ভিড় বাস, জ্যাম, ঘাম, ঠেলাঠেলি কাটিয়ে মানিকতলা বাজারে নেমেছি অফিস
ফেরতা। শার্টের বুকপকেটে গিন্নীর যত্ন করে হাতে লেখা ফর্দ। পরশু আমাদের
ছেলেটার পাঁচ বছরের জন্মদিন। ঘটা করে পালন হবে। তাই লিস্টিও লম্বা। মাছ,
মাংস, হরেক রকম সব্জি। মাছওয়ালার কাছে দাঁড়িয়ে কানকো টিপে টিপে টাটকা কাতলা
বেছে, দর করে বেশ একটা যুদ্ধজয়ের ভাব মনে। কী করব। মধ্যবিত্ত সাধারণ
মানুষ। মাসের শেষ। ২১০টাকা কিলোটা ১৯০এ পেয়েই তাই মন বেজায় প্রসন্ন। হঠাৎ
পাশ থেকে কানে এলো এক রিনরিনে কণ্ঠস্বর:
"দাদা, ইলিশ কত করে?"
ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা।
চোখ তুলে তাকালাম।
একটা সাধারণ লাল কালো সবুজ জংলা ছাপ শাড়ি। তেল চুপচুপে চুল টেনে একটা
খোঁপায় বাঁধা। দুই ভুরুর মাঝখানে, একটু উঁচু করে বড় সিঁদুরের টিপ। চোখে সেই
হাই পাওয়ারের চশমা। মোটা কালো ফ্রেম। সরু কব্জি আলো করে আছে শাঁখা আর
দুগাছা চুরি। ডান হাতটা ধরে পাশে দাঁড়িয়ে বছর ছয়েকের একটা ফুটফুটে মেয়ে।
ঠিক যেমন সাজে কল্পনা করতাম ওকে। আজ থেকে বছর দশেক আগে। কলেজ ফেরত। এই
মানিকতলা বাস স্ট্যান্ডেই। ও ফিরত ভিকটোরিয়া কলেজ থেকে। আমি আসতাম
সুরেন্দ্রনাথ থেকে।
এখনও সেই একই রকম মায়ামাখা মুখ। সেই পাগলকরা দুই
চোখ। খানিক চেয়ে রইলাম ওর দিকে। কে জানে কতক্ষণ। এক মিনিট? দু মিনিট? নাকি
হাজার হাজার বছর?
"এই যে দাদা, আপনার মাছটা ধরুন। বলুন বৌদি, কতটা চাই?"
মাছওয়ালার কথায় সম্বিৎ ফিরল। দুজনেরই?
এখানে বাল্বের হলুদ আলোটা যেন বড্ড ম্লান।
হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটি নিয়ে ঘুরলাম। দু পা এগোতেই সব্জির বাজার শুরু।
লিস্টে এখনো ফুলকপি, এঁচোর, বেগুন বাকি।
পাশের কোনো এক দোকানির রেডিওতে বেজে উঠলো, "অভি না যাও ছোড়কার, কে দিল অভি ভরা নহি..."।
হাসলাম মনে মনে। দিল আদৌ কবেই বা ভরেছিলো?
(না, এরা কিন্তু আর যেই হোক না কেন, কিছুতেই অগ্নি আর রুমুন না। ওদের এমন বিয়োগান্তক গল্প হতেই পারে না।)
No comments:
Post a Comment