অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটে অনিতা আর হর্ষবর্ধনের আরো ছোট্ট সংসার। দুজনেই গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস। ল্যাবের কাজ, তার প্রেশার, বিদেশ বিভূঁইয়ে একলাযাপন, পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকা। সব মিলিয়ে দুজনেই নাজেহাল। তাই সংসারের বয়স ছয়মাস না পেরোলেও হানিমুন পিরিয়ডটা কবে যে ফুরুত করে উড়ে গিয়েছে, টেরই পায়নি ওরা।
আজ ওদের সকাল থেকে ঝগড়া শুরু হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কে পাউরুটি টোস্ট করে গ্যাস মুছে রাখেনির মতো নিতান্তই সামান্য হলেও সমস্ত জমে থাকা মান অভিমান উপচে উপচে পড়েছে সারাদিন। ডিপার্টমেন্ট গিয়ে পর্যন্ত একসাথে লাঞ্চ সারেনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে যে যার মতো নিজে নিজে। আলাদা সময়ে।
সারাদিন কেউই কারুর সাথে কথা না বললেও যে যার মতো নির্দিষ্ট কাজ করে চলেছিল। একজন কাচা জামা ভাঁজ করে তুলে রাখলো, তো আরেকজন ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করলো। বিনা বাক্যব্যায়ে একজন টিভি চালিয়ে সোফায় বসে খেয়েও নিলো। অন্যজন হাতে বই নিয়ে। এই অবধি সব ঠিক চলছিল।
বাধ সাধলো শোয়ার সময়। বেডরুম একটাই। আজ তো কিছুতেই দুজনে এক ঘরে শোবে না। অন্যান্যবার হর্ষবর্ধন শিভালরি দেখিয়ে অনিতার জন্য বেডরুম ছেড়ে দিয়ে নিজে লিভিং রুমে বালিশ কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ যে সকালবেলা রাগের মাথায় অনিতা কাঁচি চালিয়ে বালিশের সমস্ত তুলো বের করে দিয়েছে। অগত্যা?
খানিক ইতস্তত করলো দুজনেই। ঘড়ির কাঁটা দশটা পেরিয়ে এগারোটা পৌঁছে গেল। কিন্তু ওয়াকিবহাল দম্পতির কেউই আগ বাড়িয়ে আর শুতে যেতে পারছেনা।
সোয়া এগারোটার দিকে অনিতা একবার গলা খাকরি দিয়ে বলল, "বালিশ তো মোটে একটাই। ফর অল প্র্যাকটিক্যাল পারপাজেস, আপাতত যুদ্ধ বিরতি হোক। কী বলিস?"
হর্ষবর্ধন যেন ঠিক এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ও অনিতার কথাটা লুফে নিয়ে বলল, "এমনিও চব্বিশ ঘন্টা ঝগড়া বহাল রাখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কাজেই এবার মিটিয়ে নিলেই তো হয় একেবারে পাকাপাকিভাবে?"
অনিতা কিছু বলেনা। মুচকি হেসে বেডরুমে ঢোকে, সাধের বালিশের বৃহত্তর ভাগের দখল নিতে।
No comments:
Post a Comment