টা ধর।
- ও। থ্যাংকস। বিস্কুটের কৌটোটা আনিসনি?
- আমার দুটো মোটে হাত বাবা, কী করে তাতে দুই কাপ চা আর বিস্কুটের কৌটো ম্যানেজ করবো?
- ইউ নো, দের ইজ সামথিং কল্ড আ ট্রে দ্যাট ইউ কুড ইউজ।
- মাথায় আসেনি। নেক্সট টাইম ফর শিয়র। দাঁড়া আনছি।
- না। তুই বোস। আমি আনছি।
- উঠছিসই যখন, একটু প্লিজ ছোট্ট করে নাগেটস ভেজে আনবি সাথে?
- চিকেন না ভেজ?
- অফ কোর্স চিকেন।
- ও ইয়া, রাইট। কোনোদিনও যদি নন ভেজের অপশন থাকা সত্ত্বেও তুই ভেজ চাস, বুঝবো ইট ইজ এ রেসকিউ সিগন্যাল ফ্রম ইউ। রাইট রাইট।
- হুম।
- আনছি।
- আর শোন, মুখরোচকের প্যাকেটটার কী অবস্থা?
- আধ প্যাকেট আছে।
- ওটাও প্লিজ নিয়ে আসিস।
- হুম।
(দুই হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে প্রবেশ অগ্নির।)
- নে, চা'টা ধর।
- ও। থ্যাংকস। বিস্কুটের কৌটোটা আনিসনি?
- আমার দুটো মোটে হাত বাবা, কী করে তাতে দুই কাপ চা আর বিস্কুটের কৌটো ম্যানেজ করবো?
- ইউ নো, দের ইজ সামথিং কল্ড আ ট্রে দ্যাট ইউ কুড ইউজ।
- মাথায় আসেনি। নেক্সট টাইম ফর শিয়র। দাঁড়া আনছি।
- না। তুই বোস। আমি আনছি।
- উঠছিসই যখন, একটু প্লিজ ছোট্ট করে নাগেটস ভেজে আনবি সাথে?
- চিকেন না ভেজ?
- অফ কোর্স চিকেন।
- ও ইয়া, রাইট। কোনোদিনও যদি নন ভেজের অপশন থাকা সত্ত্বেও তুই ভেজ চাস, বুঝবো ইট ইজ এ রেসকিউ সিগন্যাল ফ্রম ইউ। রাইট রাইট।
- হুম।
- আনছি।
- আর শোন, মুখরোচকের প্যাকেটটার কী অবস্থা?
- আধ প্যাকেট আছে।
- ওটাও প্লিজ নিয়ে আসিস।
- হুম।
(মিনিট দশেক পর। রান্নাঘর থেকে ভাজাভুজির ছ্যাক ছোক শব্দ এবং সুস্বাদু গন্ধ আসছে।)
- এই শোন না।
- আবার কী?
- কালকের লেফট ওভার গাজরের হালুয়া আছে না?
- না। নেই।
- এই, কী করে হয়? আমি নিজে রেখেছি ফ্রিজে।
- নেই তো আমি কী করব?
- তুই বললেই হলো?
- আরে এই তো এখন নাগেটসগুলো বের করলাম। থাকলে তো চোখে পড়ত।
- উহু। হতেই পারে না।
- তুই নিজে এসে দেখে যা।
- হ্যাঁ আসছি।
(অগ্নির রান্নাঘরে প্রবেশ। সামনে রাখা কাঁচের বাটিতে গাজরের হালুয়া।)
- এটা কী হলো? এইরকম রসিকতার কী মানে?
- রান্নাঘরে ঢুকেই দেখলাম সামনেই ট্রে। তাতে চা চলকেও পড়েছে। বুঝে গেলাম। গোটা ব্যাপারটাই প্ৰি প্ল্যান্ড। স্রেফ আমায় খাটানোর জন্য।
- সাবাশ তোপসে!
- যা বারান্দা থেকে চায়ের কাপ দুটো নিয়ে আয়। মাইক্রোতে আরেকবার গরম করে আন। আমি এগুলো নিয়ে বসছি।
- খাটিয়ে খাটিয়ে মারলি আমায়। উফ।
- ফুড ফর ওয়ার্ক! সিম্পল!!
- এই শোন না।
- আবার কী?
- কালকের লেফট ওভার গাজরের হালুয়া আছে না?
- না। নেই।
- এই, কী করে হয়? আমি নিজে রেখেছি ফ্রিজে।
- নেই তো আমি কী করব?
- তুই বললেই হলো?
- আরে এই তো এখন নাগেটসগুলো বের করলাম। থাকলে তো চোখে পড়ত।
- উহু। হতেই পারে না।
- তুই নিজে এসে দেখে যা।
- হ্যাঁ আসছি।
(অগ্নির রান্নাঘরে প্রবেশ। সামনে রাখা কাঁচের বাটিতে গাজরের হালুয়া।)
- এটা কী হলো? এইরকম রসিকতার কী মানে?
- রান্নাঘরে ঢুকেই দেখলাম সামনেই ট্রে। তাতে চা চলকেও পড়েছে। বুঝে গেলাম। গোটা ব্যাপারটাই প্ৰি প্ল্যান্ড। স্রেফ আমায় খাটানোর জন্য।
- সাবাশ তোপসে!
- যা বারান্দা থেকে চায়ের কাপ দুটো নিয়ে আয়। মাইক্রোতে আরেকবার গরম করে আন। আমি এগুলো নিয়ে বসছি।
- খাটিয়ে খাটিয়ে মারলি আমায়। উফ।
- ফুড ফর ওয়ার্ক! সিম্পল!!
Saturday, March 9, 2019
বায়স্কোপ
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আরো একবার লাল কাঞ্জিভরমের আঁচলটা ঠিক করে নিলো নয়নিকা চ্যাটার্জি। শাড়ির সাথে মানানসই ভারী গয়না পরেছে। তবে মেকআপ অবশ্যই যৎসামান্য। ডাকসাইটে সুন্দরী নয়নিকার কোনো বাড়তি প্রসাধনের কোনোদিনও প্রয়োজন হয়নি। অভিনেত্রী থাকাকালীনও না। এখন এই মাঝবয়সে এসেও না। স্বামী সুপ্রতিম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নামকরা প্রযোজক। পৈতৃক পেশা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রোডাকশন হাউজের সিনেমার প্রিমিয়ার পার্টিতে ওদের আজ নেমন্তন্ন। এক্কেবারে নতুন কোনো পরিচালকের প্রথম সিনেমা। তবুও ট্রেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। গানও সুপারহিট। আর তাই আজ প্রচুর লোকজন থাকবে, নামী দামী সবাই। অনেক মিডিয়া। নিজেদের স্টেটাসটা বজায় রাখতেই যাওয়া আজ।
দামী গাড়ী চেপে চ্যাটার্জি দম্পতি যখন পৌঁছলো মাল্টিপ্লেক্সে, তখন উপচে পড়ছে ভিড়। ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি। মাইক হাতে নিউজরিপোর্টার। ইন্ডাস্ট্রির হুজ হু সব্বাই হাজির। ছবির প্রযোজক মিস্টার আগরওয়াল নিজে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে সব অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। ওদের দেখে এক গাল হেসে বললেন, "আরে দাদা, এত লেট করলেন। আসুন আসুন। বসুন। বৌদি, থ্যাংক ইউ ফর কামিং।" "প্রীতি, স্যর আর ম্যামকে ওদের সিটে পৌঁছে দাও।" নির্দেশমতো এক সুসজ্জিতা যুবতী ওদের দিকে এগিয়ে এলো। নিয়ে গেল প্রেক্ষাগৃহে। এক্কেবারে সামনের সারিতে ওদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে প্রীতি এগিয়ে গেলো পরবর্তী অতিথিদের জন্য।
যথাসময়ে আগরওয়াল বাবু এলেন। দু চার মিনিট বক্তৃতা দিলেন। কেউ কেউ পরিচালক কই জিজ্ঞেস করায়, বললেন, "ও তো এক্কেবারে নতুন। খুব নার্ভাস। বলেছে আড়াল থেকে আপনাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে তারপরে সিনেমার শেষে এসে পরিচয় করবে। তাহলে চলুন, আর সময় নষ্ট না করে সিনেমাটা দেখি। আশা করছি, আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।"
প্রেক্ষাগৃহের সমস্ত আলো নিভে গেল। কালো পর্দার ওপর ভেসে উঠলো একটা ঝকঝকে নীল আকাশ। সামনে আরো ঝকঝকে সাদা কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবহে ভেসে উঠলো শান্তিদেব ঘোষের চিরপরিচিত কণ্ঠে "অমল ধবল পালে"। গাঢ় নীল গোটা গোটা অক্ষরে এবার লেখা উঠলো "রডোডেনড্রোন"। নয়নিকা চমকে উঠলো। তাহলে কি...
প্রেসিডেন্সির কোয়াড্রঙ্গেলে শীতের দুপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক বসে থাকা আর পাঁচটা সাধারণ যুগলের মতোই ওরা দুজনে বসে আছে। পিলারে হেলান দিয়ে। ছেলেটি মেয়েটির কাঁধে মাথা এলিয়ে। হাতে একটা খয়েরি মোটা বাঁধানো ডায়রি।
"বুঝলি নয়না, তোর আজ অবধি যত লেখা পড়েছি, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ এটা। প্রচন্ড সিনেম্যাটিক। এমনিতেই এত সুন্দর ডিটেলিং করেছিস, স্ক্রিপ্ট বানানো জলভাত। কোনোদিন যদি সিনেমা বানাতে চাস এটা দিয়ে, আমায় বলতে পারিস। আই এম সো কনভিন্সড উইথ দ্য স্টোরি।"
"বেশ। এই গল্পটা তোকেই দিলাম। তবে আমার একটা ইচ্ছে আছে। পারলে পূরণ করিস।"
"কী বল? তেরে লিয়ে সর আঁখো পর।"
"বাবাঃ, সিনেমা করার আগেই এত ড্রামাটিক!" নয়না হেসে বলে।
"ইয়ার্কি না। বলে ফেল তোর ইচ্ছেটা। কাঞ্চির রোলে তুই অভিনয় করবি? আর হিরো কাকে চাই? বুম্বাদা?"
"ধ্যাৎ। আমায় কে অভিনয়ে নেবে?"
"আমার এমন সুন্দরী বান্ধবীকে যে কেউ লুফে নেবে।"
"বাজে কথা থামা। বলছি যে যখন টাইটেল কার্ড আসবে স্ক্রিনে, প্লিজ অমল ধবল পালে গানটা দিস আবহে। শরতের সেটিংয়ে গল্প তো। তাই। আমার সবচেয়ে প্রিয় শরতের গান ওটা।"
"নিশ্চয়ই। আর যে সে গাইবে না। শান্তিদেব ঘোষের ভার্সানটাই বাজবে। আমি জানি, ওটা তোর প্রিয়।"
নয়নিকা অবাক হয়ে দেখতে থাকে সিনেমাটা। প্রতিটি সিন ওর চেনা। এমনকী কোনটার পর কী হতে চলেছে, সব বলে দিতে পারে। সংলাপ পর্যন্ত। থরথর করে কাঁপতে থাকে ও। ইন্টারভালের আগেই সুপ্রতিমকে "আমি একটু বাইরে যাচ্ছি" বলে বেরিয়ে যায়। বাইরে লবিতে তখন প্রায় কেউ নেই। শুনশান। কোল্ড ড্রিঙ্কের দোকান থেকে একটা স্প্রাইটের গ্লাস কিনে ঢকঢক করে খেলো পুরোটা। গলাটা শুকিয়ে গিয়েছিল। পার্চমেন্ট পেপারের মতো। ঠান্ডা পানীয়র ফলে এতক্ষণে একটু স্বস্তি। কালো গদির সোফায় বসলো নয়নিকা। হাতে ক্লাচ ব্যাগটা মুঠোর মধ্যে চেপে। ওই তীব্র এসির মধ্যেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।
এও কি সম্ভব? ওর এত বছর আগের লেখা গল্প। হুবহু। টাইটেল সিনসহ। ও ছাড়া আর জানতো বাণী। প্রেসিডেন্সির সহপাঠী। কিন্তু...কিন্তু মধুজা যে বলেছিল, বাণী রিহ্যাবেই আত্মহত্যা করে?
কলেজ পাস করার পর বাণী এক দুটো সিনেমা কুড়িয়ে বাড়িয়ে প্রযোজক জোগাড় করে করেছিল। সব ফ্লপ। ইতিমধ্যে নয়না ওরফে স্ক্রিনের নয়নিকা একটার পর একটা হিট দিচ্ছে। ওকে সাইন করাতে বাড়ির বাইরে প্রোডিউসারের ভিড়। বাণীকে অনেকবার টাকা দিয়ে ও সাহায্য করতে চেয়েছিল। বলেছিল ওর প্রযোজক হবে। কিন্তু বাণীর তখন মেল ইগো চরমে। নয়নার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ওদের সম্পর্কটাও শেষ হয়ে যায়। বাণী চেষ্টা চালিয়ে যায় সিনেমা বানানোর। নিজের সর্বস্ব দিয়ে একটা মাঝারি মাপের সিনেমাও বানায়। গ্রামের দিকে চলেছিল। সেই দেখে একটি বড় প্রোডাকশন হাউজ ওর সাথে চুক্তি করে তিনটে সিনেমার। সেই সিনেমার না আছে কোনো গল্প, না কোনো রুচি। তবুও ধার দেনা শোধ করতে ওকে এগুলো করতেই হয়।
নয়না ততদিনে সুপ্রতিমকে বিয়ে করেছে। প্রেম করেই। খবর পেয়েছে বাণীও ওর ক্যামেরম্যানের মেয়েকে বিয়ে করে ভরপুর সংসারী। এক দুটো রুচিশীল সিনেমার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু কপাল খারাপ। শহরের দর্শক তখন বাংলা সিনেমা দেখে না। গ্রামে সেসব জাত সিনেমা বোঝার লোক নেই। পরপর তিনটে ফ্লপ। বাজার মন্দা। প্রোডিউসারেরা আর রাজি নয় পরীক্ষা নিরীক্ষাতে। তাদের শুধুই চাই যাত্রাপালা গোছের সিনেমা। যা দেখে গ্রামের মানুষ খুশি হবে। দলে দলে এসে সিনেমা দেখবে।
বাণী ভুগতে লাগলো চরম হতাশায়। আস্তে আস্তে মদের নেশায় পড়লো। লিভারের বারোটা বাজলো। রিহ্যাবে ছিল। সেখানে একদিন ভোরবেলা ওর ঝুলন্ত দেহ আবিষ্কার হলো।
"কী? ভালো লাগছে না সিনেমাটা?" কাঁধে একটি হিমশীতল হাতের স্পর্শে চমকে তাকালো নয়নিকা। দেখলো এক বছর কুড়ি একুশের মেয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে। সাধারণ সাজগোজ। ও উত্তর দিলো না। মেয়েটি বললো আবার, "বেরিয়ে এলেন যে?"
"ইচ্ছে হলো না।" নয়নিকা উত্তর দিলো।
"আপনি প্লিজ দেখবেন। আপনার মতামতের জন্য ভীষণভাবে আমি ব্যাকুল। প্লিজ।"
"কে তুমি?" নয়নিকা বিস্ময়ভরে জিজ্ঞেস করে।
মেয়েটি স্মিত হেসে বলে, "আমি এ সিনেমার ডাইরেক্টর। আমার নাম তিতলি।"
"তুমি এই গল্প কোথায় পেলে? এই স্ক্রিপ্ট?" নয়নিকা জানতে চায়।
"বাণীব্রত মুখোপাধ্যায় আমার বাবা। ধরুন, পৈতৃক সম্পত্তিতে আমি একটি মোটা খয়েরি ডায়রি পাই। সেখানে ছিল ওই গল্পের স্ক্রিপ্ট। অরিজিনাল লেখাটাও। আমার খুব পছন্দ হয়। তাই সিনেমাটা বানাই। মায়ের কাছে শুনেছি, বাবার খুব ইচ্ছে ছিল এটা বানানোর। পারলো না। আমি তাই ফিল্ম স্কুলে গেলাম। হাত পাকালাম এক দুটো শর্ট বানিয়ে। এইটা আমার প্রথম ফুল লেন্থ ফিচার। তাই খুব নার্ভাস।"
নয়নিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তিতলির দিকে। কোনো শব্দ বেরোয় না মুখ দিয়ে।
তিতলি ওর হাত ধরে উঠিয়ে বলে, "আপনাকে এটা পুরোটা দেখতেই হবে। দয়া করে চলুন।"
নয়নিকা তিতলির হাত ধরে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকে। নিজের সিটে বসে। সুপ্রতিমের " কোথায় ছিলে? ইন্টারভাল হয়ে আবার শুরু হলো। ভালো এগোচ্ছে। মিস করলে"র উত্তরে "একটু দরকার ছিল" বলে পর্দায় চোখ ফেরালো। সিনেমা চলতে থাকে। দু ঘন্টা পর যথারীতি শেষও হয়। শেষ সিনে লেখা ওঠে, "থ্যাংক ইউ বাবা (বাণীব্রত মুখোপাধ্যায়)। থ্যাংক ইউ নয়না আন্টি।"
গোটা প্রেক্ষাগৃহ হাততালিতে ফেটে পড়ে। সকলের চোখেই জল, মুখে তৃপ্তির হাসি। অনেকদিন পর এমন এক চমৎকার সিনেমা দেখে সবাই অভিভূত।
নয়নিকা চ্যাটার্জি আঁচলের কোণ দিয়ে একবার চোখ মোছে। এগিয়ে যায় তিতলির দিকে। জড়িয়ে ধরে ওকে। ওর মধ্যে দিয়ে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে নিজের মেয়েবেলার সেই প্রিয় বন্ধুটিকে।
দামী গাড়ী চেপে চ্যাটার্জি দম্পতি যখন পৌঁছলো মাল্টিপ্লেক্সে, তখন উপচে পড়ছে ভিড়। ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি। মাইক হাতে নিউজরিপোর্টার। ইন্ডাস্ট্রির হুজ হু সব্বাই হাজির। ছবির প্রযোজক মিস্টার আগরওয়াল নিজে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে সব অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। ওদের দেখে এক গাল হেসে বললেন, "আরে দাদা, এত লেট করলেন। আসুন আসুন। বসুন। বৌদি, থ্যাংক ইউ ফর কামিং।" "প্রীতি, স্যর আর ম্যামকে ওদের সিটে পৌঁছে দাও।" নির্দেশমতো এক সুসজ্জিতা যুবতী ওদের দিকে এগিয়ে এলো। নিয়ে গেল প্রেক্ষাগৃহে। এক্কেবারে সামনের সারিতে ওদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে প্রীতি এগিয়ে গেলো পরবর্তী অতিথিদের জন্য।
যথাসময়ে আগরওয়াল বাবু এলেন। দু চার মিনিট বক্তৃতা দিলেন। কেউ কেউ পরিচালক কই জিজ্ঞেস করায়, বললেন, "ও তো এক্কেবারে নতুন। খুব নার্ভাস। বলেছে আড়াল থেকে আপনাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে তারপরে সিনেমার শেষে এসে পরিচয় করবে। তাহলে চলুন, আর সময় নষ্ট না করে সিনেমাটা দেখি। আশা করছি, আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।"
প্রেক্ষাগৃহের সমস্ত আলো নিভে গেল। কালো পর্দার ওপর ভেসে উঠলো একটা ঝকঝকে নীল আকাশ। সামনে আরো ঝকঝকে সাদা কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবহে ভেসে উঠলো শান্তিদেব ঘোষের চিরপরিচিত কণ্ঠে "অমল ধবল পালে"। গাঢ় নীল গোটা গোটা অক্ষরে এবার লেখা উঠলো "রডোডেনড্রোন"। নয়নিকা চমকে উঠলো। তাহলে কি...
প্রেসিডেন্সির কোয়াড্রঙ্গেলে শীতের দুপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক বসে থাকা আর পাঁচটা সাধারণ যুগলের মতোই ওরা দুজনে বসে আছে। পিলারে হেলান দিয়ে। ছেলেটি মেয়েটির কাঁধে মাথা এলিয়ে। হাতে একটা খয়েরি মোটা বাঁধানো ডায়রি।
"বুঝলি নয়না, তোর আজ অবধি যত লেখা পড়েছি, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ এটা। প্রচন্ড সিনেম্যাটিক। এমনিতেই এত সুন্দর ডিটেলিং করেছিস, স্ক্রিপ্ট বানানো জলভাত। কোনোদিন যদি সিনেমা বানাতে চাস এটা দিয়ে, আমায় বলতে পারিস। আই এম সো কনভিন্সড উইথ দ্য স্টোরি।"
"বেশ। এই গল্পটা তোকেই দিলাম। তবে আমার একটা ইচ্ছে আছে। পারলে পূরণ করিস।"
"কী বল? তেরে লিয়ে সর আঁখো পর।"
"বাবাঃ, সিনেমা করার আগেই এত ড্রামাটিক!" নয়না হেসে বলে।
"ইয়ার্কি না। বলে ফেল তোর ইচ্ছেটা। কাঞ্চির রোলে তুই অভিনয় করবি? আর হিরো কাকে চাই? বুম্বাদা?"
"ধ্যাৎ। আমায় কে অভিনয়ে নেবে?"
"আমার এমন সুন্দরী বান্ধবীকে যে কেউ লুফে নেবে।"
"বাজে কথা থামা। বলছি যে যখন টাইটেল কার্ড আসবে স্ক্রিনে, প্লিজ অমল ধবল পালে গানটা দিস আবহে। শরতের সেটিংয়ে গল্প তো। তাই। আমার সবচেয়ে প্রিয় শরতের গান ওটা।"
"নিশ্চয়ই। আর যে সে গাইবে না। শান্তিদেব ঘোষের ভার্সানটাই বাজবে। আমি জানি, ওটা তোর প্রিয়।"
নয়নিকা অবাক হয়ে দেখতে থাকে সিনেমাটা। প্রতিটি সিন ওর চেনা। এমনকী কোনটার পর কী হতে চলেছে, সব বলে দিতে পারে। সংলাপ পর্যন্ত। থরথর করে কাঁপতে থাকে ও। ইন্টারভালের আগেই সুপ্রতিমকে "আমি একটু বাইরে যাচ্ছি" বলে বেরিয়ে যায়। বাইরে লবিতে তখন প্রায় কেউ নেই। শুনশান। কোল্ড ড্রিঙ্কের দোকান থেকে একটা স্প্রাইটের গ্লাস কিনে ঢকঢক করে খেলো পুরোটা। গলাটা শুকিয়ে গিয়েছিল। পার্চমেন্ট পেপারের মতো। ঠান্ডা পানীয়র ফলে এতক্ষণে একটু স্বস্তি। কালো গদির সোফায় বসলো নয়নিকা। হাতে ক্লাচ ব্যাগটা মুঠোর মধ্যে চেপে। ওই তীব্র এসির মধ্যেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।
এও কি সম্ভব? ওর এত বছর আগের লেখা গল্প। হুবহু। টাইটেল সিনসহ। ও ছাড়া আর জানতো বাণী। প্রেসিডেন্সির সহপাঠী। কিন্তু...কিন্তু মধুজা যে বলেছিল, বাণী রিহ্যাবেই আত্মহত্যা করে?
কলেজ পাস করার পর বাণী এক দুটো সিনেমা কুড়িয়ে বাড়িয়ে প্রযোজক জোগাড় করে করেছিল। সব ফ্লপ। ইতিমধ্যে নয়না ওরফে স্ক্রিনের নয়নিকা একটার পর একটা হিট দিচ্ছে। ওকে সাইন করাতে বাড়ির বাইরে প্রোডিউসারের ভিড়। বাণীকে অনেকবার টাকা দিয়ে ও সাহায্য করতে চেয়েছিল। বলেছিল ওর প্রযোজক হবে। কিন্তু বাণীর তখন মেল ইগো চরমে। নয়নার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ওদের সম্পর্কটাও শেষ হয়ে যায়। বাণী চেষ্টা চালিয়ে যায় সিনেমা বানানোর। নিজের সর্বস্ব দিয়ে একটা মাঝারি মাপের সিনেমাও বানায়। গ্রামের দিকে চলেছিল। সেই দেখে একটি বড় প্রোডাকশন হাউজ ওর সাথে চুক্তি করে তিনটে সিনেমার। সেই সিনেমার না আছে কোনো গল্প, না কোনো রুচি। তবুও ধার দেনা শোধ করতে ওকে এগুলো করতেই হয়।
নয়না ততদিনে সুপ্রতিমকে বিয়ে করেছে। প্রেম করেই। খবর পেয়েছে বাণীও ওর ক্যামেরম্যানের মেয়েকে বিয়ে করে ভরপুর সংসারী। এক দুটো রুচিশীল সিনেমার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু কপাল খারাপ। শহরের দর্শক তখন বাংলা সিনেমা দেখে না। গ্রামে সেসব জাত সিনেমা বোঝার লোক নেই। পরপর তিনটে ফ্লপ। বাজার মন্দা। প্রোডিউসারেরা আর রাজি নয় পরীক্ষা নিরীক্ষাতে। তাদের শুধুই চাই যাত্রাপালা গোছের সিনেমা। যা দেখে গ্রামের মানুষ খুশি হবে। দলে দলে এসে সিনেমা দেখবে।
বাণী ভুগতে লাগলো চরম হতাশায়। আস্তে আস্তে মদের নেশায় পড়লো। লিভারের বারোটা বাজলো। রিহ্যাবে ছিল। সেখানে একদিন ভোরবেলা ওর ঝুলন্ত দেহ আবিষ্কার হলো।
"কী? ভালো লাগছে না সিনেমাটা?" কাঁধে একটি হিমশীতল হাতের স্পর্শে চমকে তাকালো নয়নিকা। দেখলো এক বছর কুড়ি একুশের মেয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে। সাধারণ সাজগোজ। ও উত্তর দিলো না। মেয়েটি বললো আবার, "বেরিয়ে এলেন যে?"
"ইচ্ছে হলো না।" নয়নিকা উত্তর দিলো।
"আপনি প্লিজ দেখবেন। আপনার মতামতের জন্য ভীষণভাবে আমি ব্যাকুল। প্লিজ।"
"কে তুমি?" নয়নিকা বিস্ময়ভরে জিজ্ঞেস করে।
মেয়েটি স্মিত হেসে বলে, "আমি এ সিনেমার ডাইরেক্টর। আমার নাম তিতলি।"
"তুমি এই গল্প কোথায় পেলে? এই স্ক্রিপ্ট?" নয়নিকা জানতে চায়।
"বাণীব্রত মুখোপাধ্যায় আমার বাবা। ধরুন, পৈতৃক সম্পত্তিতে আমি একটি মোটা খয়েরি ডায়রি পাই। সেখানে ছিল ওই গল্পের স্ক্রিপ্ট। অরিজিনাল লেখাটাও। আমার খুব পছন্দ হয়। তাই সিনেমাটা বানাই। মায়ের কাছে শুনেছি, বাবার খুব ইচ্ছে ছিল এটা বানানোর। পারলো না। আমি তাই ফিল্ম স্কুলে গেলাম। হাত পাকালাম এক দুটো শর্ট বানিয়ে। এইটা আমার প্রথম ফুল লেন্থ ফিচার। তাই খুব নার্ভাস।"
নয়নিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তিতলির দিকে। কোনো শব্দ বেরোয় না মুখ দিয়ে।
তিতলি ওর হাত ধরে উঠিয়ে বলে, "আপনাকে এটা পুরোটা দেখতেই হবে। দয়া করে চলুন।"
নয়নিকা তিতলির হাত ধরে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকে। নিজের সিটে বসে। সুপ্রতিমের " কোথায় ছিলে? ইন্টারভাল হয়ে আবার শুরু হলো। ভালো এগোচ্ছে। মিস করলে"র উত্তরে "একটু দরকার ছিল" বলে পর্দায় চোখ ফেরালো। সিনেমা চলতে থাকে। দু ঘন্টা পর যথারীতি শেষও হয়। শেষ সিনে লেখা ওঠে, "থ্যাংক ইউ বাবা (বাণীব্রত মুখোপাধ্যায়)। থ্যাংক ইউ নয়না আন্টি।"
গোটা প্রেক্ষাগৃহ হাততালিতে ফেটে পড়ে। সকলের চোখেই জল, মুখে তৃপ্তির হাসি। অনেকদিন পর এমন এক চমৎকার সিনেমা দেখে সবাই অভিভূত।
নয়নিকা চ্যাটার্জি আঁচলের কোণ দিয়ে একবার চোখ মোছে। এগিয়ে যায় তিতলির দিকে। জড়িয়ে ধরে ওকে। ওর মধ্যে দিয়ে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে নিজের মেয়েবেলার সেই প্রিয় বন্ধুটিকে।
Friday, March 8, 2019
নারী দিবস উপলক্ষে সংলাপ
রুমুন-অগ্নির নারী দিবস উপলক্ষে ফিল্মি সংলাপ:
- কীরে সারাদিনে একবারও উইমেন্স ডের উইশ করলি না?
- ধুর ধুর। নারী দিবস টিবস সব ফালতু। একটা দিন কেন লাগবে তোদেরকে সেলিব্রেট করতে?
- সে ভ্যালিড পয়েন্ট বটে। কিন্তু তবুও, নারী দিবসের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে একটা দিন তো আলাদা করে সম্মান করাই উচিত।
- উহু। সম্মানটা রোজ করা উচিত। ভালোটা রোজ বাসা উচিত।
- দ্যাটস ট্রু। এই জন্যই তোকে এত ভালোবাসি। কী সুন্দর সেনসিটিভ তুই এইসব বিষয়ে।
- হুম। তবে তুই কী করে জানলি যে এটা আমি জাস্ট বলার জন্য বললাম নাকি মিন করলাম?
- সে আমি জানি।
- তাই?
- হুম।
- তবুও, আজকের বিশেষ দিনে সবাই যখন তোকে উইশ করেছে...
- অফিসে বস পর্যন্ত মেল করেছে আমাদের সব ফিমেল এমপ্লয়িজদের। আলাদা করে। পার্সোনালাইজড।
- সে হয়তো দেখ এইচ আর থেকে ইন্সট্রাকশন এসেছিল।
- হতে পারে।
- তা যা বলছিলাম, তোকে সবাই যখন উইশ করলো, আমারও কিছু বিশেষ করে উচিত আজকের দিনে।
- করলে তো খুশি হবোই।
- তাহলে দাঁড়া দু মিনিট।
- এই, এই অগ্নি, কী হলো? মাথা নীচু করে দাঁড়ালি কেন?
- রুমুন, এই নাকি তুই নিজেকে এস আর কের এত বড় ফ্যান বলিস?
- এখানে আবার এস আর কে কোত্থেকে এলো?
- কুছ কুছ হোতা হ্যায়ের বিখ্যাত প্রোপোজ সিনটা মনে কর।
- উম, মনে পড়ছে না।
- পঞ্চাশবার দেখেছিস। আর আমায়ও তিরিশ বার দেখিয়েছিস। আমার ডায়লগ মুখস্থ, এদিকে তুই বলছিস মনে নেই। বোঝো কান্ড। আর যদি কখনো দেখি তোর সাথে সিনেমাটা...
- আজকেই দেখবো। টু ব্রাশ আপ অন ইট। এবার বল দেখি, কী ডায়লগ।
- শোন তাহলে।
- বল
- এক মর্দ কা সর সিরফ তিন ঔরতকে সামনে ঝুঁকতা হ্যায়। এক অপনে মা, এক দুর্গা মা, ঔর। ঔর...
(না এরপরের সিনে বিশেষ গেলাম না। চোখ টোখ মারামারি, বুকে জড়াজড়ি ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে। আপনার বরং সিনটা দেখে নিন। লিঙ্ক দিলাম।
https://youtu.be/Ta5gpHf3PFc)
- কীরে সারাদিনে একবারও উইমেন্স ডের উইশ করলি না?
- ধুর ধুর। নারী দিবস টিবস সব ফালতু। একটা দিন কেন লাগবে তোদেরকে সেলিব্রেট করতে?
- সে ভ্যালিড পয়েন্ট বটে। কিন্তু তবুও, নারী দিবসের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে একটা দিন তো আলাদা করে সম্মান করাই উচিত।
- উহু। সম্মানটা রোজ করা উচিত। ভালোটা রোজ বাসা উচিত।
- দ্যাটস ট্রু। এই জন্যই তোকে এত ভালোবাসি। কী সুন্দর সেনসিটিভ তুই এইসব বিষয়ে।
- হুম। তবে তুই কী করে জানলি যে এটা আমি জাস্ট বলার জন্য বললাম নাকি মিন করলাম?
- সে আমি জানি।
- তাই?
- হুম।
- তবুও, আজকের বিশেষ দিনে সবাই যখন তোকে উইশ করেছে...
- অফিসে বস পর্যন্ত মেল করেছে আমাদের সব ফিমেল এমপ্লয়িজদের। আলাদা করে। পার্সোনালাইজড।
- সে হয়তো দেখ এইচ আর থেকে ইন্সট্রাকশন এসেছিল।
- হতে পারে।
- তা যা বলছিলাম, তোকে সবাই যখন উইশ করলো, আমারও কিছু বিশেষ করে উচিত আজকের দিনে।
- করলে তো খুশি হবোই।
- তাহলে দাঁড়া দু মিনিট।
- এই, এই অগ্নি, কী হলো? মাথা নীচু করে দাঁড়ালি কেন?
- রুমুন, এই নাকি তুই নিজেকে এস আর কের এত বড় ফ্যান বলিস?
- এখানে আবার এস আর কে কোত্থেকে এলো?
- কুছ কুছ হোতা হ্যায়ের বিখ্যাত প্রোপোজ সিনটা মনে কর।
- উম, মনে পড়ছে না।
- পঞ্চাশবার দেখেছিস। আর আমায়ও তিরিশ বার দেখিয়েছিস। আমার ডায়লগ মুখস্থ, এদিকে তুই বলছিস মনে নেই। বোঝো কান্ড। আর যদি কখনো দেখি তোর সাথে সিনেমাটা...
- আজকেই দেখবো। টু ব্রাশ আপ অন ইট। এবার বল দেখি, কী ডায়লগ।
- শোন তাহলে।
- বল
- এক মর্দ কা সর সিরফ তিন ঔরতকে সামনে ঝুঁকতা হ্যায়। এক অপনে মা, এক দুর্গা মা, ঔর। ঔর...
(না এরপরের সিনে বিশেষ গেলাম না। চোখ টোখ মারামারি, বুকে জড়াজড়ি ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে। আপনার বরং সিনটা দেখে নিন। লিঙ্ক দিলাম।
https://youtu.be/Ta5gpHf3PFc)
Thursday, March 7, 2019
Song এ আমার
এককালে সুর তাল ছন্দ মোটামুটি ঠিকঠাক বজায় রাখতে পারতাম বলে সেই ছোট থেকেই আমার কয়েকবার স্টেজে গান গাইবার অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে। মনে আছে, তখন অনেকটাই ছোট। বছর ছয় সাত হবে হয়তো। বা আরো ছোট। গানের দিদিমণির স্কুলের ফাংশান হবে। আমি তখন সবে উনা বিনা কছুনা সো আর বিলাবল ভূপালির আরোহণ অবরোহণ ছেড়ে এক পিস রবীন্দ্রসংগীত শিখেছি। মজার ব্যাপার, সেটা কিন্তু 'আলো আমার আলো' না। বরং সেটা ছিল দুই লাইনের একটি গান। 'ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে'। যখন গানের দিদিমণি এটা শেখাতেন, বা আমি রেওয়াজ করতাম, আমার ঠাকুমার সে কী হাসি। নাতনি নাকি গান গাইছে। তাও এসব কীসব গান। সে যাই হোক, দিদিমণির বাড়ি নিয়মিত গিয়ে তবলচির সাথে প্র্যাকটিস করতে করতে (এবং প্রচুর বকাও খেয়েছি) শেষমেশ কোনো এক সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়ার সি এল টি মঞ্চে গানটা গেয়ে দিদিমণি, মা বাবা এবং আমি নিজে, সকলকে উদ্ধার করেছিলাম। শুনেছি নাকি টুকটাক প্রশংসাও কুড়িয়েছিলাম নাকি সেদিন। মনে নেই।
আজকে বিশেষ করে দুটি স্টেজ পারফরমেন্সের গল্প বলবো।
১।
২০১১র জানুয়ারি। তখন যাদবপুরে এম এস সি সেকেন্ড ইয়ার চলছে। একদিন ঠিক হলো, ডিপার্টমেন্টের রিইউনিয়ন হবে। এপ্রিলে। হাতে এই চার মাসের কম সময়। এর মধ্যেই সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে। মোটামুটি হুজুগে থাকতে ভালোবাসি। ব্যস। দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। ফার্স্ট আর সেকেন্ড ইয়ার মিলেই সমস্ত অনুষ্ঠান হবে। বাজেট নেই। তাই বাইরের শিল্পী আসবে না। আর বড় চ্যালেঞ্জ। অনুষ্ঠানের মান রাখতে হবে। ম্যাগাজিন বের করা, স্পন্সর জোগাড়, পুরোনো ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করা.. সব চলছে। কালচারাল এ কী কী হতে পারে, কে কী পারে, এসবের একটা লিস্ট তৈরি হলো। ঠিক হলো আলাদা করে কিছু সমবেত, একক গান তো হবেই, নাচ হবে, এছাড়া যেটা মূল আকর্ষণ, সেটা হলো"শাপমোচন"।
সুমেধা আর আমি দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। ও নাচাটা সামলে দেবে। আমি গান। এরপর শুরু হলো হৈ হৈ করে রিহার্সাল। রোজ বিকেলে থিয়োরি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের শেষে সবাই ফাঁকা ক্লাসরুম দখল করে হারমোনিয়াম তবলা ঘুঙুরের সাথে নাচ গান। অনেকদিনের পুরোনো ও অব্যবহৃত হারমোনিয়ামটা যে তখনও চলছে, ভেবেই কী খুশি।
পুরো দেড় ঘন্টার নাটককে ৪৫ মিনিটে আনতে গেলে পুরোটা করা সম্ভব না। তাছাড়া সব গান সবাই জানিনা। তাই বসা হলো একদিন ধ্রুব ঈপ্সিতার সাথে স্ক্রিপ্ট নিয়ে। মোটামুটি আলাপ আলোচনার পর গান ঠিক হলো কী কী হবে। "জাগরণে যায় বিভাবরী", "রাঙিয়ে দিয়ে যাও", "দে পড়ে দে আমায় তোরা", "এসো আমার ঘরে", "যখন এসেছিলে", "মোর বীণা ওঠে"। ফিমেল ভয়েস পাওয়া কঠিন না। অনেককেই পেয়ে গেলাম। সমবেত, সোলো সবের জন্যই। রানীর রোলে ছিল আমার তৎকালীন বেস্ট ফ্রেন্ড, দেবাঞ্জনা। ওর আর আমার ইচ্ছে, ওর সবচেয়ে পছন্দের গান, "এসো আমার ঘরে"টা আমি গাই। আমিও খুব খুশি। প্রথিতযশা শিল্পী স্বর্গীয় প্রসাদ সেন, আমার দাদু হন সম্পর্কে। বাড়ির কাছাকাছিই থাকতেন। একদিন ফোন করে ছুটলাম। গান তুলতে। দে পড়ে দে আর রাঙিয়ে দিয়ে যাও। এই দুটো আমি সমবেততে গাইবো।
কিন্তু যা বলছিলাম, অনেক নারী কন্ঠ পেলেও, রাজার কণ্ঠে কে গাইবে, তার আর লোক খুঁজে পাইনা। যাকে পারছি, জিজ্ঞেস করছি। গান গাইবে? গান গাইবি? মনে আছে তখন শিল্পী খোঁজার জন্য এমনই অবস্থা, নীলয়দাকে ডেকে বলছি একদিন, "তোমায় দেখলেই মনে হয় ভালো গান গাও। প্লিজ দুটো গান গেয়ে দাও।"
শেষমেশ অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফার্স্ট ইয়ারের তন্ময়কে পাওয়া গেলো। সে ব্যান্ডের গান গায়। নিজেকে রূপম ইসলাম ভেবে টেবে নেয়। আর কেউ নেই, অগত্যা ওকেই ধরো। যেহেতু আমি গানের ইন চার্জ, আমার ঘাড়েই দায়িত্ব পড়লো ব্যান্ড গায়ককে দিয়ে শুদ্ধ (ওই যতটা সম্ভব) রবীন্দ্রসংগীত গায়কীতে গান গাওয়াতে হবে। তখন টিভিতে "গানের ওপারে" সিরিয়ালটার দারুণ রমরমা চলছে। সবাই তারই রেফারেন্সে আমায় দিদি ঠাম্মি তকমা দিয়ে দিল। আর তন্ময় হলো আমাদের গোরা। রিহার্সাল বেশ ভালোই চলছে। সুমেধার নির্দেশনায় নাচের দল রেডি। বিদিশা অদিতি দেবাশিস তিশা এরা গান তবলা নিয়ে রেডি। এদিকে তন্ময়কে বকে বকেও আমি কিছুতেই আর সুর ঠিক করতে পারছিনা। ওর সাথে গলা মেলাতে হচ্ছে রোজ। অনুষ্ঠানের আগেরদিন পর্যন্ত। এদিকে ওর স্কেল খুব উঁচু। আমি সাধারণত খুব নিচু স্কেলে গাই। ব্যস। পড়লো গলায় স্ট্রেন। অনুষ্ঠানের ঠিক একদিন আগে আমার গলা দিয়ে আর কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছেনা। কী মুশকিল। সমবেত নাহয় ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু "এসো আমার ঘরে"?
বসলাম অদিতিকে নিয়ে। "শোন, গানটা তুলে নে। হয়তো তোকেই কাল গাইতে হবে।"
দেবাঞ্জনার মন খারাপ। ওর নাচে আমি গাইছিনা। আমার আরো মন খারাপ। অত্যন্ত প্রিয় গানটা গাইতে পারবো না। তারই মধ্যে ফাইনাল রিহার্সাল চলছে। সাথে চলছে ধ্রুবর দেওয়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ। কস্টিকাম।
অনুষ্ঠানের দিন দুপুরবেলা যখন সবাই ব্যস্ত খাওয়া দাওয়া নিয়ে, আমার কী মনে হলো, ভাবলাম আচ্ছা একবার দেখি তো, মাইকে কতটা খারাপ শোনাচ্ছে আমার গান। দেবাঞ্জনাকে শ্রোতা করে গানটা গাইলাম। তোলা গান। বারবার প্র্যাকটিসের প্রয়োজন নেই। তাল ঠিক আছে। দেখলাম টেনে দিতে পারবো। নিশ্চিন্তে লাঞ্চ সারলাম। অনুষ্ঠান শুরু হলো।
পরপর নাচ। গান। তারপর শাপমোচন। কেউই পারফেক্ট করিনি। তবুও স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছিলাম। আজও শাপমোচনের গান শুনলেই, বিশেষ করে "এসো আমার ঘরে" গানটি গুনগুন করলেই ওই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ওই একটি অনুষ্ঠানের দৌলতে ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার পি এইচ ডির দাদা দিদিরা আর স্যার ম্যামেদের সাথে অদ্ভুত হৃদ্যতা স্থাপিত হয়। সেই সুসম্পর্ক এখনও রয়েছে।
২।
এবারের গল্পটা আরো একটু সাম্প্রতিক। ওই ২০১৫র। তখন আমি আমাদের ক্যাম্পাসের বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের কালচারাল সেক্রেটারি। সহকারী অয়ন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বাড়ি গিয়েছে। ঋতেন্দু সাহায্য করছে আমায়। গোটা অনুষ্ঠানটা সাজাতে। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের দুই তিনদিন আগে অবধি কোনো উদ্বোধনী গানের ব্যবস্থা হয়নি। সবাইকে বলছি, প্লিজ গেয়ে দে। কেউই সারা দেয়না। শেষমেশ ঠিক হলো আমিই গাইবো। কিন্তু পরেও আলাদা গান গাইতে হবে। তাই ভরসা হচ্ছিল না এক গাইবার। রাহুলকে বললাম। গাইবি? ও রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়না। বললো শিখিয়ে দে। মনোসিজ আর আমি দুজনে মিলে রাত্তিরবেলা প্রায় মেরেধরে ওকে দিয়ে গানটা তোলালাম। "প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে"। মোটামুটি রেডি। অনুষ্ঠানের দিন ট্র্যাক চালিয়ে গান গাওয়া হবে। যথাসময়ে ট্র্যকটি চললো। আমি রাহুলকে সাহস জোগাতে বলেছি, তুই চাপ নিস না। আমি শুরু করবো। তুই ধরিস তারপর। আর কী। ঝোলালাম আমি। ট্র্যাকের চেয়ে স্লো স্পিডে গাইলাম। মাঝে ট্র্যাকটা ভাগ্যিস বেগড়বাই করলো। মাঝামাঝি জায়গা থেকে যখন শুরু হয়েছে, ম্যানেজ দিয়ে ফেলেছি। খুব অভিজ্ঞ কান না হলে বোঝার কথা না তেমন। তাছাড়া হল খালি ছিল প্রায়।
তবুও, আজও ওই অটো প্রিয় গানটা এমন ছড়িয়ে লাট করেছিলাম, ভাবলেই লজ্জা লাগে। আক্ষেপ হয়। আজও ওই গানটা জনসমক্ষে গাইতে গেলে এখনও গলা কাঁপে।
আজকে বিশেষ করে দুটি স্টেজ পারফরমেন্সের গল্প বলবো।
১।
২০১১র জানুয়ারি। তখন যাদবপুরে এম এস সি সেকেন্ড ইয়ার চলছে। একদিন ঠিক হলো, ডিপার্টমেন্টের রিইউনিয়ন হবে। এপ্রিলে। হাতে এই চার মাসের কম সময়। এর মধ্যেই সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে। মোটামুটি হুজুগে থাকতে ভালোবাসি। ব্যস। দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। ফার্স্ট আর সেকেন্ড ইয়ার মিলেই সমস্ত অনুষ্ঠান হবে। বাজেট নেই। তাই বাইরের শিল্পী আসবে না। আর বড় চ্যালেঞ্জ। অনুষ্ঠানের মান রাখতে হবে। ম্যাগাজিন বের করা, স্পন্সর জোগাড়, পুরোনো ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করা.. সব চলছে। কালচারাল এ কী কী হতে পারে, কে কী পারে, এসবের একটা লিস্ট তৈরি হলো। ঠিক হলো আলাদা করে কিছু সমবেত, একক গান তো হবেই, নাচ হবে, এছাড়া যেটা মূল আকর্ষণ, সেটা হলো"শাপমোচন"।
সুমেধা আর আমি দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। ও নাচাটা সামলে দেবে। আমি গান। এরপর শুরু হলো হৈ হৈ করে রিহার্সাল। রোজ বিকেলে থিয়োরি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের শেষে সবাই ফাঁকা ক্লাসরুম দখল করে হারমোনিয়াম তবলা ঘুঙুরের সাথে নাচ গান। অনেকদিনের পুরোনো ও অব্যবহৃত হারমোনিয়ামটা যে তখনও চলছে, ভেবেই কী খুশি।
পুরো দেড় ঘন্টার নাটককে ৪৫ মিনিটে আনতে গেলে পুরোটা করা সম্ভব না। তাছাড়া সব গান সবাই জানিনা। তাই বসা হলো একদিন ধ্রুব ঈপ্সিতার সাথে স্ক্রিপ্ট নিয়ে। মোটামুটি আলাপ আলোচনার পর গান ঠিক হলো কী কী হবে। "জাগরণে যায় বিভাবরী", "রাঙিয়ে দিয়ে যাও", "দে পড়ে দে আমায় তোরা", "এসো আমার ঘরে", "যখন এসেছিলে", "মোর বীণা ওঠে"। ফিমেল ভয়েস পাওয়া কঠিন না। অনেককেই পেয়ে গেলাম। সমবেত, সোলো সবের জন্যই। রানীর রোলে ছিল আমার তৎকালীন বেস্ট ফ্রেন্ড, দেবাঞ্জনা। ওর আর আমার ইচ্ছে, ওর সবচেয়ে পছন্দের গান, "এসো আমার ঘরে"টা আমি গাই। আমিও খুব খুশি। প্রথিতযশা শিল্পী স্বর্গীয় প্রসাদ সেন, আমার দাদু হন সম্পর্কে। বাড়ির কাছাকাছিই থাকতেন। একদিন ফোন করে ছুটলাম। গান তুলতে। দে পড়ে দে আর রাঙিয়ে দিয়ে যাও। এই দুটো আমি সমবেততে গাইবো।
কিন্তু যা বলছিলাম, অনেক নারী কন্ঠ পেলেও, রাজার কণ্ঠে কে গাইবে, তার আর লোক খুঁজে পাইনা। যাকে পারছি, জিজ্ঞেস করছি। গান গাইবে? গান গাইবি? মনে আছে তখন শিল্পী খোঁজার জন্য এমনই অবস্থা, নীলয়দাকে ডেকে বলছি একদিন, "তোমায় দেখলেই মনে হয় ভালো গান গাও। প্লিজ দুটো গান গেয়ে দাও।"
শেষমেশ অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফার্স্ট ইয়ারের তন্ময়কে পাওয়া গেলো। সে ব্যান্ডের গান গায়। নিজেকে রূপম ইসলাম ভেবে টেবে নেয়। আর কেউ নেই, অগত্যা ওকেই ধরো। যেহেতু আমি গানের ইন চার্জ, আমার ঘাড়েই দায়িত্ব পড়লো ব্যান্ড গায়ককে দিয়ে শুদ্ধ (ওই যতটা সম্ভব) রবীন্দ্রসংগীত গায়কীতে গান গাওয়াতে হবে। তখন টিভিতে "গানের ওপারে" সিরিয়ালটার দারুণ রমরমা চলছে। সবাই তারই রেফারেন্সে আমায় দিদি ঠাম্মি তকমা দিয়ে দিল। আর তন্ময় হলো আমাদের গোরা। রিহার্সাল বেশ ভালোই চলছে। সুমেধার নির্দেশনায় নাচের দল রেডি। বিদিশা অদিতি দেবাশিস তিশা এরা গান তবলা নিয়ে রেডি। এদিকে তন্ময়কে বকে বকেও আমি কিছুতেই আর সুর ঠিক করতে পারছিনা। ওর সাথে গলা মেলাতে হচ্ছে রোজ। অনুষ্ঠানের আগেরদিন পর্যন্ত। এদিকে ওর স্কেল খুব উঁচু। আমি সাধারণত খুব নিচু স্কেলে গাই। ব্যস। পড়লো গলায় স্ট্রেন। অনুষ্ঠানের ঠিক একদিন আগে আমার গলা দিয়ে আর কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছেনা। কী মুশকিল। সমবেত নাহয় ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু "এসো আমার ঘরে"?
বসলাম অদিতিকে নিয়ে। "শোন, গানটা তুলে নে। হয়তো তোকেই কাল গাইতে হবে।"
দেবাঞ্জনার মন খারাপ। ওর নাচে আমি গাইছিনা। আমার আরো মন খারাপ। অত্যন্ত প্রিয় গানটা গাইতে পারবো না। তারই মধ্যে ফাইনাল রিহার্সাল চলছে। সাথে চলছে ধ্রুবর দেওয়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ। কস্টিকাম।
অনুষ্ঠানের দিন দুপুরবেলা যখন সবাই ব্যস্ত খাওয়া দাওয়া নিয়ে, আমার কী মনে হলো, ভাবলাম আচ্ছা একবার দেখি তো, মাইকে কতটা খারাপ শোনাচ্ছে আমার গান। দেবাঞ্জনাকে শ্রোতা করে গানটা গাইলাম। তোলা গান। বারবার প্র্যাকটিসের প্রয়োজন নেই। তাল ঠিক আছে। দেখলাম টেনে দিতে পারবো। নিশ্চিন্তে লাঞ্চ সারলাম। অনুষ্ঠান শুরু হলো।
পরপর নাচ। গান। তারপর শাপমোচন। কেউই পারফেক্ট করিনি। তবুও স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছিলাম। আজও শাপমোচনের গান শুনলেই, বিশেষ করে "এসো আমার ঘরে" গানটি গুনগুন করলেই ওই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ওই একটি অনুষ্ঠানের দৌলতে ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার পি এইচ ডির দাদা দিদিরা আর স্যার ম্যামেদের সাথে অদ্ভুত হৃদ্যতা স্থাপিত হয়। সেই সুসম্পর্ক এখনও রয়েছে।
২।
এবারের গল্পটা আরো একটু সাম্প্রতিক। ওই ২০১৫র। তখন আমি আমাদের ক্যাম্পাসের বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের কালচারাল সেক্রেটারি। সহকারী অয়ন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বাড়ি গিয়েছে। ঋতেন্দু সাহায্য করছে আমায়। গোটা অনুষ্ঠানটা সাজাতে। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র অনুষ্ঠানের দুই তিনদিন আগে অবধি কোনো উদ্বোধনী গানের ব্যবস্থা হয়নি। সবাইকে বলছি, প্লিজ গেয়ে দে। কেউই সারা দেয়না। শেষমেশ ঠিক হলো আমিই গাইবো। কিন্তু পরেও আলাদা গান গাইতে হবে। তাই ভরসা হচ্ছিল না এক গাইবার। রাহুলকে বললাম। গাইবি? ও রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়না। বললো শিখিয়ে দে। মনোসিজ আর আমি দুজনে মিলে রাত্তিরবেলা প্রায় মেরেধরে ওকে দিয়ে গানটা তোলালাম। "প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে"। মোটামুটি রেডি। অনুষ্ঠানের দিন ট্র্যাক চালিয়ে গান গাওয়া হবে। যথাসময়ে ট্র্যকটি চললো। আমি রাহুলকে সাহস জোগাতে বলেছি, তুই চাপ নিস না। আমি শুরু করবো। তুই ধরিস তারপর। আর কী। ঝোলালাম আমি। ট্র্যাকের চেয়ে স্লো স্পিডে গাইলাম। মাঝে ট্র্যাকটা ভাগ্যিস বেগড়বাই করলো। মাঝামাঝি জায়গা থেকে যখন শুরু হয়েছে, ম্যানেজ দিয়ে ফেলেছি। খুব অভিজ্ঞ কান না হলে বোঝার কথা না তেমন। তাছাড়া হল খালি ছিল প্রায়।
তবুও, আজও ওই অটো প্রিয় গানটা এমন ছড়িয়ে লাট করেছিলাম, ভাবলেই লজ্জা লাগে। আক্ষেপ হয়। আজও ওই গানটা জনসমক্ষে গাইতে গেলে এখনও গলা কাঁপে।
Wednesday, March 6, 2019
SONGএ আমার
ছেলেটি আর মেয়েটি একে অপরকে চেনে সেই ক্লাস টুয়েলভ থেকে। প্রচুর কমন
বন্ধুবান্ধব রয়েছে। স্কুলের পড়া, টিউশনের পড়া, নোটস এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি
ইত্যাদি দিব্যি চলতে থাকে দুজনের মধ্যে, দশজনের মধ্যে। তারপর একদিন
স্কুলজীবন শেষ হয়। কলেজে ঢোকার আগে ওই যে দুই তিন মাসের ছুটিটা, তখন
মেয়েটির বাড়িতে সদ্য ইন্টারনেট এসেছে। চারিদিকে তখন অরকুট আর ইয়াহু মেল
ইয়াহু চ্যাটের যুগ। সেও হুজুগে গা ভাসালো। ছেলেটির সাথে অরকুট, চ্যাট এসবে
তো যোগাযোগ ছিলই, তার সাথে সাথে খুব চলত চিঠি আদানপ্রদান।
মানে ওই ভারচ্যুয়ালিই। লম্বা লম্বা ইমেল। বিভিন্ন বিষয়ে কথা। সিনেমা, বই,
কেরিয়ার অপশন্স... আরো কত কিছু। কায়দা করে নানান রকমের সাবজেক্ট লাইন লেখা
হতো। বন্ধু থেকে ভালো বন্ধু হলো ওরা।
তবে ওই যে, যা হয়। কলেজে ঢুকে প্রায় সব যোগাযোগই ছিন্ন হয়ে যায়। হয়ে গেলোও
তাই। বেশ কয়েক বছর পর, ছেলেটি তখন চাকরিসূত্রে কলকাতার বাইরে, ধরে নিলাম,
চেন্নাইতে, মেয়েটি তখন মাস্টার্স করছে। হঠাৎ আবার যোগাযোগ হল। তখন
ওয়াটসঅ্যাপের যুগ শুরু হয়েছে সবে। ছেলেটি কোদাইকানাল যাচ্ছিল, বন্ধুদের
সাথে। সারা রাত জেগে জেগে বিরক্ত বোধ করছিলও। মেয়েটা অনেকদিন পর আড্ডা দিতে
বসে দারুণ খুশি। পুরনো দিনের কথা, পুরনো বন্ধুদের গল্প। কে কেমন আছে,
কোথায় থাকে, সব।
চলতে লাগল ওদের এই পুনরুজ্জীবিত বন্ধুত্ব। এবং এইখানে এসেই বিপত্তিটা ঘটল। মেয়েটা এইবারে প্রেমে পড়ল ছেলেটির। কোদাইকানাল ট্রিপের প্রায় আট নয় মাস পর ছেলেটার জন্মদিন। মেয়েটা ভাবল, প্রোপোজ করলে হয়। কীভাবে কী করা যায়, ভাবছে সে। অনেক রকম সংলাপও ভেবে চলেছে। সোজাসুজি বলবে? নাকি লিখে পাঠাবে? এস এম এস? না ফোন? আচ্ছা, কী ভালোবাসে ও? কীভাবে বললে খুশি হবে? এইসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটি অর্কুট (নাকি ফেসবুক?) খুলল। যদি কোন হিন্টস পাওয়া যায়।
আর ব্যস। ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ল। মেয়েটি জানতে পারল, ছেলেটির সদ্য একটি বিশেষ বান্ধবী হয়েছে। কলিগ। আলাদা শহরে থাকলেও, মাঝে মাঝেই একে অপরের সাথে দেখা করতে এদিক সেদিক বেড়াতে যায়।
আমাদের মেয়েটির মন বড্ড ভেঙ্গে গেল। ভাগ্যিস প্রোপোজ করে বসেনি, কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। এখনও বেশ সেই আগের মতোই বন্ধুর অভিনয়ই চালিয়ে যেতে হবে।
"মুখে হাসি, চোখে জল" অবস্থা তখন মেয়েটির।
খুব গান শোনা অভ্যেস। এমন সময়ে একদিন রেডিওতে দুপুরবেলা আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে শুনলও ইন্দ্রাণী সেনের কণ্ঠে একটি গান।
"আমার সকল নিয়ে বসে আছি, সর্বনাশের আশায়
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি, পথে যে জন ভাসায়..."
বাকি দুটো লাইন অবধি আর পৌঁছতে হল না। এই দুইয়েই সাঙ্ঘাতিক কাবু। অঝোরে দুই চোখ বেয়ে জল নামল সেদিন। শহরে সেদিন ঘোর বর্ষা। মেয়েটি আর প্রকৃতি তখন একাকার...
আজ বহু বছর পর, ফেলে আসা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছিল মেয়েটির। ওই গানটি আবার শুনে কোত্থেকে যে ল্যাক্রাইমাল গ্ল্যান্ডগুলো হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে গেলো...
চলতে লাগল ওদের এই পুনরুজ্জীবিত বন্ধুত্ব। এবং এইখানে এসেই বিপত্তিটা ঘটল। মেয়েটা এইবারে প্রেমে পড়ল ছেলেটির। কোদাইকানাল ট্রিপের প্রায় আট নয় মাস পর ছেলেটার জন্মদিন। মেয়েটা ভাবল, প্রোপোজ করলে হয়। কীভাবে কী করা যায়, ভাবছে সে। অনেক রকম সংলাপও ভেবে চলেছে। সোজাসুজি বলবে? নাকি লিখে পাঠাবে? এস এম এস? না ফোন? আচ্ছা, কী ভালোবাসে ও? কীভাবে বললে খুশি হবে? এইসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটি অর্কুট (নাকি ফেসবুক?) খুলল। যদি কোন হিন্টস পাওয়া যায়।
আর ব্যস। ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ল। মেয়েটি জানতে পারল, ছেলেটির সদ্য একটি বিশেষ বান্ধবী হয়েছে। কলিগ। আলাদা শহরে থাকলেও, মাঝে মাঝেই একে অপরের সাথে দেখা করতে এদিক সেদিক বেড়াতে যায়।
আমাদের মেয়েটির মন বড্ড ভেঙ্গে গেল। ভাগ্যিস প্রোপোজ করে বসেনি, কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। এখনও বেশ সেই আগের মতোই বন্ধুর অভিনয়ই চালিয়ে যেতে হবে।
"মুখে হাসি, চোখে জল" অবস্থা তখন মেয়েটির।
খুব গান শোনা অভ্যেস। এমন সময়ে একদিন রেডিওতে দুপুরবেলা আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে শুনলও ইন্দ্রাণী সেনের কণ্ঠে একটি গান।
"আমার সকল নিয়ে বসে আছি, সর্বনাশের আশায়
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি, পথে যে জন ভাসায়..."
বাকি দুটো লাইন অবধি আর পৌঁছতে হল না। এই দুইয়েই সাঙ্ঘাতিক কাবু। অঝোরে দুই চোখ বেয়ে জল নামল সেদিন। শহরে সেদিন ঘোর বর্ষা। মেয়েটি আর প্রকৃতি তখন একাকার...
আজ বহু বছর পর, ফেলে আসা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছিল মেয়েটির। ওই গানটি আবার শুনে কোত্থেকে যে ল্যাক্রাইমাল গ্ল্যান্ডগুলো হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে গেলো...
সংলাপ
দুপুরের অতি সাধারণ কথোপকথনের পর আবারও একটি অসাধারণ রকমের সাধারণ সংলাপ। বলা চলে, উপসংহার।
- মাথা ব্যথাটা কমলো?
- হুম। মনে হয়।
- কপালও ঠান্ডা। জ্বরটা নেমেছে মনে হয়।
- মাথায় মালিশটা কাজে দিয়েছে বেশ।
- কিন্তু সিনেমাটা আর দেখলি না তো। ঘুমিয়েই পড়লি।
- অন্তত দশবার দেখা ওই সিনেমা। একবার হাফ দেখলেও সমস্যা নেই। বরং তার চেয়ে অনেক বেশি এনজয় করেছি এই হেড ম্যাসাজ।
- গ্ল্যাড টু নো!
- থ্যাংক ইউ!
- লাভ ইউ!
- লাভ ইউ টু!
- মাথা ব্যথাটা কমলো?
- হুম। মনে হয়।
- কপালও ঠান্ডা। জ্বরটা নেমেছে মনে হয়।
- মাথায় মালিশটা কাজে দিয়েছে বেশ।
- কিন্তু সিনেমাটা আর দেখলি না তো। ঘুমিয়েই পড়লি।
- অন্তত দশবার দেখা ওই সিনেমা। একবার হাফ দেখলেও সমস্যা নেই। বরং তার চেয়ে অনেক বেশি এনজয় করেছি এই হেড ম্যাসাজ।
- গ্ল্যাড টু নো!
- থ্যাংক ইউ!
- লাভ ইউ!
- লাভ ইউ টু!
(লক্ষ্য করেছেন তো, আজ কিন্তু লাভ ইউএর উত্তরে মরণ টরণ কিছু নেই। আপাতত এদের আর ডিস্টার্ব করছি না।)
Tuesday, March 5, 2019
সংলাপ
সেই অসাধারণভাবে সাধারণ দম্পতির (রুমুন অগ্নি) আরেকটি অতি সাধারণ কথোপকথন।
- একটুও শরীর ভালো লাগছে না।
- হুম। টেম্পারেচার তো ১০২ দেখছি।
- মাথা ব্যথা করছে খুব।
- ক্যালপল খেলি তো। একটু টাইম দে। মিনওয়াইল, দেখি একটু মাথাটা টিপে দিই। আরাম পাবি।
- হ্যাঁ প্লিজ। তেল মালিশ করে দিবি প্লিজ?
- ঠিক আছে।
-তেলের বোতলটা আয়নার পিছনে শেলফে আছে। প্যারাশুট।
- ঠিক আছে। বলছি, কোনো সিনেমা দেখবি?
- মন্দ হয় না।
- কোনটা দেখবি?
- চল আজ কোন ক্যাওড়া সিনেমা দেখি।
- যেমন?
- দেবের কোনো সিনেমা?
- নাকি জিৎ?
- বা পাপস তাল?
- চিরঞ্জিত?
- পোসেঞ্জিত?
- অক্ষয় কুমার?
- সলমন খান?
- গোভিন্দা?
- সূর্যবংশম?
- গুন্ডারাজ?
- কুলি নাম্বার ১?
- বিবি নাম্বার ১?
- উত্তম সুচিত্রা?
- অগ্নিপরীক্ষা?
- ইন্দ্রাণী?
- সপ্তপদী?
- বিপাশা?
- হারানো সুর?
- চল, মৌচাক দেখি। লাইট মুভি।
- সেই ভালো। স্যুপ খাবি?
- বানাবি?
- অর্ডার করে দিচ্ছি।
- সি ফুড। বা ক্রিম এন্ড অনিয়ন।
- ডান।
- একটুও শরীর ভালো লাগছে না।
- হুম। টেম্পারেচার তো ১০২ দেখছি।
- মাথা ব্যথা করছে খুব।
- ক্যালপল খেলি তো। একটু টাইম দে। মিনওয়াইল, দেখি একটু মাথাটা টিপে দিই। আরাম পাবি।
- হ্যাঁ প্লিজ। তেল মালিশ করে দিবি প্লিজ?
- ঠিক আছে।
-তেলের বোতলটা আয়নার পিছনে শেলফে আছে। প্যারাশুট।
- ঠিক আছে। বলছি, কোনো সিনেমা দেখবি?
- মন্দ হয় না।
- কোনটা দেখবি?
- চল আজ কোন ক্যাওড়া সিনেমা দেখি।
- যেমন?
- দেবের কোনো সিনেমা?
- নাকি জিৎ?
- বা পাপস তাল?
- চিরঞ্জিত?
- পোসেঞ্জিত?
- অক্ষয় কুমার?
- সলমন খান?
- গোভিন্দা?
- সূর্যবংশম?
- গুন্ডারাজ?
- কুলি নাম্বার ১?
- বিবি নাম্বার ১?
- উত্তম সুচিত্রা?
- অগ্নিপরীক্ষা?
- ইন্দ্রাণী?
- সপ্তপদী?
- বিপাশা?
- হারানো সুর?
- চল, মৌচাক দেখি। লাইট মুভি।
- সেই ভালো। স্যুপ খাবি?
- বানাবি?
- অর্ডার করে দিচ্ছি।
- সি ফুড। বা ক্রিম এন্ড অনিয়ন।
- ডান।
সংলাপ
এলার্মের শব্দ।
- কীরে তখন থেকে এলার্ম বাজছে। বন্ধ কর।
- উমম।
- কীরে?
- হুম।
- উফ। সেই আমাকেই ওঠালি।
- উম।
- একী, সবে পাঁচটা বাজে। গাড়ি আসবে সাড়ে ছটায়। আর তুই এত আগের এলার্ম দিয়েছিস?!
- তুই যাতে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিস। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তুই তৈরি হয়ে নে। আমি ততক্ষণ আরেকটু ঘুমিয়ে নিই।
- কী আহ্লাদ আবদার।
- শাড়ি পরাবি তো আমায়।
- শাড়ি পরাবো মানে?
- মানে কুচি আঁচল ধরে দিবি।
- শাড়ি পরবি কেন হঠাৎ? এই সাত সকালে আবার।
- এমনি। আমার ইচ্ছে হয়েছে। উফ।
- নিজে শাড়ি পরবি, তার জন্য আমার ঘুম নষ্ট।
- তারপরে তো গ্যালারি ভর্তি শুধু আমারই ছবি দেখব!
- বাজে বকিস না তো।
- এত কথা বলে বলে আমার ঘুমের পিন্ডি চটকাচ্ছিস তখন থেকে।
- নিজে সাজবি আর তার জন্য আমার ঘুম নষ্ট করবি... ইয়ার্কি?
- ধ্যাত্তেরিকা। সেই আমায় উঠিয়েই ছাড়লি।
- স্নান সেরে নে। তারপর যতক্ষণে আমি স্নান করবো, তুই শাড়িটা স্টার্ট কর। কুচি আঁচল ধরছি পরে। মিনওয়াইল আমি পনেরো মিনিট ঘুমিয়ে নিই।
- মরণ দশা আমার।
- চেকমেট!
- কীরে তখন থেকে এলার্ম বাজছে। বন্ধ কর।
- উমম।
- কীরে?
- হুম।
- উফ। সেই আমাকেই ওঠালি।
- উম।
- একী, সবে পাঁচটা বাজে। গাড়ি আসবে সাড়ে ছটায়। আর তুই এত আগের এলার্ম দিয়েছিস?!
- তুই যাতে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিস। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তুই তৈরি হয়ে নে। আমি ততক্ষণ আরেকটু ঘুমিয়ে নিই।
- কী আহ্লাদ আবদার।
- শাড়ি পরাবি তো আমায়।
- শাড়ি পরাবো মানে?
- মানে কুচি আঁচল ধরে দিবি।
- শাড়ি পরবি কেন হঠাৎ? এই সাত সকালে আবার।
- এমনি। আমার ইচ্ছে হয়েছে। উফ।
- নিজে শাড়ি পরবি, তার জন্য আমার ঘুম নষ্ট।
- তারপরে তো গ্যালারি ভর্তি শুধু আমারই ছবি দেখব!
- বাজে বকিস না তো।
- এত কথা বলে বলে আমার ঘুমের পিন্ডি চটকাচ্ছিস তখন থেকে।
- নিজে সাজবি আর তার জন্য আমার ঘুম নষ্ট করবি... ইয়ার্কি?
- ধ্যাত্তেরিকা। সেই আমায় উঠিয়েই ছাড়লি।
- স্নান সেরে নে। তারপর যতক্ষণে আমি স্নান করবো, তুই শাড়িটা স্টার্ট কর। কুচি আঁচল ধরছি পরে। মিনওয়াইল আমি পনেরো মিনিট ঘুমিয়ে নিই।
- মরণ দশা আমার।
- চেকমেট!
সংলাপ
একটি সাধারণ দম্পতির আরও সাধারণ গার্হস্থ্য জীবনের কথোপকথন। চরিত্রদের নাম? রুমুন অগ্নি? যা ইচ্ছে ভেবে নিন।
- ভাবছি চাকরিটা এবারে ছেড়েই দেবো।
- আচ্ছা।
- এই চাকরিটা বেশিদিন টানা অসম্ভব।
- ঠিক আছে।
- এই চাকরির জ্বালায় জান কয়লা হয়ে গেল আমার।
- হুম।
- তখন থেকে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছি। একবার জিজ্ঞেস তো কর কী ব্যাপার কেন।
- ম্যানেজার ছুটি দেয়নি, তোর কাজ শ্বেতার চেয়ে ভালো, তাও তুই কম রেটিং পেয়েছিস। তোর ক্লায়েন্টটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। সামান্য পান থেকে চুন খসলেই ডাইরেক্ট ম্যানেজারকে মেল করছে। কোনটা?
- সেকেন্ডটা। কিন্তু শ্বেতা না। শুভ্র।
- বুঝলাম।
- তুই কী করে জানলি?
- গত তিন বছর ধরে এই চাকরিটাতে আছিস। আমি তোকে চিনি আরো আগে থেকে। আর তোকে এই যাবৎ যা যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখেছি, তাকে রাফলি এই কটা ক্যাটেগরিতে ভাগ করা যায়।
- আর তাই আজও বুঝে গেলি।
- হ্যাঁ। সিম্পল বেসিক মেশিন লার্নিং এর গল্প এটা।
- উফ। আবার রিসার্চের কথা। মা গো। থাম প্লিজ।
- আমারই কি ভালো লাগে নাকি? এই দেখ না, পেপারটা ডিউ আছে নেক্সট উইক। তখন থেকে কোডটা রান করতে গিয়েও পারছিনা। আমিও চাকরিটা ছেড়ে দেবো ভাবছি।
- চল। তাই করি। দুজনেই চাকরি ছেড়ে দিই।
- তারপর কী করব?
- ভ্যারান্ডা ভাজব। গান গাইবো। বই পড়বো। সিনেমা দেখবো।
- খাবো কী?
- ভ্যারান্ডা। ভাজব যেটা।
- ভ্যারান্ডা কিনবার টাকা কোত্থেকে আসবে?
- ব্যাংক লুটব।
- কীভাবে?
- বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাব।
- হুম। আপাতত চল স্পেনসার্স যাই।
- ওখানে বন্দুক পাওয়া যায় নাকি?
- জানিনা। তবে আমি কালকের রান্নার জন্য বাজারহাট করবো।
- হয়ে গেল?
- হ্যাঁ। মনে পড়ল, ফ্রিজ খালি।
- শালা কল্পনার জগতে থাকারও কত লিমিটেশন।
- সেই না সেই।
- চল।
- ভেলপুরির লোকটা থাকলে খেয়ে ঢুকবো।
- আমি ফুচকা।
- ভাবছি চাকরিটা এবারে ছেড়েই দেবো।
- আচ্ছা।
- এই চাকরিটা বেশিদিন টানা অসম্ভব।
- ঠিক আছে।
- এই চাকরির জ্বালায় জান কয়লা হয়ে গেল আমার।
- হুম।
- তখন থেকে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছি। একবার জিজ্ঞেস তো কর কী ব্যাপার কেন।
- ম্যানেজার ছুটি দেয়নি, তোর কাজ শ্বেতার চেয়ে ভালো, তাও তুই কম রেটিং পেয়েছিস। তোর ক্লায়েন্টটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। সামান্য পান থেকে চুন খসলেই ডাইরেক্ট ম্যানেজারকে মেল করছে। কোনটা?
- সেকেন্ডটা। কিন্তু শ্বেতা না। শুভ্র।
- বুঝলাম।
- তুই কী করে জানলি?
- গত তিন বছর ধরে এই চাকরিটাতে আছিস। আমি তোকে চিনি আরো আগে থেকে। আর তোকে এই যাবৎ যা যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখেছি, তাকে রাফলি এই কটা ক্যাটেগরিতে ভাগ করা যায়।
- আর তাই আজও বুঝে গেলি।
- হ্যাঁ। সিম্পল বেসিক মেশিন লার্নিং এর গল্প এটা।
- উফ। আবার রিসার্চের কথা। মা গো। থাম প্লিজ।
- আমারই কি ভালো লাগে নাকি? এই দেখ না, পেপারটা ডিউ আছে নেক্সট উইক। তখন থেকে কোডটা রান করতে গিয়েও পারছিনা। আমিও চাকরিটা ছেড়ে দেবো ভাবছি।
- চল। তাই করি। দুজনেই চাকরি ছেড়ে দিই।
- তারপর কী করব?
- ভ্যারান্ডা ভাজব। গান গাইবো। বই পড়বো। সিনেমা দেখবো।
- খাবো কী?
- ভ্যারান্ডা। ভাজব যেটা।
- ভ্যারান্ডা কিনবার টাকা কোত্থেকে আসবে?
- ব্যাংক লুটব।
- কীভাবে?
- বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাব।
- হুম। আপাতত চল স্পেনসার্স যাই।
- ওখানে বন্দুক পাওয়া যায় নাকি?
- জানিনা। তবে আমি কালকের রান্নার জন্য বাজারহাট করবো।
- হয়ে গেল?
- হ্যাঁ। মনে পড়ল, ফ্রিজ খালি।
- শালা কল্পনার জগতে থাকারও কত লিমিটেশন।
- সেই না সেই।
- চল।
- ভেলপুরির লোকটা থাকলে খেয়ে ঢুকবো।
- আমি ফুচকা।
Saturday, March 2, 2019
সংলাপ
- কীরে, সারাদিনে একবারও ফোন করলি না যে?
- তুইও তো করিসনি।
- ব্যস্ত ছিলাম।
- আমিও।
- তোর ব্যস্ততা জানা আছে।
- কীরকম?
- ওই তো দেবুর ছবিতে বসে বসে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিলি। রীতিমত পঞ্চায়েত বসে গেল।
- তোকে কে বলল?
- দেখলাম। কে আবার বলবে।
- এই নাকি এত ব্যস্ত, এত ফেসবুক করার সময় পাস কী করে?
- তুই কি ঝগড়া করবি বলে ঠিক করলি?
- তুইও কি ঝগড়া করতে ফোন করলি?
- অন্তত সেই সুবাদে তো ফোন করার সময় হলো।
- ইচ্ছে হলে তো তুইও করতে পারতি।
- আমরা কি ঝগড়াটা কন্টিনিউ করবো?
- আর ভালো কি করতে পারি অন্যথায়?
- সাউথ সিটিতে নাইট শো কেটে ফেলি? তার আগে নাহয় ওয়াও মোমোতে এক প্লেট করে চিকেন চিজ স্টিমড আর কে এফ সি তে ভার্জিন ময়িতো হয়ে যাবে।
- সেই ভালো। এক সপ্তাহ প্রচুর ঝেলেছি। উইকেন্ড শুড বি ফান!
- ঠিক হ্যাস! পিক আপ করে নেব সাড়ে ছটায় তোর অফিসের বাইরে থেকে।
- ওকে। বাই।
- লাভ ইউ টু।
- ঢং যতসব।
- তুইও তো করিসনি।
- ব্যস্ত ছিলাম।
- আমিও।
- তোর ব্যস্ততা জানা আছে।
- কীরকম?
- ওই তো দেবুর ছবিতে বসে বসে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিলি। রীতিমত পঞ্চায়েত বসে গেল।
- তোকে কে বলল?
- দেখলাম। কে আবার বলবে।
- এই নাকি এত ব্যস্ত, এত ফেসবুক করার সময় পাস কী করে?
- তুই কি ঝগড়া করবি বলে ঠিক করলি?
- তুইও কি ঝগড়া করতে ফোন করলি?
- অন্তত সেই সুবাদে তো ফোন করার সময় হলো।
- ইচ্ছে হলে তো তুইও করতে পারতি।
- আমরা কি ঝগড়াটা কন্টিনিউ করবো?
- আর ভালো কি করতে পারি অন্যথায়?
- সাউথ সিটিতে নাইট শো কেটে ফেলি? তার আগে নাহয় ওয়াও মোমোতে এক প্লেট করে চিকেন চিজ স্টিমড আর কে এফ সি তে ভার্জিন ময়িতো হয়ে যাবে।
- সেই ভালো। এক সপ্তাহ প্রচুর ঝেলেছি। উইকেন্ড শুড বি ফান!
- ঠিক হ্যাস! পিক আপ করে নেব সাড়ে ছটায় তোর অফিসের বাইরে থেকে।
- ওকে। বাই।
- লাভ ইউ টু।
- ঢং যতসব।
Subscribe to:
Posts (Atom)